শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে টেকসই উন্নয়ন জরুরি
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বাজেটে কোনো উন্নতি নেই। কোভিডে স্বাস্থ্য খাতের ভঙ্গুরতা প্রকাশ পেয়েছে। সেটি যথাযথভাবে গুরুত্ব পায়নি। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ এখনো জিডিপির ১ শতাংশের নিচে। আর শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ২ শতাংশের মতো। শিক্ষা একটি জটিল সময় পার করছে। কোভিড শিক্ষার মানটা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। শিক্ষার ক্ষতি পোষানোর জন্য এ খাতে আরও অর্থ ও উদ্যোগ প্রয়োজন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত হলো গুণগত অবকাঠামো, যা মানবসম্পদ উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। সেখানে যদি সম্পদ বরাদ্দ বাড়ানো না যায় এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার না করা যায় তাহলে জাতি কীভাবে এগোবে। মানবসম্পদের অবক্ষয় রোধে এ দুটি খাতকে আর উপেক্ষা করা যাবে না। তাহলে আমাদের উন্নয়ন টেকসই হবে না।
এখন প্রয়োজন মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো, চাহিদা বৃদ্ধি এবং ব্যয়ের মধ্যে একটা রাশ টানা। সুচারুভাবে ব্যয় করা। সরকারি ব্যয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে দরকার, যাতে সামষ্টিক চাহিদা একেবারে পড়ে না যায়। পণ্য আছে চাহিদা নেই, মানুষের হাতে টাকা নেই, সেটি হলে আবার অর্থনীতিতে তেজিভাব আসবে না। চাহিদা বাড়ানোর অন্যতম উপায় হলো সরকারি ব্যয়। তবে সরকারি ব্যয় অনেক চিন্তাভাবনা করে করতে হবে। উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, সেসব ব্যয় কমিয়ে ফেলতে হবে। এবারের বাজেটে দেখবেন জনপ্রশাসনের বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি। এখানে কোথায় কোথায় ব্যয় হচ্ছে তা দেখতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন তো আর কমানো যাবে না। কারণ মূল্যস্ফীতির চাপ তাদের উপরও পড়বে। কিন্তু যেখানে কমানো সম্ভব যেমন গাড়ি, বিদ্যুৎ খরচ, বিদেশ ভ্রমণ, বিনোদন খরচ প্রভৃতি কমাতে হবে। আমরা দেখেছি গাড়ির অপারেশনাল ব্যয় অনেক জায়গায় শ্বেতহস্তীর মতো। এটা বন্ধ করতে দৃঢ় ঘোষণা আসা এবং তার সত্যিকার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আর প্রকল্পের ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে হবে। কম প্রয়োজনীয় প্রকল্প হলে, চলমান না থাকলে কিংবা মানুষের আয় ও কর্মসংস্থানের উপর তেমন প্রভাব না পড়লে ওই ধরনের প্রকল্প স্থগিত রাখতে হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হলো। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা যদি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাই তাহলে প্রথম কাজ হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো। এক্ষেত্রে কিছুটা করছাড় দেওয়া গেলে মূল্যস্ফীতি একটু নিয়ন্ত্রণ করা যেত। সেখানে সম্পূর্ণ করছাড় দিচ্ছি না আমরা। মাত্র দু-একটা পণ্যের উপর করছাড় দেওয়া হচ্ছে। ভোজ্যতেলের উপর আগে কিছুটা কর কমানো হয়েছিল। কিন্তু খুব একটা সুবিধা হয়নি। আরেকটা বিষয় হলো, ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিনের দাম বাড়ার ফলে অনেকে কিন্তু পাম তেল ব্যবহার করছে। এর উপর করছাড় হয়নি। তাই বাজেটের মধ্যে মোকাবেলার যে আর্থিক পদক্ষেপ তা দেখা যাচ্ছে না। ফলে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপটা থাকবে।
শুধু বাজার তদারক করলে, হঠাৎ হঠাৎ কোথাও গিয়ে পরিদর্শন কার্যক্রম চালিয়ে তেমন সুফল পাওয়া যায় না। বাজার কারা কারা নিয়ন্ত্রণ করছে—এটা ক্ষুদ্র একটা গোষ্ঠী—সেটি সরকার জানে। তাদের বিরুদ্ধে তো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বাজারে ঘুরে ঘুরে দেখার দরকার নেই। অনিয়ম করতে গিয়ে কেউ যদি ধরা পড়ে, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে অন্যরাও সতর্ক হবে। বাজারে চলমান অব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে না পারলে সুফলটা পাওয়া যাবে না। তবে হ্যাঁ, পাশাপাশি যথেষ্ট সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এটিই সরকারের প্রাধিকার হওয়া উচিত।
ড.ফাহমিদা খাতুন: নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি
এসএন