শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১৮ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

আনোয়ার জাহিদ থেকে মুরাদ হাসান, অতি ভক্তি সর্বনাশা


চাপের মুখে পদত্যাগকারী সদ্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান টক অব দ্যা কান্ট্রি। তাঁকে নিয়ে এতো আলোচনা হচ্ছে যাতে মনে হতে পারে, দেশে আর কোন সমস্যা নেই। নেই খবরও। ইস্যুর বড়ই আকাল এবং তিনি যে অভিযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তা যেনো এর আগে আর কখনো ঘটেনি। কিন্তু বাস্তবতা সেরকম নয়। এরপরও ডা. মুরাদ আলোচনার শীর্ষে। কারণ দুটি। এক. তাঁর অতিভক্তির বাহানা। দুই. নারী সংশ্রব। স্মরণ করা যেতে পারে এরকম ঘটনার উদাহরণ মোটেই বিরল নয়। একমাত্র তো নয়ই!

অতিভক্তির বাহানার বিষয়টিই ধরা যাক। তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদে আসিন থাকাকালে এই সেদিন,১১ নভেম্বর, ডা. মুরাদ হাসান বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চাইলে আগুনে ঝাঁপ দেব।’ একইভাবে অতিভক্তির আতিশয্যে কান্ডজ্ঞাণ হারিয়েছিলেন এরশাদ সরকারের তথ্যমন্ত্রী অনোয়ার জাহিদ।সামরিক সরকারের মন্ত্রী হবার আগে তিনি সাংবাদিকতায় নিয়োজিতো ছিলেন। তারও আগে সক্রিয় ছিলেন বাম ধারার রাজনীতির সঙ্গে।বিভিন্নমুখী প্রতিভা, সংশ্রব ও নানামুখি ব্যাপ্তি থাকা সত্তে¡ও আনোয়ার জাহিদ কান্ডজ্ঞানের সীমানায় নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি চাইলে রাস্তা ঝাড়ু দেব!’ অথচ তখন তিনি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি তার কোন রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তিগত দায়িত্বের আওতায় ছিলো না। তবু তিনি ঝাড়ুদার হতে চেয়েছেন। কবিতার অমল কান্তি যেমন রদ্দুর হতে চেয়েছিলো।

তথ্যমন্ত্রী হয়েও অনোয়ার জাহিদ কেন ঝাড়ু দিতে চেয়েছেন? তথ্য প্রতিমন্ত্রী কেন আগুনে ঝাপ দিতে চেয়েছেন? অবশ্যই কারণ আছে। এ ব্যাপারে বহু আগে বলে গেছেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘যাহা বলের অসাধ্য, যাহা বিদ্যার অসাধ্য, যাহা ধনের অসাধ্য, যাহা কৌশলের অসাধ্য, তাহা কেবল একমাত্র তৈল দ্বারা সিদ্ধ হইতে পারে।’ এই চিরন্তন সূত্রের পথেই যুগেযুগে তোষামোদকারীরা হেটেছেন, হাটছেন এবং হাটবেন। এ পথের পথিক বহরে যুক্ত হয়েছেন আনোয়ার জাহিদ। এরপরও জেনারেল এরশাদের সঙ্গে বছর দুইর বেশি টিকতে পারেনি। বরং তার সবটুকু তেলই বিফলে গেছে। কারণ তাঁর তৈল মর্দনের কৌশল ও মাত্রায় ভুল ছিলো। তেলের তেলেসমাতি তড়িৎ প্রবাহের মতো হলেও বাড়াবাড়িতে সবই যায় বিফলে। জগত সংসারে তৈলে সিক্ত হয় না এমন মানুষ বিরল। তেল অব্যর্থ। কিন্তু তেল চর্চা করতে হয় কাল-মাত্রা বুঝে। কিন্তু স্থানভেদে তিন ফোঁটার জায়গায় চার হলেই লক্ষ্য অঙ্গকুড়ে বিনষ্ট হয়। সুতরাং তৈলে সিদ্ধ না হলে সিদ্ধিলাভ হয়না। যেমন হয়নি আনোয়ার জাহিদ ও ডা. মুরাদ হাসানের বেলায়। তারা একই মাত্রায় ব্যর্থ হলেও তৈল প্রয়োগের মাত্রা জ্ঞানে তুলনামূলক পরিমিতি বোধের পরিচয় দিয়েছেন ডা. মুরাদ। তা না হয়ে তিনি হয়তো টয়লেট পরিস্কার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করতেন।

