শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে নৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে
সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কিছুই ঘটেছে, ঘটছে। যার মর্মকথাটি হচ্ছে নৈতিকতা। নৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। এই নৈতিক সংকট এবারই প্রথম নয় এই সরকারের আমলে। কারণ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের ঘটনা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের ঘটনা এবং এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে; কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সম্মিলিত আন্দোলন ছিল। সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তিতে ধস নামিয়েছে। বর্তমান সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। এখন প্রশ্নবিদ্ধ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নৈতিকতার মানদণ্ড নিয়ে।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কি দাবি আছে, না আছে সেটি পরে বিবেচ্য। তবে গণমাধ্যমে উপাচার্য সংক্রান্ত যে তথ্য এসেছে, উপাচার্য তার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন স্বপদে বহাল থেকে। একজন উপাচার্যের অপ্রীতিকর কথাবার্তা এবং আচরণে ছাত্র-ছাত্রীসহ পুরো জাতি হতাশ। উপাচার্যের ভাষা এমন হওয়া কোনোভাবেই সমীচীন নয়।
আমি সবসময় বলে এসেছি, আমাদের দেশে শিক্ষা এবং শিক্ষক কোনটিও ঠিক নেই। ঠিক জায়গায় নেই। শিক্ষাঙ্গন নিয়ে শুরু হয়েছে এসব রাজনীতি। কিন্তু সেটি বুঝতে পারছে না সরকার। উপাচার্য প্রত্যাহারকে তারা তাদের রাজনৈতিক পরাজয় ভাবে। দেশকে জলাঞ্জলি দিয়ে শিক্ষার্থীদের জলাঞ্জলি দিয়ে সরকার যদি নিজের মান মর্যাদা রক্ষা করতে চায় তাহলে আমাদের বলার কিছু থাকে না।
অনশনরত ছাত্ররা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাদের হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এমন মানবেতর অবস্থা সত্যিই বিরল। পৃথিবীর কোথাও এই ধরনের নজির নেই। অথচ এই দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ, সংবিধানের ৭(১) ধারা অনুযায়ী। সরকার মালিক নয়, প্রধানমন্ত্রী মালিক নন, মন্ত্রীপরিষদ মালিক নয়। শিক্ষামন্ত্রী অনুরোধ জানিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের ঢাকায় এসে আলোচনা করতে। আমি মনে করি, তারা ভাল কাজ করেছে। তারা যুক্তিযুক্ত কাজ করেছে। মন্ত্রী মানে জনগণের সেবক। জনগণের সেবায় মন্ত্রীকে যে কোনো জায়গায় যেতে হতে পারে। কাজেই সিলেটে না গিয়ে মন্ত্রী যদি তাদের ঢাকায় আসতে বলেন, সেটি অযৌক্তিক কাজ করেছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় যে ধস নেমেছে, তার একটি অংশ হলো আজকের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট
এসএ/