ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা তিতুমীরের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা তিতুমীরের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ছবি: সংগৃহীত
সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর (১৭৮২-১৮৩১) ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এক কিংবদন্তি নেতা। জমিদার ও ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম আজও বাংলার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। বাঁশের কেল্লার নির্মাতা হিসেবে তিনি বাঙালির স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর ব্রিটিশ সেনাদের আক্রমণে নারকেলবাড়িয়ার সেই ঐতিহাসিক বাঁশের কেল্লায় যুদ্ধরত অবস্থায় শহীদ হন তিনি।
তিতুমীরের জন্ম ১১৮৮ বঙ্গাব্দের ১৪ মাঘ (১৭৮২ খ্রিস্টাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে। তার পরিবার নিজেদের হজরত আলীর (রা.) বংশধর হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি বাংলা, আরবি ও ফার্সি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন এবং ইসলামি ধর্মশাস্ত্র, আইন, দর্শন ও তাসাওয়াফসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
১৮২২ সালে তিনি পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য মক্কায় গমন করেন। সেখানে তিনি বিখ্যাত ইসলামি সংস্কারক ও বিপ্লবী নেতা সাইয়িদ আহমদ বেরলভির সান্নিধ্যে আসেন। সাইয়িদ আহমদ তাকে বাংলার মুসলমানদের অনৈসলামিক রীতি এবং বিদেশি শাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
দেশে ফিরে ১৮২৭ সালে তিনি সাধারণ কৃষক ও তাঁতিদের মধ্যে বিপ্লবী চেতনা ছড়িয়ে দিতে কাজ শুরু করেন। তার প্রচার-প্রচারণার ফলে জমিদারদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি ১৮৩১ সালের অক্টোবরে নারকেলবাড়িয়ায় বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন। বাঁশ ও মাটির সমন্বয়ে তৈরি এই দুর্গ ছিল প্রতিরক্ষা ও স্বাধীনতার প্রতীক।
১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর ব্রিটিশরা গোলন্দাজ বাহিনী নিয়ে বাঁশের কেল্লায় আক্রমণ চালায়। অসীম সাহসিকতার সঙ্গে তিতুমীর ও তার অনুসারীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তবে শত্রুপক্ষের অত্যাধুনিক অস্ত্রের সামনে এই প্রতিরোধ টিকতে পারেনি। অবশেষে ১৯ নভেম্বর সংঘর্ষে তিতুমীরসহ তার বহু অনুগামী শহীদ হন।
তিতুমীরের আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম আজও বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসে গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে চিরস্মরণীয়। তার জীবন কেবল একটি বিপ্লবের গল্প নয়, এটি নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অনন্য অনুপ্রেরণা।