দুর্নীতি রোধে শক্ত অবস্থান জরুরি
সম্প্রতি ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়ন অথবা প্রকল্প তদারকির দায়িত্ব ডিসিদের দিয়েছেন। পরিকল্পনামন্ত্রীও বলেছেন, আপনারা সুপারভাইজ করেন এবং আপনাদের জানিয়েই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তবে মেকানিজম যা আছে, তাতে কোথাও কোনো ত্রুটি হলে অথবা দুর্নীতি হলে ডিসিরা রিপোর্ট করতে পারেন। মন্ত্রণালয় তখন সেভাবেই অ্যাকশনে যায়। প্রকল্প পরিচালনা অথবা কমিটিতে ডিসিদের রাখা না রাখা সরাসরি সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
তবে আমার মনে হয়, যে মেকানিজম আছে, এটি ঠিকই আছে। প্রকল্পগুলো ডিসিদের আয়ত্বেই থাকে। কোথাও গণ্ডগোল হলে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আইনগতভাবে সে ক্ষমতা তাদের দেওয়াই আছে।
জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে প্রকল্পগুলি নেয়া হয়। তবে জনপ্রতিনিধিরা কিন্তু সরাসরি প্রকল্পগুলো চালনা করে না। ডেভেলপমেন্ট প্রসেসটা কিন্তু স্থানীয় সরকারে যারা আছে, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, রোডস এন্ড হাইওয়েস, এলজিইডি–তারাই করে। জনপ্রতিনিধিদের এভাবে সরাসরি ইনভলব হওয়া ঠিক না।
বরং ব্যুরোক্রেসির মাধমেই সব দেশে কাজ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বড় প্রকল্প হলে সেটি সরাসরি সরকার পরিচালনা করে। ছোট প্রকল্পের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে ডিসিদের হাতে ক্ষমতা থাকে। তবে যেটির অভাব মনে হয়, সেটি হলো–সুপারভাইজ ঠিকমতো হয় না। যারা সুপারভাইজ করবে তারাই আবার প্রকল্প অনুমোদন দেয় এবং তারাই আবার পেমেন্ট করে। অথচ সুপারভিশন করা এবং পেমেন্ট করা এগুলো আলাদা করা উচিত। যেমন–ইঞ্জিনিয়ার সাহেব সুপারভিশনও করছে, আবার পে অর্ডারও লিখছে, এটি তো ঠিক হচ্ছে না। এজন্য কাজ শেষ হওয়ার আগেই পে করে দেয় অনেকে।
দুর্নীতিবাজ কারা, এটি ডিসিদেরও জানার কথা। কে সৎ অফিসার আর কে দুর্নীতিবাজ অফিসার সবাই সবটা জানে। প্রকল্প নেয়ার সময় এগুলি দেখে নেয়া উচিত। স্থানীয় সরকারের অধীনে প্রকল্পগুলোর টাকা-পয়সা নয়-ছয় হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সঠিকভাবে কাজ হচ্ছে না কিন্তু ঠিকই বিল নিচ্ছে। এখানে রাজনৈতিক একটা প্রভাবও জড়িত থাকে আমি দেখি। যারা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, তারা রাজনৈতিক নেতাদের খুশি করে। পলিটিক্যালি একটা শেল্টার নেয়। আমার মনে হয় সৎ ও পরিশ্রমী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কি না হচ্ছে? হরিলুট হচ্ছে। যারা এগুলোতে এপ্রোভাল দেন তারাও নিশ্চয় জানেন। এগুলো কিভাবে এপ্রোভাল দেওয়া হয়!
দুর্নীতি রোধে শক্ত একটি অবস্থানের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। একটা বালিশের দাম কিভাবে পাঁচ হাজার টাকা হয়? এই যে একটা লুটতরাজের উৎসব শুরু হয়েছে, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। ডিসিদের ক্ষমতা নেই, সেটি আমি বলছি না, ডিসিদের পাওয়ার আছে। তবে একসময় যেটি ছিল, সেটি হয়তো নেই। এরপরও সার্বিক তত্ত্বাবধান ডিসিরাই করে। পরিকল্পনামন্ত্রী নিজেও বললেন, আপনারা রিপোর্ট করেন এবং আপনাদের কনসাল্ট করেই প্রকল্পগুলো নেওয়া হয় এবং এটিও বাধ্যতামূলক।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এসএ/