শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

উনসত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলি

আমাদের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৬৯-এর ২৪ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। প্রত্যেক মানুষের জীবনে উজ্জ্বলতম দিন আছে। আমার জীবনেও কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা আছে। ’৬৯ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাল পর্ব।এই পর্বে আইয়ুবের লৌহ শাসনের ভিত্ কাঁপিয়ে বাংলার ছাত্রসমাজ ’৬৯-এর ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল।জাতীয় জীবনে যখন জানুয়ারি মাস ফিরে আসে তখন ’৬৯-এর অগ্নিঝরা দিনগুলি স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে। জীবনের সেই সোনালী দিনগুলির প্রতিটি মুহূর্তের কথা মনে পড়ে।অনেক সময় ভাবি, কী করে এটি সম্ভব হয়েছিল!

’৬৬-’৬৭ তে আমি ইকবাল হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি এবং’৬৭-’৬৮ তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ তথা ডাকসু’র সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালীর জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সূতিকাগার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ’৬০-এর দশকের গুরুত্ব অনন্য। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ’৪৮ ও ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফা ও ’৬৯-এর ১১ দফা আন্দোলন হয়েছে।

তোফায়েল আহমেদের জন্মদিন

বঙ্গবন্ধু যখন ৬ দফা দিয়েছিলেন আমি তখন ইকবাল হলের (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) সহ-সভাপতি। ইকবাল হলের সহ-সভাপতির কক্ষ ছিল ৩১৩ নম্বর। এই কক্ষে প্রায়শই অবস্থান করতেন শ্রদ্ধেয় নেতা সর্বজনাব শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান এবং আবদুর রাজ্জাক।বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দেওয়ার পর দেশব্যাপী ঝটিকা সফরে ৩৫ দিনে ৩২টি জনসভা করেন এবং বিভিন্ন জেলায় বারবার গ্রেপ্তার হন। ৬ দফা দেওয়ার পরবঙ্গবন্ধু আমাদের বলতেন, ‘সাঁকো দিলাম স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।’ অর্থাৎ এই ৬ দফার সিঁড়ি বেয়ে তিনি স্বাধীনতায় পৌঁছবেন।

বিচক্ষণ নেতা ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে রাজনীতি করেছেন। স্বাধীনতার লক্ষ্য সামনে নিয়েই ’৪৮-এ ছাত্রলীগ ও ’৪৯-এ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করে মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতার বীজ রোপণ করে ৬ দফায় বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার জাতির সামনে পেশ করেন। ৬ দফা দেওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় বঙ্গবন্ধুর নামে ১০টি মামলা দায়ের করা হয়। প্রতিটি মামলায় জামিন পেলেও শেষবার নারায়ণগঞ্জ থেকে সভা করে ঢাকা আসার পর ‘পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনে’তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের ডাকে ৭ জুন সর্বাত্মক হরতালে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।’৬৮-এর ১৮ জানুয়ারি জেল থেকে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেলেও পুনরায় জেলগেটেই গ্রেপ্তার করে অজানা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে আমরা জানতাম না প্রিয়নেতা কোথায় কেমন আছেন। ’৬৮-এর ১৯ জুন আগরতলা মামলার বিচার শুরু হলে আমরা বুঝতে পারি আইয়ুব খান রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ তুলে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিকাষ্ঠে মৃত্যুদণ্ড দেবে। আইয়ুব খান প্রদত্ত মামলার নামই ছিল ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য।’ আমরা ছাত্রসমাজ এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলি, যা পরে তীব্রতর হয়।

