৭১ এ চারান বিল
১৯৭১ এর এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে একদিন আমি মাটির চুলা লেপছিলাম, হঠাৎ প্রতিবেশি ঠান্ডার মা এসে বলল সুফিয়ার মা জলদি পালান বিলে বেহারী আইছে। একথা শুনে আমি আঁচলে হাত মুছে মেয়েকে নিয়ে পাশে বাঁশ ঝারে গিয়ে লুকালাম। একটু পরেই স্পীড বোট এসে ভিরলো আমার বাড়ির ঘাটে, পাক সেনার বুটের আওয়াজ শুনে থরথর করে কাঁপতে লাগলাম সাথে আমার যুবতী মেয়ে সুফিয়া। ভয় তো মরনর না ইজ্জতএর।
কুত্তারা আমার পোষা খাসিটা লইয়া গেলো আমি দূর থেকে দেখলাম আর কইলাম আল্লাহ আমার মেয়ের জানের ছাদকা দিলাম । সবে মাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে গন্ডগোল এর জন্য তুলে দিতে পারি নাই । হঠাৎ দেখি মেয়ের জামাই এসে হাজির। বলে আম্মা আমি সুফিয়া কে আজ নিয়ে যাবো, বলে ওকে এখানে রেখে রাতে আমার ঘুম হয় না। সবসময় চিন্তায় থাকি। কি আর করা মেয়ে যখন বিয়ের পর স্বামীর ঘর তার আসল ঠিকানা। না করার অধিকার আমার নেই ।
বুকে পাষান বেধে দিয়ে দিলাম ফি আমানিল্লাহ বলে। পথে যেতে পড়লো মিলিটারি চেক সব পুরুষ কে নামিয়ে চেক করে আর মেয়েদের বলে তোমার স্বামী কা করতা হায়, তুম হিন্দু হায় না মুসলমান কালিমা বলো ইত্যাদি ইত্যাদি। জবাব সন্তোষ জনক হলে ছেড়ে দেয়। এভাবে মেয়ে গেলো শশুর বাড়ি। ওর শশুর বাড়ি টা বেশ বেকোয়াট চারদিকে পানি আর বাঁশঝাড়। পাকসেনারা ভয়ে সেখানে যায়না।
আবার একদিন রোজার দিনে সন্ধ্যার সময় ইফতার করবো সরবত এর গ্লাস হাতে নিয়েছি এসময় খবর এলো বিহারি আসতেছে। ওমনি সবফেলে গেলাম পাটক্ষেতে লুকাতে। আমার রান্না করা সব খাবার খেতে খেতে হায়েনার দল বলে আচ্ছা হুয়া। বহুত মজাদার খানা খায়াা। গেলো সেদিন।
এর পর নভেম্বর এর শেষ দিকে একদিন আমাদের পাড়ার মুক্তিযোদ্ধারা পরিকল্পনা করে ওদের বিলপার করে দেবার কথা বলে পানিতে চুবিয়ে মারবে । যেমন কথা তেমন কাজ কয়েক জন পাকিস্তান আর্মির লোকদের ওরা নৌকায় উঠতে বলে ওপরে নিয়ে যাবে বলে। মাঝ বিলে নিয়ে দেয় নৌকা ডুবিয়ে। বিহারিরা ভালো সাতার না জানায় ডুবে মারা গেল। ওদের অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা বলে সাতরিয়ে আমার বাড়ির ঘাটে এসে উঠলো। বললো আর চিন্তা নিতে সালাগো শেষ করে দিছি মামী।
ডিএসএস/