শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ | ২৮ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

প্রবন্ধ/ রবীন্দ্রনাথের ‘লোকহিত’ চিন্তার প্রাসঙ্গিকতা

রবীন্দ্রনাথের সমাজ পরিবর্তনের ভাবনা ছিল গভীরভাবে মানবিক ও অধিকারভিত্তিক। জমিদারি পরিচালনার কাজে তিনি এসেছিলেন পূর্ববঙ্গে। সমাজের নানা অসঙ্গতি ও সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব ও দুর্দশা হৃদয় দিয়ে অনুভব করার সুযোগ পেয়েছিলেন। একই সঙ্গে প্রজাদের অভাব ও দুঃখ দূর করার জন্যে নানা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও জীবনঘন সামাজিক সংস্কারে তিনি হাত দেন। শিলাইদহ ও পতিসরে কৃষি উন্নয়ন, কুটিরশিল্পের প্রসার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, পূর্তকর্ম, স্বাস্থ্যসেবা, সালিশ-বিচারসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজে নিজের উদ্ভাবনীমূলক চিন্তা ও অর্থের সম্মিলন ঘটান। নিজের সন্তান, বন্ধু ও আত্মীয়দের পর্যন্ত এসব কর্মে যুক্ত করেন। এসব কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতায় শান্তি নিকেতনে শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রতিটি সামাজিক উদ্যোগের মূলে ছিল মানুষের সম্মিলন।

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন মানুষ সংগঠিত হলে উন্নয়ন সহজ হয়। সেজন্যেই তিনি ১৯০৪ সালে লেখা ‘স্বদেশী সমাজ’ প্রবন্ধে ‘সমাজ’ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। শিলাইদহে সমগ্র এলাকাকে কয়েকটি মণ্ডলিতে ভাগ করে কবি সমবায়ভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করেন। যদিও পরবর্তিকালে এসব উদ্যোগ নানা কারণে বেশি দূর এগোয়নি। তবে আরও পরে শান্তি নিকেতনে ‘শান্তি নিকেতন বিশ্বভারতী সমিতি’, শিলাইদহে ‘পল্লী সমিতি’, পতিসরে ‘লোকসভা’, ‘মণ্ডলী’, ও ‘হিতৈষীসভা’সহ বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। এসব ভাবনা ও উদ্যোগের পেছনে রবীন্দ্রনাথের লোকসাধারণের হিতসাধনের চিন্তা ছিল একেবারেই মৌলিক ও সৃজনশীল। তাঁর সেই ভাবনার অন্তর্নিহিত সুরটি ধরতে পারলে আমাদের সমকালীন উন্নয়নভাবনাকে আরও মানবিক ও অধিকারভিত্তিক করার তাগিদ অনুভব করব বলে আমার বিশ্বাস। তাঁর ‘কালান্তর’ পর্বের ‘লোকহিত’ প্রবন্ধটি সকল অর্থেই একটি যুগান্তকরী রচনা। এখানে তিনি এমন কিছু মৌলিক বিষয়ের অবতারণা করেছেন যা বর্তমানের সমাজ ভাবনাকেও সমানতালে প্রভাবান্বিত করার ক্ষমতা রাখে।

আজকাল প্রতিটি রাজনৈতিক দলই সুযোগ পেলেই জনহিতকর কাজের দীর্ঘ তালিকা দিয়ে থাকে। নির্বাচনী ইশতেহারে দলগুলো এখন আরও সুপরিকল্পিতভাবে এসব লোকহিতকর চিন্তাকে তুলে ধরে। তাতে দোষের কিছু নেই। তবে এই ভাবনার মূলে যেন নাগরিক অধিকারের বিষয়টি শক্ত করে প্রোথিত  থাকে সে শিক্ষাই আমরা পাই রবীন্দ্রচিন্তা থেকে। আর বাস্তবায়েনর দিকটিতেও সমান গুরুত্ব দাবি করে। রবীন্দ্রনাথ মনে করেন, পরের উপকার করার জন্যে প্রথমেই অধিকার অর্জন করা চাই। “মানুষ কোনোদিন কোনো যথার্থ হিতকে ভিক্ষারূপে গ্রহণ করিবে না, ঋণরূপেও না, কেবলমাত্র প্রাপ্য বলিয়াই গ্রহণ করিতে পারিবে।” (লোকহিত, রর, দ্বাদশ খণ্ড, পৃ. ৫৮৪)।

