মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২০ কার্তিক ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন ও আমলাতন্ত্র

রংপুরের ডিসি মহোদয় যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে ‘স্যার’ সম্বোধন করতেন তাহলে তার মান সম্মান কোনোভাবে কমে যেত না বরং বেড়ে যেত। একইভাবে, উক্ত শিক্ষক যদি ডিসি মহোদয়কে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতেন তাতে তারও মান সম্মানের একটুও হানি হতো না বরং বেড়ে যেত। দুজনই কিন্তু দুজনের সুপিরিয়রিটি দেখাতে চেয়েছেন। তবে, ডিসি একটু বেশি দেখাতে চেয়েছেন এবং স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, তাদের স্যারই বলতে হয়, কারণ তিনি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা— যারা নিজেদের সবার চেয়ে আলাদা ভাবেন।

কেন ভাবেন তার সে রকম কোনো উত্তর নেই। তবে, শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গে বিরল এক ধরনের প্রতিবাদ করে বিষয়টিকে অনেকের মাঝে পৌঁছে দিতে পেরেছেন— সেটির জন্য তাকে ধন্যবাদ। আমাদের দেশের শিক্ষকরা কিন্তু সেই জায়গাতে নেই যে, সমাজের সবাই তাদের সম্মান জানাবে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ সেই জায়গাটি দখল করেছেন কিন্তু সাধারণ অর্থে সবার ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব হয়নি, আর তাই সমাজ সব শিক্ষককে মোটামুটি একই মানদণ্ডে মাপতে চায়। এটিও একেবারেই ঠিক নয়।

সেনাবাহিনীর জেনারেলদের ভেতরেও কেউ কেউ আছেন শিক্ষকদের ‘স্যার’ বলেন, তাতে তাদের সম্মানের কোনো হানি হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সেনাবাহিনী সম্পর্কে আমরা সোচ্চার ছিলাম যে, এত গরিব দেশে সোনবাহিনীর পেছনে এত খরচ, বসে বসে তাদের দেশ পালছে কেন। সেই সেনাবাহিনী কিন্তু এখন বড় ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ বাহিনীতে পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শন করে লাখ লাখ ডলার দেশে নিয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, দেশেও রয়েছে তাদের বিভিন্ন সেক্টরে ব্যবসা। কাজেই সেনাবাহিনী নিয়ে এখন তেমন কথা নেই। কিন্তু আমাদের এ সব প্রশাসকদের নিয়ে কী হবে? সমাজের কী হবে? এখনো সবাই, উচ্চশিক্ষা নেওয়ার পরেও একজন প্রশাসক হওয়ার জন্য অর্জিত সববিদ্যা জলাঞ্জলি দিয়ে কেরানী হওয়ার জন্য পাগলপ্রায়।

দেশের সত্যিকার উন্নয়নের জন্য আমাদের দেশে প্রয়োজন প্রচুর প্রকৃত গবেষক (শুধু ডক্টরেট নামধারী নয়), প্রকৃত বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ, শিক্ষাবিদ, আবিষ্কারক, উদ্ভাবক, দরকার ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা যারা অন্যের কর্মসংস্থানে ব্যবস্থা করতে পারেন, ব্যবসায়ী যারা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারেন, প্রয়োজন দক্ষ জনবল তৈরি যারা দেশে ও বিদেশে দক্ষতার ছাপ রেখে দেশের উন্নয়নে প্রকৃতঅর্থে অবদান রাখতে পারেন।

