স্যার বলাটা বড় নয়, পারস্পরিক সম্মানবোধ থাকাটা বড়
সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ ডাক নিয়ে মাঝেমধ্যেই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ ‘স্যার না বলায়’ রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ক্ষুব্ধ আচরণ করেছেন। বিশেষ করে ফেসবুকে এ আলোচনা বেশি হচ্ছে। ওই ঘটনার ইতি টানলেও আলোচনা-সমালোচনা যেন থামছে না। আমার মতে, বাড়াবাড়ি না করে পারস্পরিক সম্মান ও বিনয়ী হওয়া উচিত।
‘স্যার’ ডাক নিয়ে রংপুরের ডিসি যেটি করেছেন, সেটি বাড়াবাড়ি করেছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি এটি না করলেও পারতেন। কারণ, এ বিষয়ে সরকারি কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সুতরাং কে কী বলল বা না বলল, সেটি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করলেই পারতেন। এতে আসলে কারও মান বাড়ে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যেটি করলেন...এখানে সম্বোধন কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ের। তাই খুব ঘনিষ্ঠতা না থাকলে ভাই, আপা, দুলাভাই--এভাবে ডাকা ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে পদ অনুযায়ী, ডাকা যেতে পারে। যেমন সচিব সাহেব, ডিসি সাহেব, ইউএনও সাহেব--এমন করে ডাকলেও হয়। চেনা নেই, জানা নেই সেখানে হঠাৎই ভাই-আপা ডাকা ঠিক নয়। প্রয়োজনে নাম ধরেও ডাকা যেতে পারে।
এই ‘স্যার’ ডাক নিয়ে যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো সমস্যা না হয়, সে ক্ষেত্রে আসলে কাউকেই এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। যিনি ডিসিকে স্যার ডাকা নিয়ে অসুবিধা মনে করছেন, তিনি হয়তো আরেক জায়গায় স্যার ডাকছেন। আবার ডিসি-ইউএনওদের এসব নিয়ে আপত্তি করা উচিত নয়। কারণ, সম্মান জোর করে আদায় করা যায় না। সম্মানের লোক মনে হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আসবে। আবার যারা বিষয়টিকে উসকে দিচ্ছেন, তারাও ঠিক করছেন না।
পারস্পরিক সম্মানবোধ থাকাটা জরুরি। আবার যিনি কাজে গেলেন, তিনিও যদি সম্বোধন করতে না চান, তাহলে বিনয়ের সঙ্গে কাজটি করে চলে আসতে পারেন। জেলা প্রশাসক তার কর্মস্থলে সরকারের প্রতিনিধি। তিনি সরকার ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে সেতুবন্ধনকারী। তাই তাকে বেতন দিয়ে মাপা অথবা স্যার ডাকার বাধ্যবাধকতা কোনোটাই যুক্তিসংগত নয়।
কাজেই সবারই উচিত পরস্পরের সঙ্গে শালীন ও শোভন আচরণ করা। কিন্তু আজকাল অনেক ক্ষেত্রেই অন্যকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হয় না। এটি কোনো ক্যাডারের বিষয় নয়। এটি এখন সামাজিক ব্যাধি।
স্যার’ ডাকের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হলে উপর থেকে শুরু করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। সমাজে প্রতিষ্ঠিতজনেরা সকলেই নিজ অবস্হান থেকে তার প্রাপ্য সম্মান নিয়ে সজাগ রয়েছেন। তবে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিগণ ‘স্যার’ সম্বোধন করা না করা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া নানা অপ্রীতিকর ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে নিজেদের সম্মান রক্ষার্থে নেতিবাচক মানসিকতার ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলা উচিত এবং যথাযথ সম্মান না পেলেও নিজেদের সংযত রাখা অথবা মানিয়ে নিতে হবে।
তবে কাউকে সম্মান দিলে তার সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়-এই শিক্ষা যে আমরা কোথা থেকে পেলাম, জানি না। বরং যিনি অন্যকে সম্মান দিলেন তার সম্পর্কে অত্যন্ত ইতিবাচক ধারণা জন্মায়, আপন মনে হয়। একজন অপর জনকে, ছোট বড়কে,অধীনসহ-ঊর্ধ্বতনকে সম্মান করা-এটা তো পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। সমাজে সেই শিক্ষা জারুরি।
আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব