রক ব্যান্ড ফ্লিটউড ম্যাকের ম্যাকভি আর নেই

ব্রিটিশ-আমেরিকান রক ব্যান্ড ফ্লিটউড ম্যাকের সবচেয়ে হিট গানের গায়িকা ও গীতিকার ক্রিস্টিন ম্যাকভি মারা গেছেন। স্থানীয় সময় বুধবার (৩০ নভেম্বর) তার পরিবার ইনস্ট্রাগ্রামে মৃত্যুর এ খবর জানিয়েছে।
তার পরিবার জানায়, ‘ক্রিস্টিন ম্যাকভির পরিবারের পক্ষে, গভীর বেদনার্ত হৃদয়ে আমরা তার মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ করছি। আজ সকালে তিনি একটি হাসপাতালে শান্তিতে চলে গেছেন।’
তারা আরও জানান, আমরা, আপনারা, সবাই হৃদয়ে রাখবেন ও একজন অসাধারণ মানবিক মানুষের জীবনকে স্মরণ করবেন। সারা বিশ্বের ভালোবাসা পাওয়া এই সংগীতজ্ঞকে সম্মানিত করবেন।
ফ্লিটউড ম্যাক ব্যান্ডদলটি ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দলের এই বিখ্যাত নারী সদস্যের বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
এদিকে ফ্লিটউড ম্যাক ব্যান্ডের পক্ষে তার প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি বিবৃতিতে প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডদলটি জানায়, ‘তিনি সত্যিকারের একজন দয়ালু ও মেধাবী মানুষ ছিলেন। তার মেধা পরিমাপের ঊর্ধ্বে। তিনি যেকোনো ব্যান্ডের জন্যই সেরা সংগীতজ্ঞ ছিলেন। যে কারো জীবনে সেরা বন্ধু ছিলেন।’
১২ জুলাই ১৯৪৩ সালে ইংল্যান্ডের ল্যাংকাশায়ারের লেক জেলার বুথ গ্রামে জন্মেছিলেন ক্রিস্টিন ম্যাকভি। পিতার কাছ থেকে তিনি গানের প্রতি ভালোবাসা ও শিক্ষা লাভ করেছেন। বাবা ছিলেন একজন কনসার্টের ভায়োলিনবাদক ও বামিংহামের একটি কলেজের গানের অধ্যাপক। ফলে মোটে চার বছর বয়সে ম্যাকভির পিয়ানোয় হাতেখড়ি। ১১ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সংগীতকে মনোযোগ দিয়ে গ্রহণ করেননি। তাকে বাবার বাইরে গান শেখানো শুরু করলেন স্থানীয় সংগীতশিল্পী ফিলিপ ফিশার। তার কাছে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত ক্ল্যাসিকাল গানের শিক্ষা নিয়েছেন। এরপর তার মনোযোগ চলে গেল রক অ্যান্ড রোলের দিকে। ষাটের দশকের শেষের দিকে তিনি চিকেন শাক ব্যান্ডের সঙ্গে কাজ শুরু করেন।
বিখ্যাত ফ্লিটউড ম্যাক ব্যান্ড দলের সঙ্গে ক্রিস্টিন ম্যাকভির যোগাযোগ হলো যখন তিনি ব্যান্ডের বেজ গিটারবাদক জন ম্যাকভিকে বিয়ে করলেন। পুরোনো ব্যান্ডের সদস্য হিসেবে তার সঙ্গে তিনি দেখা করতে গিয়েছিলেন। এরপর তাদের ভালোবাসার শুরু হয়।
এরপর তার জীবনের সেরা সময়ের শুরু হলো ১৯৭০ সালে, যোগ দেন রক ব্যান্ড ফ্লিটউড ম্যাকে। তিনি এই ব্যান্ডের একজন গায়িকা ও কিবোর্ডবাদক। ব্যান্ডের পাশাপাশি নিজের একক অ্যালবামও প্রকাশ করেছেন। তবে অনেক দেরিতে। তিনি যে বিখ্যাত গানগুলো লিখেছেন, সেগুলো ভালোবাসা ও সম্পর্ককে ঘিরে। এই ব্যান্ডের সর্বকালের সেরা আটটি গানই তিনি লিখেছেন। তার সেরা গানগুলোর কয়েকটি হলো— ‘ডোন্ট স্টপ’, ‘এভরিহয়ার’, ‘লিটল লাইস’। এই গানগুলো ব্যান্ডের ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ‘গ্রেটেস্ট হিট’ অ্যালবামে আছে। তাদের ‘ওভার মাই হেড’, ‘ইউ মেক লাভিং ফান’ ও ‘সে ইউ লাভ মি’ নামের সেরা গানগুলোও তার লেখা বা গাওয়া।
১৯৯৮ সালে তিনি রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেমে ফ্লিটউড ম্যাকের সদস্য হিসেবে সম্মানিত হন। ওই বছরই গানে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘ব্রিট অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। টানা প্রায় ৩০ বছর ব্যান্ডে কাজ করার পর তিনি ব্যান্ড ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে ব্যান্ড তাকে ছাড়েনি। টুকটাক প্রায় ১৫ বছর কাজ করে গেছেন।
২০০৪ সালে নিজের প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশ করলেন ক্রিস্টিন ম্যাকভি। ২০০৬ সালে পান বাসকার মেধাস্বীকৃতি ‘স্বর্ণব্যাজ’। পদকটি প্রদান করে দি আইভরস অ্যাকাডেমি।
২০১৪ সালে তিনি লাভ করেন ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি অব সং রাইটার্স, কম্পোজারর্স অ্যান্ড অথরসের আজীবনের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘দি আইভর নোভেলো অ্যাওয়ার্ড’। ২০২১ সালে তিনি ইউকে আমেরিকানা অ্যাওয়ার্ডসের ‘ট্রেলব্লেজার অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন।
ক্রিস্টিন ম্যাকভি দুটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডও জয় করেছেন।
ওএফএস/আরএ/
