বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৪ পৌষ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

মতামত

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি: বাংলাদেশের সংগ্রাম,সাফল্য ও সম্ভাবনা

পঞ্চাশ বছর একটি রাষ্ট্রের জন্যে বড় কিছু না হলেও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির বছরটি বাংলাদেশের জন্যে তাৎপর্যমন্ডিত, কারণ এর পেছনে আছে দীর্ঘ সংগ্রাম ও আনন্দ-বেদনার মিশ্রিত ইতিহাস, বাংলাদেশের টিকে থাকা ও বৃদ্ধির ইতিহাস। নৃসংশ অতিমারির তান্ডবে এই দুই মহালগ্নের বাহ্যিক আয়োজন সীমিত থাকলেও তাৎপর্যের মানদন্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমার বিশ্বাস, সে গুরুত্ব বাংলাদেশের নতুন নাগরিকদের যেমন জাতীয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম নায়কের জীবন, কর্ম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস পাঠের সুযোগ দিয়েছে, তেমনি পাকিস্তানের ২৩ বছরের শোষণ-বঞ্ছনার মর্মদন্ত ছবি দেখবার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে ১৯৭১ সালে নিরস্ত্র বাঙালি জনগোষ্ঠির উপর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্বিচার গণহত্যা, লুণ্ঠন ও নারী নিগ্রহের সকরুণ ইতিহাস জানবারও সুযোগ সৃষ্টি করেছে।


সব জাতির ইতিহাসের পাতায় কিছু নাম থাকে - যা অবিনশ্বর। সে নাম উপেক্ষা করার শক্তি কারও হয় না। এ নাম কবরের, কালের সীমানা ছাড়িয়ে সোচ্চার ও শক্তিধর হয়ে মহাকালের আঙিনায় টিকে থাকে। এ নাম মহাপুরুষের। এঁদের কীর্তি অস্বীকার করার জো নেই ; যদিও কেউ কেউ আত্মপ্রবঞ্চক বা আত্মঘাতী হয়ে শাশ্বত সত্যকে অস্বীকার করতেও উদ্যোগী হয় ! শেখ মুজিবুর রহমান, ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে উচ্চারিত না হলে যে নাম অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তেমনি এক নাম। এ নামকে জোর করে প্রতিষ্ঠা দেয়ার প্রয়োজন হয় না, মুছে দেয়াও সম্ভব হয় না । আমি স্বশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি আমাদের রাষ্ট্র পিতাকে, যিঁনি তাঁর জীবনের সবটুকু সামর্থ দিয়ে চিরকালীন নিপীড়িত বাঙালির জন্যে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের পত্তন করেছিলেন।


ইতিহাসের সংগ্রাম


স্মরণযোগ্য, ব্রিটিশ ঔপনিবেসিক শাসনের বাতাবরণে এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতিচর্চায় বাঙালি হিন্দুÑমুসলমানের মনোজগতে জাতপরিচয়ের যে সংকট তৈরি হয়, বাংলা ভাষা আন্দোলন সেই সংকট ভেঙ্গে দেয়। বাংলাভাষীরা - মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নির্বিশেষে-নতুন উপলব্ধিতে সমৃদ্ধ হয়। পাকিস্তানের মেকি ধর্মবাধন কিংবা বর্বর সামরিক আধিপত্ত, কিছুই তাকে বাধতে পারেনা। বাঙালির আত্মপরিচয়ের সংকট ঘুঁচতে থাকে। ১৯ টি বছর ধরে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালি গণমানুষ সেই আত্মানুসন্ধান করেছে,তারই বাঁকে বাঁকে অগ্রসর হয়ে পৌঁছেছে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে।


