শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ | ২৮ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

গল্প/ সেমসাইড

 

ব্রিজের নাম ‘ছাগলা পাগলা’। অদ্ভুত ধরণের নাম। স্থানীয়দের দেওয়া নাম। শুনলেই হাসি পায়। আমাদের একজন সহযোদ্ধা ছাগলাপাগলা নাম শুনে ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলে বাকিরাও হাসতে থাকে। ওর নাম দিলু গোমেজ। হাসতে হাসতে বলে, ‘ছাগলা পাগলা’ এ আবার কেমন ধরণের নাম? দিলু গোমেজ বলে, ‘এ নামের মানে কি?’

দিলু গোমেজ এমন প্রশ্ন করতেই জ্বরে আক্রান্ত কমান্ডার কেশে মুখে ফিরিয়ে দিলু গোমেজের দিকে তাকালেন। মুহূর্তে হাসি থেমে গেল দিলু গোমেজের। আমাদের এই দলে দিলু গোমেজ একমাত্র খ্রিষ্টান যোদ্ধা। ঢাকা মিরপুরের বাসিন্দা। নাদুস-নুদুস গোলগাল চেহারা। খ্রিষ্টান বলে সবাই ওকে আলাদা ভাবে স্নেহ করে। সবাই মজা করে যিশু বলে ডাকে। যিশুর মতো মিষ্টি ভাষি। নম্র স্বভাবের। কিছুটা ভিতু প্রকৃতির। এই ভিতু ছেলেটি কোন সাহসে যুদ্ধে এসেছে-মাঝে মাঝে আমি ভাবি। আমার সঙ্গেই ওর বেশি সখ্য। কিছু হলে ছুটে আমার কাছে আসে।

এবারও আমার কাছে এসে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি চেন ব্রিজটা?’

বললাম, ‘চিনি।’

‘ব্রিজের নাম ছাগলা পাগলা হলো কেন?’

রেল কোম্পানির করা এই ব্রিজের নাম কেন ছাগলা পাগলা হলো সে ইতিহাস আমিও জানি না। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি এই ব্রিজের নাম, ‘ছাগলা পাগলা’। সিরাজগঞ্জ থেকে ট্রেন ছেড়ে আসলে রায়পুর, কালিয়া হরিপুর তারপর জামতৈল। জামতৈল স্টেশনের মাইল খানেক দক্ষিণে রেলের এই মাঝারি সাইজের ব্রিজটি ব্রিটিশ রেল কোম্পানি তৈরি করেছে। ভীষণ মজবুত। এত বছরেও ব্রিজটির কিছু হয়নি। সেই ব্রিজ আমরা উড়িয়ে দেব। পাকিস্তানি মিলিটারি রেল পথে যাতে মুভ করতে না পারে তার জন্যে এই ধ্বংসযজ্ঞ।

অপারেশনের দায়িত্ব পড়লো ডেপুটি কমান্ডার মমিনের উপর। অপারেশনের পরিকল্পনা করে দিলেন কমান্ডার তৌহিদ ভাই। তাঁর জ্বরের বেগ বাড়ন্ত। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরও তিনি অপারেশনের ছক করে দিলেন শুয়ে শুয়ে শরীরে কাথাঁ মুড়ে।

শ’খানেক মুক্তিযোদ্ধার একটি দল নিয়ে মাঝরাতে আমরা রওনা হলাম। যিনি দিনের বেলা ব্রিজ রেকি করে এসেছেন, তিনি বলেছেন ২০ জনের মতো রাজাকারের একটি দল পালাক্রমে ব্রিজ পাহারা দেয়। শুরুতে আমরা ওই রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করিয়ে চারদিকে পাহারায় থাকবো। তারপর আমাদের ইঞ্জিনিয়ার গ্রুপ ব্রিজে বিস্ফোরক লাগিয়ে ফিউজে আগুন দিয়ে দৌড়ে আত্মরক্ষা করবে। তারপর আকাশ কাঁপিয়ে বিকট শব্দে উড়ে যাবে ‘ছাগলা পাগলা’। কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্রিজটি নাই হয়ে যাবে।

রাতের আকাশে একফালি চাঁদ। কৃষ্ণ পক্ষ চলছে। চাঁদের ম্লান আলোয় কালচে দেখাচ্ছে সব। আমরা হেঁটে যাচ্ছি আঁল পথ ধরে। চরা ফাঁকা। ফসল কাটা হয়েছে। যতদূর চোখ যায় আবছা আলোতে চারদিক ভূতুরে পরিবেশ। এমনিতে গা ছম-ছম করে। তারউপর অপারেশনের টেনশন। তবে কাধে অস্ত্র থাকলে টেনশন থাকে না। আপনা-আপনি শরীর গরম হয়ে যায়। কি যে মহিমা এই অস্ত্রের। নিরস্ত্র মানুষজন আমাদের কাধে অস্ত্র দেখলে ভয়ে সমীহ করে কথা বলে।

একদিন এক রাজাকারকে ধরে আনলো আমাদের কয়েকজন যোদ্ধা। তাকে জেরা করতে থাকেন কমান্ডার তৌহিদভাই। কিন্তু ব্যাটা রাজাকার ঠিকমতো কথার জবাব দিচ্ছিল না। কমান্ডার তার বুকে স্টেগান তাক করে ধরলে রাজাকার ব্যাটা ভয়ে সঙ্গে সঙ্গে কাপড় নষ্ট করে ফেলে। সে এক তামেশগিরি কান্ড। আমরা হাসতে হাসতে মরি। রাজাকার ব্যাটা ওই অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে। তাকে সরানো যাচ্ছিল না। একজন গ্রামবাসীকে ডেকে বলা হলো রাজাকারের হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে আসতে। গ্রামের লোকটি প্রথমে কাঁই-কুঁই করছিল। কিন্তু আমাদের ঘাড়ে আগ্নেয়াস্ত্র দেখে আর আপত্তি করেনি। নাকে গামছা পেঁচিয়ে কমাণ্ডারের কথা মতো রাজাকারের হাত-পা বেঁধে কাছেই হুরাসাগর নদীতে ফেলে দিয়ে আসে। আমাদের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পাহারায় ছিল। রাজাকার ব্যাটা সাতঁরিয়ে পাড়ে উঠে আবার পালিয়ে না যায়।

ব্রিজের কাছাকাছি যে গ্রামটি সেই গ্রামের নাম রসুলপুর। সেই গ্রামের পাশে ফাঁকা মাঠে আমরা শেষবারের মতো প্রস্তুত হই। লুঙ্গিতে কাছা দিয়ে কোমরে গামছা বেঁধে অস্ত্র ঠিকঠাক আছে কিনা পরীক্ষা করে তারপর আমরা আবার যাত্রা শুরু করি।

সামনে কমাণ্ডার মমিনভাই। পেছনে লাইন ধরে আঁল পথে আমরা হেঁটে যাচ্ছি। হঠাৎ আমাদের যাত্রা থেমে গেল। সামনের জন আমাদের বললো, ‘সামনে কি যেন দেখা যাচ্ছে। নড়াচড়া করছে। মানুষের সারি মনে হচ্ছে।’

আমি পেছনের জনকে এই বার্তা দিয়ে গভীর ভাবে তাকালাম। দূরে তাকিয়ে দেখি আঁল পথে সারি বেঁধে কারা যেন আসছে। সংখ্যায় তারা ত্রিশ/চল্লিশ জনের মতো হবে। তারা আমাদের গুলি রেঞ্জের মধ্যে এসে পড়েছে। আমরা পজিশন নিতে নিতে ফিসফাস কথা ওদের কানে গিয়ে থাকবে। প্রথম গুলিটা ওরাই শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাহিনী রাইফেল, এসএলআর, এলএমজি নিয়ে ওদের উপর ঝাপিয়ে পড়ি কমান্ডারের আদেশের অপেক্ষা না করেই। একদফা গোলা-গুলির পর কমান্ডার আমাদের থামতে বললেন। আমি পাশে তাকিয়ে দেখি দিলু গোমেজ কাত হয়ে পড়ে আছে। আমি ক্রোলিং করে ওর কাছে গিয়ে গায়ে হাত দিয়ে বললাম, ‘দিলু, কোন সমস্যা?’

