শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ | ২৮ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

গল্প/ আন্ধারমানিকে ডুব সাঁতার

শেষ পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গোনা শেষ হয় তারানার। ভালোবাসার মানুষ পাওয়ার যে হাহাকার বুকের মধ্যে ছিল সেই দম-আটকানো অবস্থা আর নেই। এখন ওর বুকের গভীরে বয়ে যায় আন্ধারমানিক নদী। নদীর ধারে চুপচাপ বসে থাকে ও। নদীর দিকে তাকিয়ে বুক ভরে যায় তারানার। স্বামীর সংসারে এই নদী ওর আনন্দের সঙ্গী। আশেপাশের মানুষেরা জানে ও নদীর ধারে বসে থাকতে ভালোবাসে। তারেকের সঙ্গে প্রেম হওয়ার পরে এই বসে থাকা আরও গভীর আনন্দের হয়েছে। জীবনে এমন একটি সময় আসবে এমন ধারণা স্বপ্নেও ছিল না। ওকে নদীর ধারে বসে থাকতে দেখে একদিন তারেক ওর ছোট্ট নৌকাটা পাড়ে ঠেকিয়ে নেমে এসেছিল। কাছে এসে বলেছিল, আপনি আমাদের গাঁয়ের বউ। আপনার মতো নদীর ধারে এমন করে কেউ বসে থাকে নাই। আপনি নদী খুব ভালোবাসেন না?

-হ্যাঁ, খুব ভালোবাসি। আমার বাবার বাড়ির ধারে নদী ছিল না।
-আমি এই নদীতে মাছ ধরি।
-হ্যাঁ, জানি। আমি আপনাকে দেখেছি নৌকা নিয়ে চলে যেতে। আমার মনে হতো আমিও যদি এমন নৌকা বেয়ে যেতে পারতাম।
-খয়ের ভাইকে বলেন না কেন?
-ও এসব পছন্দ করে না। খালি ভাত রানতে বলে। কোথাও একটু বেড়াতেও নিয়ে যায় না।
-আমি নিয়ে যাব। যাবেন আমার সঙ্গে নদীতে ঘুরতে?
-যাব, যাব। অনেক দূরে যাব।
-কবে দিন ঠিক করেন।
-আচ্ছা দেখি।

-আজ আমি আসি। আমার খুব ভালোলেগেছে আপনার সঙ্গে কথা বলে। আপনি দেখতে যেমন সুন্দর, আপনার কথাও তেমন সুন্দর। আমি সুযোগ পেলে আপনার সঙ্গে বসে গল্প করব। আন্ধারমানিক দুচোখ ভরে দেখবে আমাদেরকে।
-ঠিক। একদম ঠিক। আমি এমনই নদী চাই।
-আজকে যাই। আবার আসব। তারানার দু’চোখে উজ্জ্বল হাসি ছড়ায়। সেদিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে যায় তারেক। নৌকায় উঠে হাত নাড়ায়।

জমে ওঠে প্রেমের খেলা। তারানা রোজ বিকেলে এসে বসে নদীর ধারে। সূর্য পশ্চিম আকাশে চলে যায়। বিকেলের ফিকে আলো ছড়িয়ে থাকে চারদিকে। যতদূর দৃষ্টি যায় ফিকে আলোর স্নিগ্ধতা ওর মনোজগতে ভিন্ন আবেশ তৈরি করে। বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাস ওকে ছুঁয়ে ছড়িয়ে যায় চারদিকে। এখন ওর জীবনে অন্যরকম সময় এসেছে। জীবনের এমন মধুর সময় ও ছাব্বিশ বছরে পায়নি। এ এক পরম পাওয়া। আন্ধারমানিক নদীর দিকে তাকিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে, নদীরে তুই আমার জীবনে এখন শুধু জোয়ার। আমার নদীতে ভাটির টান নাই। প্রেম তো জোয়ারই।

