শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান

এই ঘটনার কথা মনে করে জ্যাক বুঝতে পারল, সে তার বাবা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জেনেছে তার ওই শিক্ষকের কাছ থেকে। তবে তার খোঁজ খবর করা কঠিন এখন। অবশ্য তার মায়ের নীরবতা থেকে যা কিছু জানা হয়েছে তার বেশি কিছু আঁচ করা যাবে না শুধু ঘটনার বর্ণনা ছাড়া। বাবা সম্পর্কে জ্যাক ধারণা করতে পারে, তিনি ছিলেন একজন কঠিন মানুষ, তিক্ত অভিজ্ঞতার মানুষ, সারা জীবন কাজ করে গেছেন; হুকুমের গোলাম হয়ে হত্যা করেছেন; যেসব বিষয় এড়াতে পারেননি সেগুলোর কাছে হার মেনেছেন; তবে নিজের বলতেও ছিল কিছু বিষয়; সেখানে অন্য কারো প্রবেশ ঘটেনি। মোটের ওপর একজন হতভাগা মানুষ।

দারিদ্র কেউ চেয়ে নেয় না। তবে হতভাগা মানুষও নিজেকে রক্ষা করতে পারে। মায়ের কাছ থেকে যা কিছু শুনেছে তার থেকে ওই একই মানুষ সম্পর্কে জ্যাকের ধারণা হয়েছে: নয় বছর পরে বিবাহিত, দুই সন্তানের বাবা, জীবনে কিছুটা ভালো অবস্থান অর্জন করেছেন; তারপর তাকে আলজিয়ার্সে ডাকা হলো যুদ্ধে যোগদানের জন্য। অসুস্থ স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে দীর্ঘ ভ্রমণ, স্টেশনে বিদায় এবং তিন দিন পর বেলকোর্টের ছোট অ্যপার্টমেন্টে জুয়াভ রেজিমেন্টের সুদর্শন লাল-নীল ইউনিফর্ম, ঢিলা ট্রাউজার পরে এসেছিলেন; জুলাইয়ের কড়া তাপে মোটা পশমী কাপড়ের নিচে শরীরের ঘাম, হাতে একটা খড়ের হ্যাট। কারণ তার টারবুশের হ্যাট ছিল না, হেলমেটও ছিল না। জাহাজঘাটার ছাউনির নিচের ডিপো থেকে দৌড়ে ফিরে এসেছিলেন স্ত্রী আর সন্তানদের বিদায়ী চুমু দিতে। কারণ যে ফ্রান্সকে তিনি আগে কখনও দেখেননি সেই ফ্রান্সের উদ্দেশে সেই রাতেই রওনা হওয়ার কথা, সমুদ্রপথে যাওয়ার কথা যে সমুদ্রের বুকের ওপর দিয়ে তিনি আগে কোথাও যাননি। তিনি স্ত্রী এবং সন্তানদের গভীর আবেগে চুমু দিলেন এবং একই গতিতে আবার ফিরে চললেন।

তার স্ত্রী ছোট ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তার উদ্দেশে হাত নাড়ালেন। ধূলি আর তাপে দগ্ধ রাস্তায় নামার আগে দৌড়ের ওপরেই স্ত্রীর হাত নাড়ানোর উত্তরে তিনি তার হাতের হ্যাটটা উঁচু করে নাড়াতে লাগলেন। তারপর সিনেমার সামনে, তারপর আরো দূরে, শেষে সকালের ঝকঝকে আলোর ভেতর তিনি মিলিয়ে গেলেন যেখান থেকে আর কখনও ফিরবেন না। বাকিটা জ্যাককে কল্পনা করে নিতে হয়েছে; তবে মা যা বলেছেন শুধু সেটুকুর ওপরে ভরসা করে নয়। কারণ ইতিহাস এবং ভূগোল বলতে কী বুঝায় সে জ্ঞান মায়ের ছিল না। মা জানতেন, তার বসবাস সমুদ্রের কাছাকাছি স্থলভাগে; আরো জানতেন, ফ্রান্স দেশটা ওই সমুদ্রের ওপারে। তিনি সেখানে কখনও যাননি। ফ্রান্স একটা অজানা দেশ যেন রাতের অন্ধকারে ডুবে থাকা দূরের দেশ, সেখানে পৌঁছনো যায় মার্সেই নামক বন্দর দিয়ে; কল্পনায় তিনি দেখতে পেতেন ওই বন্দর আলজিয়ার্স বন্দরের মতোই; লোকমুখে তিনি শুনেছিলেন, সেখানে আছে প্যারিস নামে এক নয়নাভিরাম, সুদর্শনা নগরী। সেই নগরীর একটা জায়গার নাম আলসেস; সেখান থেকেই এসেছিল তার স্বামীর পরিবারের লোকেরা।

