প্রবন্ধ/ রবীন্দ্রনাথের ‘লোকহিত’ চিন্তার প্রাসঙ্গিকতা
রবীন্দ্রনাথের সমাজ পরিবর্তনের ভাবনা ছিল গভীরভাবে মানবিক ও অধিকারভিত্তিক। জমিদারি পরিচালনার কাজে তিনি এসেছিলেন পূর্ববঙ্গে। সমাজের নানা অসঙ্গতি ও সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব ও দুর্দশা হৃদয় দিয়ে অনুভব করার সুযোগ পেয়েছিলেন। একই সঙ্গে প্রজাদের অভাব ও দুঃখ দূর করার জন্যে নানা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও জীবনঘন সামাজিক সংস্কারে তিনি হাত দেন। শিলাইদহ ও পতিসরে কৃষি উন্নয়ন, কুটিরশিল্পের প্রসার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, পূর্তকর্ম, স্বাস্থ্যসেবা, সালিশ-বিচারসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজে নিজের উদ্ভাবনীমূলক চিন্তা ও অর্থের সম্মিলন ঘটান। নিজের সন্তান, বন্ধু ও আত্মীয়দের পর্যন্ত এসব কর্মে যুক্ত করেন। এসব কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতায় শান্তি নিকেতনে শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রতিটি সামাজিক উদ্যোগের মূলে ছিল মানুষের সম্মিলন।
রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন মানুষ সংগঠিত হলে উন্নয়ন সহজ হয়। সেজন্যেই তিনি ১৯০৪ সালে লেখা ‘স্বদেশী সমাজ’ প্রবন্ধে ‘সমাজ’ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। শিলাইদহে সমগ্র এলাকাকে কয়েকটি মণ্ডলিতে ভাগ করে কবি সমবায়ভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করেন। যদিও পরবর্তিকালে এসব উদ্যোগ নানা কারণে বেশি দূর এগোয়নি। তবে আরও পরে শান্তি নিকেতনে ‘শান্তি নিকেতন বিশ্বভারতী সমিতি’, শিলাইদহে ‘পল্লী সমিতি’, পতিসরে ‘লোকসভা’, ‘মণ্ডলী’, ও ‘হিতৈষীসভা’সহ বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। এসব ভাবনা ও উদ্যোগের পেছনে রবীন্দ্রনাথের লোকসাধারণের হিতসাধনের চিন্তা ছিল একেবারেই মৌলিক ও সৃজনশীল। তাঁর সেই ভাবনার অন্তর্নিহিত সুরটি ধরতে পারলে আমাদের সমকালীন উন্নয়নভাবনাকে আরও মানবিক ও অধিকারভিত্তিক করার তাগিদ অনুভব করব বলে আমার বিশ্বাস। তাঁর ‘কালান্তর’ পর্বের ‘লোকহিত’ প্রবন্ধটি সকল অর্থেই একটি যুগান্তকরী রচনা। এখানে তিনি এমন কিছু মৌলিক বিষয়ের অবতারণা করেছেন যা বর্তমানের সমাজ ভাবনাকেও সমানতালে প্রভাবান্বিত করার ক্ষমতা রাখে।
আজকাল প্রতিটি রাজনৈতিক দলই সুযোগ পেলেই জনহিতকর কাজের দীর্ঘ তালিকা দিয়ে থাকে। নির্বাচনী ইশতেহারে দলগুলো এখন আরও সুপরিকল্পিতভাবে এসব লোকহিতকর চিন্তাকে তুলে ধরে। তাতে দোষের কিছু নেই। তবে এই ভাবনার মূলে যেন নাগরিক অধিকারের বিষয়টি শক্ত করে প্রোথিত থাকে সে শিক্ষাই আমরা পাই রবীন্দ্রচিন্তা থেকে। আর বাস্তবায়েনর দিকটিতেও সমান গুরুত্ব দাবি করে। রবীন্দ্রনাথ মনে করেন, পরের উপকার করার জন্যে প্রথমেই অধিকার অর্জন করা চাই। “মানুষ কোনোদিন কোনো যথার্থ হিতকে ভিক্ষারূপে গ্রহণ করিবে না, ঋণরূপেও না, কেবলমাত্র প্রাপ্য বলিয়াই গ্রহণ করিতে পারিবে।” (লোকহিত, রর, দ্বাদশ খণ্ড, পৃ. ৫৮৪)।
