গল্প/ সেমসাইড
ব্রিজের নাম ‘ছাগলা পাগলা’। অদ্ভুত ধরণের নাম। স্থানীয়দের দেওয়া নাম। শুনলেই হাসি পায়। আমাদের একজন সহযোদ্ধা ছাগলাপাগলা নাম শুনে ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলে বাকিরাও হাসতে থাকে। ওর নাম দিলু গোমেজ। হাসতে হাসতে বলে, ‘ছাগলা পাগলা’ এ আবার কেমন ধরণের নাম? দিলু গোমেজ বলে, ‘এ নামের মানে কি?’
দিলু গোমেজ এমন প্রশ্ন করতেই জ্বরে আক্রান্ত কমান্ডার কেশে মুখে ফিরিয়ে দিলু গোমেজের দিকে তাকালেন। মুহূর্তে হাসি থেমে গেল দিলু গোমেজের। আমাদের এই দলে দিলু গোমেজ একমাত্র খ্রিষ্টান যোদ্ধা। ঢাকা মিরপুরের বাসিন্দা। নাদুস-নুদুস গোলগাল চেহারা। খ্রিষ্টান বলে সবাই ওকে আলাদা ভাবে স্নেহ করে। সবাই মজা করে যিশু বলে ডাকে। যিশুর মতো মিষ্টি ভাষি। নম্র স্বভাবের। কিছুটা ভিতু প্রকৃতির। এই ভিতু ছেলেটি কোন সাহসে যুদ্ধে এসেছে-মাঝে মাঝে আমি ভাবি। আমার সঙ্গেই ওর বেশি সখ্য। কিছু হলে ছুটে আমার কাছে আসে।
এবারও আমার কাছে এসে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি চেন ব্রিজটা?’
বললাম, ‘চিনি।’
‘ব্রিজের নাম ছাগলা পাগলা হলো কেন?’
রেল কোম্পানির করা এই ব্রিজের নাম কেন ছাগলা পাগলা হলো সে ইতিহাস আমিও জানি না। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি এই ব্রিজের নাম, ‘ছাগলা পাগলা’। সিরাজগঞ্জ থেকে ট্রেন ছেড়ে আসলে রায়পুর, কালিয়া হরিপুর তারপর জামতৈল। জামতৈল স্টেশনের মাইল খানেক দক্ষিণে রেলের এই মাঝারি সাইজের ব্রিজটি ব্রিটিশ রেল কোম্পানি তৈরি করেছে। ভীষণ মজবুত। এত বছরেও ব্রিজটির কিছু হয়নি। সেই ব্রিজ আমরা উড়িয়ে দেব। পাকিস্তানি মিলিটারি রেল পথে যাতে মুভ করতে না পারে তার জন্যে এই ধ্বংসযজ্ঞ।
অপারেশনের দায়িত্ব পড়লো ডেপুটি কমান্ডার মমিনের উপর। অপারেশনের পরিকল্পনা করে দিলেন কমান্ডার তৌহিদ ভাই। তাঁর জ্বরের বেগ বাড়ন্ত। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরও তিনি অপারেশনের ছক করে দিলেন শুয়ে শুয়ে শরীরে কাথাঁ মুড়ে।
শ’খানেক মুক্তিযোদ্ধার একটি দল নিয়ে মাঝরাতে আমরা রওনা হলাম। যিনি দিনের বেলা ব্রিজ রেকি করে এসেছেন, তিনি বলেছেন ২০ জনের মতো রাজাকারের একটি দল পালাক্রমে ব্রিজ পাহারা দেয়। শুরুতে আমরা ওই রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করিয়ে চারদিকে পাহারায় থাকবো। তারপর আমাদের ইঞ্জিনিয়ার গ্রুপ ব্রিজে বিস্ফোরক লাগিয়ে ফিউজে আগুন দিয়ে দৌড়ে আত্মরক্ষা করবে। তারপর আকাশ কাঁপিয়ে বিকট শব্দে উড়ে যাবে ‘ছাগলা পাগলা’। কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্রিজটি নাই হয়ে যাবে।