যে মাত্রারই হোক, ডা.মুরাদের এই তৈল বচন লক্ষ্যহীন নয়। সকল তৈল বচনেরই উদ্দেশ থাকে। এ দিক থেকে মুরাদ হাসান বেশ পরিস্কার। প্রধানমন্ত্রী চাইলে আগুনে ঝাপ দেবার সংকল্প প্রকাশের দিনই নিজের বাসনার কথাও চাউড় করেছেন। বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সজ্জন ব্যক্তি, সফল মানুষ। কিন্তু তাকে সহযোগিতা করার জন্য সেখানে আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।’ বিশেষ করে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানান ডা. মুরাদ। দায়িত্ব দেয়া হলে পালন করবেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন,‘প্রধানমন্ত্রী আমার মা। তিনি আমাকে যে দায়িত্ব দেবেন সেটাই পালন করবো। তিনি যদি বলেন, আগুনে ঝাপ দে, মুরাদ। আমি তাই করব।’

খুবই পরিস্কার, স্বাস্থ্য থেকে তথ্যতে আসা ডা. মুরাদ হাসান স্বরাষ্ট্রতে যাবার বাসনা করেছেন। হয়তো এই বাসনায় তিনি বিভোর ছিলেন। এখানেই ভুল হয়েছে। তাঁর ভুল দুই রকম। এক. তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মপদ্ধতি তলিয়ে দেখেননি, অথবা এ মেধা তার নেই। তা না হলে বুঝতেন, যতটা মনে করা হয় ততটা ক্ষমতা প্রয়োগ করেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা।এ বিষয়ে মরহুম আকবর হোসেনের বাণীসম একটি উচ্চারণ আছে, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে কখনো মন্ত্রী থাকেন না।’ তিনি বুঝাতে চেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসলে থাকে সরকার প্রধানের হাতে। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার পর থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকেে শুরু করে সকল সরকার প্রধান বিভিন্ন মেয়াদে সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজ হাতে রেখেছেন। ফলে অকাট্যভাবে প্রমানিত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যত গুরুত্বপূর্ণ ততই নিয়ন্ত্রিত। দুই. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইতিহাস পাঠেও ডা. মুরাদের ভুল রয়েছে।তা না হলে বুঝতেন,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অভিজ্ঞতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব বেশি সুখকর নয়। যে ধারায় বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে ৩২ জন ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়রে দায়িত্বে।এর মধ্যে মেয়াদ পূর্তিতে সফল আবদুল মতিন চৗধুরী। আর পরপর একাধিক মেয়াদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্তির রেকর্ড করেছেন আসাদুজ্জামান খান কামাল।