অনেকদূরে জেলেরা নদীতে মাছ ধরে। ও নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে। নিজেকে বলে ওখানে আমার প্রেম আছে। আমি প্রেমের নদীতে ডুবে থাকি। আন্ধারমানিক নদীতে ভেসে বেড়াই আমি। তারেক আমার আন্ধারমানিক। ও আমার জোয়ারের জল। আমাকে বলে, তুমি আমার ফুলের কুঁড়ি। গাছের ছায়া। নানা উপমায় মন ভরিয়ে দেয় তারেক। দুজনের খুনসুটিতে ভরে ওঠে পড়ন্ত বিকেল। প্রতিদিন দেখা হয় না। চারদিকের লোক চলাচল দেখে তারেক আসে। নইলে মানুষের চোখে পড়বে ওদের সম্পর্ক।

একদিন তারেক জিজ্ঞেস করেছিল, খয়ের মিয়া তোমাকে কি নামে ডাকে?
তারানা শুকনো মুখে বলেছিল, হারামজাদী।
-কি বললে?
-হ্যাঁ, এই শব্দে ডাকে।
-যাক ভালোই হয়েছে। আমার প্রেমই তোমার জীবনে প্রথম।
-তুমি আমার আন্ধারমানিক। এই নদীর ধারে বসে আমার কাছে প্রেম এসেছে।
-একদিন বনের মধ্যে হাঁটতে যাব দুজনে। বুকে জড়িয়ে ধরব তোমাকে।
উচ্ছ্বসিত হাসিতে ভেঙে পড়ে তারানা। তারেক মৃদু হেসে বলে, তোমার হাসি নদীর স্রোত। আজ যাই।
এভাবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে তারানার স্বস্তি। কেটে যায় কয়েক মাস।

তারেকের দিকে তাকালে ওর চোখ ফেরেনা। তারেক নিজেও দুচোখ ভরে ওকে দেখে। পলকহীন তাকিয়ে থাকে। ঠোঁটে মৃদু হাসি, যেন উড়িয়ে নিয়ে যাবে বুকে জড়িয়ে। হয়ে যাবে রঙিন প্রজাপতি। এই প্রথম নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। রঙিন দিনগুলো আলোর ফুলকি ছড়ায়। তারানা খুশিতে মাতোয়ারা হয়ে থাকে। নিজেকে অনেক কষ্টে আড়াল করে।

মাঝে মাঝে ধরা পড়ে যায় খয়েরের কাছে। ও চোখ গরম করে ক্রুদ্ধ স্বরে বলে, তোর কি হয়েছে? চেহারায় এত খুশি কেন?

-চেহারায় খুশি দেখা যায় নাকি? খুশি কি চোখে দেখার জিনিস?
-খবরদার, বেশি কথা বলবি না হারামজাদী।
স্বামীর মুখে গালি শুনে নিজেও রেগে ওঠে তারানা। চেঁচিয়ে বলে, তুইও একটা হারামজাদা। দশ বছর ধরে সংসার করলাম পোলাপানের দেখা নাই।
-তুই বাঁজা মাইয়ালোক।
-আমি বাঁজা না, তুই বাঁজা। হারামজাদা বেডা একটা।

ক্রুদ্ধ খয়ের বৌয়ের রণরঙ্গী মূর্তি দেখে থমকে যায়। আর কথা বাড়ায় না। ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেয়। বারান্দায় বসে থাকে তারানা। স্মৃতির পাতায় ফুটে ওঠে বাবা-মায়ের সংসার। ও বিড়বিড়িয়ে বলে, বাবা-মায়ের প্রেমের সংসার। প্রেমের সংসারে হেসেখেলে ও বড় হয়েছে। এখন ও ছাব্বিশ বছর বয়সী। নদীর ধারে বসে জীবনের সুখ খুঁজে বেড়ায়। মাঝে মাঝে ভাবে, সুখ কি? আবার বাবা-মায়ের কথা মনে হয়। দুজনে কলেরায় মারা গেছে। ওর চোখের সামনে মাটিতে গড়াতে গড়াতে সকালবেলা মরে গেছে বাবা। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়েছিল ওর মা। ও নিজেও বাবার বুকের ওপর শুয়ে পড়েছিল। কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, বাজান গো, চোখ খোল, চোখ খোল। তোমার চোখের মণি দেখব।