এখানে ‘প্রাপ্য’ শব্দটির মধ্যেই অধিকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাঁর মতে লোকসাধারণকে সকল অর্থেই ছোট জ্ঞান করে, অনুগ্রহপ্রার্থী মনে করে দৃশ্যমান হিত করার মাঝে মানুষের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষতই করা হয়। এতে করে তাদের বরং আহতই করা হয়। যারা প্রকাশ্যে হিত করার আত্মাভিমানে মত্ত তাদের জন্যে রবীন্দ্রনাথের বার্তাটি হচ্ছে যে, ‘হিত করিবার একটিমাত্র ঈশ্বরদত্ত অধিকার আছে, সেটি প্রীতি। প্রীতির দানে কোনো অপমান নাই কিন্তু হিতৈষিতার দানে মানুষের অপমান হয়। মানুষকে সকলের চেয়ে নত করিবার উপায় তাহার হিত করা অথচ তাহাকে প্রীতি না-করা।’ (লোকহিত, রর, দ্বাদশ খণ্ড, পৃ. ৫৮৪)।

প্রকৃতপক্ষে যে মানুষ অপর মানুষকে সম্মান করতে পারে না, সে মানুষকে উপকার করতে অক্ষম। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘রাশিয়ার চিঠি’তে লিখেছেন শিক্ষাই সবচেয়ে বড় রাস্তা যা মানুষকে সম্পূর্ণতা এনে দেয়। কেবল রাশিয়ায় নয়, মধ্য এশিয়ায়ও বন্যার বেগে বিজ্ঞানভিত্তিক মানবিক শিক্ষার বিস্তার হয়েছে। তিনি ভারতবর্ষের সম্ভাবনা ও বাস্তবতার সঙ্গে এইসব অঞ্চলের মানুষের উচ্চ মানবিক চেতনা উন্নয়নের প্রয়াসের ব্যবধান অনুভব করে আহত হয়েছেন।

আমরা যারা সুবিধেলোভী ভদ্রলোকেরা সর্বক্ষণ সুবিধে বঞ্চিতদের শুধু দান করে, কৃপা করে মন জয় করতে আগ্রহী তাদের জন্যে রবীন্দ্রনাথের ‘লোকহিত’ ভাবনাগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ মনে করেন মহাজন ঋণ দিয়ে সুদ গ্রহণ করে থাকে। সেই সুদ অনেক সময় আসলকেও ছাড়িয়ে যায়। সেই মহাজন যদি ঋণগ্রহিতার কাছে সুদের পাশাপাশি কৃতজ্ঞতাও আদায় করতে চায় তাহলেই মুশকিল। তাকে তিনি ‘শাইলকেরও বাড়া’ বলে মনে করেন। সমকালীন বাংলাদেশেও আমরা এমন অসংখ্য হিতকারীদের সন্ধান পাই যাদের মাঝে এ ধরণের আত্মাভিমানের বাড়াবাড়ি বেশ চোখে পড়ে।

বর্তমানে ধনের বৈষম্যের চাপে সাধারণ মানুষ ছটফট করছে। তাই তারা অনেক সময়ই সংগঠিত শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চাচ্ছে। আর ভিক্ষা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়, বরং তারা এখন তাদের প্রাপ্যের দাবি করতে আগ্রহী। তাই দয়া করে নয়, নিজের গরজেই তাদের বেঁচে থাকার সুযোগ সৃষ্টি করা আমাদরে কাজ। কেননা, তারা এখন আমাদের ভাবিয়ে তুলতে সক্ষম হয়ে উঠছে। রবীন্দ্রনাথ শতবর্ষ আগেই এমনটি যে হবে তার অনুমান করেছিলেন। “আমাদের ভদ্র সমাজ আরামে আছে, কেননা আমাদের লোক সাধারণ নিজেকে বোঝে নাই। এই জন্যই জমিদার তাহাদিগকে মারিতেছে, মহাজন তাহাদিগকে ধরিতেছে, মনিব তাহাদিগকে গালি দিতেছে, পুলিশ তাহাদিগকে শুষিতেছে, গুরুঠাকুর তাহাদের মাথায় হাত বুলাইতেছে, মোক্তার তাহাদের গাঁট কাটিতেছে, আর তাহারা কেবল সেই অদৃষ্টের নামে নালিশ করিতেছে যাহার নামে সমন-জারি করিবার জো নাই।

