বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

পঞ্চাশবর্ষ উত্তর বাংলাদেশ

আজ সর্বজনবিদিত একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বিশ্ববাসী অত্যন্ত সম্ভ্রম ও শ্রদ্ধার সাথে মেনে নিয়েছে। বাংলাদেশের উদ্ভব এবং বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে উৎকীর্ণ হওয়াটা বিংশ শতাব্দীর একটি অত্যাশ্চর্য ঘটনা হিসেবে আজ সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশের মত ঘন বসতিপূর্ণ এবং আয়তনের দিক দিয়ে ছোট একটি দেশ সমগ্র বিশ্বের বিস্ময় হয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ছেড়ে বিলেতি শাসকেরা চলে যাবার পূর্বে কেবল মাত্র ধর্মের ভিত্তিতে আমাদেরকে জুড়ে দেয়া হয়েছিল হাজার মাইল দূরে অবস্থিত ভারত উপমহাদেশের পাকিস্তানের সাথে। আমরা হয়ে গেলাম পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দা। আমাদের জীবনে নেমে এসেছিলে তখন ঘোর অনামিশা। যার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হয়ে আছে আমাদের মত জীবন্ত বর্ষীয়ানেরা।

এই দাসত্ব শৃঙ্খল আফ্রিকার কালো মানুষদের উপর নেমে আসা উপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের শৃঙ্খলের চেয়েও কঠিন ছিল। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলো। ভাষার অধিকার থেকে শুরু জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার হারালাম। এক কথায়, আমরা পশ্চিম পাকিস্তানী প্রভুদের দাসে পরিণত হলাম; শিক্ষা ও পেশায় সকল ক্ষেত্রে আমরা বঞ্চিত হলাম। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ; এক দীর্ঘ ২৪- বৎসর আমাদের দেহ ও হৃদয়ের রক্তক্ষরণের পরেও আমরা আশা ছাড়িনি। আমরা আমাদের বাঙালীত্ব অর্জনের সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। আমাদের জীবন সংগ্রামের অগ্রভাবে এসে দাঁড়ালেন বাংলাদেশের অনেক ত্যাগী পরুষেরা এবং তাঁদের অগ্রভাগে এসে বিজয় পতাকা হাতে তুলে নিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সম্পূর্ণ বাংলার মাটি থেকে উৎসারিত, বাংলার মাটিতে শিকড় প্রোথিত মানুষটিই আমাদের ভয়ঙ্কর কালো গুহার মধ্য দিয়ে আমাদের সবাইকে নিয়ে পথচলা শুরু করলেন। ১৯৫২ সালে আমরা রাষ্ট্র ভাষা উর্দুর পাশাপাশি বাংলা ভাষার অধিকার ছিনিয়ে আনলাম পাকিস্তানী শাসকদের বজ্র-নিষ্ঠুর মুঠো থেকে। সেই সংগ্রামেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা ছিল অনন্য। তারপর একের পর এক আমরা আমাদের জাতীয় জীবনের ভয়ঙ্কর ও জটিল গ্রন্থির পার হয়ে, আমরা 'নব প্রভাতের শিখর চূড়ায়' এসে দাঁড়ালাম। ১৯৭১ সালের ২৬-মার্চ বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭- মার্চের বক্তৃতা মানব ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেল। এই বক্তৃতা ছিল দেশ পরিচালনার ব্যবস্থা-পত্র এবং যুগপৎ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তি সংগ্রামের সর্বকালের এবং বিশ্বের সর্বজন গ্রাহ্য সেরা বক্তৃতা। গণ-নায়কদের কণ্ঠে উচ্চারিত বিশ্বের সকল মুক্তি সংগ্রামের নায়কদের মধ্যে আমাদের জাতির পিতার বক্তৃতাই বিশ্বের সেরা স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জনের বক্তৃতা হিসেবে মানব ইতিহাসে উৎকীর্ণ হয়ে থাকবে। পাশাপাশি আমি জাতীয় সকল নেতাদের অবদানের কথা, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মানুষের জীবন উৎসর্গ এবং দুই লক্ষ মা-বোনদের সম্ভ্রম হানির রক্তাক্ত ইতিহাসের প্রতি অবনত চিত্তে দাঁড়িয়ে বলতে চাই যে, বাংলাদেশ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমার্থক। তিনিই আলোকবর্তিকা হাতে আমাদের তথা বাঙলীদের মুক্তিদাতা হিসেবে ইতিহাসে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন।
২৬ মার্চ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীরা "অপারেশন সার্চলাইট" নাম এক বিধ্বংসী সেনা অভিযান চালিয়ে দেশের অগণিত মানুষকে নিধন ও নির্যাতন করে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ী থেকে বন্দী করে পশ্চিম পাকিস্তনের কারাগারে আবদ্ধ করে তাঁর উপর নানাভাবে মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। কারাগারের পাশে তাঁর কবরও খোঁড়া হয়। অকুতোভয় জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি মুসলমান, আমি বাঙালী এবং আমি মানুষ, আমি একবারই মরব।

