আলোচনা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই
রাস্ট্রপতির আহবানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বঙ্গভবনে তাদের প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে। যে যার অবস্থানে থেকে তাদের যে মতামত, সুপারিশ, সেগুলি রাখতে। যেমন প্রথমদিন সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি জিএম কাদেরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল দেখা করেছে। সার্চ কমিটি কাদের নিয়ে করা উচিত, এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে আইন প্রণয়ন ইত্যকার বিষয়গুলি সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। বাসদও ইতোমধ্যে সাক্ষাৎ করেছে। মূলত বিকেলের দিকেই সংলাপগুলি হচ্ছে।
যদিও মাঠ পর্যায়ের বিরোধীদল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে সেলিমা রহমান বলেছেন যে, তারা সংলাপে অংশগ্রহণ করবেন না। কারণ গতবার যখন তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তারা অংশগ্রহণ করেছিল এবং তারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছিল। তবে এবার পরিবেশ পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। নির্বাচন সম্পন্ন হতে প্রায় দেড় মাসের মতো সময় বাকি আছে। তারা মিলিত ফোরামে যে দাবিটি তুলছেন যে, অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেটিকে আমরা বলছি অন্তঃবর্তিকালীন সরকার সেই ধরণের কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে তারা তাতে অংশগ্রহণ করবেন না। এরকম একটি দাবি দাওয়া তারা তুলেছেন। তারই প্রেক্ষিতে তারা সংলাপে যোগ না দেয়ার বক্তব্য তারা তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক মতাদর্শ তার দুটি অংশ আছে। রাজনীতির মধ্যেই একটি অংশ যারা আওয়ামী লীগ পছন্দ করে, অন্য অংশ যারা আওয়ামী লীগ পছন্দ করে না।বিরোধীদলগুলি অথবা ব্যনার সর্বস্ব অন্যান্য দলগুলি যেগুলি আছে, তারা কল্কে পেয়ে যান এই বাস্তবতাগুলির কারণে। এখন নানারকম মতবাদ আছে, শতকরা কতভাগ পক্ষে, বিপক্ষে, আমরা সে আলোচনায় নাই গেলাম, তবে মূল যে বিষয়টি, সেটি হচ্ছে এই যে, এই বাস্তবতাকে মাথায় রেখেই কিন্তু আমাদের বিশ্লেষণে যেতে হবে। একটা সময় ছিল যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি মহান সংসদে সংবিধানের মাধ্যমেই লিপিবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে সেটি উবে গেছে। অর্থাৎ সংবিধানে সেটি আর বহাল নেই। ফলে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। দাবি দাওয়া যা কিছু উত্থাপন করা হোক না কেন তা যদি সংবিধানের ফ্রেম ওয়ার্কের বাইরে চলে যায় তাহলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কিন্তু ভূমিকা নিতে পারেন এবং সেটিও কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর মতামত ব্যতিরকে কোনো কিছু করতে পারবেন না। এখন যে বাস্তবতাটি সেটিও কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।
সামগ্রিকভাবে যে কথাটি সত্যি তা হলো, আলোচনা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। বংলাদেশ যতবারই সংকটে পড়েছে, ততবারই আলাপ আলোচনা সবসময় হয়তো সফল হয়নি, বা আলোর মুখ দেখেনি তারপরও উত্তেজনা প্রশমণে এই পদ্ধতির ফল আমরা সবসময় দেখেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্ষমতাসীন বাইডেন কর্তৃক বাংলাদেশ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অর্থাৎ পুলিশ , র্যাব এবং তাদের কর্মকর্তাদের নিয়ে বর্তমানে যে ঘটনাটি ঘটেছে, কানাঘুষা আছে বাজারে যে, ৫৬৭ জনের একটা তালিকা সেটি তৈরি করা হয়েছে এবং এগুলি একে একে আনফোল্ড করা হবে।
এছাড়া সাবেক সেনাপ্রধানের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তার পক্ষ থেকে তিনি আবার বলেছেন যে, এটি সত্য নয়। আরও একটি যে খবর ছড়িয়েছে যে, শাসকদলের আরেক নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের ভিসা বাতিল করা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে পরাশক্তি তাদের মতো করে যতগুলি অস্ত্র তাদের আছে সেই বিষয়টি মাথায় রেখে একটি অনুশীলন করছে। কাজেই এসব দিক বিচার বিবেচনায় একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন বেশি দরকার। আরেকটি বিষয় সেটি হচ্ছে যে, সংলাপ নিয়ে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করেছেন, সেটি ভাল দিক। নির্বাচন কমিশনের মেয়াদও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সুতরাং নতুন বছর শুরু হলে একেবারে কাউন্টডাউন শুরু হয়ে যাবে। রাজনৈতিক পরিবেশও মাঠ পর্যায়ে কেমন, বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমরা সেটি দেখতে পাবো। সব মিলিয়ে বলতে পারি, আমরা অতি ক্রান্তিলগ্নে যা কিছু অবস্থা।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