আমাদের দরকার প্রচুর ‘ভালো ডাক্তার’। আমরা প্রতিবছর হাজার হাজার ডাক্তার বানাচ্ছি কিন্তু লাখ লাখ রোগী চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন ভারত, সিঙ্গাপুর আর থাইল্যান্ডে। ডাক্তারদের তো যন্ত্র বানালে হবে না, তাদের মানবিকতাও শিক্ষা দিতে হবে। মানুষের সঙ্গে কীভাবে, রোগীর সঙ্গে অভয়বানী দিয়ে কথা বলতে হয়— তা আমাদের দেশের অধিকাংশ ডাক্তারই জানেন না। ফলে অসচ্ছল রোগীও জামিজমা বিক্রি করে ভারতে যায় চিকিৎসার জন্য। সেখানকার ডাক্তাররা জানেন রোগীদের সঙ্গে, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়। চিকিৎসা মানেই শুধু গন্ডায় গন্ডায় টেস্ট করানো নয়, সেটি তারা বুঝেন। কিন্তু এ সব বিশেষজ্ঞ তৈরির কোনো উদ্যোগ নেই বরং পড়াশুনা করে এসে সবাই প্রশাসক হওয়ার জন্য ব্যস্ত, মহাব্যস্ত। তাই, ডাক্তার হচ্ছেন ম্যাজিস্ট্রেট, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছেন এসিল্যান্ড, কৃষিবিদ হচ্ছেন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ।

জাতীয় জীবনে এটির প্রভাব মারাত্মক নেগেটিভ কিন্তু কে এগুলো নিয়ে চিন্তা করবে? প্রশাসক হয়ে সবাই জনগণের কাছ থেকে ‘স্যার’ শোনার জন্য ব্যস্ত, মহাব্যস্ত। তারা যেন সেই ব্রিটিশ রাজ্যে বাস করছেন। চারদিকে শুধু প্রশাসক। আর আমরা চিকিৎসা করাচ্ছি দেশের বাইরে। প্রকৌশলী নিয়ে আসছি বিদেশ থেকে, আমাদের রাস্তা, ব্রিজ তৈরি করে দিচ্ছেন বিদেশি প্রকৌশলীরা। আর আমাদের প্রকৌশলীরা হচ্ছেন প্রশাসক। কেন? সবাই তাদের ‘স্যার’ বলবেন, শক্ত করেই বলবেন। আত্মীয়-স্বজন বলতে পারবে আমার ভাগ্নে অমুক জেলার ডিসি, ওমুক উপজেলার ইউএনও। সমাজও তাতে বেজায় খুশী। আমার চাচা সচিব।

দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকা দরকার, কর্মসংস্থান বাড়ানো দরকার আর এগুলোর জন্য প্রয়োজন উদ্যেক্তা, ব্যবসায়ী। উদ্যোগী মানুষ যারা প্রকৃতঅর্থে দেশের উপকার করছেন। কিন্তু দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনি ব্যবসা করবেন, উদ্যোক্তা হবেন, এনজিও কর্মী হবেন আপনাকে যেতে হবে ওইসব প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে, যারা আপনার ফাইল আটকে দিয়ে মজা লুটছেন, ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। দেশ কেমনে আগাবে? দেশের সাধারণ মানুষ কীভাবে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে। পৃথিবীর ধনী গরিব সব দেশেই সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা কাজ করে।

আমাদের দেশের উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রভূত অবদান রয়েছে। অনেক সংস্থা বিদেশ থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সাহায্য নিয়ে আসে কিন্তু ‘এনজিওব্যুরো’ নামে যে প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে সেখানে গিয়ে আপনাকে ধরনা দিতে হবে দ্বারে দ্বারে— আপনার সেই অর্থ ছাড়ের জন্য। এখানেও সেই ‘আমলাতন্ত্র’ যার কাছে সবাই জিম্মি। আপনাকে অনেক কৌশলে উৎকোচ দিতে হবে (কাগজের মধ্যে, ফাইলের মধ্যে, যাতে কোনো প্রমাণ না থাকে)। এগুলো দেখার কেউ নেই।