ইতিহাসের দিকে তাকালে বুঝা যাবে, একুশ বছর একটানা ক্ষমতার বাইরে থাকার পর ১৯৯৬ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর রফিক পৌনে তিন বছরের মাথায় দপ্তর হারিয়েছেন। মাস কয়েক ‘উজিরে খামাখা’ থাকার পর মন্ত্রিপরিষদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। এটি স্ববিচেনায় করেছেন নাকি করতে বলা হয়েছে তা জানা যায়নি। এরপর আজতক তাঁকে আর মন্ত্রী করা হয়নি। যদিও বাসনা ছিলো প্রবল। থাকারই কথা। কিন্তু সন্তষ্ট থাকতে হয়েছে সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ প্রাপ্ত হয়েই। তবে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন শক্ত অবস্থানে। এবং বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বচ্ছ ইমেজের মন্ত্রী ছিলেন মেজর রফিক। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় মোহাম্মদ নাসিমকে। গদিসীন হয়েই তিনি মাটির নীচ থেকে সন্ত্রাসী ধরে আনার হুংকার দিলেন। কিন্তু বাস্তবে সেরকম কিছুই করতে পারেননি তিনি। পর্যবেক্ষকদের মতে তিনি আসলে সরকারকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবার মতো কর্মকান্ড করেছেন দুই বছরের মেয়াদে।
পরের সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান আলতাফ হোসেন চৌধুরী। কিন্তু তার অভিজ্ঞতাও সুখকর হয়নি। বিদায় ঘন্টাবাজে আলতাফ চৌধুরীর। তবে কক্ষচ্যুত হলেও নক্ষত্রের পতন হয়নি। পাকিস্তান লবীর এজেন্ট হিসেবে পরিচিত আলতাফ চৌধুরী লাভ করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আসেন লুৎফুজ্জামান বাবর। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত লুৎফুজ্জামান বাবর কয়েক বছর ধরে মৃত্যুদন্ড মাথায় নিয়ে কারাগারে আছেন। তিনি শারীরকি ও মানসিকভাবে বিপর্যস্থ। তার খবর কেউ রাখে না।

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে শুরুতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয় এডভোকেট সাহারা খাতুনকে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি কখনই কোমর সোজা করেই দাঁড়াতে পারেননি। বরং এ দায়িত্বে থাকাকালেই বাধরুমে পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙ্গেছেন। এরপর তার কপালও ভাঙ্গে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সড়িয়ে তাঁকে দেয়া হয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে আসেন মহা প্রতাপের সাবেক আমলা মহিউদ্দিন খান আলমগীর। কিন্তু রানাপ্লাজা ট্রাজেডির পর ‘ঝাকি তত্ত¡’ দিয়ে আলোচিত হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন অনুজ্জ্বল। ফলে এক পর্যায়ে স্বরাস্ট্রমন্ত্রণালয়ের সরাসরি দ্বায়িত্ব নিতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় থেকে সরে গিয়ে সোহেল তাজ বেছে নেন প্রবাস জীবন। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ ও স্নেহের বন্ধনও তাঁকে আর মন্ত্রণাালয়ে ফেরাতে পারেনি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী এবং সরকার প্রধানের প্রশ্নাতীত আস্থার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত আসাদুজ্জামান খান কামাল একটানা দায়িত্বে আছেন ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই থেকে। দীর্ঘতম সময়ের এই স্বরাস্ত্রমন্ত্রী ব্যাপারে অগ্রহণযোগ্য কথা বলে বসলেন ডা. মুরাদ হাসান তথ্য প্রতিমন্ত্রীর চেয়ারে বসেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সহযোগিতা করার বাসনাও প্রকাশ করলেন নগ্নভাবে। যা সরকারকে বিব্রত করেছে। কিন্তু ডা. মুরাদ এ পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছেন। উল্টো হয়তো ভেবেছেন, আকাশের ঠিকানায় লেখা তাঁর এই বাসনার চিঠি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিভ্রম থেকেই তিনি অধিকতর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। হয়ে পড়েন বেসামাল। পরিণতিতে মন্ত্রিসভা থেকে বিদায়। তার ভাগ্য ভালো। পত্রপাঠ বিদায় করা হয়নি। যেমনটা হয়েছিলো মিজানুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ার জাহিদকে।
ডা. মুরাদ হাসানের অধপতনের মূলে রয়েছে দূরাশা জনিত বেসামাল কথাবার্তা এবং আদিম রিপুর অনিয়ন্ত্রিত তাড়না। হয়তো তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার সুবাদে নায়িকা মাহিদের সহজে কাছে পেতেন ডা. মুরাদ। এ ধারায় এ মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক প্রতিমন্ত্রী বেশ আলোচিত ছিলেন। তিনি আবার রাজনৈতিক গবেষক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত। গবেষণা লব্ধ তার একাধিক বই রয়েছে। তবে তিনি চিহ্নিত হবার অবস্থায় পতিত হননি। তবে চিহ্নিত হয়েছেন ডা.মুরাদ এবং গদি হারিয়েছেন।এ ধরনের ঘটনায় স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম আলোচনায় আসেন সেময়ের তথ্যমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী। বলা হয়, এ কারণেই তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে পত্রপাঠ বিদায় করা হয়েছিলো। তিনি এখন পরপারে। কিন্তু যাকে নিয়ে কান্ড সেই নায়িকা এখনো জীবিত। এদিকে খালেদা সরকারের এক পূর্তমন্ত্রী এমন এক নায়িকার সঙ্গে কান্ডে জড়িয়েছিলেন যিনি পরপারে গেছেন।