এখানে ‘প্রাপ্য’ শব্দটির মধ্যেই অধিকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাঁর মতে লোকসাধারণকে সকল অর্থেই ছোট জ্ঞান করে, অনুগ্রহপ্রার্থী মনে করে দৃশ্যমান হিত করার মাঝে মানুষের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষতই করা হয়। এতে করে তাদের বরং আহতই করা হয়। যারা প্রকাশ্যে হিত করার আত্মাভিমানে মত্ত তাদের জন্যে রবীন্দ্রনাথের বার্তাটি হচ্ছে যে, ‘হিত করিবার একটিমাত্র ঈশ্বরদত্ত অধিকার আছে, সেটি প্রীতি। প্রীতির দানে কোনো অপমান নাই কিন্তু হিতৈষিতার দানে মানুষের অপমান হয়। মানুষকে সকলের চেয়ে নত করিবার উপায় তাহার হিত করা অথচ তাহাকে প্রীতি না-করা।’ (লোকহিত, রর, দ্বাদশ খণ্ড, পৃ. ৫৮৪)।
প্রকৃতপক্ষে যে মানুষ অপর মানুষকে সম্মান করতে পারে না, সে মানুষকে উপকার করতে অক্ষম। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘রাশিয়ার চিঠি’তে লিখেছেন শিক্ষাই সবচেয়ে বড় রাস্তা যা মানুষকে সম্পূর্ণতা এনে দেয়। কেবল রাশিয়ায় নয়, মধ্য এশিয়ায়ও বন্যার বেগে বিজ্ঞানভিত্তিক মানবিক শিক্ষার বিস্তার হয়েছে। তিনি ভারতবর্ষের সম্ভাবনা ও বাস্তবতার সঙ্গে এইসব অঞ্চলের মানুষের উচ্চ মানবিক চেতনা উন্নয়নের প্রয়াসের ব্যবধান অনুভব করে আহত হয়েছেন।
আমরা যারা সুবিধেলোভী ভদ্রলোকেরা সর্বক্ষণ সুবিধে বঞ্চিতদের শুধু দান করে, কৃপা করে মন জয় করতে আগ্রহী তাদের জন্যে রবীন্দ্রনাথের ‘লোকহিত’ ভাবনাগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ মনে করেন মহাজন ঋণ দিয়ে সুদ গ্রহণ করে থাকে। সেই সুদ অনেক সময় আসলকেও ছাড়িয়ে যায়। সেই মহাজন যদি ঋণগ্রহিতার কাছে সুদের পাশাপাশি কৃতজ্ঞতাও আদায় করতে চায় তাহলেই মুশকিল। তাকে তিনি ‘শাইলকেরও বাড়া’ বলে মনে করেন। সমকালীন বাংলাদেশেও আমরা এমন অসংখ্য হিতকারীদের সন্ধান পাই যাদের মাঝে এ ধরণের আত্মাভিমানের বাড়াবাড়ি বেশ চোখে পড়ে।
বর্তমানে ধনের বৈষম্যের চাপে সাধারণ মানুষ ছটফট করছে। তাই তারা অনেক সময়ই সংগঠিত শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চাচ্ছে। আর ভিক্ষা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়, বরং তারা এখন তাদের প্রাপ্যের দাবি করতে আগ্রহী। তাই দয়া করে নয়, নিজের গরজেই তাদের বেঁচে থাকার সুযোগ সৃষ্টি করা আমাদরে কাজ। কেননা, তারা এখন আমাদের ভাবিয়ে তুলতে সক্ষম হয়ে উঠছে। রবীন্দ্রনাথ শতবর্ষ আগেই এমনটি যে হবে তার অনুমান করেছিলেন। “আমাদের ভদ্র সমাজ আরামে আছে, কেননা আমাদের লোক সাধারণ নিজেকে বোঝে নাই। এই জন্যই জমিদার তাহাদিগকে মারিতেছে, মহাজন তাহাদিগকে ধরিতেছে, মনিব তাহাদিগকে গালি দিতেছে, পুলিশ তাহাদিগকে শুষিতেছে, গুরুঠাকুর তাহাদের মাথায় হাত বুলাইতেছে, মোক্তার তাহাদের গাঁট কাটিতেছে, আর তাহারা কেবল সেই অদৃষ্টের নামে নালিশ করিতেছে যাহার নামে সমন-জারি করিবার জো নাই।
আমরা বড়োজোর ধর্মের দোহাই দিয়া জমিদারকে বলি তোমরা কর্তব্য করো, মহাজনকে বলি তোমার সুদ কমাও, পুলিশকে বলি তুমি অন্যায় করো না- এমন করিয়া নিতান্ত দুর্বলভাবে কতদিন কতদিক ঠেকাইব। চালুনিতে করিয়া জল আনাইব আর বাহককে বলিব যতটা পারো তোমরা হাত দিয়া ছিদ্র সামলাও- সে হয় না; তাহাতে কোনো এক সময়ে এক মুহূর্তের কাজ চলে কিন্তু চিরকালের এ ব্যবস্থা নয়। সমাজে দয়ার চেয়ে দায়ের জোর বেশি।” (লোকহিত, রর, দ্বাদশ খন্ড, পৃ. ৫৫১)