ব্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ যে প্রতিষ্ঠান দেশে সৃষ্টি করেছেন তাতে লাখ লাখ মানুষ কাজ করছেন। ফজলে হাসান ছাড়াও অনেক ছোট ছোট এনজিও গড়ে তুলেছেন এক একজন সফল ব্যক্তি, যারা দেশকে প্রকৃতঅর্থেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করছেন। কিন্তু তাদের পদে পদে বাঁধা দেওয়ার জন্য রয়েছেন এ সব প্রশাসনিক কর্মকর্তা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকও কিন্তু তার একটি বিদ্যালয় নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলেন রংপুরের ডিসি মহোদয়ের কাছে।

আমাদের প্রশাসনে যে ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য কর্মকর্তারা ‘স্যার’ শুনতে চান তার পেছনে রয়েছে ঔপনিবেসিক মানসিকতা।

ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের মতো ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস গঠন করে সেখানে ভারতীয়দের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ১৮৩৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আইন পাশ করা হয়। কিন্তু ১৮৫৩ সাল পর্যন্ত ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে ভারতীয়দের অংশ নেওয়া বন্ধ করে রাখা হয়েছিল আইসিএসে থাকা ব্রিটিশ অফিসারদের কারসাজিতে। এ সময় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতীয়দের আইসিএসে নিয়োগদান প্রশ্নে আইনি বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ আইন প্রণেতারা ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের মতো একটি বিশুদ্ধ সার্ভিসে ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্তর বিষয়ে আপত্তি তোলেন। তাদের বক্তব্য অনেকটাই এমন ছিল যে, ভারতীয়রা নোংরা ও দুর্নীতিগ্রস্ত, ফলে পুরো ব্যবস্থাটা হুমকির মুখে পড়বে। তখন ভারতীয়দের ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে তৎকালীন ভারত সচিব বলেছিলেন, আমরা ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের আদলে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে এমন সব ভারতীয়কে নিয়োগ দেব, যারা দেখতে হবে ভারতীয় কিন্তু চিন্তায় হবে ব্রিটিশ। ১৯৫৩ সালেই আইসিএসে ভারতীয়দের অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত হয়। কিন্তু ১৯৬৩ সালের আগ পর্যন্ত কোনো ভারতীয় আইসিএস অফিসার হতে পারেনি। কারণ আইসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো লন্ডনে। সে সময় বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে পয়সা খরচ করে লন্ডনে যাওয়া ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ১৯৬৩ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে আইসিএস অফিসার হন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এভাবেই স্থানীয়রা ব্রিটিশ কাঠামোর প্রশাসন ব্যবস্থায় ঢুকে পড়ে, যারা এদেশের মানুষ কিন্তু ব্রিটিশ রাজকর্মচারী হয়ে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবে। ধীরে ধীরে সেই আমলাতন্ত্র সমগ্র ভারতবর্ষের শাসনকাঠামোতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে।

শরীরের রং ভারতীয় কিন্তু চিন্তা চেতনায় ইংরেজ শাসক! পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর ভারত থেকে বেশ কিছু আইসিএস অফিসার পাকিস্তানে চলে আসেন এবং পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থায় জেঁকে বসেন। স্বাধীন দেশে কাজ করতে তারা উপযুক্ত নন। কিন্তু শুরুতে পাকিস্তানের রাজনীতিতে যোগ্য রাজনীতিবিদ না থাকায় তারাই হয়ে পড়েন পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্মাতা। কিছু দক্ষ রাজনীতিবিদ ছিলেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন বাঙালি। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে বাঙালিরা ছিল অনেকটা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। শুরু থেকেই পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ চলে গিয়েছিল ভারত থেকে আসা আমলাতন্ত্রের হাতে। পাকিস্তানে সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের দৌরাত্মে আজ পর্যন্ত কোনো সরকার তার পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। ১৯৫৪ সালের ২৪ অক্টোবর পাকিস্তান গণপরিষদ যখন দেশটির সংবিধান রচনায় ব্যস্ত তখনই সামরিক-বেসামরিক আমলাদের প্ররোচনায় দেশটির গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ সেই গণপরিষদ ভেঙে দেন। কারণ আমলাদের শঙ্কা ছিল পাকিস্তানের সংবিধান প্রণীত হলে দেশের শাসনভার রাজনীতিবিদ তথা জনপ্রতিনিধিদের হাতে চলে যাবে। আর তখন তাদের রাজনীতিবিদদের অধীনে কাজ করতে হবে। উল্লেখ্য গোলাম মোহাম্মদও একজন আমলা ছিলেন।

