ইভিএম যাচাই না করেই মতামত দিল রাজনৈতিক দলগুলো
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ইভিএম মেশিন যাচাই ও সক্ষমতা পরীক্ষার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে কারিগরি দল পাঠানোর জন্য আহবান করেছিল গত মাসে। নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানালেও তাতে অংশ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ২৮টি দল। আর কমিশনের ডাকে যায়নি বিএনপিসহ ১৫টি দল।
কিন্তু কমিশন প্রত্যেক দলের কাছ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ সদস্যের কারিগরি দল আহবান করলেও কোন রাজনৈতিক দলই কারিগরি টিম পাঠায়নি। বরং দল বেঁধে গিয়ে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা-বৈঠক করে এসেছে।
তিন দফায় কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক হয়। গত মাসের ওই বৈঠক শেষে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচন কমিশনের কাছে পরিস্কার বলে এসেছে তারা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট চান। তবে তাদের এই মতের সঙ্গে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই একমত নয়। তারা চাইছে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট হোক।
অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অধিকাংশই ইভিএম যন্ত্রটি পরীক্ষা না করেই পক্ষ বিপক্ষে মতামত দিয়েছে। অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ১১টি দল ইভিএম এর পক্ষে আর ইভিএম এর বিপক্ষে মত দিয়েছে ১০টি দল। সংলাপে অংশ নিলেও নিজেদের মতামত স্পষ্ট করেনি ৭টি দল। তারা ইভিএম এর পক্ষে তবে আরও বেশি যাচাই বাছাই করার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
রাজনৈতিক দলগুলো দ্বিধা বিভক্তির কারণে নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করেনি। যন্ত্রটি নিয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চায় না ইসি। তারা আরও সময় নিতে চান। নির্বাচন কমিশনের চাওয়া হচ্ছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে একটা সিদ্ধান্তে আসা।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা জানি ইভিএম নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে। তাই আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়কে গুরুত্ব দিয়ে সিইসি বলেন, ‘সব আলোচনা লিপিবদ্ধ করেছি। আমাদের সামর্থ্য কতগুলো তা দেখবো। এরপর সিদ্ধান্ত নেবো, সম্পূর্ণ বা ফিফটি ফিফটি করবো কি-না সে সিদ্ধান্ত নেবো।’
রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএম এর পক্ষে-বিপক্ষে নিজেদের মতামত দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থায় যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে তাতে ইভিএম সমাধান দেবে না। এরজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্য।
এবিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যে মতামত দিয়েছে সেটা ওখানে না গিয়েও দেওয়া যেত কারা পক্ষে কারা বিপক্ষে। টেকনিক্যাল পার্সন দিয়ে ইভিএম পরীক্ষা করার দরকার নাই। এই যন্ত্রটি যে নিকৃষ্ট মানের সেটা এরইমধ্যে প্রমাণিত। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এতে কোনো পেপার থাকে না, ইসি যে ঘোষণা দেয় সেটিই ফলাফল। ফলাফল যাচাই করার কোন সুযোগ নেই। যেহেতু প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে যন্ত্রটি চলে তাই প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন,‘ইভিএমটা যথেষ্টভাবে ব্যবহার হয়নি। যেটুক হয়েছে তার ভেতর যে ত্রুটি দেখতে পেয়েছি তাতে মানুষের মনের ভেতরে আস্থা আনেনি এটা। ইভিএম এখন পর্যন্ত আস্থার যথেষ্ট প্রমাণ রাখেনি। ইভিএম বহু দেশে চেষ্টা করা হয়েছে পরবর্তিতে এটা থেকে সরে আসছে। কারণ ইভিএম তার দক্ষতার জায়গা প্রমাণ করতে পারেনি।’
এদিকে নির্বাচন কমিশন আগামী ১৭ জলাই থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে। এই সংলাপ চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। এখানেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে।
এনএইচবি/