স্মৃতিকথা লিখতে বসে মনে পড়ছে, ডাকসুসহ ৪টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ঐতিহাসিক ১১ দফার ভিত্তিতে ’৬৯-এর ৪ জানুয়ারি সর্বদলীয়ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গড়ে ওঠার কথা। মনে পড়ে ১১ দফা আন্দোলনের প্রণেতা-ছাত্রলীগ সভাপতি প্রয়াত আব্দুর রউফ ও সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী; ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ)সভাপতি প্রয়াত সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক ও সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দোহা; ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল্লাহ এবং এনএসএফ-এর একাংশের সভাপতি প্রয়াত ইব্রাহিম খলিল ও সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম মুন্সীর কথা। ছাত্রনেতাদের প্রত্যেকেই ছিলেন খ্যাতিমান। আমি ডাকসু ভিপি হিসেবে সর্বদলীয়ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক ও মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করি। আমার সঙ্গে ছিলেন ডাকসু জিএস নাজিম কামরান চৌধুরী।

’৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায়ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ১১ দফা প্রণয়নের পর এটাইপ্রথম কর্মসূচি। ডাকসু ভিপি হিসেবে আমার সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গভর্নর মোনায়েম খান ১৪৪ ধারা জারি করেন। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব ছিল সিদ্ধান্ত দেওয়ার ১৪৪ ধারা ভাঙবো কি ভাঙবো না। উপস্থিত ছাত্রদের চোখেমুখে ছিল ১৪৪ ধারা ভঙ্গের দৃঢ়তা।

১৪৪ ধারা ভঙ্গের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ’শপাঁচেক ছাত্র নিয়ে রাজপথে এলাম। পুলিশ বাহিনী আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে। ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুর রউফ ঘটনাস্থলে আহত হন। আমরা ক্যাম্পাসে ফিরে আসি। পরদিন ১৮ জানুয়ারি পুলিশী নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মঘট কর্মসূচি দেই।১৮ জানুয়ারি বটতলায় জমায়েত। যথারীতি আমি সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট ছিল বিধায় সকালে বটতলায় ছাত্র জমায়েতের পর খণ্ড খণ্ড মিছিল এবং সহস্র কণ্ঠের উচ্চারণ, ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই, আইয়ুব খানের পতন চাই।

’গতকালের চেয়ে আজকের সমাবেশ বড়। সেদিনও ১৪৪ ধারা বলবৎ ছিল। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজপথে নেমে এলাম। দাঙ্গা পুলিশ লাঠিচার্জ আর টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ফিরে এলাম ক্যাম্পাসে। কর্মসূচি নেওয়া হলো ১৯ জানুয়ারি আমরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল করবো এবং ১৪৪ ধারা ভাঙবো। সেদিন ছিল রবিবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। কিন্তু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় খোলা ছিল। আমরা মিছিল শুরু করি। শুরু হয় পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ। কিন্তু কিছুই মানছে না ছাত্ররা। শঙ্কাহীন প্রতিটি ছাত্রের মুখ। গত দু’দিনের চেয়ে মিছিল আরো বড়। পুলিশ গুলি চালালো। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুল হক, বাড়ি দিনাজপুর,গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে রাজপথে। ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি শহীদ হন।

পুলিশের নির্যাতন ও গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ২০ জানুয়ারি সোমবার আবার বটতলায় সমাবেশের কর্মসূচি দেই। ২০ জানুয়ারি’৬৯-এর গণআন্দোলনের মাইলফলক। এদিন ১১দফা দাবিতে ঢাকাসহ প্রদেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হয়। সভাপতির আসন থেকে বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার পরিসর সমাবেশের তুলনায় ছোট। ৩ দিনে সাধারণ ছাত্র ও বিপুল সংখ্যক জনসাধারণের আস্থা অর্জনে আমরা সক্ষম হয়েছি।যখন সভাপতির ভাষণ দিচ্ছি তখন মিল-কারখানা, অফিস-আদালত থেকে দলে দলে মানুষ আসছে বটতলা প্রাঙ্গণে। সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে সভাপতির ভাষণে সেদিন বলেছিলাম, ‘যতদিন আগরতলা মামলার ষাড়যন্ত্রিক কার্যকলাপ ধ্বংস করে প্রিয় নেতা শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্ত করতে না পারবো, ততদিন আন্দোলন চলবে।