আমাদের নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন আসলে লিঙ্গসমতার একটি ভালো উপায় বলে কেউ কেউ বলছেন, আবার অন্য একদল বলছেন এটি অত্যন্ত আপত্তিকর। নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন করা এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কেন? তাদের স্যার বললে তারা খুব খুশী হন। আমরা দুবার স্বাধীন হয়েছি কিন্তু মন মানসিকতায় আমরা ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিই রয়ে গেছি। ব্রিটিশদের কথা না হয় বাদই দিলাম, কারণ তারা তো সারাবিশ্ব দাপিয়ে বেড়িয়েছে।

পাকিস্তানের দিকে যদি তাকাই তাহলে আমরা কি দেখতে পাই? পাকিস্তান দুটি দলে বিভক্ত। সেনাবাহিনী আর তার বিরোধী। স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানে সরাসরি কিংবা ছদ্মবেশি মার্শাল ল-ই চলছে। সেখানকার সেনাবাহিনী মনে করে তারাই দেশের সবকিছু। সিভিলিয়নরা কিছু বোঝে না, তাদের হাতে দেশ ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাই তারা সেখানে শক্তিশালী কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিবিদ তৈরি হতে দেয়নি। আমাদের দেশের সেনাবাহিনী নিয়েও কেউ কেউ বলতে চান যে, ইন্টারমিডিয়েট পাস, তাদের বুদ্ধি থাকে হাঁটুর তলে। এটিও ঠিক নয়, কারণ শুধু পাস দিয়ে সবকিছু যাচাই করা যায় না। বেশ সুচতুর এবং মোটামুটি অলরাউন্ডার হয় সেনা অফিসাররা। কিন্তু তাই বলে তারা সবকিছু বুঝেন আর সিভিলিয়নরা কিছুই বোঝে না— এই ধরনের মানসিকতা কিছু কিছু কর্মকর্তা পোষণ করেন। কারণ তাদের সুযোগ সুবিধা বেশি, থাকেন আরামে, অর্থের চিন্তা নেই, স্মার্টনেস তো এমনিতেই চলে আসে।

স্রষ্টা পৃথিবীকে সৃষ্টিই করেছেন যেখানে সব ধরনের পেশাজীবীদের দরকার আছে। এখানে কারুর গুরুত্ব কোনোভাবেই কম নয়। স্রষ্টার সৃষ্টির রহস্যকে ধারণ করে সবাই সবাইকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে— আমরা যে যে পেশাতেই থাকি না কেন। এ দেশ তো আমাদের। বিশ্বের দরবারে যদি কোনো সম্মান আমরা অর্জন করতে পারি, তার ভাগিদার তো সবাই। সবাই আমাদের বাঙালি বলেই চিনবে। আইন করে কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ বলানো বা না বলানো যায় না। এটি ভেতর থেকে আসে। আমরা সবাই সবাইকে সম্মান করি। তাতে কারুরই কোনো ক্ষতি নেই। আমরা যে অবস্থানেই থাকি না কেন, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষকদের তো আমরা এখনো ‘স্যার’ বলি। একটি নাটকে প্রয়াত হুমায়ুন ফরিদীর সচিব চরিত্রে দেখেছিলাম তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তিনি তার ছাত্রের মতো আচরণ করেননি কিন্তু শিক্ষকের মতোই আচরণ করে যাচ্ছেন। সচিব মহোদয় কোনো কথা বলছেন না। এক পর্যায়ে মুখ খুলে বললেন, ‘আপনার তো দেখছি এত বছরে কিছুই বদলায়নি, যা ছিলেন তাই আছেন।’ একটিবারও ‘স্যার’ বলছেন না। আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের কাছে এ ধরনের আচরণ চাই না। শিক্ষণীয় আচরণ দেখতে চাই।