দিলু বললো, ‘কিছু হয়নি। আমি ভাল আছি।’

‘তাহল এভাবে পড়ে আছ কেন?’

‘হয়রান হয়ে গেছি।’

‘তাও ভাল। আমিতো ভেবেছিলাম, তোমার আবার গুলি-টুলি লাগলো কিনা?’ আমি অবাক গলায় প্রশ্ন করলে দিলু বললো, ‘থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে যুদ্ধ করা ভীষণ কষ্ট।’

দিলু মিথ্যে বলেনি। ব্রিটিশ আমলের এই থ্রি নট থ্রি রাইফেল আধুনিক যুদ্ধে একেবারেই অচল। ভীষণ কঠিন এই অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করা। একটি গুলি বেরিয়ে গেলে আবার লোড করতে হয়। বার বার লোড করে যুদ্ধ করা ভীষণ কষ্টকর। যুদ্ধের জন্য রাইফেল বড্ড পুরনো, একদম সেকেলে। শরীরে যথেষ্ট শক্তি না থাকলে রাইফেল চালানো কঠিন। যুদ্ধের এই বিরতিতে কমান্ডার মমিনভাই হঠাৎ জয়বাংলা বলে চেঁচিয়ে উঠলেন। আমরাও সঙ্গে সঙ্গে জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে কমান্ডারকে সমর্থন করলাম।

যারা যুদ্ধ করেননি তারা ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন না। যুদ্ধের ময়দানে দুই পক্ষের কথা বিনিময় হয়। গালি বিনিময় হয়। সে সব গালি বড় অশ্রাব্য। কোন পক্ষের মুখে লাগাম থাকে না। 

এইসময় একটি অবাক কান্ড ঘটলো। আমাদের চমকে দিয়ে আমাদের প্রতিপক্ষ তারাও জয়নাংলা ধ্বনি দিয়ে উঠলে আমরা পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে থাকি।

‘কি ব্যাপার, ওরা জয়বাংলা বলছে কেন? তবে কি ওরা আমাদের মতো মুক্তিযোদ্ধা?’ মমিনভাই ত্বড়িৎ কয়েকজন সেকশন কমান্ডারকে ডেকে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে থাকেন। 

‘ওরা কি মুক্তিযোদ্ধা? নাকি আমাদের সঙ্গে চালাকি করছে?’ কমান্ডারের এমন প্রশ্নে সবাই ভাবতে লাগলো, আসল ঘটনা কি?

ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল্লাহ ভাই বললেন, ‘মনে হয় সেমসাইড হয়ে গেছে। ওরা ভেবেছে আমরা শত্রু। আমরা ভাবছি ওরা শত্রু।’

তখন গোলাগুলি বন্ধ। ওরা থেমে থেমে জয়বাংলা ধ্বনি দিচ্ছে। আমরাও পাল্টা জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে যাচ্ছি। এইসময় আমাদের একজন চেঁচিয়ে বললেন, ‘তোমরা কোত্থেকে এসেছ? তোমাদের কোম্পানির নাম কি? কমান্ডার কে?’ এই প্রশ্নের জবাবের জন্য আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। কিন্তু কোন জবাব আসে না। কিছুক্ষণ পর কমান্ডার মমিনভাই সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘আমাদের একজন যোদ্ধা ওদের পরীক্ষা করার জন্য জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে ওদের কাছে যাবে। সে যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফিরে না আসে তাহলে বুঝবো ওরা আমাদের ধোঁকা দিয়েছে। তারপর আমরা সাড়াষি আক্রমণ করবো। একজনকেও প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে দেব না।’

