কানাডার নাগরিকত্ব নেওয়ায় চাকরিচ্যুত বিসিএস ক্যাডার জামশেদ
জামশেদ মিনহাজ রহমান
কানাডার নাগরিকত্ব গ্রহণ করায় চাকরিচ্যুত হলেন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয়ের কর্মকর্তা জামশেদ মিনহাজ রহমান।বিসিএস (নিরীক্ষা ও হিসাব) ক্যাডারের ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন জামশেদ মিনহাজ রহমান।
গত ১৮ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও সমন্বয় অনুবিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৪(৩)(ঘ) অনুযায়ী তাকে এ গুরুদণ্ড প্রদান করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জামশেদ মিনহাজ রহমান সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর বিধি ৩১(এ) অনুযায়ী সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে বিদেশি (কানাডিয়ান) নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের তথ্যমতে তিনি কানাডিয়ান পাসপোর্ট ব্যবহার করে যথাক্রমে ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেও সরকারের রাজস্বখাত হতে বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করেন। সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করে তিনি সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৪০(১) এর বিধান সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেন।
এতে বলা হয়, ২০২২ সালে কারণ দর্শানোর নোটিশের পাশাপাশি কানাডিয়ান পাসপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য তাকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। কিন্তু তিনি পাসপোর্ট জমা না দিয়ে ২০১৭ সালের মেয়াদোত্তীর্ণ বাংলাদেশি পাসপোর্টের এর আংশিক ফটোকপি জমা দেন। পুনরায় তাকে সর্বশেষ বিদেশ ভ্রমণকালে ব্যবহৃত পাসপোর্টের মূলকপি জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হলে তিনি কোনো জবাব দেননি। ফলে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী অসদাচরণ এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করা হয়। পরে তার দাখিলকৃত জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় এবং অভিযোগের পর্যাপ্ত ভিত্তি থাকায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তার দাখিলকৃত দতন্ত প্রতিবেদনে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এর পর তাকে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। তবে তিনি তার জবাব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাখিল করেননি। ফলে তাকে চাকরি হতে বরখাস্ত করণ সূচক গুরুদণ্ড আরোপের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, জামশেদ মিনহাজ রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী অসদারণ এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিধি ৪(৩)(ঘ) মোতাবেক তাকে চাকরি হতে বরখাস্তকরণ সূচক গুরুদণ্ড প্রদানের প্রস্তাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সদয় সম্মতি প্রদান করেন। ফলে তাকে এ গুরুদণ্ড প্রদান করা হয়।
জানা গেছে, জামশেদ মিনহাজ রহমান প্রায় ১৪ বছর আগে কাউকে কিছু না জানিয়ে পরিবার নিয়ে কানাডায় পাড়ি জমান। সরকারকে কিছু না জানিয়ে সেখানে দীর্ঘদিন অবস্থানের কারণে এর আগেও তার চাকরি চলে যায়। এরপর ২০১৯ সালে দেশে ফিরে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। তবে সরকারি অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘ সময় কানাডায় অবস্থানের তথ্য গোপন করে চাকরি ফেরতের রায় নিজের পক্ষে নেন। এরপর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে পশ্চিম রেলওয়ের সদর দপ্তর রাজশাহীতে অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তার পদে পদায়ন করা হয়। রাজশাহীতে গিয়েই তিনি নানাবিধ অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তার ব্যক্তিগত আচরণ ও জীবনাচারও চরম বিশৃঙ্খল বলে গুরুতর অভিযোগ ছিল।