স্বৈরশাসক আইয়ুব-মোনায়েম শাহীর পতন না ঘটিয়ে বাংলার ছাত্রসমাজ ঘরে ফিরবে না।’ পুনরায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঘোষণা দিলাম। লক্ষ মানুষের মিছিল নেমে এলো রাজপথে। কোথায় গেল ১৪৪ ধারা! আমরা ছিলাম মিছিলের মাঝখানে। মিছিল যখন আগের কলাভবন বর্তমান মেডিকেল কলেজের সামনে ঠিক তখনই গুলি শুরু হয়। আমি, ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী ও আসাদুজ্জামান একসঙ্গে ছিলাম। আমাদের লক্ষ্য করে এক পুলিশ ইন্সপেক্টর গুলি ছোঁড়ে। গুলি লাগে আসাদুজ্জামানের বুকে। সঙ্গে সঙ্গে ঢলে পড়ে আসাদ। আসাদকে ধরাধরি করে মেডিকেল কলেজের দিকে নেওয়ার পথে আমাদের হাতের উপরেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

একজন শহীদের শেষ নিঃশ্বাস স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম। মৃত্যু এতো কাছে হাতের উপর! মেডিকেলের সিঁড়িতে আসাদের লাশ রাখা হয়। তাঁর গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত শার্টটি সংগ্রামের পতাকা করে আমরা আসাদের রক্ত ছুঁয়ে শপথ নিয়ে সমস্বরে বলি,‘আসাদ তুমি চলে গেছো। তুমি আর ফিরে আসবে না আমাদের কাছে। তোমার রক্ত ছুঁয়ে শপথ করছি, আমাদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মায়ের কোলে ফিরে যাবো না।’

এরপর ছুটে গেলাম শহীদ মিনার চত্বরে। আসাদের মত্যুর খবর ঘোষণা করলাম শোকার্ত জনতার মাঝে। আসাদের রক্তাক্ত শার্ট সামনে রেখে সমাবেশের উদ্দেশে বললাম, ‘আসাদের এই রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেবো না’ এবং ২১ জানুয়ারি পল্টনে আসাদের গায়েবানা জানাজা ও ১২টা পর্যন্ত হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করি। আমাদের সত্তা ও অস্তিত্ব আসাদের রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ হলো। শহীদ মিনার থেকে শুরু হলো শোক মিছিল। শোক মিছিল মুহূর্তেই লক্ষ মানুষের বিক্ষোভ মিছিলে পরিণত হলো। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শোক মিছিলের সম্মুখভাগ যখন ৩ নেতার সমাধির কাছে তখন সেনাসদস্যরা মাইকে বলছে,‘ডোন্ট ক্রস, ডেঞ্জার-ডেঞ্জার, ডোন্ট ক্রস!’ কিন্তু শোক মিছিল ক্ষোভে উত্তাল। ‘ডেঞ্জার’ শব্দের কোন মূল্যই নেই মিছিলের কাছে। মিছিল নির্ভয়ে এগিয়ে গেল।

২১ জানুয়ারি পূর্বঘোষিত হরতাল কর্মসূচি পালিত হলো। চারদিক থেকে মানুষের ঢল নামলো পল্টন ময়দানে। মাইক, মঞ্চ কিছুই ছিল না। পল্টনে চারাগাছের ইটের বেস্টনির উপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখতে হলো। বক্তৃতার পর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করি: ২২ জানুয়ারি শোক মিছিল, কালো ব্যাজ ধারণ, কালো পতাকা উত্তোলন। ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মশাল মিছিল, পরে কালো পতাকাসহ শোক মিছিল। ২৪ জানুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল।