এখন সবাই আতঙ্কগ্রস্থ। কমান্ডার কাকে এই পরীক্ষায় পাঠান। দিলু আমার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। কমান্ডার ওকেই এই দায়িত্ব দিলেন। বললেন, ‘তুমি যাবে। গিয়ে যদি দেখ ওরা মুক্তিযোদ্ধা সঙ্গে সঙ্গে জয়বাংলা বলে ধ্বনি দিয়ে উঠবে। আমরা তখন এগিয়ে যাব। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোমার সাড়া না পেলে আমরা বুঝবো ওরা আমাদের সঙ্গে চালাকি করেছে। আমরা তখন পাল্টা জবাব দেব। যাও।’

কঠিন পরীক্ষা। মৃত্যু হাতে নিয়ে যেতে হবে। আমি খেয়াল করলাম, দিলু কাঁপছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। কমান্ডারের নির্দেশ। না মেনে উপায় নেই। আমি একবার বলতে চাইলাম, ‘আমি যাই মমিনভাই।’ কিন্তু কমান্ডার আমাকে সে সুযোগ না দিয়ে দিলুকে চাপা স্বরে ধমকে বললেন, ‘কি হলো, পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন? যাও।’ 

দিলু আমার হাত ধরে আছে। তারপর আমাকে সালাম করে রাইফেল রেখে শূন্য হাতে জয়বাংলা বলে ছুটে গেল ওইদিকে-যেদিক থেকে ওদের ধ্বনি শোনা যাচ্ছিল।

পাঁচ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো না। দু মিনিট পরেই দিলুর কন্ঠে জোরালো জয়বাংলা ধ্বনি। কমান্ডার মমিনভাই বললেন, ‘মনে হয় আমরা আসলেই সেমসাইডের ফেরে পড়েছি। তবে, পুরোপুরি ওদের উপর আস্থা রাখা ঠিক হবে না। অস্ত্র পজিশন নিয়ে এগুতে থাকো।’

মমিন ভাই আগে আগে, আমার তার পেছনে পেছনে অস্ত্র তাক করে এগুতে থাকি। ওদের আমরা ঘিরে ফেলি। তারপর মমিনভাই চিৎকার ওঠেন, ‘হ্যান্ডসআপ’। ওদের ছোট দলটির সবাই অস্ত্র ফেলে হাত উপরে তুলে ধরে।

মমিন ভাই জিজ্ঞেস করেন, ‘কমান্ডার কে?’

মোটা মতো একজন মুক্তিযোদ্ধা মাথা নামিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালেন।

‘কোথায় ট্রেনিং নিয়েছ তোমরা?’

ওই পক্ষের কমান্ডার নিচু স্বরে বলেন, ‘ভারতে।’   

‘অসম্ভব। তোমরা যুদ্ধের কোন কিছুই শেখনি। কোন কিছু না বুঝে আমার বিরাট বাহিনীকে আক্রমণ করলে কোন সাহসে? আর কিছুক্ষণ যুদ্ধ করলে তোমরা তুলার মতো উড়ে যেতে। কোন যুক্তিতে তোমরা আগে ফায়ার করলে?’

‘একজন ভুলে ফায়ার করে ফেলেছে।’ ওই দলের কমান্ডার মিনমিন করে জবাব দিলেন।

 মমিনভাই বললেন, ‘এই বুদ্ধি নিয়ে তোমরা যুদ্ধ করতে এসেছ? যুদ্ধ কি ছেলের হাতের মোয়া?’

কারো মুখে কোন কথা নেই। দিলু গোমেজ এই ফাঁকে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মমিনভাই জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের কেউ জখম হয়নিতো?’  

ওদের কমান্ডার বললেন, ‘একজনের হাতে গুলি লেগেছে।’

মমিনভাই ঠোঁট কামড়িয়ে বললেন, ‘সেই কথা এতক্ষণে বলছো কেন? আগে ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করো। কই, কোথায় সে?’