১৯৭২ সালের জানুয়ারীতে পাকিস্তানী শাসককুল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমানকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। উনি মুক্ত হয়ে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে বিলেত এবং ভারত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। উনি পুরোনো তেজগাঁও বিমানবন্দর অবতরণ করে তাঁর প্রিয় সহকর্মী তাজউদ্দীন আহমেদ সহ অন্যান্য নেতাদের সাথে মিলিত হন এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং মাথা তুলে তাঁর প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথের 'দুই বিঘা জমি' কবিতা থেকে আবৃত্তি করলেন -"নমো নমো মম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি। গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি”। বঙ্গবন্ধু বিলেত ও ভারত হয়ে নিজের প্রাণ-প্রিয় স্বাধীন সার্বভৌম দেশের মাটিতে পা দেবার আগেই উনি রবীন্দ্রনাথের গান --"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি-" কে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে চূড়ান্ত করেছিলেন। পুরোনো তেজগাঁও বিমানবন্দর নেমেই উনি নিজ গৃহে না গিয়ে দেশের মানুষদের সাথে মিলিত হবার জন্যে সেদিনের রেসকোর্সে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) ফিরে গেলেন। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এবং প্রায় দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম বিসর্জনের বিনিময়ে আমাদের দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। আমি আমাদের আলোর দিশারী বঙ্গবন্ধু, তাঁর সহকর্মী ও তাঁর স্বজন, জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ-আমাদের সাহায্যকারী দেশ, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকাকে স্মরণ করে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের অকল্পনীয় হিরণ্ময় ক্ষণকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

দেশে ফিরে এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পার্লামেন্টারী প্রথায় স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। তাঁর নির্দেশে নতুন করে স্বাধীন বাংলাদেশের গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করা হলো যার প্রধান স্তম্ভগুলো ছিল জাতীয়তাবাদ, অসম্প্রদায়িকতা, গঠনতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র। উনি পাকিস্তানীদের পরিত্যক্ত একটি শ্মশান ভূমিকে দেহ-প্রাণ ঢেলে দিয়ে দেশ গড়ার কাজে নেমে পড়লেন এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত ভঙ্গুর দেশকে নব চেতনায় উদ্ভুদ্ধ করে খুব কম সময়ের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্য অর্জন করলেন। কিন্তু বাঙালীর ভাগ্যে সুখ চিরজীবি হল না। আবার শকুন পড়ল এই বাংলায়। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের আগষ্ট মাসে তথাকথিত কতিপয় বিপথগামী মিলিটারী অফিসারদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সামরিক অভ্যুত্থানে সপরিবারে নিহত হতে হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশের অভ্যুত্থান যেমন ছিল যুগান্তকারী ঘটনা তেমনি একইভাবে পরিবারের ১৭-জনকে নৃশংসভাবে নিধন করার ইতিহাস বিশ্বে নজীরবিহীন।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কের এর আগেও আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন কিন্তু তা ছিল ব্যক্তির হাতে ব্যক্তির নিধন কিন্তু স্ব-পরিবারে নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ ইতোপূর্বে পৃথিবীর ইতিহাসে কখনও সংঘটিত হয়নি। বিদেশে অবস্থান করার কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দু'ই আদরের কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা, আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক দুঃখ কষ্ট সাধনার মধ্য দিয়ে পিতার হাতের আলোক বর্তিকাটি তুলে নিয়ে বর্তমানে আমাদেরকে উন্নতির মহাসড়কে নিয়ে যাচ্ছেন। উনি রবীন্দ্রনাথের কথায়- ‘অজস্র মৃত্যুজয়ে পার হয়ে আজ নব প্রভাতের চূড়ায়’ দাড়িয়েছেন । বর্তমানে দেশের সকল ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নতি ও সাফল্য ঈর্ষণীয়। আমরা উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হব আজ হতে বিশ বছর সময় কালের মধ্যে। আজ অতিমারীর দুঃসময়েও আমাদের দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে ।

