শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন, দায়ী করা হচ্ছে ইউক্রেন দ্বন্দ্বকে
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অষ্টম কার্যদিবস সোমবারও (৭ মার্চ) ব্যাপক দরপতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন চলছে দেশের শেয়ারবাজারে। আজকের লেনদেনের দুই ঘণ্টা শেষে ঢাকার শেয়ারবাজারের প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইক্সের ১০৫ পয়েন্ট পতন হয়েছে। সূচক পতনের হার ১.৫৮ শতাংশ।
এ দরপতনের জন্য ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যুদ্ধের কারণে সাপ্লাই-চেইন বিঘ্নিত হওয়া, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে এ দরপতন হচ্ছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত ডিএসইএক্সের পতন হয়েছে ৪৩৭ পয়েন্ট পয়েন্ট বা ৬ শতাংশ। অবশ্য বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দরপতন শুরু হয়েছিল তারও আগে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া নতুন দফার দরপতনে এখন পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচকের ৫৬৮ পয়েন্ট বা ৮ শতাংশ পতন হয়েছে।
আজ বেলা ১২টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৭৮ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৩৪৭টিকে দর হারিয়ে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। দর হারানো শেয়ার সংখ্যা ৯০ শতাংশের বেশি। বিপরীতে মাত্র ১৫টি শেয়ার দর বেড়ে কেনাবেচা হয় এবং দর অপরিবর্তিত অবস্থায় কেনাবেচা হতে দেখা গেছে ১৬টিকে। লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় ৩০৪ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
শুধু ঢাকা নয়, টোকিও থেকে শুরু করে চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারতের মুম্বাইয়ের সব শেয়ারবাজারেও আজ সোমবার বড় দরপতন চলছে। চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স ১.৮৩ শতাংশ পতন হয়েছে। হংকংয়ের হ্যাংস্যাং সূচকের পতন হয়েছে ৩.২১ শতাংশ। জাপানের নিক্কি সূচকের ৩.০৩ শতাংশ, ভারতের মুম্বাই শেয়ারবাজারের সেনসেক্স সূচকের পতন হয়েছে ২.৬৭ শতাংশ।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসারি আমদানি-রপ্তানি দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ১ শতাংশেরও কম। এ কারণে দেশের অর্থনীতি বড় সংকটে পড়ার কথা নয়। তাছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৪৮টি কোম্পানির মধ্যে সর্বোচ্চ ১০-১৫টি কোম্পানির এ দুই দেশের সঙ্গে সরাসরি আমদানি-রপ্তানির সম্পর্ক থাকতে পারে; তাও কোম্পানিগুলোর মোট আমদানি-রপ্তানির ১৫-২০ শতাংশের বেশি হবে না। ফলে এ যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়ার কথা নয়।তবে পরোক্ষ প্রভাব কিছুটা রয়েছে।
এ যুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য কমোডিটি পণ্যের দর বেড়েছে। বিশেষ করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৩৯ ডলার ছুঁয়েছে, যা ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ।
করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে সমুদ্রগামী জাহাজে করে পণ্য আমদানি-রপ্তানি খরচ ২-১০ গুণ পর্যন্ত বেড়েছিল। এখন তা আরও বাড়ছে। এর বাইরে ভোজ্যতেলসহ অন্য সব প্রয়োজনীয় কমোডিটি পণ্যের দরও ঊর্ধ্বমুখী। এতে মূল্যস্ফিতি বাড়ছে সর্বত্র। এসবের পরোক্ষ প্রভাব শেয়ারবাজারে থাকতে পারে বলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
/এএস