আমরা বড়োজোর ধর্মের দোহাই দিয়া জমিদারকে বলি তোমরা কর্তব্য করো, মহাজনকে বলি তোমার সুদ কমাও, পুলিশকে বলি তুমি অন্যায় করো না- এমন করিয়া নিতান্ত দুর্বলভাবে কতদিন কতদিক ঠেকাইব। চালুনিতে করিয়া জল আনাইব আর বাহককে বলিব যতটা পারো তোমরা হাত দিয়া ছিদ্র সামলাও- সে হয় না; তাহাতে কোনো এক সময়ে এক মুহূর্তের কাজ চলে কিন্তু চিরকালের এ ব্যবস্থা নয়। সমাজে দয়ার চেয়ে দায়ের জোর বেশি।” (লোকহিত, রর, দ্বাদশ খন্ড, পৃ. ৫৫১)

সমাজের সেই দায় নিশ্চিত করতে হলে লোকসাধারণের পরস্পরের মাঝে একটা যোগাযোগের রাস্তা চাই। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “সেটা যদি রাজপথ না হয় তো অন্তত গলির রাস্তা হওয়া চাই।” আর তাঁর মতে, “লেখাপড়া শেখাই এই রাস্তা।” এ শিক্ষা হয়তো গাঁয়ের “মেটে রাস্তা”। “কেবলই রাস্তা”। আপাতত এ-ই যথেষ্ট, কেননা এই রাস্তাটা না হইলে মানুষ আপনার কোণে বদ্ধ হইয়া থাকে। “সে কারণেই একটা বৃহৎ লৌকিক যোগের জন্যে চাই তার অন্তত প্রাথমিক শিক্ষা।” মানুষ যদি মনের চালাচালি করতে না জানে, দেশের জন্যে তার অনুভব কোত্থেকে আসবে? মানুষের মনকে বিস্তৃত না করা গেলে মানুষ তার অন্তরের শক্তি কোত্থেকে পাবে?

এ প্রসঙ্গে তিনি ইউরোপের কথা পেড়েছেন। ঐ সময় ইউরোপে প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয় প্রসার ঘটেছিল বলেই সেখানকার সাধারণ মানুষ লিখতে পড়তে শিখে পরস্পরের কাছে পোঁছানোর উপায় খুঁজে পেয়েছিল। আর এ কারণে সেখানে অধিকার সচেতন লোকসাধারণ আলাদা সত্ত্বায় আপন শক্তিতে জেগে উঠতে পেরেছিল। রাশিয়া ভ্রমণে করে কবি সেখানকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপে তাদের শিক্ষাব্যবস্থার লোকহিতকর দিকটি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন।’রাশিয়ার চিঠি’-তে কবি এমনি একটি অনুভূতি প্রকাশ করেছেন, “.... এদের শিক্ষা কেবল পুঁথিপড়ার শিক্ষা নয়। নিজের ব্যবহারকে চরিত্রকে একটা বৃহৎ লোকযাত্রার অনুগত করে এরা তৈরি করে তুলেছে। সেই সম্বন্ধে এদের একটা পণ আছে এবং সেই পণ রক্ষায় এদের গৌরববোধ।” (‘রাশিয়ার চিঠি’, রর, দশম খ-, পৃ. ৫৭১)

এই প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কবির আকাক্সক্ষার কথা প্রকাশ পেয়েছে এভাবে, “আমার ছেলেমেয়ে এবং শিক্ষকদের আমি অনেকবার বলেছি, লোকহিত এবং স্বায়ত্ত্বশাসনের যে দায়িত্ববোধ আমরা সমস্ত দেশের কাছ থেকে দাবি করে থাকি শান্তিনিকেতনের ছোটো সীমার মধ্যে তারই একটি সম্পূর্ণ রূপ দিতে চাই। এখানকার ব্যবস্থা ছাত্র ও শিক্ষকদের সমবেত স্বায়ত্ত্বশাসনের ব্যবস্থা হওয়া দরকার- সেই ব্যবস্থায় যখন এখানকার সমস্ত কর্ম সুসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে তখন এইটুকুর মধ্যে আমাদের সমস্ত দেশের সমস্যার পূরণ হতে পারবে। ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে সাধারণ হিতের অনুগত করে তোলবার চর্চা রাষ্ট্রীয় বক্তৃতামঞ্চে দাঁড়িয়ে হতে পারে না, তার জন্যে ক্ষেত্র  তৈরি করতে হয়- সেই ক্ষেত্র আমাদের আশ্রম।” (‘রাশিয়ার চিঠি’, রর, দশম খণ্ড, পৃ. ৫৭১)।

