ফিরে আসার ওয়াদা
২৬ সে মার্চের মধ্য রাত তখন। হঠাৎ জাফর সাহেবের টেলিফোন বেজে উঠে। এত রাতে ফোন আসায় কিছুটা অবাক হন জাফর সাহেব। সুয়া থেকে উঠে ফোন কানে ধরতেই উপর প্রান্ত থেকে ক্লান্তমাখা কণ্ঠে সালাম দেয় জাফর সাহেবের ছোট ভাই ইকবাল। সালাম শেষে ইকাবাল জানায় " ভাই আমাদের এখানকার অবস্থা তেমন ভালো নেই। পাকিস্থানী হানাদাররা হামলা দিয়েছে এখানে। কিছুক্ষণ আগে আমাদের হোস্টেলেও আক্রমন করেছে। এখন আমরা পলাতক আছি। দোয়া কইরেন আমার জন্য।" এ বলেই ফোন রাখেন ইকবাল। ছোট ভাইয়ের এমন কথা শুনে দু্শ্চিন্তায় পরে যায় জাফর সাহেব। কী করবে এখন! কিছুই বুঝতে পারছেন না তিনি।
পরের দিন সকালে ফোন দেয় সহকর্মী জসিম মিয়া। সে ও একই রকম খবর জানায়। সাথে গ্রামেও হানা দেওয়ার সম্বাবনা আছে বলে সতর্ক করে দেয় জাফর সাহেবকে। এই খবর শুনার পর জাফর সাহেবের দুশ্চিন্তার মাত্রা ভেড়ে যায় দিগুণ। গ্রামের লোকেরা একে একে সকলেই নিজে পরিবার ছেড়ে নেমে পরে মরণময় যুদ্ধে। জাফর সাহেবেও ইচ্ছে করে তাদের সাথে যুদ্ধে যেতে। কিন্তু ঘরে যে সদ্য বিয়ে করা নতুন বউ। তাকে একা ফেলে যাবে কিভাবে। পাকিস্থানী হানাদাররা যখন জাফর সাহেবের নিজ এলাকায় হানা দিলো তখন আর বসে থাকতে পারলেন না তিনি। নববধূর কাছে দেশকে স্বাধীন করে আবার পুরনায় ঘরে ফিরে আসার ওয়াদা করে যুদ্ধে বের হন জাফর সাহেবও। নববধূর মন না চাইলেও বিদায় দিতে হলো স্বামিকে।
এরপর প্রতিদিনই নববধূর দুটি চোখ শত আক্ষেপ নিয়ে চেয়ে থাকতো পথপানে। কবে আসবে তার স্বামি! এক রাতে পাকিস্থানীরা আগুন লাগিয়ে দেয় জাফর সাহেবর বাড়িতে। জাফর সাহেবের স্ত্রী আশ্রয় নেয় তার বাবার বাড়িতে। দেশে যুদ্ধ চলতে থাকে আপন গতিতে। কখন এখানে গুলির আওয়াজ আবার কখনো ওখানে। হানাদাররা ঘরের পর ঘর জালিয়ে দিচ্ছে নির্মমতার আগুনে। জাফর সাহেব যুদ্ধে গিয়েছে আজ চার মাস হলো। এর মাঝে একদিন মধ্যরাতে এসে দেখা করে যায় নববধূর সাথে। তখন জাফর সাহেবের সাথে ছিল আরো বহু যুদ্ধা তাই বধূকে বেশিক্ষণ সময় দিতে পারেননি তিনি। দুইএক কথা বলেই চলে যায় যুদ্ধ করতে।
প্রায় নয় মাস যুদ্ধ করার পর নিরস্ত্র বাঙ্গালীরা অর্জন করে স্বাধীনতা। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে কিনে আনে একটি স্বাধীন দেশ। বাংলাদেশ। দেশ স্বাধীন হবার পর গ্রামের লোকেরা যারা মরণময় যুদ্ধ করেও জীবিত আছে তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসতে শুরু করে। এদিকে নববধূর অপেক্ষার তর সয় না কিছুতেই। কখন আসবেন তিনি। দুটো চোখ তাকে দেখার জন্য ছটফট করে সারাক্ষণ। কিন্তু তিনি তো আসেন না। এভাবেই কেটে যায় আরো চারটি মাস তবুও আসেন না তিনি। এরপর জাফর সাহেবের সহকর্মী জসিম মিয়া এক চিঠির মাধ্যমে নববধূকে জানায় জাফর মিয়া পাকিস্থানীদের হাতে মারা গিয়েছে। এই খবর শুনার পর বিশ্বাস হয়নি নববধূর। ''তিনি তো আমাকে ফিরে আসার ওয়াদা করে গিয়েছিলেন। তিনি কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করেন না"। তাই নববধূ অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে স্বামি ফিরে আসবে বলে। কিন্তু মাসের মসের পর মাস যায় তিনি আর আসেন না ফিরে।
শিক্ষার্থী: জামিয়াতু ইবরাহিম, সাইনবোর্ড, ডেমার, ঢাকা
ডিএসএস/