আহত যোদ্ধাকে আমাদের সামনে আনা হলো। রক্তে তার কাপড় ভিজে গেছে। গুলিটা লেগেছে কনুইয়ের উপরে। গুলি লেগে চামড়া ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে।

কমান্ডার মমিনভাই টর্চ জ্বালিয়ে ভাল করে দেখলেন। তারপর তাকে কাধে নিতে বললেন। ওদের কমান্ডার নিজেই তাকে কাধে তুলে নিলেন। মমিনভাই বললেন, ‘অপরেশন উইথড্র করা হলো। কারণ গুলির শব্দে রাজাকাররা সজাগ হয়ে গেছে। ফিরে চলো সবাই।’ 

ফিরে যাচ্ছি আমরা। দিলু আমার পেছনে পেছনে হাঁটছিল। হঠাৎ সে আমাকে বললো, ‘ভাই চলেন, আমরা ব্রিজটা দেখে আসি।’

বললাম, ‘তোমাকে ভূতে পেয়েছে? এখন ওই ব্রিজের কাছে যাওয়া মানে নিজের জানটা ওদের হাতে স্বেচ্ছায় উপহার দেওয়া। কমান্ডার একথা শুনলে কি অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখেছ?’

‘কমান্ডার জানতে পারবে না। আমরা নিঃশব্দে যাব। আবার নিঃশব্দে ফিরে আসবো।’    

‘তোমার খুব সাহস বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে। তোমাকে যখন কমান্ডার ওদের কাছে পাঠাচ্ছিল তখনতো ভয়ে কাঁপছিলে। আর এখন?’

‘ঠিকই বলেছেন মিজান ভাই। আমার ভয় পালিয়ে গেছে। কমান্ডারকে ধন্যবাদ। তার কারণে আমার ভয় চিরতরে সরে গেছে। এখন থকে আমি নিয়মিত যুদ্ধে যাব। আমি এখন সত্যিকারের সাহসী যোদ্ধা।’

কথাটা মিথ্যে বলেনি দিলু। যুদ্ধ না করলে সাহস বাড়ে না। যুদ্ধ এমন এক ভয়ংকর জিনিস, দূর থেকে মনে হয়, না জানি কি? কিন্তু ময়দানে আগ্নেয়াস্ত্রের উত্তাপে কোথ্বেকে আগুনের আঁচ এসে শরীরে জড় হয় তা সহজে অনুমান করা কঠিন। বিন্দু মাত্র ভয়ের লক্ষণ থাকে না। কেবলি এগিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। সব কিছু চুরমার করে ফেলতে ইচ্ছে করে। এর কারণ কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা মুস্কিল। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা যার নেই সে এই ব্যাপারটা বুঝবে না।

দিলু গোমেজও আজই প্রথম অপরেশেনে এসেছে। এর আগে আমরা যতবার যুদ্ধে গেছি কোন না কোন অজুহাতে দিলু যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত থেকেছে। আজ পথম দিনই তাকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। সেই পরীক্ষায় সে সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাতেই তার ভেতরে যুদ্ধের উন্মাদনা লাফিয়ে বাড়ছে। যুদ্ধের ধর্ম তাই। একবার ভয় ভেঙ্গে গেলে কেবল যুদ্ধের জন্য ভেতরে তাগাদা দিতে থাকে। দিলুর হয়েছে তাই।

দিলু বলে, ‘কেন যে এতদিন যুদ্ধের কথা শুনে ভয় পেতাম আমি নিজেই বুঝতে পারছি না। আজ মনে হচ্ছে এতদিন খামখা ভয় পেয়েছি। মিজানভাই চলেন, আমি আর আপনি ছাগলা পাগলা ব্রিজের রাজাকারদের হত্যা করে আসি।’

‘সত্যি তোমার খুব সাহস বেড়ে গেছে দেখছি?’

‘হ্যা মিজান ভাই। এইভাবে নিজেদের নিজেদের যুদ্ধ না হলে আমার এতো সাহস বাড়তো না। আগের মতই ভিতু থাকতাম। এখন মনে হচ্ছে, সাহসের জন্য মাঝে মাঝে নিজেরা নিজেরা যুদ্ধ করা প্রয়োজন। কি বলেন?’