সে অনেক দিন আগের কথা। তারা জার্মান নামক শত্রু-তাড়িত হয়ে আলজিয়ার্সে বসতি স্থাপন করতে এসেছিল। তারপর এল সেই নগরীকে ওই হিংস্র শত্রুদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার সময়। ফ্রান্সের প্রতি শত্রুরা ছিল আসলেই নিষ্ঠুর। এর চেয়ে বড় আর কোনো কারণ ছিল না। ফ্যাসাদপ্রিয় এবং অপ্রশম্য শত্রুদের কবল থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য ফ্রান্সকে সব সময়ই বাধ্য হয়ে লড়ে যেতে হয়েছে। এভাবেই তার জানাশোনার মধ্যে ছিল স্পেনও। তবে স্পেনের অবস্থান সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। মনে হতো খুব দূরে নয়; সেখান থেকেই তার নিজের পরিবারের লোকেরা, মাহুন জাতির লোকেরাও এসেছিল। সে-ও অনেক দিন আগের কথা। তার স্বামীর পরিবারের লোকেরা যে সময়ে আলজেরিয়ায় এসেছিল তার নিজের পরিবারের লোকেরাও সেই একই সময়ে এসেছিল। তার পরিবারের লোকেরা এখানে এসেছিল ক্ষুধার জ্বালায় মরণাপন্ন অবস্থায়; তার পূর্বপুরুষদের বসতি ছিল একটা দ্বীপে-সে কথা তিনি জানতেন না; অবশ্য দ্বীপ কী রকম সে বিষয়েও তার কোনো ধারণা ছিল না।  

অন্য দেশ সম্পর্কে তার ধারণার কথা বলতে গেলে কিছু কিছু দেশের নাম শুনে তার ভালো লাগত। অবশ্য ওই সব দেশের নাম ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারতেন না। কোনো প্রসঙ্গেই তিনি অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি সম্পর্কে কিংবা সার্বিয়া, রাশিয়া এমনকি ইংল্যান্ড সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। আর্চডিউক কী রকম পদবী, সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। তিনি কখনও সারায়েভো নামের চার সিলেবল এক সঙ্গে উচ্চারণ করতেও পারেননি। যুদ্ধ সেখানেই, অন্ধকার আতঙ্কবাহী ভারী মেঘের মতো। কিন্তু ওই মেঘের আকাশ আক্রমণ কিছুতেই টিকিয়ে রাখার মতো নয়।

পতঙ্গের আক্রমণ ঠেকানো যায়, কিংবা আলজিয়ার্সের সমতলভূমি আক্রমণকারী সর্বগ্রাসী ঝড়কেও ঠেকানো যায়। কিন্তু যুদ্ধের মেঘ ঠেকানো যায় না। জার্মানরা আবারো ফ্রান্সকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। আর আমাদের ভোগান্তির শুরু হলো বলে। এর পেছনে কোনো কারণই ছিল না। তিনি ফ্রান্সের ইতিহাস জানতেন না; আদৌ ইতিহাস বিষয়টাই ছিল তার জানার বাইরে। তার নিজের ইতিহাস সম্পর্কে সামান্য জানতেন। তার ভালোবাসার মানুষদের ইতিহাস প্রায় জানতেন না বললেই চলে। আর জানতেন যাদের তিনি ভালোবাসেন তারাও তার মতোই ভোগান্তির শিকার হতে যাচ্ছে। তিনি ইতিহাস জানতেন না এবং রাতের মতো পৃথিবীর চলমান ঘটনাবলীর ভেতর তিনি কল্পনা করতেও পারেননি, আরো অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত এসে গেছে। রহস্যময় বিশৃঙ্খলা এসে হাজির হয়েছে এক ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত কনস্টেবলের হাত ধরে। যে খামারের আঙুর তারা তুলতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন সেই খামার ছেড়ে তাদের চলে যেতে হবে।

