চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের চ্যালেঞ্জ অনেক
চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূর্বের সকল বছরের চেয়ে অনেক বেশি। সরকার অনেক কিছু ভেবেই রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অধিক নির্ধারণ করে থাকে। আমরা যারা দীর্ঘদিন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে রাজস্ব আহরণে কাজ করেছি তাদের তা জানা। কারণ, হলো, রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অধিক হলে আদায়কারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমনকি রাজস্ব প্রদানকারী সকলেই একটা মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। সবাই চেষ্টা করে লক্ষ্যমাত্রা আহরণ কিংবা কমপক্ষে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছাতে। লক্ষ্যমাত্রা কম হলে তা যদি সহজেই আদায় করা সম্ভব হয়ে পড়বে বলে অনুমান করা হয়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে আদায়কারীরা ঢিলেঢালাভাবে রুটিন কাজ করে থাকেন।
কোভিড চলাকালীন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে আয়কর খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশ। এটা কম কথা নয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকাণ্ডে অধিক অর্থ বিনিয়োগ করা গেলে এই প্রবৃদ্ধি বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে অনেকে মনে করেন।
ভাবনার বিষয় হলো, চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন পূর্বের চেয়ে নানা কারণে কঠিন হবে। তার কারণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, খাদ্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি, শিল্পের কাঁচামালের আমদানী মূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি সঙ্কটাপন্ন। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। ব্যবসার ব্যয় যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াতে আমদানি ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, চলতি অর্থ বছরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, টাকার অবমূল্যায়ন, মুদ্রাস্ফীতি এসব কারণে ব্যবসা প্রসারে বিঘ্ন ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে করে রপ্তানি আয়ও হ্রাস পেতে পারে।
রাজস্ব বৃদ্ধির অন্যতম শর্ত হলো, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবসার প্রসার। বৈদেশিক অর্থের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেলে আমদানি ব্যয় মিটানো নিশ্চিত হওয়া যায়। এ বিষয়েও নানা ধরনের সমস্যায় রয়েছে এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।
সরকার ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে চলতি বছরের অর্থ আইনে কোম্পানির কর হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়েছে। এতে করে আয়কর আহরণে কিছুটা ঘাটতি হলেও সরকার মনে করছে করদাতা কোম্পানিগুলো কর প্রদানে অধিক উৎসাহী হবে।
রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারকে এ বছর নানা রকম কর বান্ধব কর্মসূচি নিতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম হতে পারে বকেয়া কর হতে আদায়। উচ্চ আদালতে বৃহৎ করদাতাদের বহু মামলা অনিস্পত্তি থাকার কারণে বকেয়া কর হতে হাজার হাজার কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও করদাতাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে আইনানুগ সমঝোতা সাপেক্ষে বকেয়া কর থেকে অধিক কর আদায় করতে হবে। এ বিষয়গুলো সমাধান করা গেলে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পাবে। অন্যথায়, লক্ষ্যমাত্রা মোতাবেক, চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আহরণ কঠিন হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষে।
লেখক: মো. বজলুল কবির ভূঞা, সাবেক কর কমিশনার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ট্যাক্স এডুকেশন এন্ড রিসার্চ