পাইপলাইনে জ্বালানি আমদানি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে
ভারত থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটি অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক হবে এবং দুই পক্ষের জন্যই লাভ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের সারপ্লাস ডিজেল আছে এবং আমরা হচ্ছি তাদের সহজ মার্কেট অর্থাৎ সবচেয়ে কাছের মার্কেট। কাজেই আমাদের কাছে যদি তারা বিক্রি করে সেটি অপেক্ষাকৃত সহজ ও খরচ কম পড়বে।
এটি আমার মতে ইতিবাচক একটি বিষয়। কারণ আমাদের ডিজেল আমদানি করতে হতো কোথাও না কোথাও থেকে। পাইপলাইনে আসা যেমন সুবিধা তাদেরও যেহেতু সারপ্লাস আছে, কাজেই বিক্রির জন্য তাদের জন্য আমরা নিশ্চয়ই সহজ মার্কেট। এখন দেখার বিষয় আমরা আসলে কতটা লাভবান হচ্ছি এবং জনকল্যাণে কাজে লাগাচ্ছি ।
মনে করা হচ্ছে, পাইপলাইন সম্প্রসারণ করা হলে এর ফলে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী হবে জ্বালানি তেল সরবরাহ করার ক্ষেত্রে। জ্বালানি তেলটা যদি সড়কপথে না এনে পাইপলাইনের মাধ্যমে আনা যায় তাহলে এটা ভালো পন্থা হিসেবে গণ্য করা যাবে। কারণ এখানে আনা নেওয়ার খরচটা সাশ্রয়ী হবে এবং সময়ও কম লাগবে।
পাইপলাইনের সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগাতে বাড়নো হচ্ছে মজুত সক্ষমতাও। এখনকার তুলনায় তিনগুণ বেড়ে ডিপোর মজুত ক্ষমতা বাড়বে যা দিয়ে সম্ভব হবে উত্তরবঙ্গের চাহিদা মেটানো। তেলের চাহিদা যখন বেড়ে যায় তখন সমস্যায় পড়তে হয়, এক্ষেত্রে তেলও মজুতের পরিমাণ বাড়বে; তখন হয়ত আর সমস্যায় পড়তে হবে না। সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে পাইপলাইন সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।
প্রাথমিক অবস্থায় মৈত্রী পাইপলাইনে বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ টন ডিজেল ভারত থেকে বাংলাদেশে আসবে, যা পরবর্তীতে আরও ব্যাপক হারে বাড়বে।
দেশের কল্যাণে একসঙ্গে কাজ করার লক্ষ্যের কথা বলেছেন দুদেশেরই প্রধানমন্ত্রী। আমরা চাই আমাদের দেশের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হোক সেইসঙ্গে আমাদের মংলা বন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আমরা আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে ভারতের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিচ্ছি।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ভারতের সরকার এবং জনগণ অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীবাহিনীর অভিযানে আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। আমাদের বন্দর ভারতের ব্যবহার করতে দিচ্ছি কারণ, ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। ভাতৃপ্রতীম প্রতিবেশি রাষ্ট্র। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবাধ প্রবাহ, ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক সেতু বন্ধনসহ আমাদের দুদেশের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর করেছে এবং সেটি আরও বিস্তারিত হচ্ছে ত্বরান্বিত হচ্ছে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও। যার ফলে ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষেত্রেও যেমন সহজ হবে, দুদেশের মানুষই লাভবান হবে। এখন সেটি কতটা মসৃণ ও ফলপ্রসূভাবে সুসম্পন্ন হবে সেটিই আমাদের দেখার বিষয়।
মো. তৌহিদ হোসেন: সাবেক পররাষ্ট্রসচিব
আরএ/