ইতিহাসের নানা বাঁকে বাঙালি জাতি বারবার সংগ্রামে রত হয়েছে, কখনো হেরেছে, কখনো জিতেছে। সে জেতায় মূল্য দিতে হয়েছে অনেক, সে মূল্যের উপহারও কম আসেনি। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির এই লগ্নে দাঁড়িয়ে সে কারণে সত্য উপলদ্ধিতে সিক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে নতুন প্রজন্মের। এ উপলব্ধি জাতিকে আত্মমর্যাদা ও আত্মপরিচয়ের গৌরবে বলিয়ান করে। অতএব অবধারিত ভাবেই পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের জন্মইতিহাস পাঠ করা প্রয়োজন ; প্রয়োজন ১৯৭১ সালের নির্বিচার বাঙালি গণহত্যা এবং নারী নির্যাতনের ইতিহাস পাঠ করা।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পথচলা মসৃন হয়নি। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় চেঁপে বসে অভাবিত এক কালো অধ্যায়। ১৯৭৫ পরবর্তি সময়টি, সকলেই জানবেন, ছিল চরম দূর্ভাগ্যজনক, যখন সামরিক ও আধা-সামরিক রাষ্ট্রযন্ত্রের যাতাকলে নতুন প্রজন্মের বড় অংশকে বিকৃত ইতিহাস পড়ানো হয়েছে, গৌরবের মুক্তিযুদ্ধকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে এবং এসব করা হয়েছে পরিকল্পিত ভাবে,যাতে নতুন নাগরিকেরা স্বাধীনতার রাজনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সত্যাবলি থেকে বিচ্যুত হয়। কিন্তু ইতিহাস নিজেই তার অধিকার আদায় করতে সক্ষম হয়। সে কারণে, অনেক বিপন্নতার পরেও মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক শক্তির পুনরুত্থান ঘটেছে, নতুনদের বড় অংশ জাতীয় স্বাধীনতার অবিকৃত ইতিহাসের প্রতি অনুগত হয়েছে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের মানুষ তাদের কাছে এ জাগরণ আনন্দের । আশা করি, এই উপলব্ধি ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তরঞ্জিত বাংলাদেশকে স্বমহিমায় এগিয়ে নেবে, সংকট ও সীমাবদ্ধতার জঞ্জাল থেকে স্বদেশকে রক্ষা করবে।


তাৎপর্যপূর্ণ প্রাপ্তি


আমার ধারণা, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির এই লগ্নে বাংলাদেশ এক মনোজাগতিক বিপ্লব অধ্যায় অতিক্রম করে চলেছে, অপসারিত করে চলেছে দীর্ঘকালের চেপে থাকা এমন এক বৈকল্প- যা বিজয়ী বাংলাদেশকে অনেকাংশে পরাভূত করেছিল এবং আপোষকামী বানিয়েছিল। এই বৈকল্য শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে, যখন বিজয়ী বাংলাদেশকে পরাজিতের পোষাক পরানো হয়েছিল এবং স্বাধীনতা-উত্তর প্রজন্মগুলির মগজে সত্য ও মিথ্যের মাঝে, স্বাধীনতা ও পরাধিনতার মাঝে ভেদাভেদ ঘুচিয়ে দেয়া হয়েছিল ! আমি গর্বরোধ করি উত্তর প্রজন্ম আমাদের শংকা দূর করেছে, তারা মাটি খুড়ে জাতীয় স্বাধীনতার গৌরব তুলে এনেছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় ফিরেছে। তারা পর্যায়ক্রমে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের হাতে সোপর্দ করেছে, মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জাতীয় দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান দেখিয়েছে। এই জেগে ওঠা, যা আদর্শিক বাংলাদেশকে জাগিয়ে দিয়েছে, তা রাতারাতি আসেনি। প্রথমত, নতুন প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, অস্তিত্বের তাগিদেই তারা মাটি খুঁড়ে জাতীয় অহংকার আবিস্কার করেছে। দ্বিতীয়ত, যে তথাকথিত ধর্মবাদী শক্তি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী হয়ে মানবতার বিরুদ্ধে নিকৃষ্টতম অপরাধ করেছিল, তাদের উগ্রবাদীতা বৃহত্তর তারুণ্যকে বিক্ষুব্ধ করেছে। অতএব নীরবতা ভেঙ্গেছে। নতুন প্রজন্মের এই জাগরণ সকল অর্থেই মঙ্গলবাহী। কারণ লাখো শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারেনা, লাখো নারীর সম্ভ্রম বৃথা যেতে পারেনা।