২২ জানুয়ারি ঢাকা নগরীতে এমন কোনো লোক দেখিনি যাঁর বুকে কালো ব্যাজ নেই। বাড়িতে, অফিসে সর্বত্রই কালো পতাকা উড়ছে। একমাত্র ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া ঘৃণা প্রকাশের এই প্রতীকি প্রতিবাদ ছিল সর্বত্র। ২৩ জানুয়ারি শহরের সমস্ত অলিগলি থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বের হয় মশাল মিছিল। সমগ্র ঢাকা পরিণত হয় মশালের নগরীতে। সে-এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। চোখে না দেখলে লিখে বোঝানো যাবে না।

২৪ জানুয়ারি সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। সর্বত্র মানুষের একই প্রশ্ন, ‘শেখ মুজিব কবে মুক্তি পাবে?’ ‘কবে আগরতলা মামলা তুলে নেওয়া হবে? ’ঢাকায় এধরনের আলোচনাই চলছিল। হরতালের পরও মিছিলের বিরাম নেই। সমগ্র জনপদ গণঅভ্যুত্থানের প্রবল বিস্ফোরণে প্রকম্পিত, অগ্নিগর্ভ। জনরোষ নিয়ন্ত্রণ করে নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় রাখা যে কত কঠিন সেদিন মর্মে মর্মে অনুভব করেছি। কিছুক্ষণের মধ্যে সেনাবাহিনী, ইপিআর এবং পুলিশ মরিয়া হয়ে ওঠে বিক্ষোভ দমনে। যত্রতত্র গুলি চালাতে থাকে। সে গুলিতেই শহীদদের তালিকায় যুক্ত হয় মতিউর, মকবুল, আনোয়ার, রুস্তম, মিলন, আলমগীরসহ আরো অনেক নাম।

লক্ষ মানুষ নেমে আসে ঢাকার রাজপথে। মানুষের পুঞ্জিভূত ঘৃণা এমন ভয়ঙ্কর ক্ষোভে পরিণত হয় যে, বিক্ষুব্ধ মানুষ ভয়াল গর্জন তুলে সরকারি ভবন ও সরকার সমর্থিত পত্রিকাগুলোয় আগুন ধরিয়ে দেয়। ‘দৈনিক পাকিস্তান’, ‘মর্নিং নিউজ’ এবং ‘পয়গাম’ পত্রিকা অফিস ভস্মীভূত হয়। আগরতলা মামলার প্রধান বিচারপতি এস রহমান তার বাসভবন থেকে এক বস্ত্রে পালিয়ে যায়। নবাব হাসান আসকারি, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য এনএ লস্কর এবং রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধকারী খাজা শাহাবুদ্দীনসহ আরো কয়েক মন্ত্রীর বাসভবনে আগুন দেওয়া হয়।

ঢাকার নবকুমার ইন্সটিটিউশনের দশম শ্রেণীর ছাত্র মতিউর রহমানের লাশ নিয়ে আমরা পল্টনে যাই। লক্ষ লক্ষ মানুষ পল্টনে সমবেত হয়। জানাজা অনুষ্ঠিত হয় পল্টন ময়দানে। বিক্ষুব্ধ জনতা গভর্নর হাউস আক্রমণ করতে উদ্যত। বিনা মাইকে বক্তৃতা করে সংগ্রামী জনতাকে শান্ত করে মতিউরের লাশ নিয়ে পল্টন ময়দান থেকে গণমিছিল নিয়ে আমরা ইকবাল হলের মাঠে আসি। যে মাঠে এসেছিলেন সদ্য-সন্তানহারা শহীদ মতিউরের পিতা আজহার আলী মল্লিক। তিনি ক্রন্দনরত অবস্থায় বলেছিলেন, ‘আমার ছেলে চলে গেছে দুঃখ নাই। কিন্তু আমার ছেলের এই রক্ত যেন বৃথা না যায়।