বন স্টেশনে মহল্লার পাদ্রীর সঙ্গে দেখা। পাদ্রী স্টেশনে এসেছিলেন সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে যোগদানের জন্য যাদের বাছাই করা হয়েছে তাদের বিদায় জানাতে। তিনি বলেছিলেন, আমাদের সবাইকে প্রার্থনা করতে হবে। তার কথার উত্তরে মা বলেছিলেন, হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন মসিঁয়ে। তবে আসলে তিনি পাদ্রীর কথা ঠিকমতো শুনতে পাননি; পাদ্রী মহাশয় খুব আস্তে কথা বলেছিলেন। তাছাড়া প্রর্থনার কথাটা তার মাথায়ই আসেনি কখনও। তিনি কারো ব্যাপারে নাক গলাতেন না। আর এখন তো তার স্বামী বহুবর্ণিল ইউনিফর্মে যুদ্ধে গেছেন; ফিরে আসবেন খুব শিঘ্রই, সেরকমই তো সবাই বলছে। জার্মানদের শাস্তি হওয়া উচিত। তবে ততদিনে তার কাজ খুঁজে নিতে হবে। এক প্রতিবেশী নানিকে বলেছিলেন অস্ত্রাগারের কারতুজ ফ্যাক্টরিতে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হবে, যাদের স্বামীরা যুদ্ধে গেছেন এবং পরিবারের দায়িত্ব ঘাড়ে আছে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তিনি ভেবেছিলেন, পুরুত্ব আর রং অনুসারে কার্ডবোর্ডের নল তৈরি করার কাজে দিনে দশ ঘণ্টা পরিশ্রম করে সৌভাগ্যের মুখ দেখবেন। জার্মানদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত এবং হেনরি ফিরে না আসা পর্যন্ত ছেলেমেয়েরা প্রয়োজন মাফিক খেয়ে পরে বাঁচতে পারবে। অবশ্য তিনি রাশিয়ান রণাঙ্গন সম্পর্কে কিছু জানতেন না। রণাঙ্গন বিষয়ে তার জ্ঞানও তেমন ছিল না।

আরো জানতেন না, যুদ্ধ বলকান পর্যন্ত, মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত, এমনকি গোটা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফ্রান্সে সবকিছুই ঘটে যাচ্ছে: কোনো রকম ইঙ্গিত ছাড়াই জার্মানরা প্রবেশ করছে ফ্রান্সে; এমনকি শিশুদেরও হত্যা করছে তারা। ওখানে সবকিছুই ঘটছে আফ্রিকা থেকে আগত সৈনিকদের জীবনেও। তাদের মধ্যে এইচ করমারিকেও যত দ্রুত সম্ভব পাঠানো হয়েছিল মার্নের মতো এক রহস্যময় এলাকায়। লোকজন সেরকমই বলাবলি করত। তাদের জন্য তখন আর হেলমেট যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। ওখানকার সূর্য অবশ্য আলজেরিয়ার সূর্যের মতো প্রখর ছিল না যে খুব দ্রুত তাদের রং মুছে দিবে। আরব এবং ফরাসি আলজেরিয়ানরা সুবেশ উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরিহিত, মাথায় তৃণের টুপি, লাল-নীল পোশাকে সবাই যেন বিরাট পশুপালের সদস্য, এগিয়ে চলেছে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। দলের মধ্যেই তাদের হত্যা করা হচ্ছে সেখানকার স্বল্প পরিসর এলাকাটা যেন উর্বর করার জন্য।