তারপরেও কথা থেকে যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যার মূল নায়কেরা কে বা কোন চক্র, আমরা আজও তা সঠিকভাবে জানিনা । দেশী ও বিদেশী সেই চক্রটি কি নিশ্চিহ্ন হয়েছে ? আমরা জানি না । তারা কি সুযোগ পেলেই আমাদের বাঙালীত্বকে নিধন করবেনা। আমরা কি সম্পূর্ণ নিষ্কন্টক হতে পেরেছি ? এই প্রশ্ন আজও আমাদেরকে তাড়িত করে। অসা¤প্রদায়িক ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সাধারণ কর্মজীবি মানুষদের বাংলাদেশ আজ কি পাকা পোক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে ? আমরা যারা সাধারণ নাগরিক, তাদেরকে জাগরণে ও নিদ্রায় আজও এই প্রশ্ন তাড়িত করে।

বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত জাতীয় চার নিতীমালা কি সুস্থ ও অবিকল আছে ? মৌলবাদ কি এদেশ থেকে সম্পূর্ণ দূরীভূত হয়েছে ? আমরা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেরা চাই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে মানুষে মানুষে কোন বিভেদ থাকবেনা, মৌলবাদ চিরতরে দূরীভূত হবে। বঙ্গবন্ধুর অনেক কষ্টে অর্জিত আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে নব্য রাজাকার ও আলবদরদের উত্থান দেখতে চাইনা। দেশী ও বিদেশী শত্রু যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজও মানতে পারেনি, তারা কি সমাজ হতে সম্পূর্ণ বিতাড়িত ? আমি জানি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা এ সব ব্যাপারে সজাগ আছেন। আমরা বঙ্গবন্ধুর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পরে যে নিষ্ফলা ও নিষ্ঠুর শাসকেরা দেশ পরিচালনা করেছিলেন,তাদের লৌহ আলিঙ্গণে আর আমরা আবদ্ধ হতে চাইনা। সুস্থ গণতন্ত্র চর্চা আমাদের দেশে অব্যাহত থাক। এটাই আমাদের কামনা। আমার বিশ্বাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভ্যতার সংকটে বর্ণিত উচ্চারণ আমাদের জীবনে ধ্রæব হোক যে; একদিন সভ্যতা, সৌহার্দ্দ্য, সম্প্রীতি ও মানবতার সূর্য পূর্ব দিগন্ত থেকেই উদিত হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্ম-শতবর্ষে এবং স্বাধীনতা অর্জনের পঞ্চাশ বছরের প্রান্ত এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ বাক্য আছে -টাকা নষ্ট হলে কিছুই নষ্ট হয় না, স্বাস্থ্য নষ্ট হলে কিছু নষ্ট হয় কিন্তু চরিত্র নষ্ট হলে সবই নষ্ট হয়। যে নীতিমালা, প্রত্যয়, সংগ্রাম ও ভালবাসার জোরে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে, সমগ্র দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে তার যেন ব্যত্যয় না ঘটে। লখিন্দরের জতুগৃহ দিয়ে কখন আবার সাপ ঢুকে পড়বে; তার নিশ্চয়তা আছে কি? সেই সাপের বংশধর ও জাতকেরা দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে কি? সুতরাং, আমাদের গা-ছেড়ে দেয়ার কোন অবকাশ নেই। সম্প্রতি দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে সে চক্রান্ত আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে। বাংলাদেশের মানুষদেরকে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়ে আমি আমার সামান্য মতামতের ইতি টানছি। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। দেশের জয় হোক, কল্যাণ হোক দেশের মানুষের।

আতাউর রহমান: অভিনেতা, নাট্য নির্দেশক, লেখক একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরষ্কার প্রাপ্ত

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া