এ রকম আরো অনেক ঘটনা আছে। আছে রটনাও। যা সামরিক সরকারের সময় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে ছিলো। যে কারণে চিহ্নিত সুন্দরীদের সচিবালয়ে প্রবেশে একাধিকবার নিষেধাজ্ঞা নোটিশ জারী করা হয়েছিলো। তবে এতে কোন ফলোদয় হয়নি বলে মনে করা হয় বরং এরশাদ সরকারের সময় এই ধারা পৌছায় সর্বোচ্চ অবস্থানে এবং কে না জানে, জেনারেল এরশাদ ছিলেন এ প্রবনতার পালের গোদা। যে ধারায় অনেকেইে যুক্ত হয়েছেন। সে সময় আলাচিত সুন্দরী মানেই ধরে নেয়া হতো, এরশাদের বান্ধবী। অনেকে আবার এরশাদের ধারে কাছে ঘেষার সুযোগ না পেয়েও নিজেকে এরশাদের ঘনিষ্ঠ হসিবেে পরিচয় দিতেন সিদ্ধি লাভের কৌশল হিসেবে। অবশ্য, এ ধারা চিরকালীন। শিকার এবং শিকারীর আকাল হয় না কোন কালেই। এ এক চলমান ধারা।

এ ধারায় মোহাবিষ্ট হয়ে প্রতিমন্ত্রীর আসনে থাকাকালে ডা. মুরাদ হাসান কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। যার অনিবার্য পরিণতির পথে এখন হাটছেন তিনি। এ পথের বেশামাল পথিক হয়ে এরই মধ্যে তিনি পতিত হয়েছেন। মন্ত্রিত্বেরও অবসান হয়েছে। এখন রাজনৈতিক জীবনের চির অবসান সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ থেকে কেউ কেউ হতো ধারণা করতে পারেন, ডা. মুরাদের পরিণতি দেখে অনেকেই সাবধান হবেন। কিন্তু বাস্তবতা আসলে সেরকম নয়। সমস্যার মূলে না গেলে এ রকমের উপদ্রব এবং অনৈতিকতা ধারার অবসান হবার নয়।

এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। আরো একটি বিষয় বিবেচনা করা দরকার। তা হচ্ছে, ডা. মুরাদ হাসান কি কেবল বিকারগ্রস্থ হয়েই কথা বলেছেন? নাকি কোন চক্রের দাবার ঘুটি হিসেবে খেলেছেন। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে খেপিয়ে তোলার মিশনে ছিলেন তিনি? আরো প্রশ্ন আছে। নায়িকা মাহির সঙ্গে প্রায় দুই বছর আগে ডা. মুরাদের ফোনালাপ এ সময় ফাঁস হবার রহস্য কি? একটি ঘটনাচক্র, নাকি ঘটানো!

লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

Header Ad
Header Ad

আলাউদ্দিন নাসিমের গুলশানের বাড়ি গোপন, দুদকের তদন্ত শুরু

ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার গুলশানে শত কোটি টাকার বাড়ির তথ্য নির্বাচনি হলফনামায় গোপন করেছেন ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। তার হলফনামায় এই বাড়ির উল্লেখ না থাকায় বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তে নেমেছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম একসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ সালের পর আওয়ামী রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পদ না থাকলেও প্রশাসনে বদলি, পদায়ন, বিনা টেন্ডারে কাজ পাইয়ে দেওয়া এবং বিদ্যুৎ কোম্পানির লাইসেন্সের মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন।

নির্বাচনি হলফনামার সম্পদের বিশ্লেষণ

২০২৪ সালের নির্বাচনি হলফনামা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, স্থাবর সম্পদের তালিকায় তিনি উল্লেখ করেছেন—

কৃষিজমি: ১০ কোটি ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৪৭ টাকা,

স্ত্রীর নামে কৃষিজমি: ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৬ টাকা,

অকৃষি জমি: ২৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা,

স্ত্রীর নামে অকৃষি জমি: ৭৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা,

তিনটি আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন: ৮ কোটি ৫২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৬৬ টাকা,

ছয়টি বাড়ি: ১২ কোটি ৩১ লাখ ৪৬ হাজার ৯২০ টাকা,

স্ত্রীর নামে চারটি অ্যাপার্টমেন্ট: ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৪ হাজার ২০১ টাকা।

 

১৯৮৬ সালে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদানকারী আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার হন এবং ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালে এপিএস হিসেবে কাজ করেন। ২০০৯ সালে উপসচিব পদে থাকা অবস্থায় প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদত্যাগ করেন এবং ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন।

২০২৪ সালের নির্বাচনি হলফনামায় তার ও স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ১০৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪৫ টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি রাজধানীর গুলশানের এনই(কে) ব্লকের ৮৩ নম্বর সড়কের ১৩/বি প্লটটি জমিসহ ক্রয় করেন, যা ১২ কাঠার বিশাল একটি সম্পত্তি। প্রতি কাঠার সর্বনিম্ন মূল্য ১০ কোটি টাকা হিসাবে এটির বাজারমূল্য দাঁড়ায় ১২০ কোটি টাকা। তবে হলফনামায় এই সম্পত্তির উল্লেখ নেই, যা দুদকের তদন্তে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।

বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের অভিযোগে ২ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। পাশাপাশি, তার ও তার পরিবারের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ফারুক আহমেদ জানান, "সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সম্পদের অনুসন্ধান চলছে। আমরা তার বিভিন্ন সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করছি। বিশেষ করে গুলশানের বাড়ির বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া আরও কোথায় কোথায় সম্পদের তথ্য গোপন করা হয়েছে, সেটিও যাচাই করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।"

দুদকের এই তদন্তের মাধ্যমে সত্যতা প্রকাশ পেলে এটি হবে দেশের অন্যতম আলোচিত দুর্নীতির একটি বড় উদাহরণ।

 

Header Ad
Header Ad

আ.লীগ সমর্থকদের কাছে ‘আলোচিত মাফলারটি’ বিক্রির ঘোষণা দিলেন প্রেসসচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। ছবি: সংগৃহীত

এবার ‍সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত সেই মাফলারটি বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। শনিবার নিজের ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এই ঘোষণা দেন।

ওই পোস্টে প্রেসসচিব লিখেছেন, “আলোচিত ও সমালোচিত বারবেরি মাফলারটির আসল দাম ৮৬ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হবে। যেকোনো সহৃদয় ব্যক্তি ‘অভয়ারণ্য - বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনে’ এই টাকা দিয়ে মাফলারটি কিনতে পারবেন।

‌পরিচয় গোপন রেখে কোনো আওয়ামী লীগের সমর্থক মাফলারটি কিনতে পারবেন বলে পোস্টে উল্লেখ করেন প্রেসসচিব। এ জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থককে অবশ্য গুনতে হবে ৮৬ হাজার ৬০০ ডলার। মাফলারটি দুইবার ধোয়ার পর ক্রেতাকে মাফলারটি দেওয়া হবে বলেও জানান প্রেসসচিব।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রেসসচিবের মাফলারের দাম ৮৬ হাজার ৬০০ টাকা এমন দাবিতে কিছু পোস্ট ব্যাপক ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

