শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

বুদ্ধিজীবীদের কতটুকু স্মরণ করতে পারি, তা নিয়ে সংশয় আছে

আমি বিস্মিত হই যে, শুধু ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। ইতিহাস বলছে, অপারেশন সার্চ লাইটের শুরু থেকেই, অর্থাৎ ২৫ মার্চ ১৯৭১ রাত থেকেই বুদ্ধিজীবী নিধন শুরু হয়। সে রাতেই আমরা হারিয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কৃতি শিক্ষক এবং পণ্ডিত মানুষকে। ড. জি সি দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, ড. মনিরুজ্জামানসহ আরও অনেককেই হারিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়জুড়ে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নেওয়া হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। সেটি সারাদেশেই হয়েছে।
১২ ডিসেম্বরে আলবদর, রাজাকার বাহিনী কর্তৃক দেশের বুদ্ধিজিবীদের হত্যা করতে তালিকা তৈরি করা হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী, তারা ঢাকাসহ দেশের সব জায়গা থেকে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। কারণ, তারা বুঝতে পেরেছিল তাদের সময় শেষ হয়ে এসেছে। শেষ মুহূর্তের আঘাত হিসেবে আমরা বুদ্ধিজীবীদের হারালাম।

১৪ ডিসেম্বরে আমার ব্যক্তিগত স্মৃতি হচ্ছে, তখন আমি মোহসিন হলের সহকারী শিক্ষক। ঘুম থেকে উঠে দেখি–আমাদের বাসায় পানি নেই। বুঝলাম, পানির কল ছাড়ার মানুষটি আসতে পারেনি সান্ধ্য আইন বলবৎ থাকার কারণে। মোহসিন হলের পেছনের পশ্চিম কোনায় যে পানির ঘরটি আছে, আমি সেখানে গেলাম। গিয়ে দেখি মেশিনের কোনো শব্দ নেই। আমি অযান্ত্রিক মানুষ, মেশিন কীভাবে চালাতে হয় জানি না। আমার পর এলেন আমাদের একজন আবাসিক শিক্ষক জহুরুল হক। তিনি ছিলেন দর্শনের শিক্ষক। সবশেষে এলেন আমার প্রিয় শিক্ষক শহিদ গিয়াস উদ্দীন আহমেদ। পরনে ঘুমের পোশাক। তিনজন মিলে আলোচনা করে স্যারকে বুদ্ধি দিলাম। বললাম, স্যার হ্যান্ডেলটা অফের দিকে আছে, সেটা অনের দিকে দিলে কেমন হয়। স্যার সেটা অনের দিকে দিলেন এবং একটা শো শো শব্দ শুনতে পেলাম। একসময় দেখলাম পানি আসতে শুরু করেছে।

বেশ হৃষ্টচিত্তে বেড়িয়ে যাব, সেই মুহূর্তে ছোট্ট দরজার কাছে এসে দাঁড়াল আলবদর–ছাইরঙ্গের পোশাক, মুখে রুমাল বাধা। গিয়াস স্যারের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আর ইউ মিস্টার গিয়াস?’ গিয়াস স্যার উত্তর দিলেন, ‘ইয়েস দ্যাটস মি।’ পরক্ষণেই গিয়াস স্যারের বুকে বন্দুক তাক করে উর্দুতে বলল, ‘হামারে সাথ আইয়ে।’ বাঙালি উর্দুতে উচ্চারণ করলে যে বিকৃত শোনা যায়, সেটি সেদিন শুনেছিলাম। যা-ই হোক, গত্যন্তর না দেখে গিয়াস স্যার আলবদরের অনুগামী হলেন। শেষ কথাটি আমার সঙ্গে হলো। বললেন, ‘আনোয়ার, চলি, দোয়া করো।’ আমরা হতভম্ব দুজনেই। স্যারকে নিয়ে গেল।

বাইরে বেড়িয়ে দেখি সামনে দাঁড়িয়ে আছে মোহসিন হলের অবাঙ্গালি দারোয়ান রহিম। তার কাঁধে একটি গামছা ছিল। সেটি দিয়ে স্যারের চোখ বেঁধে নিয়ে গেল। এটাই শেষ দেখা স্যারের সঙ্গে।
তাঁর মরদেহ [ঘুমের পোশাক পরা] শনাক্ত করতে পেরেছিলাম এবং সেটি দাফন করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গিয়াস স্যার হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলাম আমি। সাক্ষ্য দিয়েছি দুদিন। আমার কাছে দুঃখ লাগে এজন্য যে, যারা শহিদ শিক্ষক অন্তত যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক তাদের অনেকের সাথে ঘনিস্টতা ছিল। আমি স্নেহভাজন ছিলাম। তাদের লালিত সপ্ন সম্পর্কে আমার জানা ছিল। তারা যে বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, সেই বাংলাদেশ তো আজকের বাংলাদেশ নয়।

আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা মুক্তচিন্তার পীঠস্থান। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, জামাতপন্থী শিক্ষক আছে। সেটি বড় দুঃখ লাগে। আমি বিশ্বাস করি, বুদ্ধিজীবীদের যে স্বপ্ন ছিল, তা ধারণ করেই বঙ্গবন্ধু ৭২-এর সংবিধান করেছিলেন। সেই সংবিধান আজ ক্ষত-বিক্ষত দলিল। বিকৃত হয়ে গেছে চেতনার দিক থেকে এবং কাঠামোর দিক থেকে।