বাবা চোখ খোলেনি। মাও কলেরায় তড়পাচ্ছিল। কথা বলতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত দুচোখ বন্ধ করে কাত হয়ে ঢলে পড়েছিল। চোখের সামনে বাবা-মায়ের মৃত্যু দেখা জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখের দিন। একদিনের সকাল-দুপুর ছিল তারানার জীবনের দীর্ঘতম সময়। এই সময়কে ও বুঝতে শিখেছিল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। সেদিন তারিখটা ছিল আটই ফাল্গুন। বসন্ত দিনের সুবাতাস ও প্রাণভরে নিজের নিঃশ্বাসে টেনেছিল। পাশাপাশি ব্যাকুল কান্নায় চিৎকার করে মাতিয়ে রেখেছিল ঘরবাড়ি। এই সময়ে ঘটে গেছে ওর পুরো জীবনের ঘটনা। যে ঘটনার রেশ গড়াতে থাকবে মৃত্যু পর্যন্ত। তখন তেরো বছরের বালিকা ছিল। প্রাইমারি স্কুলের পড়া শেষ হয়েছে। ওদের গ্রামে হাইস্কুল ছিল না, যেতে হবে পাশের গ্রামের সীমানায়। অনেক দূরে। একা একা এত দূরে পাঠাতে রাজি ছিল না ওর বাবা-মা। তাই পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গাঁয়ের কেউ কেউ বলেছে, মেয়েটার মাথা ভালো। ওকে ঘরে বসায়ে রাখলি কেন? হোস্টেলে দিয়ে পড়ালেখা করা।

-দিনমজুরি করে ভাত ভাই। কেমন করে হোস্টেলের টাকা দিব? চুরি করতে বলবেন নাকি?
-যা, পাগলামি করতে হবে না।
-পাগলামি না আযম ভাই, কষ্ট। স্কুলের ক্লাশে ফার্স্ট হয়। মাস্টাররা সবাই ওর প্রশংসা করে। আমার কইলজা ভরে যায়।
-লাভ কি তাতে? মেয়েটাতো পড়ালেখায় আগাতে পারল না। ভালো একটা চাকরিওতো করতে পারবে না।

মাথা নিচু করে দুহাতে চোখ মুছেছিল ওর বাবা হানিফ। বাড়িতে ফিরে ওর মায়ের কাছে একথা বললে ওর মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে কেঁদেছিল। ওর বাবা মায়ের কপালে চুমু দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়েছিল। ও দাঁড়িয়েছিল পাশে। মায়ের কান্না থামেনা দেখে ওর বাবা চোখের উপর চুমু দিয়ে ঠোঁট ধরে রেখেছিল। মা হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিল বাবার ঠোঁট। তারপর নিজেকে সরিয়ে নেয়। দুজনে বিষণœ মুখে তাকিয়ে থাকে। সেদিন ও বুঝেছিল দুজনে খুবই কষ্ট পাচ্ছে। একসময় আমিনা খাতুন জোরে জোরে বলে, হোস্টেলের খরচের জন্য আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করব।
-না, না। আমি তা হতে দেব না।
হানিফ ঘাড় নাড়িয়ে কথা বলে। ঢোক গিলে। নিজের চুলের ভেতর হাত ঢুকিয়ে চুল এলেমেলো করে।
-না, না কর কেন? কাজ করে টাকাতো থলিতে ভরব না। মেয়ের পড়ালেখায় খরচ হবে।
-মানুষের বাড়িতে কাজ করলেও হোস্টেলের টাকা হবে না গো
-ধারদেনা কর। তাও ওর পড়ার খরচ চালাও। মেয়েটার মাথা ভালো, দেখতেও ফুটফুটা।
হা-হা করে হাসে হানিফ। হাসতে হাসতে বলে, মেয়েটার কপাল মন্দ।
-ঠিক বলেছেন বাজান।