সেখানে পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে মানুষ আসতে থাকে প্রায় চার বছর ধরে। আগুনবর্ষী সূর্যের নিচে তারা প্রতি ইঞ্চি মাটির জন্য লড়াই করে যাচ্ছে কাদা মাটির মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে। চার পাশে গোলার আর্তনাদ আর  কামানের অগ্নিব্যুহ ব্যর্থ আগ্রাসনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাইরের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মাটি খুঁড়ে কোনোরকম আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যায়নি। শুধু আফ্রিকার সৈন্যরা আগুনের নিচে বহুবর্ণিল মোমের পুতুলের মতো গলে শেষ হয়ে গেছে। আর প্রতিদিন আলজেরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় শিশুরা নতুন করে  এতিম হয়েছে। পিতৃহীন পুত্র কন্যারা এখন থেকে পিতার দিক নিদের্শনা ছাড়াই জীবনে বেঁচে থাকার শিক্ষালাভ করবে; থাকবে না উত্তরাধিকারের কোনো কিছুই।

কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে গেল। তাদের একমাত্র ওপরের তলার ভেতরের ল্যান্ডিংয়ে, সিঁড়ি আর অন্ধকার টয়লেটের মাঝখানে। সুরকির ভেতর তুর্কী কেতায় কালো ছিদ্র করে রাখায় অবিরত ক্রেসিল দিয়ে পরিষ্কার করা হলো তবু সেখান থেকে দুর্গন্ধ আসত- সেখানে কয়েক সপ্তাহ পরের এক রবিবারের সকালে লুসি করমারি আর তার মা একটা নিচু চেয়ারে বসে সিঁড়ির ওপরের জানালা দিয়ে আসা আলোয় মসুরের ডাল বাছছেন আর শিশুটা ছোট একটা লন্ড্রীর ঝুড়িতে শুয়ে নিজের মুখের লালায় ভিজানো একটা গাজর মুখে দিয়ে চুষছে। তখন গম্ভীর চেহরার এবং পরিপাটি পোশাক পরিহিত এক ভদ্রলোক সিঁড়ির মাথায় উঠে এলেন; হাতে খাম জাতীয় কিছু একটা। লুসি এবং তার মা নিজেদের মাঝখানে একটা পাত্র রেখে সেখান থেকে মসুরের ডাল বাছার কাজ করছিলেন। বিস্মিত হয়ে হাত মুছতে মুছতে তারা উঠে দাঁড়ালেন। তখনই ভদ্রলোক সিঁড়ির শেষ ধাপ ওঠা বাদ থাকতে তাদেরকে ব্যস্ত না হতে বললেন এবং মিসেস করমারির খোঁজ জানতে চাইলেন।

জ্যাকের নানি বললেন, এই তো মিসেস করমারি। আর আমি ওর মা। ভদ্রলোক বললেন, তিনি মেয়র এবং তিনি একটা দুঃখজনক খবর নিয়ে এসেছেন: তার স্বামী মহিমান্বিত ময়দানে মৃত্যুবরণ করেছেন। ফ্রান্স শোকে আচ্ছন্ন এবং একই সময়ে তার জন্য গর্বও বোধ করে। লুসি করমারি তার কথা ভালো করে বুঝতে পারেননি। উঠে দাঁড়িয়ে তিনি ভক্তিসহকারে তার হাত বাড়িয়ে দিলেন ভদ্রলোকের দিকে। নানি মুখের কাছে নিজের শক্ত হাতখানা নিয়ে স্পেনীয় ভাষায় কয়েকবার বলে উঠলেন, হায় আল্লাহ। ভদ্রলোক লুসির হাতখানা নিজের দুহাতের মধ্যে নিয়ে মৃদু চাপ দিলেন এবং খামটি এগিয়ে দিয়ে সান্ত¦নার কথা আওড়ালেন এবং সঙ্গে সঙ্গে পেছনের দিকে ঘুরে সিঁড়ি বেয়ে গম্ভীর চালে নামতে লাগলেন।


     লুসি তার মাকে জিজ্ঞেস করলেন, কী বললেন উনি?
     হেনরি আর নেই। সে নিহত হয়েছে।

 


চলবে...