আরেকটি দুঃখের কথা বলি–আমরা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আজও শহিদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা তৈরি করতে পারিনি। এটি আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা–বিশেষ করে সরকারের ব্যর্থতা।
বর্তমান সরকার ১৩ বছরেরও বেশি ক্ষমতায়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কি কাজ করেছে, আমি বুঝি না। তাদের তো দায়িত্ব ছিল শহিদ বুদ্ধিজীবীদের এই তালিকা আমাদের হাতে দেওয়ার। অন্তত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিমাণ অনুষ্ঠান বা চর্চা হওয়ার কথা ছিল, সেটিও আমি দেখছি না। এটা আমার কাছে এক বিপন্ন বিস্ময়।

আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি, ১৯৭১ সালে সারা বাংলাদেশে এক হাজার ১১১জন বুদ্ধিজীবী শহিদ হয়েছেন। এই বুদ্ধিজীবীদের আমরা কতটুকু স্মরণ করতে পারি, তা নিয়ে আমার সংশয় আছে। বাঙালি দান গ্রহণ করতে পারে দু’হাত ভরে। বাঙালি জ্বলে উঠতে পারে। তবে দানকে অর্জন করে কখনোই স্ফিত হতে পারে না। তার বড় প্রমাণ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি আমাদের উপেক্ষা, উন্নাসিকতা। শেষে সে কথায় ফিরে যাই, যা দিয়ে শুরু করেছিলাম। আমরা অনেকটাই এগিয়েছি; কিন্তু যেতে হবে বহুদূর।

লেখক: শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

শ্রুতিলিখন: শেহনাজ পূর্ণা

এসএ/

Header Ad
Header Ad

উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় সেলফি তোলার সময় ট্রেনের ধাক্কায় এক তরুণ ও এক তরুণী প্রাণ হারিয়েছেন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উত্তরা পূর্ব থানার ৮ নম্বর সেক্টরের শেষ প্রান্তের রেলক্রসিং এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে তরুণ-তরুণী রেললাইন দিয়ে হাঁটছিলেন এবং সেলফি তুলছিলেন। এ সময় ঢাকাগামী ও টঙ্গীগামী দুটি ট্রেন একযোগে রেলক্রসিং অতিক্রম করছিল। এ সময় টঙ্গীগামী ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তরুণী মারা যান।

গুরুতর আহত অবস্থায় তরুণটিকে প্রথমে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হয় এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই রাত ৮টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, উত্তরা থেকে আহত অবস্থায় এক তরুণকে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ জরুরি বিভাগে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে রেলওয়ে থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।

তবে দুর্ঘটনায় নিহতদের নাম-পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Header Ad
Header Ad

জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১০টি জেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের আমিনবাজার এলাকায় জাতীয় গ্রিডে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় এই বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। রাত ৮টার পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করে এবং পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হচ্ছে। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও কিছু সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যুৎ না থাকায় এইসব অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিদ্যুৎনির্ভর সব ধরনের কাজকর্মও ব্যাহত হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৪ সালে দেশে বড় ধরনের একটি গ্রিড বিপর্যয় ঘটেছিল। সেবার ভারত থেকে আসা বিদ্যুৎ সরবরাহ কয়েক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ হয়ে পড়ায় সারাদেশ প্রায় ৩০ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল।

Header Ad
Header Ad

আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা

ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন দিবস, উৎসব এবং সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে নির্বাহী আদেশের সুবিধা কাজে লাগিয়ে আবারও ছুটি কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। মে মাসে দুই দফায় টানা তিনদিন করে মোট ছয়দিনের ছুটির সুযোগ আসছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি ছুটির প্রজ্ঞাপন অনুসারে, আগামী ১ মে (বৃহস্পতিবার) আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকবে। এরপর ২ ও ৩ মে যথাক্রমে শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় সরকারি কর্মচারীরা টানা তিনদিনের ছুটি উপভোগ করতে পারবেন।

এছাড়া, আগামী ১১ মে (রবিবার) বুদ্ধ পূর্ণিমার ছুটি রয়েছে। এর আগে ৯ ও ১০ মে যথাক্রমে শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আবারও টানা তিনদিন ছুটি মিলবে।

এর আগে গত মার্চ-এপ্রিল মাসে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি চাকরিজীবীরা টানা নয়দিন ছুটি কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। সরকার ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদের ছুটির সঙ্গে নির্বাহী আদেশে আরও একটি অতিরিক্ত ছুটি যুক্ত করেছিল।

ছুটির বিধিমালা অনুযায়ী, দুই ছুটির মাঝে নৈমিত্তিক ছুটি নেওয়ার নিয়ম নেই। তবে অর্জিত ছুটি বা পূর্বনির্ধারিত ঐচ্ছিক ছুটি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বছরের শুরুতে নিজ ধর্ম অনুযায়ী তিনদিনের ঐচ্ছিক ছুটি অনুমোদন নিয়ে ভোগ করার নিয়মও চালু আছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার
নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা
গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত: সৌরভ গাঙ্গুলি
র‍্যাফেল ড্রতে ৯ কোটি টাকা জিতলেন দুই প্রবাসী বাংলাদেশি
৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম ও পিপিএম পদক