তারানা উঁচু কন্ঠে কথা বলে। নিজেও হেসে গড়িয়ে পড়ে। আমিনা খাতুন অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। পড়ালেখা হবে না। এ নিয়ে কি ওর দুঃখ নাই? হানিফ ওর মাথায় হাত রেখে বলে, মা রে তুই ছাড়া আমাদের তো আর পোলাপান নাই। তোরে

-থাক বাজান থাক, কষ্টের কথা আর বলতে হবে না। আমি আপনাদের কাছে থাকব। আমিও দিনমজুরি করব। অন্য কোথাও যাব না।
-তাহলে তোকে হাইস্কুলে ভর্তি করে দেই। আমি তোকে পৌঁছে দিয়ে আসব। আবার নিয়ে আসব।
-ঠিক বলেছ। তোমার কাজ থাকলে আমি যাব। আমি ওকে স্কুল থেকে আনব।
-কেন? কেন আপনাদের যেতে হবে? আমিতো একাই স্কুলে যেতে পারব।
-না, তোকে একা যেতে দিবনা। শয়তান পোলাপান তোর পিছে লাগবে। পাটক্ষেতে, ধানক্ষেতে টেনে নিয়ে যাবে। গায়ের জোরে তুই ওদের সঙ্গে পারবি না।
হানিফ বলে, তোর চেহারা নিয়ে আমরা খুশি না। আমরা দুইজনে গলা ধরে কান্দি।
তারানা বাবার কথা শুনে হাসে। রাস্তায় হাঁটলে লোকেরা বলে, ইস, মেয়েটা কি সুন্দর।
বাবা সঙ্গে থাকলে কড়া করে ধমক দেয়।
-খবরদার এমন কথা বলবে না। আমার মেয়ের দিকে তাকাবে না।
-দিনমজুরি করে বেটা দাপট দেখায়।
-কি বললি? দাঁড়া দেখাচ্ছি
- ছেলেটি দৌড়ে চলে যায়। তারানা বাবার হাত চেপে ধরে।
-বাজান আপনি ওদের পিছনে যাবেন না।
-তোর জন্য চিন্তায় মরে যাই।
-কেন আমার কি হবে?
-বড় হলে বুঝবি। চল যাই।
মেয়ের ঘাড়ে হাত রেখে হাঁটতে থাকে হানিফ মিয়া।

বাবা-মা মরে যাওয়ার পরে চাচার কাছে ছিল দেড় বছর। চাচা ওকে বিয়ে দেয় ওর চাইতে বয়সে দ্বিগুন বড় খয়ের মিয়ার সঙ্গে। লোকটির বয়সের কথা শুনে ও যখন কাঁদছিল তখন চাচা বলেছিল, তুইতো আমার ঘাড়ে বোঝা হয়েছিস। খয়েরকে যৌতুক দিতে হবে না। বেঁচে গেছি, লোকটার বৌ মরে গেছে। পোলাপান নাই। ভালোইতো হবে সংসার। আরামে থাকবি। অভাবের কষ্ট পাবিনা।
-আমি বিয়ে করব না।
-খবরদার, একথা বলবিনা। বিয়ে দিয়ে দিব। চলে যাবি।
-আমাকে ভাত খাওয়াতে আপনাদের কষ্ট হচ্ছে?
-চুপ, কথা বলবিনা। তোকে পাহারা দিতে আমার কষ্ট হচ্ছে। এখন স্বামীর কাছে যাবি। আমি রেহাই পাব।
-তাহলে যাই।
তারানা সেদিন দুহাতে চোখ মুছেছিল। শুধু বাবা-মায়ের কাছে ও প্রেমের স্বপ্ন দেখেছে। ঠিকমতো ভাত খাওয়া হয়নি বাবা-মায়ের কাছে, কিন্তু বুকভরা আনন্দ ছিল। এখন স্বামীর সংসারে পেট ভরা ভাত আছে, কিন্তু আনন্দ নাই। প্রেম নাই। শুধু শরীর নাড়াচাড়া আছে। প্রেম ছাড়া এই নাড়াচাড়ায় আনন্দ নাই। ও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলে, আমি ভালোবাসা চাই। ভালোবাসা।
তখন ঘর থেকে বেরিয়ে আসে খয়ের মিয়া। তারানাকে চোখ মুছতে দেখে থমকে দাঁড়ায়।
-কি হয়েছে তোর? কাঁদছিস কেন?
-ভালোবাসার জন্য।
-কেন, তুই ভালোবাসা পাস না?
-না, পাইনা।
-দিব এক লাত্থি।


