৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী: করোনা মহামারিতে যুবলীগের অবদান
আজ শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, আওয়ামী যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের এই দিনে যাত্রা শুরু হয় যুবলীগের। বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সংগঠনটি পা রেখেছে ৫১তম বছরে।ফজলুল হক মনি ছিলেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে দেশের যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এই সংগঠনকে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই যুবলীগ সেই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে যুবসমাজকে উন্নয়নের মিছিলে সামিল হতে হবে। তাদের বাইরে রেখে সেই স্বপ্ন কখনোই অর্জিত হতে পারে না। বিবেকের সেই তাড়না থেকেই তরুণদের সঙ্ঘবদ্ধ করতে আদর্শিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং মেধা-মননের বিকাশ ঘটিয়ে তাদের বিনির্মাণের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন
নেতৃত্বাধীন আওয়ামী যুবলীগ। যুবলীগের নেতৃত্ব পাওয়ার পরই তিনি যুব জাগরণ গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে যুব সমাজের মধ্যে আদর্শিক চেতনার মান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যুবলীগের চেয়ারম্যান ফজলে শামস পরশ। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তার এই বহুমুখী প্রতিভার কারণে দেশের যুবসমাজকে নিয়ে ভাবতে এবং কাজ করতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চার মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত শ্রেণি সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে, শিক্ষা, বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে যুবকদের স্বাবলম্বী করতে কাজ শুরু করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশের ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কিছু ঘাতক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে ঘাতকের দল প্রথম আক্রমণ করেন শেখ মনির বাসায়। তারা জানতেন শেখ মনি জীবিত থাকলে ঘাতকদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না, তাই তার পরিবারসহ তাকে হত্যা করে। অল্পের জন্য বেঁচে যান শিশুপুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ এবং শেখ ফজলে নূর তাপস।আর বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে, তৈরি হয় অস্থিরতা।
১৯৭৮ সালের ২য় কংগ্রেসের মাধ্যমে আবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুবলীগ সংগঠিত হতে থাকে প্রস্তুতি নিতে থাকেন আন্দোলনের। এদিকে জিয়া সরকার থেকে শুরু করে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সাহসী ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সব কর্মী যার উদাহরণ যুবলীগ কর্মী শহীদ নূর হোসেন। শহীদ নূর হোসেন নিজের জীবন দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরে আনার পথ দেখিয়েছেন।যখন দেশের গণতন্ত্রকে আপহরণ করা হচ্ছিল, মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা বলতে পারছিল না, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগামী, কৃষকের ন্যায্য অধিকার, শ্রমিকের মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তখন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ সোচ্চার থেকেছে মানুষের অধিকার আদয়ের। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ আন্দোলন করছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট যখন চারদিকে হত্যা, গুম, বাড়ি লুট, শিক্ষক হত্যা, ২১ আগস্টে বোমা হামলা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে চাইছিল, ৬৪ জেলায় বোমা হামলা হয়, দুর্নীতিতে বাংলাদেশ পর পর ৫ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হচ্ছিল, তখন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ রাজপথে প্রতিবাদ করে। যুবলীগ যখন রাজপথে আন্দোলন করছে তখন চারদলীয় জোট ক্লিনহার্ট অপারেশনের নামে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা ও জেলে আটকে রাখে। আওয়ামী যুবলীগ স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলনে ভুমিকা রেখেছে আপরিসীম। ভূমিকা পালন করছে ২০০৭-২০০৮ সালের সেনাশাসনের বিরুদ্ধে, যখন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করেন তখনও রাজপথে নেমেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে থাকে। যার অন্যতম কাজ ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যা যুবসমাজের জন্য মাইলফলক হয়েছে, হয়েছে আর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ, দারিদ্র্য বিমোচন, বেকারত্ব দূর, কর্মসংস্থানসহ নানা কাজ।
এরই ধারাবাহিকতায় দেশের মানুষ টানা তিনবার শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ সফলতা পেয়েছে। এর সুফল ভোগ করছে পুরোজাতি। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয়, জিডিপি হার, কর্মসংস্থান, যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ, অবকাঠামো উন্নয়ন, সড়ক, রেলপথ, পদ্মা সেতু, বিদ্যুৎ, গৃহহীনদের বাসস্থান, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, স্বাধীন গণমাধ্যম, সুশাসন, ন্যায়বিচার, মানুষের অধিকার সব কিছুতে সফলভাবে কাজ করছে শেখ হাসিনার সরকার যার ফলে আমরা উন্নত দেশের দিকে আগ্রসর হচ্ছি। আর তাইতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্লোগান ২০৪১ সালের মধ্যে ‘গ্রাম হবে শহর’।
