শিক্ষাক্রম কার্যকরী করতে প্রয়োজন শিক্ষকদের সক্ষমতা বাড়ানো
নতুন শিক্ষাক্রম কার্যকরী করতে অনেক সময় ধরে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে ২০১০ সালে যুগোপযোগী একটি শিক্ষানীতি তৈরি করা হয়। এতে পরীক্ষা-পদ্ধতির সংস্কার, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা, স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন প্রভৃতি সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সরকার তাতে মনোনিবেশ করেনি। কোভিড-পরবর্তী বিশ্ব ব্লেন্ডেড লার্নিং ও পরীক্ষা-পদ্ধতি থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে। আমাদের সরকারও শিক্ষাক্রম সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। আমি বলব, মোটামুটি অগ্রসরতামুখী ও যুগের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা-পদ্ধতি থেকে বের হয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পারস্পরিক সমঝোতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই দেখলাম, শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার শুরু হয়েছে।
২০১৭ সালে হেফাজতে ইসলাম পাঠ্যপুস্তক নিয়ে যেসব দাবি তুলেছিল, এবারও একটি গোষ্ঠী প্রায় একই দাবি তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা নানা বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুটি বই প্রত্যাহার করে সরকার আত্মসমর্পণ করল। আমি খুবই উদ্বিগ্ন। মনে হয়, আমরা স্রোতের উল্টো দিকে যাচ্ছি। নতুন শিক্ষাক্রমের কিছু বইতে তথ্যগত বিভ্রান্তি রয়েছে। বেশ কিছু ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। এজন্য আমাদের লেখকরা ক্ষমাও চেয়েছেন। বইগুলো এ বছর পরীক্ষামূলক বই হিসেবেই চলছে। কিন্তু দুটি বই প্রত্যাহার করায় আমরা যারা নতুন শিক্ষাক্রমকে স্বাগত জানিয়েছিলাম তারা হতাশ হয়েছি।
প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা নিয়েও আমরা শুরুতে আপত্তি তুলেছিলাম। ২৯ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এ ব্যাপারে বিবৃতিও দিয়েছিলেন। কারণ এই পরীক্ষা নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এরপর একবার বৃত্তির ফল দিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্থগিত করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনাস্থার মধ্যে ফেলা হলো। এতে সবার মধ্যেই অনাস্থা তৈরি হয়েছে।
আমি মনে করি, সরকার ভোটের চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার উপর নজর দেবে। দক্ষতানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই। নতুন শিক্ষাক্রম কার্যকরী করতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষকদের সক্ষমতা বাড়ানো। এই জায়গায় জোর দিতে হবে। মনিটরিং বাড়াতে হবে। আর কিছু শিক্ষার্থীকে বৃত্তি না দিয়ে উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। মিড-ডে মিল কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষায় আরও বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।
শিক্ষাখাতে আমাদের বাজেট বরাদ্দ খুবই কম। এটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নিম্নতম। এখন পর্যন্ত শিক্ষায় আমাদের বিনিয়োগ জাতীয় আয়ের মাত্র ২ শতাংশের সামান্য উপরে। যেটি হওয়া উচিত ছিল কমপক্ষে ৬ থেকে ৭শতাংশের মতো। আমাদের বড় বড় মেগা প্রকল্প দরকার। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, আমরা যদি মানবসম্পদ বিনির্মানে বিনিয়োগ না করি, সেক্ষেত্রে বিনিয়োগ না বাড়াই, তাহলে বড় বড় গার্মেন্টসের মতো স্ট্রাকচারগুলি চালু করার জন্য বিদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি করতে হবে।
কাজেই আমার কথা হচ্ছে, শিক্ষায় আরও মনযোগ দেওয়ার পাশাপাশি যারা নানা মিথ্যাচার করে, জনমনে হতাশা ছড়ায় তাদের বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। আমার কথা, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং আমি বিশ্বাস করি পরিবর্তন আসবেই।
রাশেদা কে চৌধুরী: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান।
এসএন