খয়ের মিয়া ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালে ও দ্রুত সরে পড়ে। তারেকের মুখ ভেসে ওঠে। বুকের ভেতর ধ্বনিত হয় তারেকের কন্ঠস্বর, ফুলকুঁড়ি আমার হাত ধরো। চলো আমরা ভেসে যাই। নদী থেকে সাগরে যাব। তারপর মহাসাগরে। আমাদের প্রেমের মহাসাগর। এমন ভাষা শোনার অপেক্ষায় ছিল ও। শিখেছিল বাবা-মায়ের জীবন থেকে। দুজনে ওর সামনে ভালোবাসার কথা বলে ওকে বুঝতে শিখিয়েছিল ভালোবাসা। কিন্তু খয়ের মিয়ার কাছ থেকে ভালোবাসার কোনো স্পর্শ পায়নি। বুকের শূন্যতা কামড়ে ধরে থাকে রাতদিন। বাবা-মায়ের মৃত্যু ওর জীবনে একদিনের সকাল-বিকেল।
তারেকের ভালোবাসা এই সকাল-বিকাল সময় ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়েছে। সঙ্গে হৃদয়-জুড়ানো সৌরভ। ভাবে, বেঁচে থাকা কি সুন্দর। খয়ের মিয়ার গালমন্দ এখন ওকে আহত করে না। ওর সামনে নতুন দিনের চিন্তা। তারেকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে নতুন জীবনে ডুবসাঁতার দেবে।

একসময় দুজনের প্রেম গ্রামের মানুষের চোখে পড়ে। নানা কথা কানে আসে খয়ের মিয়ার। নিজেও নদীর ধারে দেখতে পায় দুজনকে।
একদিন নদীর ধার থেকে ওকে তুলে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় নদীতে। বলে, যা মর। মরে ভ‚ত হ হারামজাদী।

তারানা ডুবে যায় নদীতে। সাঁতার দিয়ে আবার মাথা তোলে। দেখতে পায় দ্রুত নৌকা চালিয়ে এগিয়ে আসছে তারেক। নৌকা কাছে এনে বলে, উঠে আস ফুলকুঁড়ি। আমার হাত ধরো।
নৌকায় উঠে পড়ে তারানা। ভিজে শাড়ি ঝাড়তে ঝাড়তে বলে, কি হলো আমাদের? খয়ের মিয়াতো আমাকে মরণে ঠেলে দিয়েছে। বলেছে মর।

-ভালোই করেছে। মরণের পরে আমরা এখন বেহেশতে আছি। আন্ধারমানিক আমাদের বেহেশত। খয়ের মিয়ার কাছ থেকে বেঁচে গিয়ে তোমার মরণ হয়েছে। তুমি এখন বেহেশতে। তোমার সঙ্গে আমিও বেহেশতে ঢুকেছি।
-বাহ, সুন্দর।


তারানা হাসিতে উচ্ছ¡সিত হয়ে ওঠে। কলকলিয়ে বলে, আন্ধারমানিক আন্ধারমানিক। প্রেমের নদী আন্ধারমানিক।
কন্ঠস্বর ভেসে যায় নদীর চারদিক। নদীতে এখন জোয়ারের ভরা টান।

 

Header Ad
Header Ad

কুল-বিএসপিএ স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ মিরাজ, দর্শক পছন্দে সেরা ঋতুপর্ণা

ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের কুল-বিএসপিএ স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত জমকালো অনুষ্ঠানে তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, দর্শক ভোটে সর্বাধিক পছন্দের ক্রীড়াবিদ হিসেবে ‘পপুলার চয়েজ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন নারী সাফ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জাতীয় নারী ফুটবল দলের মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা চাকমা।

এ বছর ‘স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জয়ের দৌড়ে মিরাজ পেছনে ফেলেছেন ঋতুপর্ণা এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করা আর্চার সাগর ইসলামকে। অপরদিকে, ‘পপুলার চয়েজ’ বিভাগে ঋতুপর্ণা এগিয়ে যান মিরাজ ও উদীয়মান পেসার নাহিদ রানাকে ছাড়িয়ে।

 

ছবি: সংগৃহীত

১৯৬৪ সাল থেকে ক্রীড়াবিদদের স্বীকৃতি জানিয়ে আসা দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) এবছর ১৫টি বিভাগে মোট ১৩ ব্যক্তি, দল ও সংস্থাকে সম্মাননা দেয়। সংগঠনের সভাপতি রেজওয়ান উজ জামান রাজিবের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী।

পুরস্কার গ্রহণ করে মিরাজ বলেন, “বিএসপিএকে ধন্যবাদ প্রতি বছর এমন আয়োজনের জন্য। এটা আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।” ভুটানে লিগ খেলায় ব্যস্ত থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারলেও ভিডিও বার্তায় ঋতুপর্ণা জানান, “এই সম্মান আমাকে আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা দেবে।”

Header Ad
Header Ad

রাজধানীর ওয়াসার পানিতে কিলবিল করছে পোকা, মগবাজার-মধুবাগে তীব্র ভোগান্তি

রাজধানীর ওয়াসার পানিতে কিলবিল করছে পোকা। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মগবাজার ও মধুবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানিতে পোকা ও ময়লার উপস্থিতি নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। ট্যাপের পানি দুর্গন্ধযুক্ত ও অস্বচ্ছ হওয়ায় তা রান্না, গোসল ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে গিয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাসার পানির ট্যাঙ্ক একাধিকবার পরিষ্কার করেও মিলছে না সমাধান। ওয়াসার সাপ্লাই পাইপ থেকেই এই সমস্যার উৎপত্তি বলে মনে করছেন তারা।

মধুবাগ এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “এই পানি দিয়ে রান্না ও গোসল সম্ভব না। আমাদের বাসার শিশুরা পানি খেতেই চায় না। বাধ্য হয়ে পাম্প থেকে পানি এনে ব্যবহার করতে হচ্ছে।” আরেকজন জানান, “ট্যাঙ্ক পরিস্কার করলে প্রথমে কিছুদিন ভালো থাকে, তারপর আবার পোকা দেখা দেয়।”

বিকল্প না থাকায়, অনেকেই ট্যাপের মুখে কাপড় বেঁধে পানি ব্যবহার করছেন। কিন্তু তারপরও পেটের অসুখ ও চর্মরোগের প্রকোপ বাড়ছে বলেও জানান স্থানীয়রা।

এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঢাকা ওয়াসার তিনজন কর্মকর্তা মধুবাগ এলাকায় পরিদর্শনে যান এবং কয়েকটি বাসা থেকে পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পোকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে দায় চাপান ট্যাঙ্ক ঠিকমতো পরিষ্কার না করাকে। ওয়াসার উপসহকারী প্রকৌশলী তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, “লাইনের পানি পরিষ্কার। ট্যাঙ্ক যদি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়, তাহলে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।”

তবে এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, নিয়মিত ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের পরও পানি দূষিত হচ্ছে, যা পাইপলাইনের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। এ অবস্থায় ওয়াসার কর্মকর্তারা পাইপের মান যাচাইয়ের আশ্বাস দিয়েছেন। এলাকাবাসী দ্রুত সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Header Ad
Header Ad