 

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

Header Ad
Header Ad

নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা

ছবি: সংগৃহীত

রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মুখোমুখি লড়াই মানেই ফুটবল দুনিয়ায় বাড়তি উত্তেজনা। স্প্যানিশ ফুটবলের এই দুই মহারথীর লড়াই কেবল মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এতে মিশে আছে স্পেন ও কাতালুনিয়ার জাতিসত্ত্বার লড়াই এবং রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের ইতিহাসও।

এবারের কোপা দেল রে ফাইনালে (শনিবার দিবাগত রাত ২টা, বাংলাদেশ সময়) আবার মুখোমুখি হচ্ছে রিয়াল ও বার্সা। তবে এবারের লড়াইয়ে যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। রেফারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। সেভিয়ায় ফাইনালের আগে নির্ধারিত অনুশীলন করেনি রিয়াল, সংবাদ সম্মেলনেও আসেননি কোচ ও খেলোয়াড়রা। এমনকি দুই ক্লাবের কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজেও থাকছেন না রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। গুঞ্জন উঠেছিল, রিয়াল হয়তো ফাইনাল বয়কটও করতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা খেলবে।

এদিকে, বার্সেলোনার সামনে রয়েছে ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ। লা লিগায় শীর্ষে থাকা বার্সা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছে। কোপা দেল রে শিরোপা তাদের ট্রেবল যাত্রার প্রথম ধাপ হতে পারে।

 

ছবি: সংগৃহীত

বার্সার জন্য দুঃসংবাদ, ইনজুরির কারণে দলের নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি এই ফাইনালে খেলতে পারবেন না। তার জায়গায় শুরুতে দেখা যেতে পারে ফেরান তোরেসকে। তবে দলের বাকিরা সুস্থ ও প্রস্তুত রয়েছেন। লিগের শেষ ম্যাচে অধিকাংশ মূল খেলোয়াড় বিশ্রামে থাকায় বার্সেলোনা কিছুটা সতেজ ভাবেই নামবে মাঠে।

রিয়াল মাদ্রিদেও রয়েছে ইনজুরি সমস্যা। দলের ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপে চোটে পড়েছিলেন আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচে। শেষ মুহূর্তে তার ফিটনেস দেখে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ডিফেন্ডার ফার্লান্দ মেন্ডি ফাইনালে থাকছেন না, এটা নিশ্চিত।

এখন পর্যন্ত সামগ্রিক এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদ এগিয়ে—১০৫ জয়। বার্সেলোনা জয় পেয়েছে ১০২ ম্যাচে। তবে কোপা দেল রে’র ইতিহাসে এগিয়ে আছে বার্সা। ৩৭ দেখায় বার্সা জিতেছে ১৬ ম্যাচ, রিয়াল ১৩টি। ৮ ম্যাচ ছিল ড্র।

তবে কোপা দেল রে’র ফাইনালে ৭ বার এল ক্লাসিকো অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে রিয়াল জিতেছে ৪ বার এবং বার্সা ৩ বার।

চলতি মৌসুমে দুই দলের দুই দেখায় দুটিতেই বার্সেলোনা জয়ী হয়েছে—লা লিগায় ৪-০ এবং সুপারকোপা দে এস্পানার ফাইনালে ৫-২ ব্যবধানে।

 

স্টেডিয়াম: দে লা কার্তুহা, সেভিল
সময়: বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত ২টা

 

Header Ad
Header Ad

মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার মুরাদনগরে নাঈম সরকার (১৯) নামের এক যুবককে মাদকাসক্তির কারণে ত্যাজ্য ঘোষণা করেছেন তার বাবা মফিজুল ইসলাম। ছেলের মাদকাসক্তি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।

