বিশ্বের কোথায় প্রথমে দিন হয় জানেন কি?
ছবি সংগৃহিত
আমাদের পৃথিবী (Earth) প্রতিনিয়ত ঘুরছে। এই কারণে, সূর্য আমাদের দিগন্তে দেখা দিতে থাকে। তবে আপনি কি জানেন প্রথম সূর্যোদয় (Sun rise) কোথায় দেখা যায়? ক্যালটেকের অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট ক্যামেরন হুমেলস বলেছেন যে প্রথম সূর্যোদয় বলে কিছু নেই। আমরা শুধু বিশ্বাস করি এটাই প্রথম সূর্যোদয়। এটাই শেষ সূর্যোদয়। পৃথিবী (Earth) গোলাকার ক্রমাগত আবর্তিত হয়, তাই এই প্রক্রিয়া প্রতিদিন ঘটবে। সেজন্য প্রথম সূর্যোদয় (Sun rise) বলে কিছু নেই।
তবে কোন দেশে প্রথম দিন হয় জানেন? দেশটি হলো জাপান। সূর্যের প্রথম কিরণ নাকি পড়ে এই ছোট্টো দেশটিতেই। এ কারণে সে দেশের নাম নিপ্পন। যার অর্থ, সূর্যোদয়ের দেশ।
আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখান থেকে উৎপন্ন হয়েছে। বেশিরভাগই ১৮০ তম দ্রাঘিমাংশের লাইনে। সাধারণত এটি একটি সরল রেখা, তবে কিছু জায়গায় এটি ঘোরাফেরা করে। যাতে একটি দেশকে দুটি সময় অঞ্চলে ভাগ করতে হয় না। উদাহরণস্বরূপ,মনে করা যাক এই লাইনটি পূর্ব থেকে ৩২০০ কিলোমিটার দূরে কিরিবাতি দ্বীপ ছেড়েছে।
কিরিবাতির সময় অঞ্চল পৃথিবীতে (Earth) প্রথম আসে। এটি UTC+14। অর্থাৎ বছরের সর্বোচ্চ সময় কিরিবাতিতে প্রথমে সূর্য ওঠে। ক্যামেরন ব্যাখ্যা করেছেন যে কিরিবাতি দ্বীপপুঞ্জের সুদূর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মিলেনিয়াম দ্বীপে প্রথম সূর্যোদয় (Sun rise) দেখা যায়। একে ক্যারোলিন আইল্যান্ডও বলা হয়। এই দ্বীপে কোনো মানুষেরই বসবাস নেই। এই দ্বীপই পৃথিবীতে প্রথম সূর্যকে স্বাগত জানায়। তবে সবসময় তা হয় না।
পৃথিবী তার অক্ষের উপর ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে আছে। এ কারণেই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সূর্যের আলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে পড়ে। মকর রাশির ক্রান্তীয় অঞ্চলে সূর্য দক্ষিণ গ্রীষ্মকালীন অয়নকাল এবং উত্তর গ্রীষ্মকালীন অয়ান্তিতে অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বর বা ২২ ডিসেম্বরে আরও বেশি আলোকিত হয়। এ কারণে অ্যান্টার্কটিকার বেশিরভাগ অংশে ২৪ ঘণ্টা আলো থাকে।
আর ভারতে প্রথম সূর্যোদয় হয় অরুণাচল প্রদেশে। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যের বেদং উপত্যকার ডং গ্রামে প্রথম আলো ফেলে সূর্য।
সূর্যের প্রথম রশ্মি পৃথিবী স্পর্শ করে রাত ৩ টায়। ১৯৯৯ সালে, ডং গ্রাম ভারতের উদীয়মান সূর্যের ভূমির মর্যাদা পায়। সেখানে সূর্যের প্রথম রশ্মি পৃথিবী স্পর্শ করে রাত ৩ টায়। শুনতে রোমাঞ্চকর মনে হলেও সূর্যোদয়ের সেই দৃশ্য দেখাও কিন্তু দারুণ রোমাঞ্চকর। নিজের চোখে সে দৃশ্য না দেখলে বুঝি জীবন বৃথা।
জানলে অবাক হবেন, নতুন বছরে অনেক পর্যটকই সূর্যোদয়ের এই গ্রামে যান বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখতে। অনেকেরই ধারণা এতে সারা বছর ভালো যাবে। আবার অনেকেই বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখে জীবনী শক্তি অর্জন করতে চান।
এই গ্রামে যেমন সকাল সকাল সূর্য ওঠে, তেমনই রাতও হয় দ্রুত হয়। মজার কথা হলো, বিকেল ৪টা বাজতে না বাজতেই সে গ্রামের বাসিন্দারা রাতের খাবারের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। কারণ সেখানে ৪ টায় অন্ধকার হতে শুরু করে।
ভোর ৩ টায় সেখানে সূর্যের লাল আভা দেখা যায় বলে সেটাই তাদের কাছে ভোরবেলা। এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে এই স্থান ভ্রমণের সেরা সময়।
ডং গ্রাম অর্থাৎ বেদাং উপত্যকায় দিন প্রায় ১২ ঘণ্টা। গ্রামটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২৪০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। লোহিত ও সতী এই দুটি এখানকার প্রধান নদী। এই গ্রামের লোকসংখ্যা মোট মাত্র ৩৫ জন। সেখানে আছে প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণ।
১৯৯৯ সালের আগে লোকজন বিশ্বাস করতেন, সূর্যের প্রথম রশ্মি নাকি আন্দামানের কুচ্ছল দ্বীপে পড়ে। কিন্তু পরে জানা যায়, সূর্যোদয়ের গ্রামটি আসলে অরুণাচল প্রদেশে অবস্থিত ডং গ্রাম। এই তথ্য প্রকাশের পর থেকেই সেখানে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে।