নির্বাচন কমিশন গঠনে এখনই আইন হতে পারে
সংলাপ অসাংবিধানিক। বিএনপি যা বলছে সেটিও অসাংবিধানিক; সরকার যা করছে সেটিও অসাংবিধানিক। সংবিধানে আছে ১১৮/১ ধারা অনুযায়ী একটি আইন হবে এবং আইনের অধীনে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন করবেন। তবে যে কথাটি অলিখিত আছে–রাষ্ট্রপতির নিজস্ব ক্ষমতা খুবই সীমিত। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় তিনি কাজ করেন। রাষ্ট্রপতি খুব ভালো মানুষ; কিন্তু আসলে তিনি অনেক কিছুই করতে সক্ষম নন।
সংলাপ বিষয়টাই সংবিধানবিরোধী। সংবিধানে সংলাপের কথাও নেই, সন্ধান কমিটির (সার্চ কমিটি) কথাও নেই। উপরন্তু সন্ধান কমিটিভিত্তিক আমাদের অভিজ্ঞতা খুবই তিক্ত। বর্তমান নির্বাচন কমিশন এই প্রক্রিয়ায় হয়েছিল এবং এই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ধসিয়ে দিয়েছে।
আমার মতে, সরকার আইন করুক। আইন করার যথেষ্ট সময় আছে। ২০০৮ সালে যখন ড. শামসুল হুদা কমিশন চলে যায়, তখন তারা আইনের খসড়া দিয়েছেন; কিন্তু সরকার আইন করেনি, অথবা সরকারের তা করতে মনে নেই। আর বাংলাদেশে রাতারাতি আইন তৈরি করার দৃষ্টান্ত আছে। সরকারের যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে, আইন করতে পারে। আইন করার যথেষ্ট সময় ও সুযোগ আছে। সেজন্য সরকারের সদিচ্ছা এবং আগ্রহ থাকতে হবে।
যদি সত্যটা বলি–সংলাপ নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। কাজেই এর ভালো-মন্দ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। আমি মনে করি দেশে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল থাকলেও, কার্যত রাজনীতিতে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। এই দেশে বর্তমানে রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল বলতে আছে কেবল আওয়ামী লীগই ক্রিয়াশীল। অন্য দলের তেমন কোনো কার্যকারিতা নেই। আবার রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাও সীমিত।
সার্চ কমিটি বলে একটা কমিটি করা হচ্ছে। আমি বুঝি না এর নাম ‘সার্চ কমিটি’ কেন? এটি তো বাংলাদেশ। বাংলা আমাদের ভাষা। কাজেই আমি মনে করি এটি ‘সন্ধান কমিটি’ হওয়া উচিত। যা-ই হোক, যেখানে রাজনৈতিক দল বলতে কার্যকারিতা আছে কেবল আওয়ামী লীগের, সেখানে অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ একটি লোকদেখানো বিষয়। যার কার্যত কোনো ভূমিকা নেই বলেই আমি মনে করি। এই সংলাপে জনমানুষের আশা ভরসার প্রতিফলন ঘটবে বলে মনে হয় না।
সবশেষে শুধু এটুকুই বলব–বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। দেশ স্বাধীন করেছি। অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা আমাদের ছিল। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে যে প্রতিহিংসার রাজনীতি র বীজ বপন করা হয়েছিল, তা ক্রমে বেড়ে মহীরুহতে রূপান্তরিত হয়েছে। স্বপ্নপূরণ হয়নি। আফসোস হয়। কে জানে, এই হতাশা নিয়েই হয়তো একদিন মরে যেতে হবে!
লেখক: শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট
এসএ/