আমি দিলুর মুখের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি। বলার মতো কথা খুঁজে পাই না। 

 

Header Ad
Header Ad

কুল-বিএসপিএ স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ মিরাজ, দর্শক পছন্দে সেরা ঋতুপর্ণা

ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের কুল-বিএসপিএ স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত জমকালো অনুষ্ঠানে তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, দর্শক ভোটে সর্বাধিক পছন্দের ক্রীড়াবিদ হিসেবে ‘পপুলার চয়েজ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন নারী সাফ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জাতীয় নারী ফুটবল দলের মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা চাকমা।

এ বছর ‘স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জয়ের দৌড়ে মিরাজ পেছনে ফেলেছেন ঋতুপর্ণা এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করা আর্চার সাগর ইসলামকে। অপরদিকে, ‘পপুলার চয়েজ’ বিভাগে ঋতুপর্ণা এগিয়ে যান মিরাজ ও উদীয়মান পেসার নাহিদ রানাকে ছাড়িয়ে।

 

ছবি: সংগৃহীত

১৯৬৪ সাল থেকে ক্রীড়াবিদদের স্বীকৃতি জানিয়ে আসা দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) এবছর ১৫টি বিভাগে মোট ১৩ ব্যক্তি, দল ও সংস্থাকে সম্মাননা দেয়। সংগঠনের সভাপতি রেজওয়ান উজ জামান রাজিবের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী।

পুরস্কার গ্রহণ করে মিরাজ বলেন, “বিএসপিএকে ধন্যবাদ প্রতি বছর এমন আয়োজনের জন্য। এটা আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।” ভুটানে লিগ খেলায় ব্যস্ত থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারলেও ভিডিও বার্তায় ঋতুপর্ণা জানান, “এই সম্মান আমাকে আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা দেবে।”

Header Ad
Header Ad

রাজধানীর ওয়াসার পানিতে কিলবিল করছে পোকা, মগবাজার-মধুবাগে তীব্র ভোগান্তি

রাজধানীর ওয়াসার পানিতে কিলবিল করছে পোকা। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মগবাজার ও মধুবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানিতে পোকা ও ময়লার উপস্থিতি নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। ট্যাপের পানি দুর্গন্ধযুক্ত ও অস্বচ্ছ হওয়ায় তা রান্না, গোসল ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে গিয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাসার পানির ট্যাঙ্ক একাধিকবার পরিষ্কার করেও মিলছে না সমাধান। ওয়াসার সাপ্লাই পাইপ থেকেই এই সমস্যার উৎপত্তি বলে মনে করছেন তারা।

মধুবাগ এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “এই পানি দিয়ে রান্না ও গোসল সম্ভব না। আমাদের বাসার শিশুরা পানি খেতেই চায় না। বাধ্য হয়ে পাম্প থেকে পানি এনে ব্যবহার করতে হচ্ছে।” আরেকজন জানান, “ট্যাঙ্ক পরিস্কার করলে প্রথমে কিছুদিন ভালো থাকে, তারপর আবার পোকা দেখা দেয়।”

বিকল্প না থাকায়, অনেকেই ট্যাপের মুখে কাপড় বেঁধে পানি ব্যবহার করছেন। কিন্তু তারপরও পেটের অসুখ ও চর্মরোগের প্রকোপ বাড়ছে বলেও জানান স্থানীয়রা।

এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঢাকা ওয়াসার তিনজন কর্মকর্তা মধুবাগ এলাকায় পরিদর্শনে যান এবং কয়েকটি বাসা থেকে পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পোকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে দায় চাপান ট্যাঙ্ক ঠিকমতো পরিষ্কার না করাকে। ওয়াসার উপসহকারী প্রকৌশলী তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, “লাইনের পানি পরিষ্কার। ট্যাঙ্ক যদি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়, তাহলে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।”

তবে এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, নিয়মিত ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের পরও পানি দূষিত হচ্ছে, যা পাইপলাইনের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। এ অবস্থায় ওয়াসার কর্মকর্তারা পাইপের মান যাচাইয়ের আশ্বাস দিয়েছেন। এলাকাবাসী দ্রুত সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Header Ad
Header Ad