রাতের আকাশে একফালি চাঁদ। কৃষ্ণ পক্ষ চলছে। চাঁদের ম্লান আলোয় কালচে দেখাচ্ছে সব। আমরা হেঁটে যাচ্ছি আঁল পথ ধরে। চরা ফাঁকা। ফসল কাটা হয়েছে। যতদূর চোখ যায় আবছা আলোতে চারদিক ভূতুরে পরিবেশ। এমনিতে গা ছম-ছম করে। তারউপর অপারেশনের টেনশন। তবে কাধে অস্ত্র থাকলে টেনশন থাকে না। আপনা-আপনি শরীর গরম হয়ে যায়। কি যে মহিমা এই অস্ত্রের। নিরস্ত্র মানুষজন আমাদের কাধে অস্ত্র দেখলে ভয়ে সমীহ করে কথা বলে।
একদিন এক রাজাকারকে ধরে আনলো আমাদের কয়েকজন যোদ্ধা। তাকে জেরা করতে থাকেন কমান্ডার তৌহিদভাই। কিন্তু ব্যাটা রাজাকার ঠিকমতো কথার জবাব দিচ্ছিল না। কমান্ডার তার বুকে স্টেগান তাক করে ধরলে রাজাকার ব্যাটা ভয়ে সঙ্গে সঙ্গে কাপড় নষ্ট করে ফেলে। সে এক তামেশগিরি কান্ড। আমরা হাসতে হাসতে মরি। রাজাকার ব্যাটা ওই অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে। তাকে সরানো যাচ্ছিল না। একজন গ্রামবাসীকে ডেকে বলা হলো রাজাকারের হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে আসতে। গ্রামের লোকটি প্রথমে কাঁই-কুঁই করছিল। কিন্তু আমাদের ঘাড়ে আগ্নেয়াস্ত্র দেখে আর আপত্তি করেনি। নাকে গামছা পেঁচিয়ে কমাণ্ডারের কথা মতো রাজাকারের হাত-পা বেঁধে কাছেই হুরাসাগর নদীতে ফেলে দিয়ে আসে। আমাদের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পাহারায় ছিল। রাজাকার ব্যাটা সাতঁরিয়ে পাড়ে উঠে আবার পালিয়ে না যায়।
ব্রিজের কাছাকাছি যে গ্রামটি সেই গ্রামের নাম রসুলপুর। সেই গ্রামের পাশে ফাঁকা মাঠে আমরা শেষবারের মতো প্রস্তুত হই। লুঙ্গিতে কাছা দিয়ে কোমরে গামছা বেঁধে অস্ত্র ঠিকঠাক আছে কিনা পরীক্ষা করে তারপর আমরা আবার যাত্রা শুরু করি।
সামনে কমাণ্ডার মমিনভাই। পেছনে লাইন ধরে আঁল পথে আমরা হেঁটে যাচ্ছি। হঠাৎ আমাদের যাত্রা থেমে গেল। সামনের জন আমাদের বললো, ‘সামনে কি যেন দেখা যাচ্ছে। নড়াচড়া করছে। মানুষের সারি মনে হচ্ছে।’
আমি পেছনের জনকে এই বার্তা দিয়ে গভীর ভাবে তাকালাম। দূরে তাকিয়ে দেখি আঁল পথে সারি বেঁধে কারা যেন আসছে। সংখ্যায় তারা ত্রিশ/চল্লিশ জনের মতো হবে। তারা আমাদের গুলি রেঞ্জের মধ্যে এসে পড়েছে। আমরা পজিশন নিতে নিতে ফিসফাস কথা ওদের কানে গিয়ে থাকবে। প্রথম গুলিটা ওরাই শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাহিনী রাইফেল, এসএলআর, এলএমজি নিয়ে ওদের উপর ঝাপিয়ে পড়ি কমান্ডারের আদেশের অপেক্ষা না করেই। একদফা গোলা-গুলির পর কমান্ডার আমাদের থামতে বললেন। আমি পাশে তাকিয়ে দেখি দিলু গোমেজ কাত হয়ে পড়ে আছে। আমি ক্রোলিং করে ওর কাছে গিয়ে গায়ে হাত দিয়ে বললাম, ‘দিলু, কোন সমস্যা?’
