স্বল্প খরচে জনশক্তি রপ্তানিতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি
মালয়েশিয়ায় লোক নিয়োগের যে প্রক্রিয়া বাংলাদেশে চলছে, সেটি হযবরল হয়ে গেছে অনেক বছর আগেই। আমি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে আসি, তার আগে আমাদের একটি সিস্টেম ছিল, যেখানে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াতে লোকজন যেতেন। তারা শ্রমিক হিসেবে সেখানে যেতেন। সেই প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০ হাজার লোক আমি নিতে পেরেছিলাম।
নানা রকম প্রতিবন্ধকতা বিশেষ করে যারা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তারা ওই প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ায় সেটির বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র করেন এবং ষড়যন্ত্রে তারা সফলও হন। আমি দেশে আসার পর প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তারা পুনরায় বাজারটি কুক্ষিগত করেন। নির্দিষ্ট কয়েকটি এজেন্সি লোক পাঠায়। গতবার যখন নতুন করে নিয়োগের ক্ষেত্রেও গুটিকয় এজেন্সিকে লোক নেওয়ার বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হল। যেকোনো কারণেই হোক, তাদের সিস্টেম যখন চলমান হল না, এরপর তারা আমাদের একটি অর্গানাইজেশন যেটি সরকারেরই একটি অর্গানাইজেশন, ওদের মাধ্যমে এখন কয়েক হাজার লোক বাইরে যাবে। এখন খুবই কম পয়সায় আমাদের লোকজন যেতে পারে। সরকার যখন এই সিস্টেমে লোক পাঠাতে সক্ষম, অন্যান্য বেসরকারি সংগঠনগুলো বাদ পড়ে যায়।
এখানে আমার একটি কথা বলা যে, আমাদের যারা ম্যান পাওয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের একটি দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে যেন তারা বাণিজ্য করতে পারে। লোক পাঠানোর প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তারা বাণিজ্য করবে, তারা একটি কমিশন পেয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়ায় করা হলে নিরীহ মানুষগুলো বেঁচে যায়।
মালয়েশিয়ায় একটি নতুন সরকার গঠিত হল। দীর্ঘদিন সরকারের বিরোধিতা যারা করে আসছেন, একসময় মাহাথির মোহম্মদের সাপোর্টার ছিলেন, এখন আনোয়ার ইব্রাহীম সরকার গঠন করেছে। সরকারের গঠন ১৯টি দল মিলে, যেকোনো সময় সরকারের পতনও হতে পারে। কারণ সবচেয়ে বেশি আসন যারা পেয়েছে সম্ভবত ৮২ যেখানে ১১২টি আসন দরকার হয়। কাজেই এই জোড়াতালির সংসার, জোড়াতালির সরকার কতদিন চলে সেটি একটি ভাবার বিষয়।
এই সরকার আসার পর বাংলাদেশের বিশেষ করে শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে কোনো নীতিগত পরিবর্তন হবে বলে আমি মনে করি না। আমি যতটুকু জানি, ক্যাবিনেটে যারা আছেন, সৎভাবে অভিভাবকের দিকে তাকিয়ে কোন সিস্টেম করবে অথবা আমাদের দিকে তাকিয়ে সমর্থন করবে সেরকম কোনো সম্ভাবনা নেই।
সে অবস্থায় কিছুদিন আগে যে সিস্টেমে গেল সরকারিভাবে, এটি যদি সরকার ধরে রাখতে পারে, তাহলে আমাদের লোকগুলো অনেকে ভালোভাবে মালয়েশিয়া যেতে পারবে। ধরতে গেলে কোনো পয়সাই তাদের খরচ হবে না।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে আমাদের লোকজন যায়। প্রায় এক কোটি লোকের মত বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে আছে। অন্যান্য দেশেও আস্তে ধীরে যদি পারত, আমাদের লোকজন কম খরচে বিদেশে যেতে পারত। তবে এক্ষেত্রে যত সংগঠন থাকুক না কেন, কোনো লাভ হবে না। কারণ তারা পয়সা দিয়ে নিজের পয়সা উঠাবে। এ বিষয়ে আমাদের সরকারকেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত
আরএ/