নতুন প্রজন্ম প্রতিবাদী হলে বিজয় আসেই
আমি যদি খুব কঠিনভাবে বলি, যারা ক্ষমতার দাপট দেখালেন, খুব সোজা কথায়, তারা তো জনগণের অর্থে লালিত পালিত জনগণের সেবক। জনগণের সেবার জন্য রাষ্ট্র তাদের খোরপোশ দিয়ে লালন-পালন করছেন। তারাই যদি এমন ন্যাক্কারজনকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই নাগরিক হিসেবে আমাদের ক্ষুব্ধ হওয়ার কথা। দ্বিতীয়ত, এ ধরনের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি এখন সর্বত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি। মানি মাসেল অ্যান্ড ম্যান পাওয়ারের দাপট দেখতে পাচ্ছি সর্বত্র। সেটি যদি এই ভাবে বিস্তার লাভ করে, অর্থ বিত্ত আর প্রভাব প্রতিপত্তির জোরে ব্যাংক লুট করে অপরাধীরা আজ পার পেয়ে যায়, বিদেশে অর্থ পাচার করে পার পেয়ে যায়, দুঃখজনক হলেও সত্যি হলো এ ধরনের একটি অপসংস্কৃতির মধ্যে আমরা বসবাস করছি। এখন সেটি যদি বিচারিক ব্যবস্থার মধ্যেও নেতিবাচকভাবে সংক্রমিত হয়, তাহলে সেটি নিঃসন্দেহে আমাদের আশাহত করে।
বিচারিক ক্ষমতা যিনি দেখালেন, মিথ্যা অহমিকা যিনি দেখালেন, তার ভয়ে তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি জড়োসড়ো হয়েছিল। একজন প্রধান শিক্ষক যিনি প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক, তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এটি কেমন আচরণ করলেন সেটি আমার কাছে কোনোভাবেই বোধগম্য নয়। তিনি তার নীতি নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে, শিক্ষার্থীদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন, আরেকজন ক্ষমতাবান নীতি বিবর্জিত বিচারকের কথায়। বিষয়টি যেকোনো সচেতন মানুষের বিবেককে নাড়া দেবে এবং আমরা সেটিই দেখেছি।
সেক্ষেত্রে আমি বলব, আমাদের শিক্ষার্থীরা যেভাবে অবস্থান নিতে পেরেছে, সেখানে আমাদের শিক্ষকরা কেন সেটি করে দেখাতে পারলেন না? আমার প্রশ্ন সেখানেই এবং স্বাভাবিকভাবেই আমি বলব সেটি খুবই দুঃখজনক একইসঙ্গে লজ্জাজনক। তাহলে শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনা দুটিই কি এখন অপসংস্কৃতির মধ্যে পড়ে গেল কি না! সেখানেই আমার ভয়। কারণ এধরনের ঘটনাগুলো কিন্তু নতুন কোনো ঘটনা নয়। আমরা নুসরাতের কথা ভুলিনি। নানা সময়ে নানাভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, বিশেষ করে বর্তমান সময়ে সেটি বেড়ে গেছে ব্যাপকভাবে, সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং যেকোনো মূল্যে এসব বন্ধ করতে হবে।
এখন কথা হচ্ছে, মেঘের ভাঁজে আলোক রেখা সদৃশ শিক্ষার্থীদের ভেতর আমি যেটি দেখলাম, আমরা সেটি এর আগেও দেখেছি। এর আগেও দেখেছি আমাদের নতুন প্রজন্ম যারা প্রতিবাদী হতে জানে, তারাই বিজয় আনে। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সেটিই করে দেখাল। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। শুভকামনা জানাই।
এর আগে আমরা গণ জাগরণ মঞ্চ দেখেছি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন দেখেছি। সবই করেছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। নতুন প্রজন্ম যদি নিজেরা অবস্থান নিতে পারে এমনকি আমি বলব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেখানেও কিন্তু শিক্ষার্থীদের আমরা শক্ত অবস্থান নিতে দেখেছি। সেটিই হচ্ছে জাতির জন্য আশার আলো। কিন্তু সেই আশার আলো নিভু নিভু হয়ে যায় যখন দেখি, রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি নানা দিকে নানাভাবে বাড়ছে একইসঙ্গে নীতি নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে দেশ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে কলুষিত করছে, সমাজ ব্যবস্থাসহ এমনকি পরিবারকে কলুষিত করছে। সেখানে আমি এখনো আশা করি, নতুন প্রজন্মের দিকেই আমরা তাকিয়ে থাকি।
বাংলাদেশ কিন্তু ছাত্র আন্দোলন, যেমন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের কথা যদি আমরা বলি, সেখান থেকেই তো তাদের শুরু। সেই সময়ে ছাত্রদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেখেছিলাম বলেই সেদিন জয় দেখেছিলাম। আজও আমরা দেখলাম ছাত্ররা প্রতিবাদ করতে জানে এবং জয়ী হয়।
কাজেই আমি মনে করি এই প্রজন্ম যদি হাল ধরে অপসংস্কৃতি রোধকল্পে এগিয়ে আসে সেটিই আমাদের দেখার বিষয়। নানা ধরনের অপসংস্কৃতি আমাদের রন্ধ্রমুলে জেঁকে বসেছে। সেই সময় ওরা যে সাহস করে বেরিয়ে এসেছে, আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি, তখনই একটি আশার আলো জ্বলে উঠে। সেক্ষেত্রে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যা করে দেখাল, সেটি সবার জন্য শিক্ষণীয় বিষয় এবং নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
রাশেদা কে চৌধুরী: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা।
এসএন