দিলু বললো, ‘কিছু হয়নি। আমি ভাল আছি।’
‘তাহল এভাবে পড়ে আছ কেন?’
‘হয়রান হয়ে গেছি।’
‘তাও ভাল। আমিতো ভেবেছিলাম, তোমার আবার গুলি-টুলি লাগলো কিনা?’ আমি অবাক গলায় প্রশ্ন করলে দিলু বললো, ‘থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে যুদ্ধ করা ভীষণ কষ্ট।’
দিলু মিথ্যে বলেনি। ব্রিটিশ আমলের এই থ্রি নট থ্রি রাইফেল আধুনিক যুদ্ধে একেবারেই অচল। ভীষণ কঠিন এই অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করা। একটি গুলি বেরিয়ে গেলে আবার লোড করতে হয়। বার বার লোড করে যুদ্ধ করা ভীষণ কষ্টকর। যুদ্ধের জন্য রাইফেল বড্ড পুরনো, একদম সেকেলে। শরীরে যথেষ্ট শক্তি না থাকলে রাইফেল চালানো কঠিন। যুদ্ধের এই বিরতিতে কমান্ডার মমিনভাই হঠাৎ জয়বাংলা বলে চেঁচিয়ে উঠলেন। আমরাও সঙ্গে সঙ্গে জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে কমান্ডারকে সমর্থন করলাম।
যারা যুদ্ধ করেননি তারা ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন না। যুদ্ধের ময়দানে দুই পক্ষের কথা বিনিময় হয়। গালি বিনিময় হয়। সে সব গালি বড় অশ্রাব্য। কোন পক্ষের মুখে লাগাম থাকে না।
এইসময় একটি অবাক কান্ড ঘটলো। আমাদের চমকে দিয়ে আমাদের প্রতিপক্ষ তারাও জয়নাংলা ধ্বনি দিয়ে উঠলে আমরা পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে থাকি।
‘কি ব্যাপার, ওরা জয়বাংলা বলছে কেন? তবে কি ওরা আমাদের মতো মুক্তিযোদ্ধা?’ মমিনভাই ত্বড়িৎ কয়েকজন সেকশন কমান্ডারকে ডেকে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে থাকেন।
‘ওরা কি মুক্তিযোদ্ধা? নাকি আমাদের সঙ্গে চালাকি করছে?’ কমান্ডারের এমন প্রশ্নে সবাই ভাবতে লাগলো, আসল ঘটনা কি?
ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল্লাহ ভাই বললেন, ‘মনে হয় সেমসাইড হয়ে গেছে। ওরা ভেবেছে আমরা শত্রু। আমরা ভাবছি ওরা শত্রু।’
তখন গোলাগুলি বন্ধ। ওরা থেমে থেমে জয়বাংলা ধ্বনি দিচ্ছে। আমরাও পাল্টা জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে যাচ্ছি। এইসময় আমাদের একজন চেঁচিয়ে বললেন, ‘তোমরা কোত্থেকে এসেছ? তোমাদের কোম্পানির নাম কি? কমান্ডার কে?’ এই প্রশ্নের জবাবের জন্য আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। কিন্তু কোন জবাব আসে না। কিছুক্ষণ পর কমান্ডার মমিনভাই সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘আমাদের একজন যোদ্ধা ওদের পরীক্ষা করার জন্য জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে ওদের কাছে যাবে। সে যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফিরে না আসে তাহলে বুঝবো ওরা আমাদের ধোঁকা দিয়েছে। তারপর আমরা সাড়াষি আক্রমণ করবো। একজনকেও প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে দেব না।’