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচার


বিশ্বযুদ্ধের  প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের বাঙালি গণহত্যার বিশ্ব স্বীকৃতি যতোটা হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল, দূর্ভাগ্যজনক ভাবে তা হয়নি। কিন্তু ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের রিপোর্ট ও বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার গবেষণা ও পর্যবেক্ষণে এর ব্যাপকতা স্ববিস্তারে গ্রন্থিত আছে। জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের হাতে বাংলাদেশে যে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ ঘটে, তা সকল অর্থেই যা বিশ শতাব্দীর অন্যতম নৃশংস গণহত্যা। ৮ মাস ২ সপ্তাহ ৩ দিনের এই গণহত্যার স্বরূপ ছিল ভয়ঙ্কর। পরিকল্পিত পন্থায় বাঙালিকে খুন করা হয়েছে, গণহারে বাঙালি নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে; আগুন, অপহরণ, গুম ও বর্বর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।


সেদিনকার জাতিসংঘের মহাসচিব ইউ থান্ট ৩ জুন ১৯৭১ যে মন্তব্যটি করেন তা প্রণিধানযোগ্য : The happenings in East Pakistan constitute one of the most tragic episodes in human history. Ofcourse, it is for future historians to gather facts and make their own evaluations, but it has been a very terrible blot on a page of human history.  এরপরেও বিশ্ব সংস্থা গণহত্যা বন্ধে কার্যক্রর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানি নির্মমতা থেকে বাঁচতে ১ কোটি মানুষ দেশ ছেড়ে ভারতের মাটিতে শরণার্থী হয়েছে। মার্কিন সিনেটর অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি সেই দৃশ্য দেখে পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যা চালাবার অভিযোগ করেছেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের পাঁচটি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তাবিষয়ক আর্কাইভ’ অবমুক্তকৃত দলিল প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যাজ্ঞকে selective genocide হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিক মহলের মতেও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ‘তিন মিলিয়ন’ বা ত্রিশ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। এই সংখ্যার জোড়ালো সমর্থন আছে National Geographic magazine, Encyclopedia Americana and Compton’s Encyclopedia তে। এসব রিপোর্র্টের মতে, বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তান বাহিনীর নিষ্ঠুরতা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ডে নাজি বাহিনী ও ১৯৩৫ সালের নানজিং বর্বরতার চাইতেও ভয়াবহ।
এই গণহত্যার বিরুদ্ধে এই নিউ ইয়র্কে জর্জ হ্যারিসন ও পন্ডিত রবি শঙ্কর সর্বপ্রথম ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক অ্যাঁদরে মালরো বাংলাদেশের পক্ষে ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’ গঠনের ঘোষণা দেন। রবার্ট পাইন তার Massacre, The Tragedy of Bangladesh বইতে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দেন: ‘Kill three million of them and the rest will eat out of our hands’.


মোটকথা, মাত্র নয় মাস সময়ে যে দ্রæততায় মানুষ হত্যা করা হয়েছে - তা ছিল বিশ্ব ইতিহাসের অনন্য নিষ্ঠুরতা। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গড়ে দৈনিক ৬০০০ মানুষ খুন করা হয়েছে মাত্র ২৬০ দিনে। কম্বোডিয়ার এই হার ছিল ১২০০। শত শত শীর্ষ বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে।