মফিজুল ইসলাম উপজেলার কোম্পানীগঞ্জের নগরপাড় এলাকার বাসিন্দা। তিনি বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) কুমিল্লা নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে এক হলফনামার মাধ্যমে ছেলে নাঈমের সঙ্গে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিক সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

হলফনামায় মফিজুল উল্লেখ করেন, নাঈম একাদশ শ্রেণির ছাত্র হলেও দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। সে মদ, গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশাজাত দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এতে পরিবারে প্রতিনিয়ত অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছিল। গভীর রাতে বাড়ি ফেরা, মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা এবং নানা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছিল নাঈম। পরিবারের মান-মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মফিজুল ইসলাম বলেন, "সন্তানের এমন বিপথগামী আচরণে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। বহু চেষ্টা করেও তাকে সঠিক পথে ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছি। অবশেষে পরিবার ও সমাজের সম্মান রক্ষার্থে তার সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছি।"

Header Ad
Header Ad

গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে ক্রমাগত গরম বাড়ছে। সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং ও ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে সাধারণ মানুষ। তবে এ নিয়ে আশার খবর দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

তিনি বলেন, "এবারের গরমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। আমরা সীমিত পর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের প্রজেকশনে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। আশা করছি, অনেকটাই ম্যানেজ করতে পারবো।"

শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টারস বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত 'জ্বালানি সংকট উত্তরণের পথ' শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারে উপদেষ্টা আরও জানান, লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করা হবে। জ্বালানি আমদানি করে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে হবে। এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সরকারের মেয়াদ স্বল্প হওয়ায় কাজের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, "জ্বালানির ক্ষেত্রে যেকোনো কাজ সম্পন্ন করতে সময় লাগে। আমরা এমন কিছু হাতে নিচ্ছি না, যা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বকেয়া পরিশোধে। বিল পরিশোধ না করলে কোনো দেশ ব্যবসা করবে না।"

তিনি আরও জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে সিস্টেম লস ৫০ শতাংশ কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লাইন লিকেজ ও গ্যাস চুরির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও কমিয়ে আনা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আগামী বছর আর কোনো বকেয়া থাকবে না, শুধুমাত্র কারেন্ট পেমেন্ট দিতে হবে। ভর্তুকি বাড়বে না, বরং কমবে। আমরা যে সংকটের গহ্বরে পড়েছিলাম, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি।"

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, বিট নিলামে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন শেষে পুনরায় রি-টেন্ডার করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা
গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত: সৌরভ গাঙ্গুলি
র‍্যাফেল ড্রতে ৯ কোটি টাকা জিতলেন দুই প্রবাসী বাংলাদেশি
৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম ও পিপিএম পদক
সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে: বিলাওয়াল ভুট্টো
অন্য নারীতে মজেছেন সৃজিত! মিথিলা কোথায়?
৪ মাসে কুরআনের হাফেজ হলেন ১০ বছরের অটিস্টিক শিশু আহমাদ
রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন বেহাত না হয়: আলী রীয়াজ
১৪ ব্যাংকে ২৩৮ কোটি টাকা স্থানান্তর, যা বললেন বিসিবি সভাপতি
কাশ্মীর সীমান্তে ফের গোলাগুলি, মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান সেনা
বাইরে থেকে ফিরেই ঠান্ডা গোসল? সাবধান! এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে বিপদ
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান-ভারত পাল্টাপাল্টি উত্তেজনা নিয়ে যা বললেন ট্রাম্প
রাঙামাটিতে সিএনজি-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫
রেফারির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে রিয়াল, ফাইনাল ম্যাচ বয়কটের হুমকি
আইন উপদেষ্টাকে জড়িয়ে ভারতের গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রতিবেদন, মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি
নিজ দেশেই বিমান হামলা চালালো ভারত, ‘অসাবধানতা’ বলছে বিমান বাহিনী
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আরও ৮৪ ফিলিস্তিনি
আইনি নোটিশ প্রসঙ্গে যা বললেন ডা. তাসনিম জারা