বিদেশি আইনের আওতায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে হবে বিদেশি আইনের মাধ্যমে এবং এ উদ্যোগ সম্পূর্ণ নতুন। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটি দেশের নয়, বরং বিদেশের আইনের সঙ্গে সংযোগ রেখে করতে হবে। এর জন্য আগে সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং এস্টেট (সম্পদ) ফ্রিজ করে আদালতের মাধ্যমে বাকি প্রক্রিয়া চালাতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “প্রথমে এস্টেটগুলো ফ্রিজ করার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে, চিঠি পাঠানো হচ্ছে। আইন পরামর্শক নিয়োগে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এস্টেট ট্রেসিং ফার্মের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এস্টেট ফ্রিজ করা গেলে এটিই হবে প্রথম সাফল্য।”

এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, “আমার ধারণা, প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। শুধু বেক্সিমকো গ্রুপেরই প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো অর্থ পাচার হয়েছে। এগুলো বড় গ্রুপের হিসাব, ছোট গ্রুপগুলো এখনো বিবেচনায় আনা হয়নি। ভবিষ্যতে যেন এমন না ঘটে, সে জন্য আমরা প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “সব সময় আদালতের মাধ্যমে সমাধান না করে, কিছু ক্ষেত্রে সমঝোতার ভিত্তিতেও (আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্ট) টাকা ফেরত আনার চিন্তা করছি। তবে সেটার আগে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকা জরুরি, না হলে আমরা ঠকে যাব।”

মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নে গভর্নর বলেন, “অতীতে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ৯-১০ শতাংশ দেখানো হলেও বাস্তবে তা ছিল ১৩-১৪ শতাংশ। তবে এখন সেটি ৮-৯ শতাংশে নেমেছে। সামগ্রিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি কমতির দিকেই। আগামী বছরে তা ৫ শতাংশ বা তার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।”

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন, ফাইন্যান্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পরিচালক মো. আনিসুর রহমানসহ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনায় ছিলেন উপপরিচালক মো. জোবাইর হোসেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

কুল-বিএসপিএ স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ মিরাজ, দর্শক পছন্দে সেরা ঋতুপর্ণা
রাজধানীর ওয়াসার পানিতে কিলবিল করছে পোকা, মগবাজার-মধুবাগে তীব্র ভোগান্তি
বিদেশি আইনের আওতায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ: গভর্নর
মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদল নয়, বরং ঐতিহ্যে ফেরত: ঢাবি উপাচার্য
তৃতীয় বিয়ের ইতি, রোশন সিংয়ের সঙ্গে আইনিভাবে বিচ্ছিন্ন শ্রাবন্তী
৬৪ জেলা নিয়ে তৃণমূল ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের ঘোষণা ক্রীড়া উপদেষ্টার
আগামীকাল শনিবার রাজধানীতে “মার্চ ফর গাজা”, পাঁচটি স্থান থেকে শোভাযাত্রা শুরু
অবশেষে নতুন চুক্তি সালাহর, লিভারপুলে থাকছেন ২০২৭ পর্যন্ত
পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় হাসিনার মুখাবয়ব
ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে মামলা করল ওপেনএআই
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মৃদু ভূমিকম্প
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে নাগরিক কমিটির নেত্রী দিলশাদ আফরিন আটক
বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কায় ডলারের বড় পতন, রেকর্ড ছুঁয়েছে স্বর্ণের দাম
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে ১৪৭ দেশ, বাড়ছে বিশ্বজনমত
মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে চীনের পাল্টা জবাব
নারায়ণগঞ্জে দুই নারী ও এক শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার
ফুটবল মাঠ পেরিয়ে হলিউডে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
পুলিশের চাকরি পেতে সমন্বয়কদের পেছনে দৌড়ানো বন্ধ করুন: সারজিস
ড. ইউনূসের ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার কোনও অধিকার নেই: সেলিমা রহমান
সিটি কর্পোরেশন হচ্ছে বগুড়া, গণশুনানির প্রস্তুতি শুরু