ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা লক্ষণে বুঝে নিন
শরীর অসুখ আমরা সহজেই বুঝে যাই কিন্তু মনের অসুখ বোঝা অতটাও সহজ নয়। 'ডিপ্রেশন' একটা মনের আসুখ। ডিপ্রেশন শব্দটির সাথে বর্তমান যুগে পরিচয় থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। বিষন্নতা বা ডিপ্রেশনে যার ভোগেন তারা সাধারণত সব সময় মন খারপ করে রাখেন। ছোটখাটো মন খারাপকেও অনেকে 'ডিপ্রেশন' ভাবেন। ডিপ্রেশন মানে কি শুধুই মন খারাপ? নাকি তার চেয়েও অনেক বড় কিছু বোঝায় এই শব্দটি দ্বারা? মানুষের মন একটি জটিল স্তরে গিয়ে এই ডিপ্রেশনের শিকার হয়। কেউ ডিপ্রেশনে ভুগছেন কিনা তা জানার রয়েছে কিছু লক্ষণ। দেখে নেওয়া যাক লক্ষণগুলো-
* অনুভূতি লুকিয়ে রাখা: প্রিয়জনদের সাথে, এমনকি কখনো কখনো নিজেদের সাথেও তারা সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চান না, সেগুলো লুকিয়েই রাখেন। সমস্যা নিয়ে কথা বলতে তাদের ভালো লাগে না। কিন্তু তাতে কি সমস্যা চলে যায়? চেপে রাখার কারণে তা আরও বাড়ে। কিন্তু সমস্যা নিয়ে ভাবাটাও তারা ভয় পান।
* ভালো বা খারাপ-কোনোটাই না থাকা: সাদা-কালোর মাঝখানে এক ধূসর এলাকায় আটকা পড়ে থাকে তাদের মন। তারা কখনো সত্যি করে বলেন না যে, তারা ভালো আছে না খারাপ। হয়তো নিজেরাই খুঁজে পান না সেই ভালো থাকা না থাকার উত্তরটি। কেউ যখন জিজ্ঞেস করে, কেমন আছেন? তখন সেই প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে যেন ভাবনায় পড়ে যান অথবা প্রতিদিন একটি মেকি প্রত্যুত্তর থাকে, 'ভালো আছি বা 'আমি তো সবসময় ভালোই থাকি'।
*ইচ্ছে করেই প্রচন্ড ব্যস্ততা বেছে নেওয়া: তারা বেছে নেন নিজেদের প্রচন্ড ব্যস্ত রাখার পথটি, যাতে নিজের জন্য নিজেরই সময় না মেলে, অনুভূতিগুলো যাতে আরও চাপা পড়ে যায়। পড়াশোনা, চাকরি, অতিরিক্ত কাজের চাপ সব মিলিয়ে তারা ধীরে ধীরে নিজেদের ডুবিয়ে দেন একধরনের স্বেচ্ছাক্লান্তিতে।
*অল্পতেই রেগে যাওয়া: কেউ ভালো কথা বললেও আর ভালো লাগে না। একটু পরপর রাগ হয়। সুখ-দুঃখের অনুভূতিকে চাপা দিয়ে তাদের সকল আবেগের বিকল্প হিসেবে তখন দেখা দেয় রাগ। অল্পতেই বা অকারণেই রেগে যান আশেপাশের সবার ওপর। দূরত্ব সৃষ্টি হয় তাদের সাথে। তাৎক্ষণিক রাগের বহিঃপ্রকাশটা বেশ প্রবল হয়। কাউকে আঘাত করা বা জিনিসপত্র ভাংচুর পর্যন্তও গড়ায়। আগে যদি এই স্বভাব না থেকেও থাকে, ডিপ্রেশনের সময় এমনটা হতে পারে।
*অহেতুক ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করা: ডিপ্রেশনে আক্রান্তদের, বিশেষত পুরুষদের মধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। খুব জোরে গাড়ি চালানো, পথ চলতে অন্যমনস্কতা, অতিরিক্ত ধূমপান কিংবা মদ্যপান, জুয়া খেলা, নিজেকে বা অন্যকে আঘাত করা ইত্যাদি ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ দেখা দেয়। দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই তারা এড়িয়ে যান, সামাজিক সম্পর্কে অবনতি দেখা দেয়, নিঃসঙ্গতা পেয়ে বসে।
*চিন্তা-ভাবনায় অস্পষ্টতা: সব সমস্যাকে চেপে রাখার ফলে মস্তিষ্কের অবস্থা এমন হয় যে, ভালো করে কিছু চিন্তা করতেই পারে না। কোনো একটি বিষয়ে ফোকাস করে তা নিয়ে ভাবা এবং পর্যায়ক্রমে সমাধান করাও হয়ে ওঠে দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার। ভাবনায় খেই হারিয়ে ফেলা, অবিন্যস্ত কথোপকথন, কথায় যুক্তি কিংবা আবেগ দুটোরই প্রবল অভাব, কথা বলা কমে যাওয়া, কথা খুঁজে না পাওয়া ইত্যাদি ডিপ্রেশনের লক্ষণ।
*নিজের পছন্দের কাজগুলো আর না করা: সৃজনশীল কোনো কাজ, যেমন ছবি আঁকা, ছবি তোলা, গান গাওয়া, লেখালেখি, নাচ করা ইত্যাদি সব ধীরে ধীরে কমিয়ে দেওয়া।একসময় একেবারে বাদ দেওয়া ডিপ্রেশনের একটি মারাত্মক লক্ষণ। যে কাজগুলো আত্মতৃপ্তির জন্য এক সময় করতেন, ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষগুলো সেই কাজগুলো করাই একসময় থামিয়ে দেন।
*অন্তর্মুখী ও এককেন্দ্রিক হয়ে পড়া: ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষটির জীবনে ধীরে ধীরে অন্যের জায়গা কমে যেতে শুরু করে এবং সবটুকু জুড়ে শুধু সেই থাকে। অন্যের ভালোলাগা, মন্দলাগা বা কোনো অনুভূতি তার কাছে তেমন কোনো দাম পায় না। একসময় নিজেও ব্যাপারটা বুঝতে পারেন এবং এজন্য নিজেকে দোষী ভাবেন। কিন্তু তারপরও নিজস্ব সেই গন্ডি থেকে বের হতে পারেন না। পরিবার, বন্ধু-বান্ধবসহ সব ধরনের ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কে অবহেলা, কারো মতামতকে প্রাধান্য না দেওয়া, নার্সিসাস কমপ্লেক্সের সূত্রপাত ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। এর ফলে সকলেই ব্যক্তিটির কাছ থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করে এবং সে পুরোপুরি একা হয়ে পড়ে।
কেএফ/