মনের চিকিৎসা নিজে করতে শিখুন
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আজকাল প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে, সমাজ ও পরিবারের অশান্তি বাড়ছে নানা ক্ষেত্রে। শহরের মানুষ এই সমস্যার সমাধানে মানসিক ডাক্তার বা মনোচিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারলেও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটা বৃহৎ অংশ সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সেই সব রোগী কিংবা তাদের অভিভাবকরা অনেক সময় বুঝতেও পারেন না যে কি করতে হবে, কার কাছে যেতে হবে।
বিশ্বের ধনী দেশ থেকে শুরু করে হতদরিদ্র দেশ— সবখানে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সব মানুষই কম বেশি মানসিক রোগে আক্রান্ত। কেউ হয়ত ১০০ শতাংশ, কেউ ৬০ শতাংশ, কেউ ৩০ শতাংশ আবার কেউ ৫ শতাংশ। কেউ আবার ১ শতাংশ।
দুঃখের বিষয় হলো— অনেক মানসিক রোগীই বুঝতে চায় না যে তিনি একজন রোগী। তার যে চিকিৎসা প্রয়োজন তা অনেক রোগী মনে করেন না। ফলে, অনেক সময় তাদের মনোচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে । বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত রোগীর ক্ষেত্রে এটি বেশি ঘটে।
কিশোর বয়সেও অনেকের মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। ছাত্রজীবনে কঠিন অর্থ কষ্ট ও পারিবারিক সমস্যা থাকলে অনেকে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। মেডিক্যাল কলেজে বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কঠিন পড়ার চাপ সহ্য করাও অনেকের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। তখন mental depression এ ভুগে অনেক শিক্ষার্থী। অনেকে আত্মহত্যাও করে বসে।
পরিবারের আর্থিক অভাব অনটন কিংবা কোটিপতির সন্তানদের অনেকে মাদকাশক্ত হয়েও মানসিক রোগে ভুগছে। সরকারি-বেসরকারি দাপ্তরিক কাজের চাপেও অনেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকে ন্যায্য প্রমোশন না পেয়েই দিনে দিনে হতাশাগ্রস্ত হচ্ছেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাত্যহিক ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের ঘাটতি, ব্যবসায় প্রতিনিয়ত লোকসানের সম্মুখীন হওয়া, দাম্পত্য কলহ, সন্তান মানুষ করতে না পারা, কাউকে টাকা ঋণ দিয়ে তা ফেরত না পাওয়া, দীর্ঘ সময় বেকার জীবনযাপন করা ইত্যাদি নানা কারণে মানসিক রোগ বাড়ছে।
প্রতিটি মানুষের কিছু স্বপ্ন থাকে। মনের বাসনা থাকে। সে সব পূরণে ব্যর্থ হলেও অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তখন তাদের সাপোর্ট করার মত আশেপাশে কেউ না থাকলেও মহাবিপদ দেখা দেয় তাদের জীবনে।
এই সমস্যা সমাধান করা কিছুটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। মানসিক রোগে আক্রান্ত শিক্ষিত রোগী নিজেও নিজেকে চিকিৎসা করাতে পারেন। মেডিটেশন করতে পারেন। নিজেকে নিজে বুঝাতে পারেন। অনেকে ধর্ম-কর্ম পালন করেও সুস্থ হয়ে যেতে পারেন। ভালো চিকিৎসকের চিকিৎসা নিতে পারেন। অভিভাবকরা অধিক যত্নশীল হয়ে এই সব রোগীদের সুচিকিৎসা, মানসিক সাপোর্ট, রোগীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার, কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, এসবের মাধ্যমে রোগীদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
অনেক Schizophrenia patient রয়েছে। তাদের কথা শুনলে সহজেই বুঝা যায় তাদের mental disorder কোন পর্যায়ে। ইদানিং তাদের চিকিৎসার জন্যও রাজধানী ঢাকায় বেশ কিছু বিশেষায়িত ক্লিনিক রয়েছে।
শারীরিক রোগের চিকিৎসা করা সহজ। কিন্তু মানসিক রোগের চিকিৎসা করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। পরিবারের অন্যদের অনেক ধৈর্য্য ও সহনশীলতার দরকার। আমাদের মনে রাখতে হবে শরীর যত সুন্দর আর সুস্থই হোক না কেন মনের অসুখ থাকলে সবই অর্থহীন। সুতরাং মনের চিকিৎসা নিজে নিজে করতে শিখুন। নিজেকে নিজেই বুঝান। হতাশাকে জয় করুন। জীবনে সব কিছু পাওয়া যায় না— এই কথাটা বুঝতে শিখুন। অন্যের জীবন দেখে নিজেকে হতাশাগ্রস্ত করার কোনো দরকার নেই।
লেখক: সাবেক কর কমিশনার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ট্যাক্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ
আরএ/