সমাজের সেই দায় নিশ্চিত করতে হলে লোকসাধারণের পরস্পরের মাঝে একটা যোগাযোগের রাস্তা চাই। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “সেটা যদি রাজপথ না হয় তো অন্তত গলির রাস্তা হওয়া চাই।” আর তাঁর মতে, “লেখাপড়া শেখাই এই রাস্তা।” এ শিক্ষা হয়তো গাঁয়ের “মেটে রাস্তা”। “কেবলই রাস্তা”। আপাতত এ-ই যথেষ্ট, কেননা এই রাস্তাটা না হইলে মানুষ আপনার কোণে বদ্ধ হইয়া থাকে। “সে কারণেই একটা বৃহৎ লৌকিক যোগের জন্যে চাই তার অন্তত প্রাথমিক শিক্ষা।” মানুষ যদি মনের চালাচালি করতে না জানে, দেশের জন্যে তার অনুভব কোত্থেকে আসবে? মানুষের মনকে বিস্তৃত না করা গেলে মানুষ তার অন্তরের শক্তি কোত্থেকে পাবে?
এ প্রসঙ্গে তিনি ইউরোপের কথা পেড়েছেন। ঐ সময় ইউরোপে প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয় প্রসার ঘটেছিল বলেই সেখানকার সাধারণ মানুষ লিখতে পড়তে শিখে পরস্পরের কাছে পোঁছানোর উপায় খুঁজে পেয়েছিল। আর এ কারণে সেখানে অধিকার সচেতন লোকসাধারণ আলাদা সত্ত্বায় আপন শক্তিতে জেগে উঠতে পেরেছিল। রাশিয়া ভ্রমণে করে কবি সেখানকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপে তাদের শিক্ষাব্যবস্থার লোকহিতকর দিকটি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন।’রাশিয়ার চিঠি’-তে কবি এমনি একটি অনুভূতি প্রকাশ করেছেন, “.... এদের শিক্ষা কেবল পুঁথিপড়ার শিক্ষা নয়। নিজের ব্যবহারকে চরিত্রকে একটা বৃহৎ লোকযাত্রার অনুগত করে এরা তৈরি করে তুলেছে। সেই সম্বন্ধে এদের একটা পণ আছে এবং সেই পণ রক্ষায় এদের গৌরববোধ।” (‘রাশিয়ার চিঠি’, রর, দশম খ-, পৃ. ৫৭১)
এই প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কবির আকাক্সক্ষার কথা প্রকাশ পেয়েছে এভাবে, “আমার ছেলেমেয়ে এবং শিক্ষকদের আমি অনেকবার বলেছি, লোকহিত এবং স্বায়ত্ত্বশাসনের যে দায়িত্ববোধ আমরা সমস্ত দেশের কাছ থেকে দাবি করে থাকি শান্তিনিকেতনের ছোটো সীমার মধ্যে তারই একটি সম্পূর্ণ রূপ দিতে চাই। এখানকার ব্যবস্থা ছাত্র ও শিক্ষকদের সমবেত স্বায়ত্ত্বশাসনের ব্যবস্থা হওয়া দরকার- সেই ব্যবস্থায় যখন এখানকার সমস্ত কর্ম সুসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে তখন এইটুকুর মধ্যে আমাদের সমস্ত দেশের সমস্যার পূরণ হতে পারবে। ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে সাধারণ হিতের অনুগত করে তোলবার চর্চা রাষ্ট্রীয় বক্তৃতামঞ্চে দাঁড়িয়ে হতে পারে না, তার জন্যে ক্ষেত্র তৈরি করতে হয়- সেই ক্ষেত্র আমাদের আশ্রম।” (‘রাশিয়ার চিঠি’, রর, দশম খণ্ড, পৃ. ৫৭১)।
নানা কারণেই আমাদের উপযুক্ত শিক্ষার বড়োই অভাব অনুভূত হচ্ছে। শিক্ষা এখন যেন অধিকার নয়, গণ্য হচ্ছে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক বৈষম্য ও নীতিহীনতা। শিক্ষার মানের তারতম্যের কারণে এক বাংলাদেশে কয়েক বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন এই বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, আশা-আকাক্সক্ষার ভিন্নতা হতে বাধ্য। গুণগতমানের নৈতিক ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা নিশ্চিত করা গেলে সমাজের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
