স্বপ্নের পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতু আমার জীবনের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে রয়েছে, যা আলাদা করে ওখানে যেয়ে ছবি তোলার প্রয়োজন হয় না। কারণ, বাংলাদেশে থাকলে সপ্তাহে দু'বার এই পদ্মা নদী পার হতে হয় আমাকে ঢাকা থেকে খুলনা শহরে যাতায়াত করতে।পদ্মার বুকে আমার প্রতিনিয়ত অনেক অনেক স্মৃতি। আমরা পদ্মার ওপারের বাসিন্দারা অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছি ২৫ জুনের জন্য। সেদিন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অহংকার পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকা খুলনার দূরত্ব অনেক কমে যাবে।
আমরা কলকাতা শহরে সহজেই খুলনা থেকে মাত্র ৫ ঘণ্টায় চলে যেতে পারি। আর ঢাকা যেতে সাড়ে ৬ ঘণ্টা লাগে। মাঝে মাঝে ১৪ ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। ফ্লাইটে গেলেও প্রায় একই সময় লাগে। ফ্লাইটে ঢাকা থেকে যশোর এবং যশোর থেকে আড়াই ঘন্টা বাসে করে খুলনায় যেতে হয়।
বিদেশ থেকে যখন বাংলাদেশে ফিরে আসি তখন ঢাকা থেকে খুলনায় যাওয়ার কথা মনে পড়লেই গা শিউরে উঠে। অনেক কষ্ট, অনেক পথ পাড়ি দিতে হয় খুলনায় বাসা পর্যন্ত যেতে। অনেক সময় আমি নিউ জিল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আসার সময় কলকাতা হয়ে তারপরে খুলনা আসি। ইমিগ্রেশনের যেমন জটিলতা রয়েছে, ঠিক তেমনি জটিলতা রয়েছে পদ্মা সেতু পার হওয়ার ক্ষেত্রেও।
এই তো গত সপ্তাহেই খুলনা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে লঞ্চ পারাপারের সময় ৮ কেজি মিষ্টির প্যাকেট বাসে ফেলে চলে গেছি। এ রকম ঢাকা খুলনার অনেক স্মৃতি রয়েছে, কখনো স্প্রিড বোটে একগাদা লোকের ভেতরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় এসেছি। আবার কখনো স্পিড বোটে শেয়ারিং করতে যে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, রোগীকে কিংবা বরযাত্রী দ্রুত আসার জন্যে শেয়ািরং পার্টনার ও মিলেছে। এমনও হয়েছে ঈদের সময় বাসের টিকিট না পেয়ে ঈদের দিন দুপুর বারোটার সময় এসে খুলনার বাসায় পৌঁছেছি। একবার ২২ ঘন্টা আরিচার ঘাটে অপেক্ষা করেছিলাম । আবার আমার গাড়ি কখনো আমার গাড়ি পদ্মার ওপারে নামিয়ে দিয়ে গেছে। তারপরে স্পিড বোটে করে পার হয়ে এপাশ থেকে আমার বন্ধু কিংবা কাজিনরা কেউ তুলে নিয়ে ঢাকা পৌঁছে দিয়েছে।
ছোটবেলায় তখন তো ঢাকার কথা শুনলেই মন খারাপ হয়ে যেত, ১২-২৪ ঘণ্টা জার্নি করতে হবে আর তার সঙ্গে অনর্গল বমি করতে করতে যেন জান চলে যেত। আমি ট্রেন জার্নি করেই সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াই।
একদিন তো লঞ্চ পারাপার হতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যে একখানা জুতা হারিয়ে যায়। আমার আব্বু-আম্মু অনেক টেনশনে থাকত কখন কি হয়! কতদিন এমন হয়েছে ইউনিভার্সিটি থেকে থাকতে রাতে বাসে এসেছি, ফেরিতে খেতে বসেছি, পার্স ব্যাগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। একদিন রাতের বাসে আরিচা ঘাটে বসে থাকার সময় আমার মোবাইলটি নিয়ে দৌড় দেয় এক যুবক ।
হাজারো মানুষের হাজারো গল্প নিয়ে পদ্মা,অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমাদের ঢাকা-খুলনাকে একত্রিত করে দেবে বলে আমরা বসে আছি। দূরত্ব কাছে টানবে, দেশের উন্নয়নের জোয়ার আরও হোক এই প্রত্যাশায়।
লেখক: ১৩০ দেশ ভ্রমণকারী পর্যটক