রাজনীতি এখন আত্মকল্যাণমূলক
বাংলাদেশে ২০২১ হোক, ২০২২ হোক, ২০১৯ই হোক রাজনীতি বলে কিছু নেই। বাংলাদেশ যে অঙ্গীকার নিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করেছিল, তার কিছুই আজ অবশিষ্ট নেই। বাংলাদেশে এখন মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু এবং বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গিতে যে জনকল্যাণমূলক রাজনীতির কথা বলা আছে, তা এখন আর নেই। এখন রাজনীতি আত্মকল্যাণমূলক।
সরকারিভাবে বেশ কিছু জনকল্যাণমুলক মেগাপ্রকল্পের নাম দেয়া হয় যেগুলি জনকল্যাণমুলক। ভবিষ্যতে এগুলি জনবিরোধী হয়ে দাঁড়াবে। সরকার জনগণের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে কিছু মানুষের পকেট ও পেট স্ফীত করার দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু জনকল্যাণ হয় না। এখন রাজনীতি বলতে আমি মনে করি, রাজনীতি বলি গণতন্ত্র বলি, যেভাবেই বলি না কেন, আমি বলি দুই চাকার সাইকেল। সাইকেল এক চাকায় চলে না, দুই চাকা দিয়েই চলতে হয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র আর রাজনীতি, এখন এক চাকায় চলছে। আর বিরোধীদল বলতে আমরা যা কিছু বলি, সেটি আর বিন্দু পরিমাণ অবশিষ্ট নাই। কেন নাই? সেকারণটি খতিয়ে দেখতে হবে।
সমস্যা হয়ে গেছে, রাজনীতি বলতে এখন শুধু সরকার পক্ষের রাজনীতি বুঝাচ্ছে। এতে করে জনগণ কিন্তু বঞ্চিত হচ্ছে। জনকল্যাণ কিছু হচ্ছে না। এর প্রতিকার কি? আমি সারা বছর ধরে রাজনীতির যে বাতাবরণ দেখেছি, তার প্রতিকার করতে হলে যে জিনিসটি দরকার সেটি হলো নেতৃত্ব। সেই জায়গায় আমাদের ঘাটতি, কমতি বেদনাদায়ক। এখন রাজনীতি বলতে ক্ষমতায় থাকাটি দীর্ঘ করা আর ক্ষমতায় যাবার উদগ্র বাসনা লালন করা। এই হচ্ছে রাজনীতি। এই রাজনীতির অবয়ব পরিবর্তন হতো যদি নেতৃত্ব থাকতো দুই দিকেই।কিন্তু নেতৃত্বের কোন নাম নিশানা আমি দেখছিন। হয়তো শ্রুতিবাক্যে আমরা অনেক কিছু বলে বসি। কিন্তু রাজনীতি বলতে যা বোঝায় আমরা তা দেখছি না।
সেদিক বিবেচনায় ২০২১, রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে যেমন হতাশাব্যঞ্চক অন্যদিকে অশনিসংকেত পূর্ণ ছিল। আমরা ২০২২এ এখান থেকে উত্তরণ পেতে চাই। তবে উত্তরণের পূর্বশর্ত নেতৃত্বের বাকবদল বা গুণবদল কিছুইতো আমি দেখছি না।
তবুও আমি আশাবাদী হতে চাই এজন্য যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে আমি দেখেছি, মানুষ যখন একাত্না হয়েছে তখন সমাজে বাকবদল হয়েছে। হয়তো কোন একদিন মানুষ রাজনীতির বাকবদলের জন্যে একাত্না হয়ে দাঁড়াবে। তখন গুণগত মান পরিবর্তন হবে। সেই আশায় রইলাম।
লেখকঃ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট