মুহম্মদ নূরুল হুদা
একগুচ্ছ কবিতা
পালককাহিনী
সুখ নয় দুঃখ নয়
মানুষ কাতর নয়
কোনো কিছু নিয়ে,
মানুষ সাঁতরায় শুধু
নিজেকে নিয়েই।
নীলিমায় নীলডুবি হয়;
ধন নয় মান নয়,
মানুষ কাতরায় শুধু
নিজেকে নিয়েই।
তুমিও কি, আমিও কি
অঙ্গে অঙ্গে আপনাসাধক?
বদলপ্রবণ এই মরলোকে
মুহূর্তে নিজের কাঁধে
কে কে নিজ আদলবাহক?
প্রশ্ন আছে, প্রশ্ন থাকে,
কেউ তো থাকে না আর
উত্তরের চিরঅপেক্ষায়।
সব পাখি উড়ে যায়,
পালকেরা ঝরে যায়,
বালকেরা খুঁজে পায়
নিজ শিরস্ত্রাণে;
হাতে লাঠি,
সামরিক পরিপাটি,
নিজেকেই নিজে তারা
সর্বধর মানে;
পাখিরা মানে না।
যে পালক ঝরে যায়
পরিযায়ী পাখি তার
ঠিকানা রাখে না।
ও নদীরে, পদ্মা নদীরে
নদী আমার নদী
পদ্মা আমার নদী
আমার মায়ের দুধের নহর
পদ্মা নিরবধি
তোমার বুকে মুখ লুকিয়ে
আছি আপন নীড়ে
ও নদীরে, পদ্মা নদীরে
হিমালয়ের হিমবাহ
গঙ্গোত্রীর ধারা,
বুক থেকে তার মা-গঙ্গা
ছুটলো পাগলপারা,
ছুটতে ছুটতে দুই তনয়া
পদ্মা ভাগীরথী,
দুদিকে তার দুই মোহনা
এক সাগরে যতি--
নদী আমার নদী
পদ্মা আমার নদী
বাংলা মায়ের দুধের নহর
বইছে নিরবধি
ও নদীরে,পদ্মা নদী রে
ঢেউথইথই অথই জলে
অপার ডুবসাঁতার
একুল ওকুল দুকুল ভাসে
ভাসে নদীর পাড়
ঘাটের পরে ঘাট পেরিয়ে
খেয়া পারাপার,
স্বপ্নপথেই স্বপ্নসেতু
সত্য হলো যদি...
নদী আমার নদী
জলেস্থল সুখে দুখে
আছি আপন নীড়ে
ও নদীরে, পদ্মা নদীরে
ফেরির সঙ্গে ফেরি জুড়ে
ফেরি পারাপার
মানুষ পাখি নৌকার পাল
উধাও চিৎসাঁতার
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে
সোনার তরী ভাসে
শেখ হাসিনার সোনার বাংলায়
পদ্মাসেতু হাসে
হাজার ডানার পাখপাখালি
উড়ছে তীরে তীরে
ও নদীরে, পদ্মা নদীরে
কল্পনাকে হার মানালো
যখন বাস্তবতা,
অবশেষে সত্য হলো
যখন স্বপ্নকথা
সোনার দেশের সোনার মানুষ
সোনার সেতু ধরি
আসা-যাওয়ার পথে পথে
কুড়ায় সোনার কড়ি
আলোর দেশে আলোর সেতু
হাসছে আঁধার চিরে
ও নদীরে, পদ্মা নদীরে
একার শাম্পান
নিজেকে দেখার আগে
বহুবার দেখেছি তোমাকে,
তোমাকে দেখার পরে
একবারও নিজেকে দেখিনি।
চেনা অচেনার সাঁকো
নিরাপদ দূরত্বের বাঁকে,
যে আছে সুরক্ষা ব্যুহে,
তাকে আর কখনো খুঁজিনি।
তোমার দর্পণে আমি
আমাকেই দেখেছি যেদিন,
শর্তহীন উড়ে গেছি
সীমান্তের এপারওপার।
মায়াহীন মনডানা
কোনো মানা মানেনি সেদিন,
নিজের ভেতরে নিজে
পুড়ে পুড়ে চিতাভস্মসার।
বৃহস্পতি বলয়ের নীড়ে
যতবার হয়ে যায় দেখা,
ততবার আঁকিবুকি শেখা,
একার ভেতরে একা একা।
শর্তহীন সমর্পণ কার?
নিশ্বাসে বিশ্বাস আছে যার।
নিজে যদি নিজের করাত,
বুঝে নাও নিজের আকার।
উদিত সূর্যের দিকে চোখ রেখে
উদয়াস্ত যাও এঁকেবেঁকে;
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রত্ন ব্যবহার
শিখে শিখে সাজাও সংসার।
নিজে যদি
যুক্ত নও
নিজের সাথেই
সময় সহজ নয়, সরলাঙ্ক নেই।
আত্মদৃষ্টি সর্বদৃষ্টি সৃষ্টির সোপান,
একা গিরি
একা সিঁড়ি
একার শাম্পান।
আরএ/