কেউ কেউ দাবি করেন, সরকারে যুক্ত হয়ে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এই মাফলার কিনেছেন তিনি।
এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট নিজের প্রোফাইলে শেয়ারও করেন প্রেসসচিব। একটি পোস্টে তিনি লেখেন, আমার ব্যবহৃত মাফলারটির জন্য কেউ ৬০০ টাকা দিলেও আমি খুব খুশি হবো। এটা দিয়ে বঙ্গবাজার থেকে দুটি নতুন মাফলার কিনতে পারব।

এদিকে ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি শেখ হাসিনার পতনের অনেক আগেই এই মাফলারসহ তাঁর ছবি রয়েছে। গত বছরের ৩ এপ্রিল মাফলার গলায় কয়েকটি ছবি শেয়ার করে তিনি লিখেছিলেন, ‘রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে!! আমি বুয়েটিয়ান না!! রাজনীতি করতে আমার কোনো বাধা নেই!’

 

Header Ad
Header Ad

পবিত্র রমজানের সেহরি-ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ

প্রতীকী ছবি

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে আগামী ২ বা ৩ মার্চ। তবে রমজান শুরুর সময় ২ মার্চ ধরে ঢাকার সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

গত ২৭ জানুয়ারি ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৪৪৬ হিজরির রমজান মাসের সেহরি ও ইফতারের এই সময়সূচি চূড়ান্ত করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দ্বিনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক সরকার সরোয়ার আলম জাগো নিউজকে সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সময়সূচি অনুযায়ী, ২ মার্চ প্রথম রমজানে ঢাকায় সেহরির শেষ সময় ভোররাত ৫টা ৪ মিনিট ও ইফতারির সময় ৬টা ২ মিনিট।

রমজানের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ। ছবি: সংগৃহীত

তবে দূরত্ব অনুযায়ী ঢাকার সময়ের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৯ মিনিট পর্যন্ত যোগ করে ও ৯ মিনিট পর্যন্ত বিয়োগ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ সেহরি ও ইফতার করবেন বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে জানা গেছে।

দেশের অন্যান্য বিভাগ ও জেলার সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় থেকে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন দ্বিনি দাওয়াত বিভাগের কর্মকর্তারা।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আলাউদ্দিন নাসিমের গুলশানের বাড়ি গোপন, দুদকের তদন্ত শুরু
আ.লীগ সমর্থকদের কাছে ‘আলোচিত মাফলারটি’ বিক্রির ঘোষণা দিলেন প্রেসসচিব
পবিত্র রমজানের সেহরি-ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ
বিএনপির জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রস্তুত
রাজধানীতে তিন বছরের মেয়েকে হত্যা, মা আটক
রংপুরে ঘন কুয়াশায় ৬ গাড়ির সংঘর্ষ, আহত ২৫
ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয়ের দেশত‍্যাগে নিষেধাজ্ঞা
গান গাইতে গাইতেই মঞ্চে লুটিয়ে পড়েন সাবিনা ইয়াসমিন
আজ একুশে বইমেলা শুরু
যুক্তরাষ্ট্রে রোগী বহনকারী বিমান বিধ্বস্ত, শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা
বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক, হবু স্ত্রীকে নিয়ে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় চিকিৎসক নিহত
শুরু হলো বাঙালির প্রেরণা ও গৌরবের ভাষার মাস
কোরআনের হাফেজাকে বিয়ে করলেন সারজিস
জ্বালানি তেলের দাম লিটারে এক টাকা বৃদ্ধি
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সড়কে ডাকাতি, চালককে কুপিয়ে জখম
কুবি শিক্ষার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ৫ জনের নামে মামলা
মিয়ানমারে ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হলো জরুরি অবস্থার মেয়াদ
চট্টগ্রামে খাল খননের নামে দুর্নীতি, বিপুল অর্থ লুটপাটের অভিযোগ
নির্বাচনের আগেই পতিত স্বৈরাচারের বিচার নিশ্চিত করতে হবে : ছাত্রশিবির সেক্রেটারি
বিয়ে করলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম