সৃজনশীল প্রকাশনা গড়ে উঠেছে একুশে বইমেলাকে ঘিরে
একুশে বইমেলা প্রকাশকদের কাছে সবসময়ই একটি আরাধ্য বিষয়। কারণ, সৃজনশীল প্রকাশনা গড়েই উঠেছে একুশে বইমেলাকে ঘিরে। বাংলাদেশে সৃজনশীল প্রকাশনার যে উন্মেষ ঘটেছে, সেটি কিন্তু বইমেলাকে আশ্রয় করে। সুতরাং অমর একুশে বইমেলা নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রস্তুতি ভালো ছিল এবং বইমেলা ভালোভাবেই শুরু হয়েছে, সেটি ভালোভাবেই চলবে এবং ভালোভাবেই শেষ হবে। প্রতিবছর বইমেলার প্রস্তুতি আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়।
প্রতিবছরই ফেব্রুয়ারি আসে, প্রতিবছরই বইমেলা শুরু হয়। তবে কিছুটা শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, সেটি মূলত কাগজের মূল্যবৃদ্ধির কারণে। কাগজ যে শুধু দামেই বৃদ্ধি পেয়েছে তা নয়। দাম বৃদ্ধি হলে আমরা বর্ধিত দামে কাগজ কিনি। এই মূল্যে যদি কস্টিং হিসেব করে বইয়ের দাম রাখি, তাহলে বইয়ের যে দাম পড়বে, সেটি অনেক বেশি হবে, যেটি আমরা রাখতে চাই না। এত বেশি দামে আমরা বইয়ের দাম রাখার পক্ষে নই। এক কথায় বলতে গেলে, অধিকহারে বইয়ের মূল্যবৃদ্ধি করার সুযোগ আমাদের কাছে নেই। সেক্ষেত্রে দামটিও একটি বিষয়। আমাদের জন্য দুঃখজনক হলো, প্রকাশকদের শুরুতেই এই প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এতে হয়তো বইয়ের প্রকাশনা অল্প হলেও কমবে এবং কিছু বইয়ের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং সেটি হয়তো ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়বে। আমার কথা হচ্ছে, একটি সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই আমাদের বইমেলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে পাঠক যেন বই বিমুখ না হয়ে পড়ে সেদিকটি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি। কারণ, আমাদের উদ্দেশ্যই পাঠককে বইয়ের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা। পাঠক যেন কোনোভাবেই বই থেকে দূরে সরে না যায় ,পাঠক বই বিমুখ হয়ে না পড়ে সেদিকটি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েই বইয়ের দাম নির্ধারণ করে থাকি। এবারের একুশে বইমেলা গতবছরের থেকে আরও বেশি পাঠককে বইয়ের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবে সেই আশা আমাদের আছে।
আমরা জানি সৃষ্টিশীলতার কোনো বলয় নেই। কাজেই বাংলা সাহিত্য নিয়ে আমরা সবসময় আশাবাদী। বহির্বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষি পাঠক বৃদ্ধিসহ বিশ্ব সাহিত্য অঙ্গনে বাংলা সাহিত্যকে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক বইমেলায় অংশগ্রহণ করেছি। এটি ফলপ্রসূ হবে তখন, যখন বিদেশি কোনো প্রকাশক একটি বাংলা বইকে নিজে উদ্যোগী হয়ে অনুবাদ করবেন এবং সেটি প্রকাশ করবেন। তাহলে সেটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে বাংলা সাহিত্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেতে পারছে না। তবে আমরা আশাবাদী অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আমাদের বাংলা সাহিত্য সুদূরপ্রসারী ছাপ রাখতে সক্ষম হবে এবং বিশ্বসাহিত্য অঙ্গনে প্রশংসিত হবে।
ফরিদ আহমেদ: প্রকাশক, সময় প্রকাশন