মাছুম বিল্লাহ: সাবেক শিক্ষক, ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজ

আরএ/

Header Ad

কৃষক বাবাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে পুলিশের এএসপি হন শতকোটি টাকার মালিক হারুন

সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ। ছবি: সংগৃহীত

মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের। ২০তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় পুলিশে যোগ দিলেও তার বাবা মো. হাসিদ ভূঁইয়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তার বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা পরে হারুনের পুলিশের চাকরির ক্ষেত্রে সহায়তা করে।

২০১১ সালের ৬ জুলাই সংসদ ভবনের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদীন ফারুককে মারধর করে আলোচনায় আসেন হারুন। এ ঘটনার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা অর্জন করেন তিনি এবং তার পর থেকেই একের পর এক পদোন্নতির মাধ্যমে পুলিশের অন্যতম প্রভাবশালী কর্মকর্তায় পরিণত হন।

হারুন অর রশীদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাতারাতি সম্পদের পাহাড় গড়েন। বলা হয়, সাধারণত হেলিকপ্টার ছাড়া তিনি বাড়িতে আসতেন না। তার বিরুদ্ধে দেশ ও বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচারের অভিযোগও ওঠে। মিঠামইনে নিজ গ্রামের বাড়িতে শতকোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলেন বিলাসবহুল 'প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট', যেখানে রয়েছে হেলিপ্যাড এবং অত্যাধুনিক সুইমিং পুল।

প্রেসিডেন্ট রিসোর্টটি একসময় ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রিসোর্টের জৌলুসও কমে যায় এবং অবশেষে রিসোর্টের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেখানে জনমানবহীন ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হারুনের রিসোর্টটির জন্য এলাকার সংখ্যালঘু ও অন্যান্য ভূমি মালিকদের ভয় দেখিয়ে জমি দখল করা হয়েছিল এবং অধিকাংশ মালিক এখনো তাদের জমির মূল্য পাননি। স্থানীয় সংখ্যালঘু প্রতিনিধি দীলিপ চৌধুরী জানান, তার কোটি টাকার মূল্যমানের জমি হারুন ভয় দেখিয়ে দখল করেছেন, কিন্তু টাকা পরিশোধ করেননি। একইভাবে মানিক মিয়া নামে আরেক ব্যক্তি তার ৫ একর জমির কোনো মূল্যই পাননি।

স্থানীয়রা বলছেন, ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করা হারুন পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাতারাতি বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন।

Header Ad

হত্যা মামলার আসামি হয়েও পাসপোর্ট পেতে যাচ্ছেন শিরীন শারমিন চৌধুরী

সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী-এমপিদের লাল পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এর ধারাবাহিকতায় বাতিল করা হয়েছে সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কূটনৈতিক পাসপোর্টও। রংপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন শ্রমিক নিহতের ঘটনায় করা হত্যা মামলার আসামি শিরীন শারমিন আত্মগোপনে রয়েছেন এবং গ্রেপ্তার এড়াতে ঢাকায় সাধারণ ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।

৩ অক্টোবর, তিনি এবং তার স্বামী সৈয়দ ইশতিয়াক হোসাইন সাধারণ ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। অভিযোগ রয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত না হয়ে তারা বাসায় বসেই আঙুলের ছাপ ও আইরিশ স্ক্যান জমা দেন। অথচ নিয়ম অনুসারে, এসব তথ্য পাসপোর্ট অফিসে সরাসরি উপস্থিত হয়ে জমা দিতে হয়।

