সায়েন্স ফিকশন
কাইকিরার হরিৎ
এখনো এই প্রশ্নের মীমাংসা হয় নাই তারা এখানে কেন? কোনোদিন হয় নাই। প্রস্তুরীভূত ডাইনোসোরের ডিম এখনো পাওয়া যাচ্ছে নানা প্রান্তের পুরনো পাহাড়ে, যে সমস্ত পাহাড় হয়ত তৃণভূমি বা হ্রদ ছিল অতীতে। প্রস্তুরীভূত আর্কিওপটেরিক্স দূর অতীতের ধূসরতা নিয়ে।
বহুবার তারা মনে করেছে, একটা মীমাংসায় তারা পৌঁছছে। বহুবার মনে করেছে একটা মীমাংসার কাছাকাছি তারা পৌঁছেছে। ভাবন-ফকিরের দল চিরকাল। মীমাংসা কোনোদিনই হয় নাই।
‘তুমি কি জানো ঈশ্বর আছেন?’
‘তুমি কি বিশ্বাস করার কথা বলছ? আমি বিশ্বাস করি।’
‘আমি জানার কথা বলছি।’
‘জানতে হলে আগে বিশ্বাস করতে হয়।’
‘কুতর্ক করো না। তুমি জানো না তুমি আছো?’
‘জানি।’
‘তবে।’
ফিসফিস করে তারা হাসল।
তারা কারা?
দ্বীপবাসী। কোন দ্বীপে থাকে?
দুই কোটি বছর আগে এই দ্বীপ ছিল পৃথিবীর উত্তরে। চারকোটি বছর আগে ছিল নৈঋতে। এখন পৃথিবীর মধ্যভাগে। অতল নীল জলরাশি বেষ্টিত। এটলাসে নাই, গুগল আর্থে নাই। অতলান্তিসের মতো এক রহস্য। কিংবা এল ডোরাডোর মতো। মানুষ খুঁজেছে। বহু খুঁজেছে। পায় নাই। তাও অতলান্তিস যেমন এখনো খোঁজে, এলডোরাডো যেমন, কিছু মানুষ খোঁজে সেই দ্বীপও।
ষোড়শ শতকের পুঁথিতে সর্বশেষ এই দ্বীপের কথা পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় অব্দ শুরুর বহু আগ থেকে এনগ্রেভ করা আছে কিছু পাথরে। সম্পূর্ণ পাঠোদ্ধার সম্ভব হয় নাই। শেষ কথা এখনো অরলভের পেপার। নিকোলাই অরলভ। রুশ বংশোদ্ভুত নৃ-তাত্ত্বিক প্রত্নতত্ত্ববিদ। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের। ইনকা সভ্যতা নিয়ে তার কাজ আছে। আন্দামান দ্বীপের এখনো আদিম সেন্টিনেল মানুষদের নিয়ে আছে। দ্বীপ সংক্রান্ত অতি প্রাচীন কিছু নথি জোগাড় করেছিলেন। ‘আর্থ’ সাময়িকীতে ছাপা হয়েছিল তার অভিসন্দর্ভ ‘কাইকিরা দ্বীপ : আছে বা নাই।’ -অরলভ পেপার।
সেই দ্বীপের নাম কাইকিরা। অরলভের আগে আর কেউ বলেন নাই। কাইকিরা মহাজগতের সব থেকে প্রাচীন ভাষার শব্দ। সেই ভাষা মানুষের ভাষা না, অরলভ বলেছিলেন, ঈশ্বরের ভাষা। ব্যাখ্যা দেন নাই কেন। ঈশ্বরের ভাষায় কাইকিরা অর্থ, অন্তর্গত প্রাণের হরিৎ।
‘অন্তর্গত প্রাণের হরিৎ।’
তারা আবার ফিসফিস করে হাসল।
‘মানুষ তবুও এই দ্বীপ খুঁজবেই।’
‘তারা মানুষ।’
কাইকিরা দ্বীপ অভিযানের প্রাচীন কিছু নথি জোগাড় করেছিলেন অরলভ। ষোড়শ শতকের জলদস্যু ইগর তার জাহাজ ‘ফ্লাইং ইকারাস’ নিয়ে যাত্রা করেছিল কাইকিরার দিকে। আঠারো শতকের জলদস্যু সবুজ দাড়ি এবং নাবিক আঁরতানা যৌথ অভিযানে গিয়েছিল। উনিশ শতক থেকে গেছে অনেকে। এখনো যাচ্ছে। যারা যাচ্ছে বা যারা গেছে, তারা কেউ ফিরেছে? প্রমাণ নাই। জলদস্যু ইগর, জলদস্যু সবুজ দাড়ি, আঁরতানা এবং পরের অভিযাত্রীরা, কেউ ফিরেছে এমন নথি কখনও মিলে নাই।
‘আর কত?’
‘তারা আসবেই। তারা মানুষ। তারা মনে করে তারা শ্রেষ্ঠ।’
‘তারা মনে করে তারা সময় বন্দি।’
‘আর সময়!’
‘তারা সময় মাপে।’
‘হাস্যকর। খুবই হাস্যকর। তারা সময়ের ছক আবিষ্কার করেছে।’
‘আবিষ্কার। তারা সবকিছুই আবিষ্কার করে। হা হা হা।’
‘তারা অম্লজান আবিষ্কার করে।’
‘রোগ বালাই আবিষ্কার করে।’
‘মারণাস্ত্র আবিষ্কার করে।’
‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আবিষ্কার করে।’
‘হা হা হা!’
‘হা হা হা!’
সময়হীনতার দ্বীপ কাইকিরা।
দ্বীপবাসীরা থাকে সময়হীনতায়, যেটাকে সবসময় হয়ত বলা যায়। সবসময় তারা আছে। তাদের আদি নাই। অন্ত কি আছে? আদি না থাকলে অন্ত কি থাকে?
শতাব্দীর পর শতাব্দীর ধরে যারা যারা গেছে কাইকিরার দিকে, তারা কাইকিরার সন্ধান পায় নাই? সকলেই পেয়েছে। কাইকিরা দেখেছে। সময়হীন অন্তর্গত প্রাণের হরিৎ।
‘তারা কি বোকা?’
‘না।’
‘তারা কি বুদ্ধিমান?’
‘না।’
‘তারা কী?’
‘হা হা হা!’
‘হা হা হা!’
ফিসফিস হাসি। বাটারফ্লাই এফেক্ট-মাথা বিগড়োলো আরিজোনার হ্যাকার রিভসের। তার প্রাইভেট হোভারক্রাফট আছে, স্কাইকার আছে। সে কাইকিরা হ্যাক করতে নামল। সমুদ্র যাত্রা করল ক্যানোপিতে করে। একা। কতদিন পর কাইকিরা দেখল সে?
কাইকিরা। গাছ ভর্তি দ্বীপ। কেবল অযুত নিযুত সবুজ রঙের গাছ। আর কেউ নাই। কিছু নাই। তারা হ্যাকার রিভসকে ডাকল। নিজেদের একজন করে নিল, যে ভাবে আগের সকলকে অন্তর্গত প্রাণের হরিৎ করে নিয়েছে।