ব্যবস্থাপনার ত্রুটি অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ, দায় সবার
ঢাকা শহরে অগ্নিকাণ্ড প্রায়ই হচ্ছে এবং আমরা দেখেছি এর আগেও হয়েছে। এই অগ্নি দুর্ঘটনা পুরান ঢাকায় বেশি হচ্ছে, বস্তিতে হচ্ছে, এমনকি গুলশানেও হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে বললে এটি ব্যবস্থাপনার ত্রুটি। সেই ত্রুটি যাদের বাড়িতে অথবা এলাকায় অথবা মার্কেটে হয় সেটি তাদেরই ত্রুটি।
এ ছাড়া বড় পরিসরে অর্থাৎ যারা দায়িত্বে আছেন সার্বিকভাবে এটি তাদের ত্রুটি। বঙ্গবাজারে আগুন এটিতো আজ প্রথম নয়। এসব জায়গা এত বেশি ঘনবসতি পূর্ণ যে, সামান্য কিছু অসাবধানতা হলেই অর্থাৎ সেটি রান্না করতে হোক, সর্ট সার্কিটে হোক, দুর্ঘটনাগুলো খুব ঘন ঘন হচ্ছে। আমি বলব, এক্ষেত্রে মার্কেট কমিটি আরও বেশি সচেতন থাকতে পারত।
পুরোনো ঢাকা এলাকাটি এত বেশি ঘনবসতি পূর্ণ, রাস্তাগুলোও বেশ সরু, সেখানে প্রবেশ করাও বেশ কঠিন। এখন মার্কেটের আশে পাশে যে ভবনগুলো আছে, সেগুলোতেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ফায়ার সার্ভিসের হেড কোয়ার্টারের কাছেই। সেজন্য হয়তো তাদের পক্ষে তাড়াতাড়ি পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এর পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীসহ সবাই আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করেছে। আমি বলব, ঘন ঘন অগ্নি দুর্ঘটনা খুবই দুঃখজনক এবং আশঙ্কার বিষয়।
কিছুদিন আগে হলো করাইল বস্তি, তারপর সাত তলা বস্তিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা হয়ে গেল। তবে আমাদের বড় বড় শহরগুলোতে বিশেষ করে ঢাকা অথবা চট্টগ্রামে এই দুর্ঘটনার বিষয়গুলে বেশি বেশি ঘটছে এবং ক্ষয় ক্ষতিও বাড়ছে।
অসাবধানতাবশত, বেখেয়ালিপনা অথবা তত্ত্বাবধানের অভাবে এমনটি হতে পারে। বিশেষ করে ভবনমালিক অথবা কর্তৃপক্ষ যারা আছেন তাদের বিষয়টি খেয়াল করতে হবে। এর আগেও যতটুকু মনে পড়ে কমপক্ষে আরও দুইবার আগুন লেগেছিল বঙ্গবাজারে। তবে এবারের অগ্নি দুর্ঘটনাটি ভয়াবহ ও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এমনকি রমজানের সময় এটি খুবই দুঃখজনক। আরও একটি ভয় আছে নীলক্ষেত বইয়ের দোকান নিয়ে। এরকম আরও অনেক এলাকা আছে যেগুলো খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় আছে।
সার্বিকভাবে যারা নগর কর্তৃপক্ষ, যারা মালিক, মার্কেট সমিতি যারা আছে, এজন্য তারা সবাই কিছুটা দায়ীতো বটেই। আরও একটি বিষয় হলো নাশকতা। এটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা সেটি জানা যাবে হয়তো পরে। ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনা জনসাধারণের জন্যও ভয়ের বিষয়। রাজউক যখন নবায়ন করে তখন এ ধরনের দুর্ঘটনাগুলো থেকে সচেতনতা বাড়াতে নবায়নের সুযোগ দেয়।
আমি দেখেছি, প্রতিবার আগুন লাগার পরে আগের চেয়ে নবায়ন ভাল হয়। এক্ষেত্রে দুর্ঘটনার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে আগের চেয়ে সুরক্ষিত করে তৈরি করা হয়, এটি দুর্ঘটনার সুফলও বলা যেতে পারে, যদিও তা কারও কাম্য নয়।
সেক্ষেত্রে সরকারও মালিকদের জন্য সমন্বয় করে দিতে পারে। রাজউক অথবা সিটি করপোরেশনও সমন্বয় করে দিতে পারে। এরকম দুর্ঘটনা থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভাল কিছু করা যায় কি না চিন্তা করা উচিত। যা কিছু হয়ে গেছে সেটিতো খুবই দুঃখজনক। এটি অনেক বড় সমস্যা। বিশেষ করে রমজান মাসে ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল।
এ ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনা জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি দুর্ঘটনা এড়াতে আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে এবং জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনয়ীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
নজরুল ইসলাম: নগরবিদ