নানা কারণেই আমাদের উপযুক্ত শিক্ষার বড়োই অভাব অনুভূত হচ্ছে। শিক্ষা এখন যেন অধিকার নয়, গণ্য হচ্ছে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক বৈষম্য ও নীতিহীনতা। শিক্ষার মানের তারতম্যের কারণে এক বাংলাদেশে কয়েক বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন এই বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, আশা-আকাক্সক্ষার ভিন্নতা হতে বাধ্য। গুণগতমানের নৈতিক ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা নিশ্চিত করা গেলে সমাজের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

সমাজ সকলের বড়ো। যুগে যুগে বাংলাদেশে সমাজব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এখানকার শিক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতি, নৈতিকতা সবকিছুই সমাজ থেকেই বয়ে আসতো। এমন কি সকল প্রকার সংকটের মধ্যেও সমাজ নিজেকে রক্ষা করেছে। আমাদের সমাজ লোকসাধারণের জন্য কারিগরিসহ উপযুক্ত শিক্ষার সুযোগ আরও বিস্তৃত করতে পারলে সমাজেরই লাভ হবে। সমাজের নিম্নবর্গের অধিকার-সচেতনতা তখন আরও বাড়বে, ভদ্রলোকদের আরও বেশি জবাবদিহিতার সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হতে হবে। তখন দয়া-দাক্ষিণ্য নয়, অধিকারের ভিত্তিতে এদেশের মানুষের ভাব বিনিময় হবে। তারা পরস্পর সম্মিলিত হবে শিক্ষা নামক অধিকারের সূত্র ধরে। আর তখনই সম্ভব হবে সত্যিকারের সবার জন্যে উন্নয়ন। তখনই নিশ্চিত করা যাবে প্রকৃত লোকহিত। বঙ্গবন্ধু তাঁর সংবিধান, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনে এমন প্রাসঙ্গিক শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুকন্যাও আধুনিক গুণমানের শিক্ষার প্রসারে অঙ্গিকারাবদ্ধ। তবে হঠাৎ করে করোনা সংকট এসে পড়ায় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা স্বাস্থ্য খাতের মতোই বড়ো চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে গেছে। আশা করি সবাই মিলে সচেষ্ট থাকলে এই সংকটকাল নিশ্চয় পাড়ি দিতে পারবো।

আমরা এখন এক নয়া পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যস্ত এই পৃথিবীর ঘাড়ে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে চেপে বসেছে কভিড-১৯। এই  বিশ্বজনিন সংক্রমণে সর্বত্রই সমাজ ও অর্থনীতিতে বিরাট ধাক্কা লেগেছে। হত-বিহ্বল মানুষ এরই মধ্যে নিজেদের শক্তি ও সামর্থ অনুযায়ী বদলে যাওয়া পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলবার চেষ্টা করছে। নয়া এই বাস্তবতায় বাংলাদেশও তার মতো করে এই সংকট মোকাবেলা করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া কিছুটা গতি পাওয়া শুরু হতেই নতুন ধাক্কা হিসেবে এসেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্টি হওয়া বৈশ্বিক অস্থিরতা। বিশ্বের সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত এবং জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশকেও মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে হচ্ছে। একদিকে করোনা পরবর্তি পুনরুদ্ধারের চাহিদা, আরেক দিকে মল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঙ্কোচনমুখী আর্থিক নীতি প্রণয়নের চাপ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে আছে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার যে মানসিকতা বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে তৈরি করে দিয়ে গেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা তাকে আরও জোরদার করেছেন। সেই লড়াকু মানসিকতার জোরে এদেশের মানুষ এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ঠিকই বাস্তবে রূপ দিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। এমন পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথ বরাবরই আত্মশক্তির কথা বলতেন। সচেষ্ট সমাজের কথা বলতেন। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও সংকটকালে একইভাবে মানবিকতার উদ্বোধনের কথা বলতেন। দুর্যোগে ও দুঃসময়ে মানুষকে এক হতে বলতেন। তিনিও রবীন্দ্র ভাবনায় গভীরভাবে সিক্ত ছিলেন। আর সেজন্যেই চলমান এই বিশ্ব সংকটেও রবীন্দ্রনাথের লোকহিত চিন্তা আগের মতোই সমান প্রাসঙ্গিক। তিনি যে আমাদের চিরকালের সাথী।