এ প্রসঙ্গে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, শিরীন শারমিন চৌধুরী ও তার স্বামী অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পাসপোর্ট প্রক্রিয়ায় বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন এবং এর জন্য মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করছেন। যদিও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে আইনের সীমার মধ্যে থেকে পাসপোর্ট অধিদপ্তর কাজ করে।

সাবেক এ স্পিকারের বাসার ঠিকানা হিসেবে ধানমণ্ডির একটি বাসার উল্লেখ থাকলেও সেই ঠিকানায় তাদের পাওয়া যায়নি বলে জানান রক্ষণাবেক্ষণকারী কর্মচারী শাহাবুদ্দীন। তিনি জানান, শিরীন শারমিন এ বাসায় থাকেন না এবং এখানে তার উপস্থিতি গত কয়েক মাসে দেখা যায়নি।

পাসপোর্ট বিষয়ক এই বিতর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই সময়ে হত্যা মামলার আসামিদের পাসপোর্ট প্রক্রিয়া সহজ করা সন্দেহজনক। এতে বিচার প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ সরকার এ ধরনের সুবিধা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং জানান, নিয়মের বাইরে কেউ এভাবে সুবিধা নিতে পারেন না। এদিকে মামলার তদন্তকারী রংপুর মহানগর পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, শিরীন শারমিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের জন্য খোঁজা হচ্ছে এবং তার সন্ধান পাওয়া মাত্রই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Header Ad

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ছাত্রদলের দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত

ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৭ নভেম্বর মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় ঢাকাস্থ ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন। এছাড়া ওই দিন সকাল ১০টায় শহীদ রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠের কর্মসূচি রয়েছে। পাশাপাশি দিবসটি উদযাপনে সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পোস্টার লাগানো এবং লিফলেট বিতরণ করা হবে।

পরদিন, ৮ নভেম্বর রাজধানীতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি আয়োজিত র‍্যালিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে কর্মসূচিকে সফল ও সার্থক করার আহ্বান জানিয়েছেন।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

কৃষক বাবাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে পুলিশের এএসপি হন শতকোটি টাকার মালিক হারুন
হত্যা মামলার আসামি হয়েও পাসপোর্ট পেতে যাচ্ছেন শিরীন শারমিন চৌধুরী
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ছাত্রদলের দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা
শেখ হাসিনা কীভাবে ভারতে আছেন, জানতে চাইলেন ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী
মানুষ আগেও ভোটারবিহীন সরকারকে মানেনি, এখনও মানবে না: মির্জা আব্বাস
মাওলানা সাদকে দেশে আসতে দিলে অন্তর্বর্তী সরকারের পতন
সরকারি অনুষ্ঠানে স্লোগান ও জয়ধ্বনি থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা
বেনাপোল স্থলবন্দরে ভোক্তা অধিকারের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
গুম কমিশনে জমা পড়েছে ১৬০০ অভিযোগ, সবচেয়ে বেশি র‌্যাবের বিরুদ্ধে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে হত্যার হুমকি, থানায় জিডি
মালয়েশিয়ায় বন্দিশিবির থেকে ছয় বাংলাদেশিকে উদ্ধার, মানবপাচার চক্র আটক
১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম কমলো ১ টাকা
বিডিআর হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তে হাইকোর্টের জাতীয় কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন নয়
বাংলাদেশে ইজতেমা একবারই হবে, দুবার নয়: মহাসম্মেলনে বক্তারা
এক মাস পর খাগড়াছড়ি ও সাজেক পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত
মার্কিন নির্বাচনে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৬ প্রার্থী
শাকিব খানের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন, মুখ খুললেন পূজা চেরি
মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা রেখেই ঢাবির ভর্তি কার্যক্রম শুরু
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলায় ব্যালট পেপার
প্রশ্নবিদ্ধ সাকিবের বোলিং অ্যাকশন, দিতে হবে পরীক্ষা