মধুগন্ধি মুচকুন্দচাঁপা
মুচকুন্দচাঁপা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। কেউ কেউ এ ফুলকেই কনকচাঁপা নামে ডাকেন। আদতে কনকচাঁপা নামে আমাদের আরেকটি পুষ্পবৃক্ষ রয়েছে। ইংরেজি নাম–Bayur Tree, Maple-Leafed Bayur Tree, Dinner Plate Tree ইত্যাদি। কেউ কেউ কাঠচম্পা নামেও ডাকেন। আবার কেউ কেউ বলেন মুছকুন্দা। গ্রামেও গাছটি একাধিক নামে পরিচিত। তবে সেখানে গাছটির ওষুধি গুণের কাছে ফুলের সৌন্দর্য ও সুগন্ধ বরাবরই উপেক্ষিত; কিন্তু প্রায় সারা বছর আমরা মুচকুন্দের দিকে না তাকালেও বসন্তের এলোমেলো বাতাসে যখন চারপাশে ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে, তখন আপনা আপনিই আমাদের চোখ খুঁজে বের করে মুচকুন্দকে।
ঢাকায় রমনা পার্কলাগোয়া বেইলি রোড, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি এবং বলধা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে এ গাছ দেখা যায়। বিখ্যাত শিল্পী এস এম সুলতানের প্রিয় ফুল ছিল মুচকুন্দচাঁপা। তিনি সাতটি মুচকুন্দচাঁপা গাছ যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজ ক্যাম্পাসে রোপণ করেছিলেন।
সম্প্রতি মুচকুন্দ ফুলের ছবিটি ঢাকায় রমনাপার্ক লাগোয়া বেইলি রোড থেকে তোলা ছবি: মোকারম হোসেন
মুচকুন্দচাঁপা (Pterospermum acerifolium) দীর্ঘাকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ। বাকল ধূসর ও মসৃণ। পাতা বেশ বড়, আয়তনে অনেকটা সেগুন পাতার মতো গোলাকার। পাতার আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো–পাতার একপিঠ উজ্জ্বল সবুজ ও মসৃণ আর অন্যপিঠ রুক্ষ-রোমশ ও সাদাটে ধূসর। ফুল ফোটার মৌসুম বসন্ত থেকে পুরো বর্ষা জুড়ে। ফুলের কলি আঙ্গুলাকৃতির, দীর্ঘ গোলাকার ও বাদামি-হলুদ রঙের। প্রস্ফুটিত মুচকুন্দের পাঁচটি মুক্ত বৃত্যাংশ মাংসল ও রোমশ। শুকনো ফুলের গন্ধও অনেকদিন অটুট থাকে। পাপড়ির রঙ দুধসাদা, বেশ কোমল ও ফিতা-আকৃতির। পরাগচক্র সোনালি সাদা, একগুচ্ছ রেশমি সুতোর মতো নমনীয় ও উজ্জ্বল।
ফুল ঝরে পড়ার পরপরই আসে ফল। ফল ডিম্বাকৃতির, আকারে কিছুটা বড় ও শক্ত ধরনের। উচ্চতার জন্য গাছে ফুল দেখা অনেকটাই কঠিন। মজার বিষয় হলো–মুচকুন্দচাঁপা আড়াল পছন্দ করে। ফুল বাসি হলে ঝরে পড়ে। পুরো মুচকুন্দতলা বাসি ফুলে ছেয়ে যায়।
সম্প্রতি মুচকুন্দ ফুলের ছবিটি ঢাকায় রমনাপার্ক লাগোয়া বেইলি রোড থেকে তোলা ছবি: মোকারম হোসেন
মুচকুন্দের কাঠও কিন্তু ফেলনা নয়, দীর্ঘ স্থায়িত্বের জন্য খ্যাতি আছে। একসময় গ্রামে মুচকুন্দের পাতায় তামাক ও গুড় বিক্রি হতো। হাত-পা জ্বালাপোড়ায় মানুষ পাতার ডগা ভিজিয়ে রসটুকু খেয়ে নেয়। ফুল জীবাণু ও কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বাকল ও পাতা বসন্ত রোগের মহৌষধ। এ গাছের আদিনিবাস হিমালয়ের পাদদেশ, মিয়ানমার, আসাম, সিলেট ও চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চল।
এসএ/