আর তাই যুবকদের দেশের কাজে লাগানোর জন্য যুবলীগের ধারাবাহিক কংগ্রেসের মাধ্যমে নেতৃত্বর পরিবর্তন হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ৭ম কংগ্রেসে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যুবলীগের নেতৃত্বে আসেন শেখ ফজলে শামস পরশ। শেখ ফজলে শামস পরশকে চেয়ারম্যান এবং মইনুল হোসেন নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। শেখ ফজলে শামস পরশ যুবলীগের নেতৃত্বে আসার পর থেকে যুবলীগকে নানাভাবে সংগঠিত করে চলছেন।এবারে যুবলীগ গঠিত হয়েছে মেধাবী তরুণদের নিয়ে যার প্রমাণ ইতোমধ্যে যুবসমাজ পেয়েছে।
সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশে যখন করোনা মহামারি শুরু হলো, তখন মানুষের সেবায় কাজ করছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। যাদের খাবার নেই তাদের খাবার ব্যবস্থা করা, অসুস্থ রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ, বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, দেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে মানুষের খোঁজখবর নেয়া, যাতে দেশের মানুষ কেউ না খেয়ে থাকে; সঠিক ও উন্নত চিকিৎসা পায়। এই কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে।
সংকটে-সংগ্রামে, মানবিকতায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ থাকবে মানুষের পাশে। জেলার প্রতিটি জায়গায় নতুন কমিটি করা হচ্ছে, বর্ধিত সভা করা হচ্ছে। যুবসমাজ ধর্মান্ধ রাজনীতির বিরুদ্ধে কাজ করছে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে শেখ হাসিনার হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করতে বলেছিলেন সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবায়ন মূল লক্ষ্য। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর যুবলীগ আর এভাবে এগিয়ে যাবে। ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে যুবলীগের ৫০ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে।
যুবলীগ চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নাম, মেয়াদকাল
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ বাংলাদেশের প্রথম যুব সংগঠন।আওয়ামী যুবলীগ ১৯৭২ সালের ১১ই নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে এদেশের যুব আন্দোলনের পথিকৃৎ শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, শোষনমুক্ত সমাজ অর্থাৎ সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা অর্থাৎ সকল ধর্মের মানুষের স্ব স্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকার তথা জাতীয় চার মুলনীতিকে সামনে রেখে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা সম্প্রসারন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়ীক বাংলাদেশ ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং যুবসমাজের ন্যায্য অধিকারসমুহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত যুবলীগ চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক মহোদয়গণের নাম ও মেয়াদকাল প্রথম কংগ্রেস– ১৯৭৪ – চেয়ারম্যান: শেখ ফজলুল হক মনি, সাধারণ সম্পাদক: অ্যাডভোকেট সৈয়দ আহমেদ।দ্বিতীয় কংগ্রেস– ১৯৭৮ – চেয়ারম্যান: আমির হোসেন আমু , সাধারণ সম্পাদক: ফকির আব্দুর রাজ্জাক।তৃতীয় কংগ্রেস– ১৯৮৬ – চেয়ারম্যান: মোস্তফা মহসিন মন্টু , সাধারণ সম্পাদক: ফুলু সরকার। চতুর্থ কংগ্রেস– ১৯৯৬- চেয়ারম্যান: শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক: কাজী ইকবাল হোসেন।পঞ্চম কংগ্রেস– ২০০৩-২৪ জুলাই ২০০৯- চেয়ারম্যান: অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ২৪ জুলাই ২০০৯- ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান: মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, ২০০৩ –সাধারণ সম্পাদক: মির্জা আজম। ষষ্ঠ কংগ্রেস–২০১২–চেয়ারম্যান: মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী , সাধারণ সম্পাদক: মো: হারুনুর রশীদ।সপ্তম কংগ্রেসে-২০১৯ -সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান পদে শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাঈনুল হোসেন খান নিখিল।
পরিশেষে বলতে চাই, স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগের পুনর্গঠন এবং যুবলীগের গঠন এই মুক্তিযোদ্ধা যুবসমাজের দ্বারাই হয়েছে। তারপর সংগ্রাম করেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন এই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা ও কর্মীরা।দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ও রক্ষায় এই দুটি সংগঠনের অবদান অতুলনীয়। এমন গৌরবময় অতীতের উত্তরাধিকার বহন করছে যে দুটি সংগঠন। যুবলীগ যদি সংশোধিত ও সংগঠিত হয়, তাহলে দেশের যুবসমাজও সংশোধিত ও সংগঠিত হবে। যুবলীগের নতুন নেতৃত্বকে আরেকবার অভিনন্দন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা,জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি, কলামিস্ট ও গবেষক ইমেইল: drmazed96@gmail.com