৫০ বছরে সংসদ কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
৫০ বছরের পথ চলায় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের অগ্রায়ণে ভূমিকা রেখে চলেছে। সরকারের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তির এই মাহেন্দ্রক্ষণে সংসদের অভিমত এই যে, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দুরূপে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র হবে সুসংহত, শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।
তারপরও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ এবং জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
৫০ বছরের পথপরিক্রমা অনেক ক্ষেত্রেই মসৃণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বারবার সামরিক ফরমান জারি করে সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। গণতন্ত্র ও জাতীয় সংসদের উপর আঘাত হেনেছ। সামরিক ও স্বৈরশাসনের পালাবদলের মধ্য দিয়ে সংবিধানের চার মূলনীতিতে আঘাত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে কালো আইনে পরিণত করা ছিল সংসদীয় ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। পরবর্তী সময়ে সপ্তম সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ সুগম করা হয়।
সরকারের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মহান জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের সংসদ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত জাতীয় রাজনীতিতে নারীদের উৎসাহিত করতে সংসদে নারী আসন ৫০-এ উন্নীত করা হয়েছে।
জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময়। দারিদ্র্য বিমোচন, দুর্যোগ মোকাবিলা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল।
মহান জাতীয় সংসদ সরকারের সামগ্রিক উন্নয়নে অংশীদার এবং সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলো সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জাতির সামনে উপস্থাপিত হয়। জাতির পিতা তার সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিলেন। একটি বিরল দৃষ্টান্ত জাতির সামনে রেখে গিয়েছিলেন জাতির পিতা। ইচ্ছা থাকলে কত দ্রুত একটা দেশকে পুনর্গঠন, পুনর্বাসন ও উন্নয়ন করা যায়। আজকে তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠত।
একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে সেখানে বাধা আছে। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিদেশে চাকরি দিয়েছিল, তারা বাধা। গ্রামের মানুষ এখন একবেলাও অভুক্ত থাকে না। সংসদ সদস্যরা এর সাক্ষী।
পরিশেষে শুধু এটুকুই বলতে চাই যে, জাতীয় সংসদের ৫০তম বর্ষ উদযাপন যেন একটি মাইল ফলক। ভুল ভ্রান্তি সীমাবদ্ধতা দায়বদ্ধতার বিষয়গুলো এই ক্রান্তিকালে আমাদের আলোচনার বিষয় বস্তু না হোক। মন্দ অথবা কিছু সমস্যা অবশ্যই আছে, সবসময়ই থাকে। তা থেকে থাকলেও সেটি এক্ষেত্রে সেটি নিয়ে সমালোচনা খুব একটা মূখ্য বিষয় নয়। আমাদের সংসদকে সকল সময় সকল প্রকার অশুভ সবকিছু থেকে মুক্ত রাখতে হবে। জনগণের মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রতীক জাতীয় সংসদ কালের স্বাক্ষী হয়ে আজ দাঁড়িয়ে আছে।
এম. সাখাওয়াত হোসেন: বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার।
এসএন