’ যখন ইকবাল হলে পৌঁছলাম তখনই রেডিওতে ঘোষণা করা হলো ঢাকা শহরে কারফিউ। মতিউরের পকেটে নাম-ঠিকানাসহ এক টুকরো কাগজে লেখা ছিল, ‘মা-গো, মিছিলে যাচ্ছি। যদি ফিরে না আসি মা, মনে কোরো তোমার ছেলে বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য, শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য জীবন দিয়েছে।ইতি- মতিউর রহমান, ১০ম শ্রেণী, নবকুমার ইন্সটিটিউশন। পিতা- আজহার আলী মল্লিক, ন্যাশনাল ব্যাংক কলোনি, মতিঝিল।’

কারফিউর মধ্যেই আমরা মতিউরের লাশ নিয়ে গেলাম ন্যাশনাল ব্যাংক কলোনীতে। আমরা পিতা-মাতার আকুল আর্তনাদের আশঙ্কা করছিলাম। কিন্তু মা শুধু আঁচলে চোখ মুছে বলেছিলেন, ‘আমার ছেলে চলে গেছে দুঃখ নাই! আজ থেকে তুমি আমার ছেলে। মনে রেখো, যেজন্য আমার ছেলে রক্ত দিয়ে গেলো, সেই রক্ত যেন বৃথা না যায়।’

উনসত্তরের ২৪ জানুয়ারি গণআন্দোলন-গণবিস্ফোরণের মধ্যদিয়ে সংঘটিত হয় গণঅভ্যুত্থান। কারফিউর মধ্যে একদিনও থেমে থাকেনি আমাদের সংগ্রাম। দেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানী প্রশাসন বর্জন করেছে। কল-কারখানা, অফিস-আদালত, সচিবালয় সর্বত্র প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের জন্য ধর্ণা দিতেন ইকবাল হলে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের কাছে। কিছুদিনের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ইকবাল হল।

২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আমরা ১১-দফার প্রতি ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীসহ বাংলার সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন আদায় করতে পেরেছিলাম। এরপর সান্ধ্য আইন প্রত্যাহৃত হলে ৯ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ‘শপথ দিবস’ পালন করে। শপথ দিবসে আমার সভাপতিত্বে সভা শুরু হয় এবং আমরা ১০ জন ছাত্রনেতা ‘জীবনের বিনিময়ে হলেও ১১-দফা দাবী বাস্তবায়ন করবো’ জাতির সামনে এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করার শপথ নিয়ে স্লেগান তুলি, ‘শপথ নিলাম শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করবো, শপথ নিলাম শপথ নিলাম মা-গো তোমায় মুক্ত করবো।’

আজ ভাবতে ভালো লাগে, ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি প্রিয় নেতাকে মুক্ত করে স্লোগানের প্রথম অংশ এবং ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানী হানাদারদের কবল থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করে স্লোগানের দ্বিতীয় অংশের পূর্ণ বাস্তবায়ন করেছি। ১৪ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালন ও ডাকের জনসভায় জনতার দাবীর মুখে প্রিয় নেতার ছবি বুকে ঝুলিয়ে বক্তৃতা করি। ১৫ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক ও ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ডঃ শামসুজ্জোহার হত্যাকাণ্ডের  পর পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। সংগ্রামী ছাত্র-জনতা আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও প্রিয়নেতা বঙ্গবন্ধু মুজিবের মুক্তির দাবীতে উত্তাল হয়ে ওঠে। মানুষ ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণে উদ্যত হয়।

২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভা থেকে স্বৈরশাসকের উদ্দেশে আলটিমেটাম প্রদান করে বলি, ‘২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাদের প্রিয়নেতা শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’ ২২ ফেব্রুয়ারি তথাকথিত লৌহমানব আইয়ুব খান আমাদের দাবীর কাছে নতিস্বীকার করে বঙ্গবন্ধু মুজিবসহ সকল রাজবন্দীকে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদানে বাধ্য হয়।

পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠদিন। সেদিন সদ্যকারামুক্ত প্রিয় নেতাকে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক গণসংবর্ধনা প্রদান করা হয়। স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে দিনটির ছবি। এমন একজন মহান নেতার গণসংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। সেদিনের রেসকোর্স ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ, জনসমুদ্র। চিরাচরিত প্রথা ভঙ্গ করে আগেই সভাপতির ভাষণ দেওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। দশ লক্ষাধিক লোক দু’হাত তুলে সম্মতি জানিয়েছিল। বক্তৃতায় আমি বঙ্গবন্ধুকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে বলেছিলাম, ‘প্রিয় নেতা, তোমার কাছে আমরা ঋণী, বাঙালি জাতি চিরঋণী। কারণ তুমি জেল-জুলুম অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছো। তোমার জীবন তুমি বাঙালি জাতির জন্য উৎসর্গ করেছো প্রিয় নেতা। এই ঋণ আমরা কোনদিন শোধ করতে পারবো না। তাই কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞ চিত্তে তোমাকে একটি উপাধি দিয়ে সেই ঋণের বোঝাটা আমরা হালকা করতে চাই। ’দশ লক্ষাধিক লোক দু’হাত উত্তোলন করে সম্মতি জানাবার পর সেই নেতাকে-যিনি জীবনের যৌবন কাটিয়েছেন পাকিস্তানের কারাগারে, ফাঁসির মঞ্চে দাড়িয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন-‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তুমুল করতালির মধ্যদিয়ে সেদিন এই প্রস্তাব গ্রহণ করে বাংলার মানুষ লক্ষ লক্ষ কণ্ঠে ধ্বনি তুলেছিল, ‘জয় বঙ্গবন্ধু।’

সেদিন ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে বাংলার মানুষ সুনির্দিষ্ট আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে সংগ্রাম করেছে। সোনালী সেই দিনগুলির কথা ভাবলে গর্বে বুক ভরে ওঠে। আমরা মানুষের বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়েছি। শহীদ মতিউরের মা ক্রন্দনরত অবস্থায় বলেছিলেন, ‘আমার সন্তানের রক্ত যেন বৃথা না যায়।’ শহীদ মতিউরের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেইনি। ২০ জানুয়ারি আসাদের বীরোচিত আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে যে আন্দোলন রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল, সেই আন্দোলনের সফল পরিণতি বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি, প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার প্রাপ্তি, ’৭০-এর নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ এবং পরিশেষে ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মহত্তর বিজয় অর্জন। আর এসব অর্জনের ড্রেস রিহার্সেল ছিল ’৬৯-এর অগ্নিঝরা দিনগুলি-যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে এবং থাকবে চিরদিন।

 

লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

tofailahmed69@gmail.com

Header Ad

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের এ কুশল বিনিময় হয়।

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া পৌঁছালে উপস্থিত সবাই তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ও সরকারের উপদেষ্টা তার পাশে এসে দাঁড়ান এবং শারীরিক খোঁজখবর নেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের অভিনন্দন জানান এবং দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।

এ সময় এই ৩ উপদেষ্টা বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে দোয়া চান এবং সরকারের সংস্কার কাজে তার সর্বাত্মক সহযোগিতা চান।

এদিকে সেনাকুঞ্জে গেলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এখানে এসেছেন। একযুগ তিনি আসার সুযোগ পাননি। আমরা গর্বিত এই সুযোগ দিতে পেরে। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা সত্ত্বেও বিশেষ দিনে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আপনার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি।

Header Ad

দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম

ছবি: সংগৃহীত

আবারও স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এবার ভরিতে ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আজকেও ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩ হাজার ৬৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গয়নার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।

স্বর্ণের দাম কমানো হলেও দেশের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। দেশে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৭৮ টাকায়। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৬ টাকায়।

এর আগে, সবশেষ গত ১৯ নভেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় টানা চার দফা কমার পর ভরিতে ২ হাজার ৯৪০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।

এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩১ হাজার ১৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯২ হাজার ২৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছে গত ২০ নভেম্বর থেকে।

এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৫১ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ৩০ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ২১ বার।

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ
দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম
‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত