আগামীদিনের বিশ্ব হবে ডিজিটাল অর্থনীতির বিশ্ব
বর্তমান সময়টি হচ্ছে খোলা বাজারে প্রতিযোগিতার সময়। আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এটি একপক্ষীয় নয়, কারও ছায়া নিয়ে নয়, খোলা বাজারে প্রতিযোগিতা করতে হবে এবং প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নীতিগত সাহায্যের দিকে মনোযোগ দিতে হবে এবং সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মেধাভিত্তিক একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ল, না কি কমল–সেটি নির্ভর করে আমাদের উৎপাদনশীলতার উপর। যদি প্রতিযোগিতার বাজারে আমরা সক্ষমতা অর্জন করতে পারি, তবেই কেবল এখানে আমরা টিকে থাকতে পারব।
আমরা এখন এশিয়ার দেশগুলো ক্রমাগতভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। জাপান, চীন, কোরিয়া প্রতিনিয়ত আরও দক্ষ হচ্ছে। তারা আমাদের চারদিকেই আছে। এদের কাছ থেকে যদি সুবিধা পেতে হয়, আমাদের দক্ষতার মানদণ্ড অনেক উপরে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য যা যা করা দরকার, আমাদের করতে হবে।
আমরা জ্ঞানভিত্তিক সমাজের কথা বলছি; কিন্তু এখনো জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। আগামীদিনের পৃথিবী ডিজিটাল অর্থনীতির উপর ভর করবে। আগামী পঞ্চাশ বা এক শ বছরে পৃথিবীর যে চেহারা তৈরি হবে, সেটি ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তিতেই করে। সেখানে আমরা আসলে কোথায় অবস্থান করছি? আমরা শুধু বলছি ডিজিটালাইজেশনের কথা। এই ডিজিটালাইজেশনকে সাপোর্ট করার জন্য আমরা কি জনশক্তিকে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তিশালীভাবে গড়ে তুলতে পারছি? আমরা কি ইনোভেশন বা সৃজনশীলতাকে পুরস্কৃত করছি? আমরা যদি মেধাকে সুযোগ না দিই, অ্যাপ্রিশিয়েট না করি, তাহলে সৃজনশীলতা তৈরি হবে না। নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারব না। কাজেই জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে মেধাকে প্রধান একটি বিচার্য বিষয় হিসেবে দেখতে হবে। জ্ঞানকে আমাদের ড্রাইভিং পুল হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। মেধা এবং জ্ঞান–এই দুটিকে যদি আমরা সমন্বয় করতে পারি, সেইসঙ্গে পেশাদারিত্বকে যোগ করতে হবে। পেশাদারিত্ব এমন একটি বিষয়, যেটি এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অধিক উৎপাদনশীল শ্রম দিয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করতে হবে। আমাদের যদি উন্নয়নশীল দেশ হতে হয়, অর্থনীতির গুণগত স্তরগুলোও আমাদের অতিক্রম করতে হবে।
সবশেষে যে কথাটি বলতে চাই–সব মানুষের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে মৌলিক বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক সমন্বয় দরকার। রাজনীতির সঙ্গে মানুষের সমন্বয় দরকার। মানুষের সঙ্গে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় দরকার। এই সমন্বয়, সবার অংশগ্রহণ এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা দরকার। তার মধ্য দিয়ে মানুষের সৃজনশীলতা বিকাশের জায়গাটি যদি আমরা তৈরি করতে পারি, তবেই কেবল আগামী পঞ্চাশ বছর পর, অর্থাৎ পঞ্চাশ বছর পরের প্রজন্ম ডিজিটাল ডাইনামিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দেখতে পাবে। পঞ্চাশ বছরে অনেক সন্তুষ্টির জায়গা তৈরি হচ্ছে, কিছু জায়গায় ঘাটতি রয়ে গেছে, সেগুলো সমাধানে মনোযোগী হতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, আগামী পঞ্চাশ বছর একেবারেই ভিন্ন রকম পঞ্চাশ বছর হবে। ডিজিটাল অর্থনীতির বিশ্বে বাংলাদেশকে যদি আমরা সফলভাবে দেখতে চাই, আমাদের ভাবনা এবং চিন্তার জগতটিকেও নতুন করে সাজাতে হবে। আমাদের সামাজিক কাঠামো, আমাদের রাজনৈতিক কাঠামো, আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামো–সবকিছুকেই যুক্তিযুক্ত করতে হবে। তাহলেই কেবল আগামী পঞ্চাশ বছর পর একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, উন্নত ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ দেখতে পাব।
লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত
এসএ/