কাজেই মানবাধিকার ও সুবিচারের স্বার্থে জাতিসংঘকে অবশ্যই বাংলাদেশের গণহতাকে স্বীকৃতি দিতে হবে, যেভাবে তারা আর্মেনিয়া, রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া, সিয়েরা লিওন, বসনিয়ার গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
স্মরণযোগ্য, বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে জেনারেল নিয়াজীসহ ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা অফিসারকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিচারের ঘোষণা দেয় । কিন্তু ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির পর পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিসহ এসব যুদ্ধাপরাধী দেশে ফিরে যায়। ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ছাড়িয়ে নিতে পাকিস্তান সরকার যে বিবৃতিটি প্রচার করেÑতা এ রকম: ‘Pakistan expresses its readiness to constitute a judicial tribunal of such character and composition as will inspire international confidence to try the persons charged with offenses.’ অন্যদিকে পাকিস্তানের সরকারি হামিদুর রহমান কমিশনও এইসব যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সে কাজটি পাকিস্তান আজোবধি করেনি। এমন কি গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে তারা ক্ষমাও চায়নি। অতএব পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাদের বিচার জরুরি, ন্যায় বিচারের স্বার্থেই এ বিচার জরুরি।


সংকট বহুবিধ


বিগত ৫০ বছরের পালাবদলে বহুবিধ সঙ্কটে নিপতিত হয়েছে বাংলাদেশ । অসাংবিধানিক বা সেনাছাউনির শাসন এসেছেÑ এরা মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি থেকে দেশকে অন্যত্র সরাবার মহড়া দিয়েছে, সাম্প্রদায়িকতাকে নতুন করে পুন:স্থাপন করেছে, এমন কি যুদ্ধাপরাধী বা মানবতা বিরোধী ঘৃন্য অপরাধীদের পুনর্বাসন করেছে।
এরপর মহড়া হয়েছে ধর্মীয় উগ্রপন্থা বা জিহাদি তত্ত¡ বাস্তবায়নের। ১৯৯০ এর দশকে বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানÑ আফগানিস্তানের বিপ্লব আমদানির চেষ্টা হয়েছে। সাম্প্রতিক তালেবানি পুনরুত্থানের পর অনেকেই নতুন করে তালেবান হবারও স্বপ্ন দেখছেন। প্রশ্ন আসতেই পারে যে ; বাংলাদেশের মাটিতে কি তালিবানি বিপ্লব সফল হবে ? আমার দৃঢ় বিশ্বাস তার সুযোগ খুবই কম। কারণ বাঙালি মুসলমান, বহুবিধ টানাপোড়েন সত্বেও পাকিস্তানÑআফগানিস্তানের জনগোষ্ঠি নয়। তারা ধর্মপ্রাণ, কিন্তু তাদের আছে ভাষা-সংস্কৃতি- শিল্পকলা-সাহিত্য এবং মুক্তিযুদ্ধের এমন গৌরবি শক্তি, যা যে কোনো অশুভ আগ্রাসন প্রতিরোধ করার শক্তি জোগাবে। এর পরেও মনে করি আত্মতুষ্টির সুযোগ কম। কারণ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির ভিত্তি অর্জিত হয়েছে, তার পথে উগ্র ধর্মবাদী তত্ত¡ বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার সম্ভাবনা রাখে।


ধর্মান্ধতা এবং উগ্র সাম্প্রদায়িকতা


বিগত ৫০ বছরের বহুবিধ টানাপোড়েন সত্বেও, বিশেষত মুক্তিযুদ্ধপন্থি রাজনৈতিক শক্তির টানা ১৩ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিশ্ববাসীর স্বত:স্ফূর্ত দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অবকাঠামোগত বিকাশ ও সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ তাক লাগানো অগ্রগতি সমাধা করেছে। গ্রামীন অর্থনীতিতে সাফল্য এসেছে চোখে পড়ার মতো। যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব অগ্রগতি ও তথ্য প্রযুক্তি বা ডিজিটাইলেজশনের বিপ্লব ঘটেছে - শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত। নারীর ক্ষমতায়ন ঘটেছে অনেকটা। এককালের ‘বটমলেস বাসকেট’ এখন উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। এই সাফল্য , বিশেষ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো সুবিশাল প্রকল্প বাস্তবায়ন পরনির্ভর বাংলাদেশ আত্মমর্যাদা বোধের গৌরব দেখিয়েছে। মোটকথা, সংকটÑসীমাবদ্ধতা সত্বেও বাংলাদেশ থেমে বা থমকে নেই, এগিয়ে চলেছে সামনে।


কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, অগ্রগতির এই চাকা পেছনে টানার জন্যে বিপদের সূচকও কি কম আছে ?
চলতি বছরে একশ্রেণীর ধর্মান্ধ মানুষের হাতে সংখ্যালঘু ধর্মালম্বির দুর্গাপুজা উৎসবে যে তান্ডব চালানো হয়েছে, তাতে জাতীয় সম্প্রীতির বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত আগ্রাসন লক্ষ করা গেছে। এর থেকে ষ্পষ্ট বোঝা যায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন যতোই ঘটুকনা কেন সাংস্কৃতিক ও মনোজাগতিক বিকাশে আমরা ক্রমান্বয়ে পিছিয়েছি, যা আতংকজনক।
মনে রাখা উচিৎ, ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগে প্রতিষ্ঠিত এই রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ উগ্র ধর্মবাদী বা সাম্প্রদায়িক শক্তি। ঢাকার মাটিতে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও এইসব অপশক্তি আজও, এই ৫০ বছর পরেও, বহুবিধ অঙ্গনে সক্রিয়। পুনর্জাগরিত এই বিষবৃক্ষগুলো বাঙালির শ্বাশ্বত উদারতাকে গ্রাস করতে উদ্যত, একাত্তরের পরাজয়ের শোধ নিতে উদ্যত। অতএব আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। কয়েকটি নির্বাচনি বিজয় মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক শক্তির অধিষ্ঠান ঘটিয়েছে বটে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সাংস্কৃতিক বোধের পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটেনি। অতএব প্রয়োজন একটি নতুন লড়াই, সে লড়াই সংস্কৃতির, বায়ান্নের ও একাত্তরের চেতনা পুনস্থাপনের, যা মানবিক,আধুনিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে। এ লড়াইয়ের বিকল্প আছে বলে আমি মনে করিনে।

শেষ কথা


আমার বিশ্বাস, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ কমেনি, বরং বেড়েছে। কাজেই মুক্তিযুদ্ধপন্থিদের আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। অতএব অগ্রগতি টেকসই করতে, এবং আরও এগিয়ে নিতে, পরিকল্পিত পদক্ষেপে অগ্রসর হতে হবে। গণতন্ত্রচর্চা ও সুশাসনকে গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের বিষয়ে কঠোর নজরদারী রাখতে হবে। অন্যথায় চ্যালেঞ্জের সীমানা বাড়বে বৈ কমবেনা।
উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশের জাতীয় স্বাধীনতার বিষয়টি কেবল ইতিহাসচর্চাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, নানা কারণে মুক্তিযুদ্ধ আজও চলমান রাজনীতি ও সামাজিক অঙ্গনের মূল অনুসঙ্গ। অতএব মৌলিক জাতীয় বিষয়গুলিতে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলির ঐক্যমত জরুরি। এ করা না গেলে রাষ্ট্র তার প্রার্থীত শান্তি, স্থীতিশীলতা ও সমৃদ্ধি অর্জনে বার বার হোঁচট খাবে, যে অমিত সম্ভাবনার পথ খোলা বাংলাদেশের সামনে তা বাধাগ্রস্থ হবে। আর সে সুযোগ গ্রহন করবে ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠি, যারা দেশের স্বাধীনতা আজও মেনে নেয়নি।

 

 

## হারুন হাবীব: মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও চিন্তাবিদ। 

Header Ad
Header Ad

গুমকাণ্ডে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

শেখ হাসিনা ও বেদান্ত প্যাটেল। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে গুম বিষয়ে তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। গুমের ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিচার প্রক্রিয়াকে ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছ রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

স্থানীয় সময় বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে দপ্তরের উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল এসব কথা বলেন।

এদিনের ব্রিফিংয়ে গুমসহ নানান অপরাধে জড়িত থাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নও উঠেছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশে তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে গুম নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। তদন্ত কমিশন গুমের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এর আগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ বিষয় নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

