'মজুরি ছাড়া বাকি সব কিছুর দাম বাড়াতে চায়!'
'আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক কিছু কিছু শর্ত দিয়ে থাকে তার মধ্যে দুর্নীতি দূর করতে হবে, গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেগুলো ঠিক করতে হবে সেগুলো নিয়ে তাদের মাথাব্যথা কম এবং সরকারেরও মাথা ব্যথা কম। আর যেগুলো মানলে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক বিরক্ত হন এবং সরকারও খুব আগ্রহী। তার মধ্যে প্রইভেটাইজেশন। সমস্ত পাবলিক ইনিস্টিটিউশন গুলোকে প্রাইভেটাইজ করা।
কমার্শিয়ালাইজ করা, আরও জিনিসত্রের দাম বাড়ানো। মজুরি ছাড়া বাকি সব কিছুর দাম বাড়াতে তারা সবসময় চায়। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং রাকসু ও সিনেট কার্যকর করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশ অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন মার্কেটের আমতলায় রাকসু আন্দোলন মঞ্চ আয়োজনে ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশ ও মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তারা অভিলম্বে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য রাকসু এবং রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচনসহ ১৪ দফা দাবি উত্থাপন করে।
অনুষ্ঠানে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তরের সভাপতিত্বে। রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব মো. আমান উল্লাহ খানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমাদের চিকিৎসা খাতে যে পরিমাণ বার্ষিক বাজেট হয়। সেটা প্রায় বার্ষিক বাজেটের ৩২ কোটি বা ৩৩ কোটি টাকা। সেই পরিমাণ টাকা প্রতি বছর ভারতে চলে যায়। বাংলাদেশের মানুষ ভারতে কেন যায়? কারণ এদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা তেমন ভালো ভাবে দাড়ায় নাই, পাবলিক এডুকেশন সিস্টেম সেভাবে দাড়ায় নাই বলে বানিজ্যিকিকরণ ক্রমাগত হারে বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক নামে বাংলাদেশ সরকারে ওস্তাত প্রতিষ্ঠান আছে। আইএমএফ নামে আরেকটি ওস্তাত প্রতিষ্ঠান আছে। তারা নানান ভাবে সরকারকে দিকনির্দেশনা দেয় এবং পদ দেখায়। আইএমএফ লোন দিচ্ছে সঙ্গে শর্তও দিচ্ছে। সেগুলো সরকারের মেনে নিতে কোন সমস্যা নেই। সেগুলোর মধ্যে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো, গ্যাসের দাম বাড়ানো এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানো। তারা বলছে সামনে আমরা আরও বাড়াইতেই থকবো। তারা বাড়াবো বলে না সমন্বয় শব্দ ব্যবহার করে। এই শব্দটা তারা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের কাছে শিখেছে। তারা বলে আমরা সমন্বয় করবো। তাদের কোন অসুবিধা নেই। কারণ এটা তো জনগনের উপর যাচ্ছে।
অধ্যাপক ড.সালেহ্ হাসান নকীব বক্তব্যে বলেন, ক্ষমতা মানুষকে দানবে পরিনত করে যদি তার নিয়ন্ত্রন না থাকে। পাওয়ার আসলে চর্চা করার জিনিস না। পাওয়রের সঙ্গে সঙ্গে স্বচ্ছতা ও দ্বায়িত্বের সঙ্গে ব্যাপারটি জড়িত। এটি নিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের ছাত্র হিসেবে যে দায়িত্ব, নাগরিক হিসেবে যে দায়িত্ব, মানুষ হিসেবে সে দায়িত্বের জায়গাটা আমাদের ছেড়ে দিলে চলবে না।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র শিক্ষাকের সম্পর্ক, ছাত্রদের প্রতি শিক্ষাকদের যে দায়বদ্ধতা এই বিষয় গুলো দেখতে হবে বৃহৎ পরিসরে। যে বিষয় গুলো উঠে আসছে সেগুলো কিন্তু ওই বৃহৎ পরিসরের একটি অংশ। আমি শিক্ষক হিসেবে মনে করি আমার ছাত্রদের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে। কিন্তু আমার ওই দায়বদ্ধতা কখনো মানুষের প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতা এবং আমার বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধতাকে ছাপিয়ে যায় না।
উল্লেখ্য, ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৬ সালে এবং সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ সালে। মোট ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে রাকসু নির্বাচন।
এএজেড