দেশে সীমাহীন দুর্নীতি এবং আরাভ ইস্যু
আমি মনে করি আরাভ ইস্যুতে আরও প্রমাণ দরকার। শুধু মাত্র ভাসা ভাসা কথার উপর ভিত্তি করে আমরা নিশ্চয়ই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারি না। আমার মনে হয়, বিষয়টি আরও পরিষ্কার হওয়া দরকার। তবে আমি যেটি বলতে চাই যে, আমাদের দেশের অর্থ বাইরে পাচার হচ্ছে এবং উন্নত দেশে টাকাটা যাচ্ছে। এটি শুধু যে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে তাই না, আমরা ভালো করেই জানি এই পাচারকৃত অর্থ আমেরিকা, লন্ডন, কানাডাসহ বিভিন্ন উন্নত দেশেই যাচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, আমেরিক কানাডাতে এলিট শ্রেণির জন্য বাড়ি কেনা হচ্ছে। কানাডাতে বাড়ি ক্রয়ের বিষয়ে বেগম পাড়ার কথাও চলে আসে। এসবই এখন প্রকাশিত।
পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে ইংল্যান্ড ও কানাডার সরকার ভালো করেই জানে। আমেরিকার সরকার খুব ভালো করেই জানে যে, এটি বৈধ অর্থ নয়। কারণ এত টাকা বাংলাদেশ থেকে বহন করে নেওয়ার কথা নয়। তারা হয়ত বলবে যে টাকাটা সিঙ্গাপুরের মাধ্যমে এসেছে এবং তারাও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। আমার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে যত দুর্নীতি হচ্ছে, এটির ফায়দা নিচ্ছে উন্নত দেশগুলো। টাকাটা যদি বাংলাদেশেই রি-ইনভেস্ট হতো ক্ষতি ছিল না। আমাদের দেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি যদি গুরুত্বের সাথে দেখি, তাহলে দেখা যাচ্ছে সমাজের তথাকথিত এলিট শ্রেণি অর্থাৎ নকল এলিট শ্রেণির ছেলেমেয়রা সবই বিদেশেই থাকে। যারা বিদেশে থাকে, বিদেশে বাড়িঘর করছে, তাদের নামও আমরা জানি এবং আমরা এটিও জানি যে, এগুলোর সমাধান এত সহজে হবে না। জনগণের মধ্যে সচেতনতা থাকতে হবে। তবে এটির জন্য আইন কানুন দরকার। বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে বসা দরকার। টাকাটি ভিনদেশে যাচ্ছে কীভাবে ?
আমি সবসময়ই বলি, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রতিবছর যে সার্ভে করে সেক্ষেত্রে প্রতি বছরই আমরা দেখি যে, বাংলাদেশ বেশ খারাপ অবস্থায় আছে। সিআইডি কখনো তদন্ত করে না, টাকাটি কোন অবস্থায় কোন কারণে কীভাবে দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
আমার কথা হচ্ছে, দেশের মধ্যেই দুর্নীতির উপাদান কিন্তু সবসময়ই ছিল। এখন সব দেশের যদি সহযোগিতা না থাকে, তাহলে তো আমরা এগুলো থামাতে পারব না। আজকে যেসব উন্নত দেশের কথা বলি, ইতিহাস বলে, তারাও কিন্তু দুর্নীতিকে আশ্রয় প্রশ্রয় করেই এ পর্যন্ত এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। ভাষা আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলিট শ্রেণির জন্ম দিয়েছে। আবার সেই শ্রেণিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বর্জন করেছে দেখেছি। এইসব শিক্ষিত এলিটের কয়জন সন্তান দেশে পড়ালেখা করছে? তাদের ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশে পড়ে না। চাকরি জীবন শেষে এরাও বিদেশে পাড়ি জমায় উন্নত নিরাপদ জীবনের আশায় এবং সে উদ্দেশ্যেই বিবেকহীন হয়ে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে নিয়ে যায়। একজন দুইজন ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশের সন্তান সেটি আমলা, অর্থনীতিবিদ, মিডিয়ার মুখপাত্র ইত্যাদির খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদের সন্তানরা সব বিদেশেই থাকে। দিনে দিনে বাংলাদেশে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
কাজেই আমার কথা হচ্ছে, এই আরাভ ইস্যু মূলত দেশের রন্ধ্রমূলে গজিয়ে উঠা যে দুর্নীতির মহিরুহ আমরা দেখছি, সেক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটি বিপদ সংকেত, যেখান থেকে আমাদের পরিত্রাণের পথ খুঁজে পেতে এখনই সচেতনতা দরকার।
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্লেষক
আরএ/