জবাবে প্যাটেল বলেন, গত দুই দশকে শত শত বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে এমন প্রতিবেদনে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জোরপূর্বক গুম একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন যা ভুক্তভোগীদের অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটক বা নিখোঁজ হওয়ার মতো ট্রমা বা মানসিক যন্ত্রণা দেয়। এটি তাদের পরিবারের ওপর অনিশ্চয়তার ট্রমা সৃষ্টি করে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের এই অপরাধের তদন্তের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই এবং ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য ন্যায্য ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করছি।

তিনি বলেন, আমরা এই অপরাধগুলোর তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই এবং বিচারের জন্য ন্যায় ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া বজায় রাখার আহ্বান জানাই, যাতে ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সুবিচার পেতে পারেন।

এর আগে, গত শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয় গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেশে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। গুমের ঘটনায় জড়িতদের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুসহ র‍্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে এই কমিশন।

এদিনের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেছে- তারা সম্ভবত ২০২৫ সালের শেষের দিকে বা ২০২৬ সালের শুরুর দিকে নির্বাচন আয়োজন করবে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী?

জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশের এই অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে আমরা স্বাগত জানাই যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশি জনগণকে তাদের নিজস্ব নেতৃত্ব নির্বাচন করার সুযোগ দেবে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন আয়োজনের সময় নির্ধারণ এমন একটি বিষয় যেদিকে আমাদের অব্যাহত পর্যবেক্ষণ থাকবে। অবশ্যই এই পুরো প্রক্রিয়াজুড়ে আইনের শাসন, একইভাবে গণতান্ত্রিক মূলনীতির বাস্তবায়নকে আমরা উৎসাহিত করছি। এবং যেমনটা আমরা সমগ্র বিশ্বে চাই- শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পক্ষেই আমাদের অবস্থান।

Header Ad
Header Ad

কক্সবাজারে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষ, শিশুসহ নিহত ৫

ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের পেকুয়ায় ডাম্পট্রাক ও অটোরিকশার সংঘর্ষে শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও দুইজন।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল ৭টার দিকে পেকুয়া এবিসি আঞ্চলিক মহাসড়কের ধনিয়াকাটা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- অটোরিকশাচালক পেকুয়ার ধনিয়াকাটার ছৈয়দ আলমের ছেলে মনিরুল মান্নান, চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকার ফিরোজ ও তার স্ত্রী শারমিন এবং তাদের শিশু সন্তান। নিহত অপরজনের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসিম উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সকাল ৭টার দিকে পেকুয়া এবিসি এলাকায় মিনি ট্রাক (ডাম্প ট্রাক) ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে ৫ জন নিহত হয়। আরও দুইজন আহত হন। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দুইটি জব্দ করা হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

মাদককাণ্ডে ফেঁসে যাচ্ছেন তিন শীর্ষ নাট্যাভিনেত্রী!

অভেনেত্রী মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া, সাফা কবির এবং তানজিন তিশা। ছবি: সংগৃহীত

দেশের শোবিজ অঙ্গনে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নাট্যাভিনেত্রী ও মডেল মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে আলোচনার কেন্দ্রে। অভিযোগের তালিকায় রয়েছে সাফা কবির (আনাতোনি কেলি সাফা) ও মুমতাহিনা চৌধুরী টয়ার নাম, যাদের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লেষের অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এছাড়া, নাট্য জগতের আরেক পরিচিত মুখ তানজিন তিশা এবং সংগীতশিল্পী সুনিধি নায়েকের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লেষের বিষয়ে বিশেষ অনুসন্ধান চালাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (নারকোটিক্স)। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, যা শোবিজে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- সূত্রে জানা গেছে, মাদকসহ গ্রেফতার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে তথ্য-প্রমাণসহ সাফা, টয়া, তিশা এবং সুনিধির নাম বেরিয়ে আসে। একটি বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে তারা নিয়মিত মাদক সংগ্রহ করে আসছিলেন। ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী অরিন্দম রায় দীপকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অভেনেত্রী তানজিন তিশা। ছবি: সংগৃহীত

ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারকোটিক্সের সহকারী পরিচালক রাহুল সেন গণমাধ্যমকে বলেন, দীপকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে আমরা কয়েকজন প্রথম সারির অভিনেত্রী ও মডেলের মাদক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছি। এ বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভেনেত্রী মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে নারকোটিক্স বলছে, মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক ছাত্র দীপের ওপর বিশেষ নজরদারি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে তার গতিবিধি অনুসরণের ধারাবাহিকতায় ১৭ অক্টোবর ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন দীপ। এ সময় তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সিসা, এমডিএমএ, এলএসডি ও কুসসহ বেশ কিছু মাদক উদ্ধার করা হয়। পরে নারকোটিক্সের একটি বিশেষায়িত টিম দীপকে ২ দিনের রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, মাদক ব্যবসার বিষয়ে মৌখিক স্বীকারোক্তির একপর্যায়ে দীপের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং পরীক্ষা করা হয়। এতে জনপ্রিয় কয়েকজন অভিনেত্রীর মাদক সম্পৃক্ততার তথ্য মেলে। এমনকি তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া মাদকের অর্ডারসংক্রান্ত কয়েকটি সুনির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং রেকর্ডও পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, দীপের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সাফা, টয়া, তিশা এবং সুনিধি নায়েকের নামে সেভ করা কয়েকটি নম্বর থেকে নিয়মিত মাদকের অর্ডার দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে নম্বরগুলো যাচাইয়ের জন্য ফোন নম্বরের রেজিস্ট্রেশন রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট নম্বরগুলো সাফা কবির এবং টয়ার নামেই রেজিস্ট্রেশনকৃত। তবে তানজিন তিশার নম্বরটির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে তার মা উম্মে সালমার নামে।

অভেনেত্রী সাফা কবির। ছবি: সংগৃহীত

গণমাধ্যমের হাতে আসা কয়েকটি চ্যাটিং রেকর্ডে দেখা যায়, ২৩ এপ্রিল সাফা কবির তার মোবাইল নম্বর থেকে ৩টি এমডিএমএ অর্ডার দেন। এজন্য দীপের হোয়াটসঅ্যাপে তিনি সংক্ষেপে লেখেন ‘ই’ দিতে পারবা আমাকে ৩টা।’ পালটা বার্তায় দীপ লেখেন দাঁড়াও বলি। সাফা লেখেন ‘ওকে’। এরপর দীপ লেখেন কিভাবে নিবা? যাওয়ার পথে? সাফা লেখেন ‘আমি চেষ্টা করব।’

এছাড়া ৫ সেপ্টেম্বর আরেক চ্যাটিংয়ে মাদকের অর্ডার দেন অভিনেত্রী টয়া। তিনিও সাংকেতিক ভাষায় লেখেন ‘ই’ লাগবে ৫টা। ফিরতি বার্তায় দীপ লেখেন ‘ফর বাংলা ফ্রুট?’ (সম্প্রতি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত প্রাইভেট পার্টি)। এরপর টয়া লেখেন ‘ইয়াপ (ইয়েস)।’

মাদক বিক্রির এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আরও কয়েকজন অভিনেত্রী ও সংগীত শিল্পীর চ্যাটিং পাওয়া যায়। এদের অন্যতম হলেন অভিনেত্রী তানজিন তিশা এবং সংগীত শিল্পী সুনিধি নায়েক। চ্যাটিংয়ে সুনিধি নায়েক কয়েকটি ব্র্যান্ডের এমডিএমের প্যাকেট শেয়ার করে অর্ডার দেন।

নারকোটিক্স বলছে, ভারতীয় নাগরিক সুনিধি নায়েক দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। বাংলাদেশের নামকরা সংগীত শিল্পী এবং কোক স্টুডিওর অন্যতম উদ্যোক্তা শায়ান চৌধুরী ওরফে অর্ণবকে বিয়ে করে তিনি ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তবে সম্প্রতি অর্ণবের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়েছে এমন কথা বিভিন্ন মিডিয়ায় শোনা যায়।