এখন সবাই আতঙ্কগ্রস্থ। কমান্ডার কাকে এই পরীক্ষায় পাঠান। দিলু আমার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। কমান্ডার ওকেই এই দায়িত্ব দিলেন। বললেন, ‘তুমি যাবে। গিয়ে যদি দেখ ওরা মুক্তিযোদ্ধা সঙ্গে সঙ্গে জয়বাংলা বলে ধ্বনি দিয়ে উঠবে। আমরা তখন এগিয়ে যাব। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোমার সাড়া না পেলে আমরা বুঝবো ওরা আমাদের সঙ্গে চালাকি করেছে। আমরা তখন পাল্টা জবাব দেব। যাও।’
কঠিন পরীক্ষা। মৃত্যু হাতে নিয়ে যেতে হবে। আমি খেয়াল করলাম, দিলু কাঁপছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। কমান্ডারের নির্দেশ। না মেনে উপায় নেই। আমি একবার বলতে চাইলাম, ‘আমি যাই মমিনভাই।’ কিন্তু কমান্ডার আমাকে সে সুযোগ না দিয়ে দিলুকে চাপা স্বরে ধমকে বললেন, ‘কি হলো, পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন? যাও।’
দিলু আমার হাত ধরে আছে। তারপর আমাকে সালাম করে রাইফেল রেখে শূন্য হাতে জয়বাংলা বলে ছুটে গেল ওইদিকে-যেদিক থেকে ওদের ধ্বনি শোনা যাচ্ছিল।
পাঁচ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো না। দু মিনিট পরেই দিলুর কন্ঠে জোরালো জয়বাংলা ধ্বনি। কমান্ডার মমিনভাই বললেন, ‘মনে হয় আমরা আসলেই সেমসাইডের ফেরে পড়েছি। তবে, পুরোপুরি ওদের উপর আস্থা রাখা ঠিক হবে না। অস্ত্র পজিশন নিয়ে এগুতে থাকো।’
মমিন ভাই আগে আগে, আমার তার পেছনে পেছনে অস্ত্র তাক করে এগুতে থাকি। ওদের আমরা ঘিরে ফেলি। তারপর মমিনভাই চিৎকার ওঠেন, ‘হ্যান্ডসআপ’। ওদের ছোট দলটির সবাই অস্ত্র ফেলে হাত উপরে তুলে ধরে।
মমিন ভাই জিজ্ঞেস করেন, ‘কমান্ডার কে?’
মোটা মতো একজন মুক্তিযোদ্ধা মাথা নামিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালেন।
‘কোথায় ট্রেনিং নিয়েছ তোমরা?’
ওই পক্ষের কমান্ডার নিচু স্বরে বলেন, ‘ভারতে।’
‘অসম্ভব। তোমরা যুদ্ধের কোন কিছুই শেখনি। কোন কিছু না বুঝে আমার বিরাট বাহিনীকে আক্রমণ করলে কোন সাহসে? আর কিছুক্ষণ যুদ্ধ করলে তোমরা তুলার মতো উড়ে যেতে। কোন যুক্তিতে তোমরা আগে ফায়ার করলে?’
‘একজন ভুলে ফায়ার করে ফেলেছে।’ ওই দলের কমান্ডার মিনমিন করে জবাব দিলেন।
মমিনভাই বললেন, ‘এই বুদ্ধি নিয়ে তোমরা যুদ্ধ করতে এসেছ? যুদ্ধ কি ছেলের হাতের মোয়া?’
কারো মুখে কোন কথা নেই। দিলু গোমেজ এই ফাঁকে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মমিনভাই জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের কেউ জখম হয়নিতো?’
ওদের কমান্ডার বললেন, ‘একজনের হাতে গুলি লেগেছে।’
মমিনভাই ঠোঁট কামড়িয়ে বললেন, ‘সেই কথা এতক্ষণে বলছো কেন? আগে ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করো। কই, কোথায় সে?’