 

লেখক: অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদযালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।

ই-মেইল: dratiur@Gmail.com

Header Ad
Header Ad

কুল-বিএসপিএ স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ মিরাজ, দর্শক পছন্দে সেরা ঋতুপর্ণা

ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের কুল-বিএসপিএ স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত জমকালো অনুষ্ঠানে তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, দর্শক ভোটে সর্বাধিক পছন্দের ক্রীড়াবিদ হিসেবে ‘পপুলার চয়েজ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন নারী সাফ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জাতীয় নারী ফুটবল দলের মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা চাকমা।

এ বছর ‘স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জয়ের দৌড়ে মিরাজ পেছনে ফেলেছেন ঋতুপর্ণা এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করা আর্চার সাগর ইসলামকে। অপরদিকে, ‘পপুলার চয়েজ’ বিভাগে ঋতুপর্ণা এগিয়ে যান মিরাজ ও উদীয়মান পেসার নাহিদ রানাকে ছাড়িয়ে।

 

ছবি: সংগৃহীত

১৯৬৪ সাল থেকে ক্রীড়াবিদদের স্বীকৃতি জানিয়ে আসা দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) এবছর ১৫টি বিভাগে মোট ১৩ ব্যক্তি, দল ও সংস্থাকে সম্মাননা দেয়। সংগঠনের সভাপতি রেজওয়ান উজ জামান রাজিবের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী।

পুরস্কার গ্রহণ করে মিরাজ বলেন, “বিএসপিএকে ধন্যবাদ প্রতি বছর এমন আয়োজনের জন্য। এটা আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।” ভুটানে লিগ খেলায় ব্যস্ত থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারলেও ভিডিও বার্তায় ঋতুপর্ণা জানান, “এই সম্মান আমাকে আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা দেবে।”

Header Ad
Header Ad

রাজধানীর ওয়াসার পানিতে কিলবিল করছে পোকা, মগবাজার-মধুবাগে তীব্র ভোগান্তি

রাজধানীর ওয়াসার পানিতে কিলবিল করছে পোকা। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মগবাজার ও মধুবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানিতে পোকা ও ময়লার উপস্থিতি নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। ট্যাপের পানি দুর্গন্ধযুক্ত ও অস্বচ্ছ হওয়ায় তা রান্না, গোসল ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে গিয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাসার পানির ট্যাঙ্ক একাধিকবার পরিষ্কার করেও মিলছে না সমাধান। ওয়াসার সাপ্লাই পাইপ থেকেই এই সমস্যার উৎপত্তি বলে মনে করছেন তারা।

মধুবাগ এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “এই পানি দিয়ে রান্না ও গোসল সম্ভব না। আমাদের বাসার শিশুরা পানি খেতেই চায় না। বাধ্য হয়ে পাম্প থেকে পানি এনে ব্যবহার করতে হচ্ছে।” আরেকজন জানান, “ট্যাঙ্ক পরিস্কার করলে প্রথমে কিছুদিন ভালো থাকে, তারপর আবার পোকা দেখা দেয়।”

বিকল্প না থাকায়, অনেকেই ট্যাপের মুখে কাপড় বেঁধে পানি ব্যবহার করছেন। কিন্তু তারপরও পেটের অসুখ ও চর্মরোগের প্রকোপ বাড়ছে বলেও জানান স্থানীয়রা।

এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঢাকা ওয়াসার তিনজন কর্মকর্তা মধুবাগ এলাকায় পরিদর্শনে যান এবং কয়েকটি বাসা থেকে পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পোকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে দায় চাপান ট্যাঙ্ক ঠিকমতো পরিষ্কার না করাকে। ওয়াসার উপসহকারী প্রকৌশলী তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, “লাইনের পানি পরিষ্কার। ট্যাঙ্ক যদি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়, তাহলে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।”