সংগীতশিল্পী সুনিধি নায়েক। ছবি: সংগৃহীত

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, দীপ গ্রেফতারের পরপরই সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ তাদের মোবাইল ফোন থেকে গোপন চ্যাটিং রেকর্ড মুছে ফেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে তারা পুরোপুরি সফল হননি। গ্রেফতারের পর তাৎক্ষণিকভাবে দীপের মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এতে মাদক কেনাবেচাসংক্রান্ত চ্যাটিং রেকর্ড মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি।

সূত্র জানায়, বর্তমানে রাজধানীর গুলশান এবং বনানীকেন্দ্রিক ধণাঢ্য পরিবারের সন্তানদের অনেকেই এমডিএম, এলএসডি এবং কুশ নামের উচ্চ আসক্তি সম্পন্ন মাদকের দিকে ঝুঁকছে। চোরাইপথে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং থাইল্যান্ডসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ থেকে এসব মাদকের চালান আসছে। স্ল্যাপচ্যাট, মেসেঞ্জার বা হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপে এগুলো বিক্রি করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোপনীয়তার জন্য বিভিন্ন সাংকেতিক নামে এসব মাদক বিক্রি করা হয়ে থাকে। যেমন এমডিএম ‘ই’ নামে, এলএসডি ‘এসিড’ এবং এক ধরনের তরল গাঁজা টিএসসি নামে কেনাবেচা হয়। ইলেকট্রিক সিগারেটের মতো ভেপ আকারে তরল গাঁজা সেবন করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা গণমাধ্যমকে জানান, এমডিএমএ পরীক্ষাগারে তৈরি এক ধরনের কৃত্রিম ওষুধ। এটি অনেক দেশে এস্টাসি বা সুখানুভূতির মাদক হিসাবে পরিচিত। এটি ইয়াবার উপকরণ মেথাএমফিটামিনের মতোই অতি উত্তেজক মাদক। এটি মানবদেহে এমন একটি শক্তিশালী প্রভাব তৈরি করে যাতে সময় এবং উপলব্ধি জ্ঞানের বিচ্যুতি ঘটে। তবে অনেক সময় এটি শান্তি, আনন্দ, সহানুভূতি এবং এক ধরনের আত্মবিশ্বাসের বর্ধিত অনুভূতি তৈরি করে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

গুমকাণ্ডে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র
কক্সবাজারে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষ, শিশুসহ নিহত ৫
মাদককাণ্ডে ফেঁসে যাচ্ছেন তিন শীর্ষ নাট্যাভিনেত্রী!
গুম-খুনে জড়িত ২০ কর্মকর্তার পাসপোর্ট স্থগিত, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ভাইরাল ভিডিওটি ছিল ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’, ব্যবহৃত হয়েছে ডামি অস্ত্র
শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের দুর্নীতি অনুসন্ধানে ৫ কর্মকর্তা নিয়োগ
৫ বছর পর চালু হচ্ছে রংপুর চিনিকল, এলাকায় খুশির বন্যা
মোদির বিতর্কিত পোস্ট: যে বার্তা দিলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল কিনবে সরকার
তনুর গ্রাফিতির ওপর পোস্টার সাঁটালেন মেহজাবীন, সমালোচনার ঝড়
ফ্যাসিস্ট সরকার দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে: তারেক রহমান
আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম, ভরিতে কত?
তাবলিগ ইস্যুতে যা বললেন মিজানুর রহমান আজহারী
নির্বাচনের জন্য ৬ মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়: সালাহউদ্দিন আহমেদ
এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউলের দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক
দিনাজপুরে অর্ধকোটি টাকার নিষিদ্ধ ট্যাবলেটসহ আটক ২
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা থেকে খালাস পেলেন তারেক রহমান
শামা ওবায়েদকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য, কনটেন্ট ক্রিয়েটর ইলিয়াসের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল
প্রধান উপদেষ্টা মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেবেন
সাকিবকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