বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো রুটির খোঁজ মিলল তুরস্কে
ছবি সংগৃহিত
তুরস্কের নব্যপ্রস্তর যুগের এক প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায় খ্রিষ্টপূর্ব ৬ হাজার ৬০০ সালের একটি রুটি পাওয়া গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বলছেন, ৮ হাজার ৬০০ বছরের পুরোনো এই রুটি জানামতে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো রুটি।
এটি পাওয়া গেছে দক্ষিণ তুরস্কের কোনিয়া জেলার কামরার চাতালহুইকে। এটি ইউনেসকো ঘোষিত একটি বিশ্ব ঐতিহ্য।
পাউরুটি বন্য শস্য যেমন বার্লি, এইনকর্ন বা ওটস এবং সেইসাথে জলজ প্যাপিরাসের আত্মীয়দের কন্দ থেকে তৈরি করা হয়েছিল। তুর্কি প্রত্নতাত্ত্বিকরা একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন যা বিশ্বের প্রাচীনতম পরিচিত রুটি বলে মনে করা হয়, যা 6,600 খ্রিস্টপূর্বাব্দের।
প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকার ‘মেকান ৬৬’ নামের অংশটিতে ধ্বংস হওয়া একটি চুলার কাঠামো পাওয়া গেছে। পাশেই ছিল ইটের তৈরি ঘর। তুরস্কের নেকমেতিন এরবাকান ইউনিভার্সিটি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের (বিআইটিএম) সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
চুলার চারপাশে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা গম, বার্লি, মটরবীজ এবং হাতের তালু আকারের গোলাকার ‘স্পঞ্জি’ জিনিসের অবশিষ্টাংশ খুঁজে পেয়েছেন। গত বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় সংস্থাটি।
বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এই জৈব অবশিষ্টাংশ ৮ হাজার ৬০০ বছরের পুরোনো রান্না না করা একটি রুটির খামি।
তুরস্কের আনাদোলু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং খনন পরিদর্শনকারী দলের প্রধান তুরস্কের আনাদোলু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রত্নতাত্ত্বিক আয়ি উমুত তুরচান বুধবার তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, ‘আমরা বলতে পারি যে চাতালহুইকে খুঁজে পাওয়া এই জিনিসটি বিশ্বের প্রাচীনতম রুটি।’
‘এটি একটি পাউরুটির ছোট অংশ। এটি বেক করা হয়নি, তবে এটির খামি করা হয়েছে। ভেতরে স্টার্চসহ এটি আজ অবধি টিকে আছে।’ বলেন আয়ি উমুত তুরচান, ‘আজ পর্যন্ত এ রকম কিছু আর পাওয়া যায়নি।’
তুরস্কের গাজিয়ানতেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও জীববিজ্ঞানী সালিহ কাভাক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপে স্ক্যান করা নমুনায় ছবিতে বাতাসের ফাঁকা জায়গা দেখা যায়, যেখানে স্টার্চ দানা আমাদের সন্দেহ দূর করে।’
তিনি বলেন, ময়দা এবং জল মেশানো হয়েছিল, রুটিটি চুলার পাশে প্রস্তুত করা হয়েছিল। তারপর সেখানে কিছুক্ষণের জন্য রাখা হয়েছিল।
‘এটি তুরস্ক এবং বিশ্বের জন্য একটি উত্তেজনাপূর্ণ আবিষ্কার।’ বলেন কাভাক।
চাতালহুইকে ইউনেসকো ঘোষিত একটি বিশ্ব ঐতিহ্য। এখানে নব্যপ্রস্তুরযুগে (খ্রিষ্টপূর্ব ১০ হাজার সাল থেকে ২ হাজার সাল) ৮ হাজারের মতো মানুষের বাসস্থান ছিল। একে বিশ্বের নগরায়ণের প্রথম স্থানগুলোর মধ্যে একটি বলেও মনে করে বিআইটিএম।
‘চাতালহুইক ইতিমধ্যে অনেক প্রথমের জন্ম দিয়েছে। যখন এটি খনন করা হয়েছিল, তখনই বিশ্বের প্রথম বয়নশিল্পের সন্ধান মেলে চাতালহুইকে। কাঠের নিদর্শনও মিলেছে এখানে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় দেয়ালে রং ও চিত্রকর্ম। কনিয়া ও তুরস্ক এই অর্থে খুব ভাগ্যবান।’ বলেন তুরচান।
ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি ছবি সহ বিশদ স্ক্যানগুলি নমুনায় বাতাসের স্থানগুলি প্রকাশ করে, এর সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ দূর করে।