'শেষ নিঃশ্বাস অবধি শিখতে ও শেখাতে চাই'

আমার শিক্ষকতার শুরু মাত্র ১২ বছর বয়সে। তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি, সালটা ২০০১! আমার প্রথম ছাত্র তখন দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। এখনো মনে আছে প্রথম মাসের বেতন ছিল ৩০ টাকা। ওই সময় ৪০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস পাওয়া যেত। প্রথম মাসের বেতন পেয়ে আমি এতোটাই খুশি ছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা। ইনকামের প্রথম টাকা দিয়ে আমি কি করেছিলাম মনে নেই, খুব সম্ভবত মাকে দিয়েছিলাম।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার ঘটে গেলো ক্লাস নাইনের শুরুতে। আমার দুই ফুফু একসাথে গণিতে ফেল করে বসলো এসএসসি পরীক্ষায়। যদিও তারা ভালো স্টুডেন্ট ছিলো কিন্তু সেই প্রথমবার এসএসসি গণিত পরীক্ষায় অংক বই এর বাইরে থেকে আসা শুরু করে। ২০০৩ সালে যশোর বোর্ডে পাশের হার ছিলো ৩২ শতাংশ, যার ৯০ শতাংশই ফেল ছিলো গনিতে।
স্কুল জীবনে গণিত ছিল আমার ধ্যান জ্ঞান। গণিত অলিম্পিয়াড, জাফর ইকবাল স্যার ও কায়কোবাদ স্যারের নিউরনে অনুরণন ছিলো আমার নিত্য সাথী। এই গণিতপ্রীতি জন্মেছিলো আমার গণিতের গুরু জালালুদ্দিন চাচা/স্যারের জন্যে। যাইহোক, আমার দুই ফুফু এলাকার সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়ে, তাই তাদের এই ফেল করার কথা বাইরে ফাঁস হয়ে যাবে বলে পড়ানোর দায়িত্ব পড়লো আমার কাঁধে! আমি ক্লাস নাইনের ছাত্র, কিন্তু পড়াতে হবে এসএসসি ফেল করা দুই ফুফুকে। কি গুরু দায়িত্ব! আলহামদুলিল্লাহ, তারা পরের বছর খুব ভালো ফলাফল করে পাস করলো।
আমার এই ৩৩ বছরের জীবনে প্রায় ২১ বছর শিক্ষকতা করছি। যতটা না শিখেয়েছি, তার চেয়ে অনেক বেশি শিখেছি। বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র হয়েই থাকতে চেয়েছি। এই সময়ে আমি প্রাইমারি স্কুল, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব স্তরে পড়ানোর সুযোগ পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ!
এর বাইরেও বিগত ১২ বছর SAT, GRE, IELTS, TOEFL, OET এ ৪৭ টা দেশের প্রায় ৫০ হাজার এর বেশি শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছি, যাদের সবাই উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশী। ইচ্ছে আছে অন্তত ১০ কোটি মানুষকে সেবা দেয়ার। সৌভাগ্য হয়েছে ডাক্তার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিসিএস ক্যাডার, ব্যাংকার, উকিল, রাজনীতিবীদ ইত্যাদি সকল পেশার মানুষকে ছাত্র হিসেবে পাবার।
গত ২১ বছরে প্রায় ২ লাখ ছাত্র-ছাত্রী পড়ানোর মহান সুযোগ পেয়েছি যাদের অনেকেই আজ দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। তারপরেও সবচেয়ে ভালো লাগে যখন আমার ছাত্র নিজে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়। যাইহোক, জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবধি আমি শিখে যেতে চাই, আর যা শিখেছি জীবন, বই কিংবা প্রকৃতি থেকে তা সবার সাথে শেয়ার করতে চাই। আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে স্বল্প খরচে জিআরই বা আইইএলটিএস সম্পন্ন করার এক সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান লা স্কলারস। শিক্ষক হিসেবে ঢাকাপ্রকাশ-এর কাছে নিজের অনুভূতি তুলে ধরেছেন লা স্কলারস এর কর্ণধার খন্দকার আকরাম স্টালিন।
খন্দকার আকরাম স্টালিন বর্তমানে মালয়েশিয়ার এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব মেডিসিন সাইন্স অ্যান্ড টেকনলজি বিশ্ববিদ্যালয়ে (এআইএমএসটি) গবেষক হিসেবে কর্মরত আছেন। এর বাইরেও তিনি প্রায় ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন ও উচ্চশিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত ৩৫ টি দেশের ২০ হাজারের বেশি উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীকে সরাসরি জিআরই, আইইএলটিএস, স্টেটমেন্ট অব পারপাস, ইউনিভার্সিটি এপ্লিকেশন প্রসেসে সহযোগিতা করেছেন।
তিনি নটরডেম কলেজের একজন সাবেক শিক্ষার্থী। ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ থেকে স্নাতক এবং মালয়েশিয়ার এআইএমএসটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।
স্টালিনের স্বপ্ন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠবে দুনিয়ার সব বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ।
উচ্চশিক্ষা প্রসারের পাশাপশি তিনি প্রায় ১৩ বছর ধরে পথশিশু, এতিম বাচ্চা, মাদ্রাসা, বেদে পল্লীর বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করছেন।
/এএস
