বাংলাদেশের আস্থার প্রতীক শেখ হাসিনা
একটা সময় চারিদিকে ‘হাহাকার’ ছিল। শহর থেকে গ্রাম, পাড়া থেকে মহল্লা শুধু নেই আর নেই আওয়াজ ধ্বনিত হতো। খাবার নেই, বাসস্থান নেই, বিদ্যুৎ নেই, রাস্তা-ঘাট নেই, চিকিৎসা নেই, কর্মসংস্থান নেই। তবে আওয়ামী লীগের হাত ধরে দেশ এখন বদলে গেছে। যেদিকে তাকাই শুধু উন্নয়নের আলোর ঝলকানি। যেন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দেশ। টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এই ১৩ বছরে বাংলাদেশের অকল্পনীয় উন্নয়ন-অগ্রগতি হয়েছে। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র। উন্নত দেশের কাছেও বাংলাদেশ এখন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশই বাংলাদেশের দ্রুত অগ্রগতি দেখে বিস্মিত।
শেখ হাসিনার হাত ধরে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে দেশ অনেকদূর এগিয়েছে। বাড়ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও সামাজিক অগ্রগতি। শেখ হাসিনার অপ্রতিরোধ্য পথ চলায় বাংলাদেশ আজ ছুটে চলেছে উন্নয়নের মহাসড়কে। শেখ হাসিনা মানেই উন্নয়নের জয়জয়কার। শেখ হাসিনা মানেই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। বাংলাদেশের আস্থার প্রতীক। জাতির পিতার রক্ত, স্বপ্ন, দ্রোহ আর বেদনা বুকে ধারণ করে তিনি হয়েছেন বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্ন-সারথি। আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই আজকের ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর মতো তার চরিত্রে মানুষের প্রতি বিশ্বাস-ভালোবাসা, সততা, দক্ষতা, ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতার বিশেষ গুণ বিদ্যমান। তার কর্ম, ব্রত ও হিমালয়সম দৃঢ়তা তাকে স্থান দিয়েছে মহাকালের অনন্তযাত্রায়। দেশের বাইরেও প্রশংসিত হয়েছে তার সাহসিকতা ও মানবতার রাজনীতি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দারিদ্রতা হ্রাস পেয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা রেল সংযোগ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, আন্ডারপাস, চার লেন, আট লেন সড়ক হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তাবায়নের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে চলে যাবে। গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেছে। ঘরে ঘরে কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন। ইন্টারনেট জগতে বাংলাদেশ চতুর্থ জেনারেশনে ৪-জি থেকে ৫-জিতে ঢুকেছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক বিনিয়োগে মাইলফলক, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিলিয়ন ডলার, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ, রফতানি আয় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত, গড় আয়ু বৃদ্ধি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই বাংলাদেশ উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরে দেশকে পুনর্গঠনে কাজ করেছেন। স্বপ্ল সময়ের মধ্যে তিনি সংবিধান প্রণয়ন করেন। প্রশাসন পুনর্বিন্যাস এবং সব বাহিনী গঠন করেন। একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যতগুলো অঙ্গ থাকা দরকার সবই তিনি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ঘাতকদের হাতে তাকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। থমকে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর সব মিলিয়ে ৫০ বছরের মধ্যে ২৯ বছর বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যরা ক্ষমতায় ছিল। যাদের পথচলা ছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। বঙ্গবন্ধু যেখানে দেশকে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে ২৯ বছর রাষ্ট্র উল্টো ধারায় চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন মুছে দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ধ্বংস করে পাকিস্তানি ভাবধারায় রাষ্ট্র পরিচালনার চেষ্টা করা হয়েছে। ওই সময়ে বাংলাদেশ খুব বেশি এগোতে পারেনি।
তবে অনেক চড়াই উৎরাইয়ের পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। দরিদ্র বাংলাদেশ থেকে দেশ এখন উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম আজ মাদক, সাইবার অপরাধ, আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক দিকসহ নানা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে। প্রযুক্তি যেমনি বদলে দিয়েছে, তেমনি এর ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে। একদিকে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক মানের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে হবে। অপরদিকে এর নেতিবাচক দিক থেকে তরুণদের সুরক্ষা করতে হবে। এসব বাস্তবতায় শেখ হাসিনা সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে দেশের তরুণ-তরুণীদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে এবং ক্যারিয়ার গড়তে প্রতিটি পরিবারের পাশে থাকতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। সরকার বিনা পয়সায় করোনার পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন দিয়েছে। অনেক উন্নত দেশও এটা পারেনি। বাজেটে আলাদা করে হাজার হাজার কোটি টাকা রেখে দিয়েছে। সরকার চেয়েছে যত টাকা লাগুক, যেখান থেকেই হোক ভ্যাকসিন আনব। দেশের মানুষকে দেব। সেটা দিতে সক্ষম হয়েছে। ৭৩ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন পেয়ে গেছে।
অতীতের সরকারগুলোর আমলে আমাদের গ্রামগুলো বরাবরই উন্নয়ন ভাবনার বাইরে ছিল। আওয়ামী লীগই প্রথম গ্রামোন্নয়নকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করে। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করে। আজ দেশের প্রায় সব গ্রামে পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত পল্লী এলাকায় ৬৬ হাজার ৭৫৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, তিন লাখ ৯৪ হাজার ব্রিজ-কালভার্ট, এক হাজার ৭৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, এক হাজার ২৫টি সাইক্লোন সেন্টার এবং ৩২৬টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে।’
২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৪৫৮ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চতুর্থ বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। আরও ৮৮৭ কিলোমিটার মহাসড়ক চার এবং তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬.৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সাল নাগাদ শেষ হবে। বাংলাদেশ রেলওয়েকে যুগপোযোগী এবং আধুনিক গণপরিবহন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমানে ১৩ হাজার ৩৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৭টি প্রকল্পের কাজ চলছে। ঢাকার চারদিকে সার্কুলার রেল লাইন স্থাপনের সমীক্ষার কাজ চলছে। ২০০৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৪৫১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ এবং এক হাজার ১৮১ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৪২৮টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যমুনা নদীর উপর ৪.৮ কিলোমটির দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের বিমানবহরে ১২টি নতুন অত্যাধুনিক বোয়িং এবং ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ সংযোজিত হয়েছে। সংযোজিত হয়েছে তিনটি ড্যাশ-৮-৪০০ উড়োজাহাজ।
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সারাদেশে সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হতে গ্রামীণ নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ এবং গুণগত মানোন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ু ২০১৯-২০ বছরে ৭২.৮ বছরে উন্নীত হয়েছে। পাঁচ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৮ ও অনুর্ধ্ব এক বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ১৫-তে হ্রাস পেয়েছে। মাতৃমৃত্যু হার কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি লাখে ১৬৫ জনে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগ মূলত ২১ বছর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পেয়েছে। এই সময়ে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করা হয়। এটা করেছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে দেশ এখন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, প্রতিটি জনপদে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে, বিএনপি নেতারা তা দেখতে না পেলেও জনগণ ঠিকই দেখতে পাচ্ছে।
লেখক: সাবেক প্রসিকিউটর, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল
আরএ/