সমাজ সকলের বড়ো। যুগে যুগে বাংলাদেশে সমাজব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এখানকার শিক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতি, নৈতিকতা সবকিছুই সমাজ থেকেই বয়ে আসতো। এমন কি সকল প্রকার সংকটের মধ্যেও সমাজ নিজেকে রক্ষা করেছে। আমাদের সমাজ লোকসাধারণের জন্য কারিগরিসহ উপযুক্ত শিক্ষার সুযোগ আরও বিস্তৃত করতে পারলে সমাজেরই লাভ হবে। সমাজের নিম্নবর্গের অধিকার-সচেতনতা তখন আরও বাড়বে, ভদ্রলোকদের আরও বেশি জবাবদিহিতার সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হতে হবে। তখন দয়া-দাক্ষিণ্য নয়, অধিকারের ভিত্তিতে এদেশের মানুষের ভাব বিনিময় হবে। তারা পরস্পর সম্মিলিত হবে শিক্ষা নামক অধিকারের সূত্র ধরে। আর তখনই সম্ভব হবে সত্যিকারের সবার জন্যে উন্নয়ন। তখনই নিশ্চিত করা যাবে প্রকৃত লোকহিত। বঙ্গবন্ধু তাঁর সংবিধান, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনে এমন প্রাসঙ্গিক শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুকন্যাও আধুনিক গুণমানের শিক্ষার প্রসারে অঙ্গিকারাবদ্ধ। তবে হঠাৎ করে করোনা সংকট এসে পড়ায় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা স্বাস্থ্য খাতের মতোই বড়ো চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে গেছে। আশা করি সবাই মিলে সচেষ্ট থাকলে এই সংকটকাল নিশ্চয় পাড়ি দিতে পারবো।
আমরা এখন এক নয়া পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যস্ত এই পৃথিবীর ঘাড়ে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে চেপে বসেছে কভিড-১৯। এই বিশ্বজনিন সংক্রমণে সর্বত্রই সমাজ ও অর্থনীতিতে বিরাট ধাক্কা লেগেছে। হত-বিহ্বল মানুষ এরই মধ্যে নিজেদের শক্তি ও সামর্থ অনুযায়ী বদলে যাওয়া পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলবার চেষ্টা করছে। নয়া এই বাস্তবতায় বাংলাদেশও তার মতো করে এই সংকট মোকাবেলা করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া কিছুটা গতি পাওয়া শুরু হতেই নতুন ধাক্কা হিসেবে এসেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্টি হওয়া বৈশ্বিক অস্থিরতা। বিশ্বের সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত এবং জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশকেও মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে হচ্ছে। একদিকে করোনা পরবর্তি পুনরুদ্ধারের চাহিদা, আরেক দিকে মল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঙ্কোচনমুখী আর্থিক নীতি প্রণয়নের চাপ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে আছে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার যে মানসিকতা বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে তৈরি করে দিয়ে গেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা তাকে আরও জোরদার করেছেন। সেই লড়াকু মানসিকতার জোরে এদেশের মানুষ এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ঠিকই বাস্তবে রূপ দিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। এমন পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথ বরাবরই আত্মশক্তির কথা বলতেন। সচেষ্ট সমাজের কথা বলতেন। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও সংকটকালে একইভাবে মানবিকতার উদ্বোধনের কথা বলতেন। দুর্যোগে ও দুঃসময়ে মানুষকে এক হতে বলতেন। তিনিও রবীন্দ্র ভাবনায় গভীরভাবে সিক্ত ছিলেন। আর সেজন্যেই চলমান এই বিশ্ব সংকটেও রবীন্দ্রনাথের লোকহিত চিন্তা আগের মতোই সমান প্রাসঙ্গিক। তিনি যে আমাদের চিরকালের সাথী।
লেখক: অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদযালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।
ই-মেইল: dratiur@Gmail.com