তবে এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, নিয়মিত ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের পরও পানি দূষিত হচ্ছে, যা পাইপলাইনের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। এ অবস্থায় ওয়াসার কর্মকর্তারা পাইপের মান যাচাইয়ের আশ্বাস দিয়েছেন। এলাকাবাসী দ্রুত সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Header Ad
Header Ad

বিদেশি আইনের আওতায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে হবে বিদেশি আইনের মাধ্যমে এবং এ উদ্যোগ সম্পূর্ণ নতুন। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটি দেশের নয়, বরং বিদেশের আইনের সঙ্গে সংযোগ রেখে করতে হবে। এর জন্য আগে সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং এস্টেট (সম্পদ) ফ্রিজ করে আদালতের মাধ্যমে বাকি প্রক্রিয়া চালাতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “প্রথমে এস্টেটগুলো ফ্রিজ করার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে, চিঠি পাঠানো হচ্ছে। আইন পরামর্শক নিয়োগে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এস্টেট ট্রেসিং ফার্মের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এস্টেট ফ্রিজ করা গেলে এটিই হবে প্রথম সাফল্য।”

এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, “আমার ধারণা, প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। শুধু বেক্সিমকো গ্রুপেরই প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো অর্থ পাচার হয়েছে। এগুলো বড় গ্রুপের হিসাব, ছোট গ্রুপগুলো এখনো বিবেচনায় আনা হয়নি। ভবিষ্যতে যেন এমন না ঘটে, সে জন্য আমরা প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “সব সময় আদালতের মাধ্যমে সমাধান না করে, কিছু ক্ষেত্রে সমঝোতার ভিত্তিতেও (আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্ট) টাকা ফেরত আনার চিন্তা করছি। তবে সেটার আগে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকা জরুরি, না হলে আমরা ঠকে যাব।”

মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নে গভর্নর বলেন, “অতীতে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ৯-১০ শতাংশ দেখানো হলেও বাস্তবে তা ছিল ১৩-১৪ শতাংশ। তবে এখন সেটি ৮-৯ শতাংশে নেমেছে। সামগ্রিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি কমতির দিকেই। আগামী বছরে তা ৫ শতাংশ বা তার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।”

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন, ফাইন্যান্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পরিচালক মো. আনিসুর রহমানসহ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনায় ছিলেন উপপরিচালক মো. জোবাইর হোসেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

কুল-বিএসপিএ স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ মিরাজ, দর্শক পছন্দে সেরা ঋতুপর্ণা
রাজধানীর ওয়াসার পানিতে কিলবিল করছে পোকা, মগবাজার-মধুবাগে তীব্র ভোগান্তি
বিদেশি আইনের আওতায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ: গভর্নর
মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদল নয়, বরং ঐতিহ্যে ফেরত: ঢাবি উপাচার্য
তৃতীয় বিয়ের ইতি, রোশন সিংয়ের সঙ্গে আইনিভাবে বিচ্ছিন্ন শ্রাবন্তী
৬৪ জেলা নিয়ে তৃণমূল ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের ঘোষণা ক্রীড়া উপদেষ্টার
আগামীকাল শনিবার রাজধানীতে “মার্চ ফর গাজা”, পাঁচটি স্থান থেকে শোভাযাত্রা শুরু
অবশেষে নতুন চুক্তি সালাহর, লিভারপুলে থাকছেন ২০২৭ পর্যন্ত
পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় হাসিনার মুখাবয়ব
ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে মামলা করল ওপেনএআই
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মৃদু ভূমিকম্প
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে নাগরিক কমিটির নেত্রী দিলশাদ আফরিন আটক
বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কায় ডলারের বড় পতন, রেকর্ড ছুঁয়েছে স্বর্ণের দাম
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে ১৪৭ দেশ, বাড়ছে বিশ্বজনমত
মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে চীনের পাল্টা জবাব
নারায়ণগঞ্জে দুই নারী ও এক শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার
ফুটবল মাঠ পেরিয়ে হলিউডে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
পুলিশের চাকরি পেতে সমন্বয়কদের পেছনে দৌড়ানো বন্ধ করুন: সারজিস
ড. ইউনূসের ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার কোনও অধিকার নেই: সেলিমা রহমান
সিটি কর্পোরেশন হচ্ছে বগুড়া, গণশুনানির প্রস্তুতি শুরু