আহত যোদ্ধাকে আমাদের সামনে আনা হলো। রক্তে তার কাপড় ভিজে গেছে। গুলিটা লেগেছে কনুইয়ের উপরে। গুলি লেগে চামড়া ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে।
কমান্ডার মমিনভাই টর্চ জ্বালিয়ে ভাল করে দেখলেন। তারপর তাকে কাধে নিতে বললেন। ওদের কমান্ডার নিজেই তাকে কাধে তুলে নিলেন। মমিনভাই বললেন, ‘অপরেশন উইথড্র করা হলো। কারণ গুলির শব্দে রাজাকাররা সজাগ হয়ে গেছে। ফিরে চলো সবাই।’
ফিরে যাচ্ছি আমরা। দিলু আমার পেছনে পেছনে হাঁটছিল। হঠাৎ সে আমাকে বললো, ‘ভাই চলেন, আমরা ব্রিজটা দেখে আসি।’
বললাম, ‘তোমাকে ভূতে পেয়েছে? এখন ওই ব্রিজের কাছে যাওয়া মানে নিজের জানটা ওদের হাতে স্বেচ্ছায় উপহার দেওয়া। কমান্ডার একথা শুনলে কি অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখেছ?’
‘কমান্ডার জানতে পারবে না। আমরা নিঃশব্দে যাব। আবার নিঃশব্দে ফিরে আসবো।’
‘তোমার খুব সাহস বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে। তোমাকে যখন কমান্ডার ওদের কাছে পাঠাচ্ছিল তখনতো ভয়ে কাঁপছিলে। আর এখন?’
‘ঠিকই বলেছেন মিজান ভাই। আমার ভয় পালিয়ে গেছে। কমান্ডারকে ধন্যবাদ। তার কারণে আমার ভয় চিরতরে সরে গেছে। এখন থকে আমি নিয়মিত যুদ্ধে যাব। আমি এখন সত্যিকারের সাহসী যোদ্ধা।’
কথাটা মিথ্যে বলেনি দিলু। যুদ্ধ না করলে সাহস বাড়ে না। যুদ্ধ এমন এক ভয়ংকর জিনিস, দূর থেকে মনে হয়, না জানি কি? কিন্তু ময়দানে আগ্নেয়াস্ত্রের উত্তাপে কোথ্বেকে আগুনের আঁচ এসে শরীরে জড় হয় তা সহজে অনুমান করা কঠিন। বিন্দু মাত্র ভয়ের লক্ষণ থাকে না। কেবলি এগিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। সব কিছু চুরমার করে ফেলতে ইচ্ছে করে। এর কারণ কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা মুস্কিল। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা যার নেই সে এই ব্যাপারটা বুঝবে না।
দিলু গোমেজও আজই প্রথম অপরেশেনে এসেছে। এর আগে আমরা যতবার যুদ্ধে গেছি কোন না কোন অজুহাতে দিলু যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত থেকেছে। আজ পথম দিনই তাকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। সেই পরীক্ষায় সে সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাতেই তার ভেতরে যুদ্ধের উন্মাদনা লাফিয়ে বাড়ছে। যুদ্ধের ধর্ম তাই। একবার ভয় ভেঙ্গে গেলে কেবল যুদ্ধের জন্য ভেতরে তাগাদা দিতে থাকে। দিলুর হয়েছে তাই।
দিলু বলে, ‘কেন যে এতদিন যুদ্ধের কথা শুনে ভয় পেতাম আমি নিজেই বুঝতে পারছি না। আজ মনে হচ্ছে এতদিন খামখা ভয় পেয়েছি। মিজানভাই চলেন, আমি আর আপনি ছাগলা পাগলা ব্রিজের রাজাকারদের হত্যা করে আসি।’
‘সত্যি তোমার খুব সাহস বেড়ে গেছে দেখছি?’
‘হ্যা মিজান ভাই। এইভাবে নিজেদের নিজেদের যুদ্ধ না হলে আমার এতো সাহস বাড়তো না। আগের মতই ভিতু থাকতাম। এখন মনে হচ্ছে, সাহসের জন্য মাঝে মাঝে নিজেরা নিজেরা যুদ্ধ করা প্রয়োজন। কি বলেন?’
আমি দিলুর মুখের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি। বলার মতো কথা খুঁজে পাই না।