বিদেশি আইনের আওতায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে হবে বিদেশি আইনের মাধ্যমে এবং এ উদ্যোগ সম্পূর্ণ নতুন। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটি দেশের নয়, বরং বিদেশের আইনের সঙ্গে সংযোগ রেখে করতে হবে। এর জন্য আগে সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং এস্টেট (সম্পদ) ফ্রিজ করে আদালতের মাধ্যমে বাকি প্রক্রিয়া চালাতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “প্রথমে এস্টেটগুলো ফ্রিজ করার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে, চিঠি পাঠানো হচ্ছে। আইন পরামর্শক নিয়োগে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এস্টেট ট্রেসিং ফার্মের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এস্টেট ফ্রিজ করা গেলে এটিই হবে প্রথম সাফল্য।”

এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, “আমার ধারণা, প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। শুধু বেক্সিমকো গ্রুপেরই প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো অর্থ পাচার হয়েছে। এগুলো বড় গ্রুপের হিসাব, ছোট গ্রুপগুলো এখনো বিবেচনায় আনা হয়নি। ভবিষ্যতে যেন এমন না ঘটে, সে জন্য আমরা প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “সব সময় আদালতের মাধ্যমে সমাধান না করে, কিছু ক্ষেত্রে সমঝোতার ভিত্তিতেও (আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্ট) টাকা ফেরত আনার চিন্তা করছি। তবে সেটার আগে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকা জরুরি, না হলে আমরা ঠকে যাব।”

মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নে গভর্নর বলেন, “অতীতে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ৯-১০ শতাংশ দেখানো হলেও বাস্তবে তা ছিল ১৩-১৪ শতাংশ। তবে এখন সেটি ৮-৯ শতাংশে নেমেছে। সামগ্রিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি কমতির দিকেই। আগামী বছরে তা ৫ শতাংশ বা তার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।”

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন, ফাইন্যান্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পরিচালক মো. আনিসুর রহমানসহ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনায় ছিলেন উপপরিচালক মো. জোবাইর হোসেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

কুল-বিএসপিএ স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ মিরাজ, দর্শক পছন্দে সেরা ঋতুপর্ণা
রাজধানীর ওয়াসার পানিতে কিলবিল করছে পোকা, মগবাজার-মধুবাগে তীব্র ভোগান্তি
বিদেশি আইনের আওতায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ: গভর্নর
মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদল নয়, বরং ঐতিহ্যে ফেরত: ঢাবি উপাচার্য
তৃতীয় বিয়ের ইতি, রোশন সিংয়ের সঙ্গে আইনিভাবে বিচ্ছিন্ন শ্রাবন্তী
৬৪ জেলা নিয়ে তৃণমূল ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের ঘোষণা ক্রীড়া উপদেষ্টার
আগামীকাল শনিবার রাজধানীতে “মার্চ ফর গাজা”, পাঁচটি স্থান থেকে শোভাযাত্রা শুরু
অবশেষে নতুন চুক্তি সালাহর, লিভারপুলে থাকছেন ২০২৭ পর্যন্ত
পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় হাসিনার মুখাবয়ব
ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে মামলা করল ওপেনএআই
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মৃদু ভূমিকম্প
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে নাগরিক কমিটির নেত্রী দিলশাদ আফরিন আটক
বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কায় ডলারের বড় পতন, রেকর্ড ছুঁয়েছে স্বর্ণের দাম
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে ১৪৭ দেশ, বাড়ছে বিশ্বজনমত
মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে চীনের পাল্টা জবাব
নারায়ণগঞ্জে দুই নারী ও এক শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার
ফুটবল মাঠ পেরিয়ে হলিউডে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
পুলিশের চাকরি পেতে সমন্বয়কদের পেছনে দৌড়ানো বন্ধ করুন: সারজিস
ড. ইউনূসের ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার কোনও অধিকার নেই: সেলিমা রহমান
সিটি কর্পোরেশন হচ্ছে বগুড়া, গণশুনানির প্রস্তুতি শুরু