রাজধানী ঢাকা আজ দূষণের নগরীতে পরিণত হয়েছে
ঢাকা মহানগরী বহুদিন থেকেই বায়ু দূষণের শহর। এটি আজ নতুন কোনো খবর নয়। একইভাবে ভারতের নয়াদিল্লী এবং চীনের রাজধানী বেইজিং সর্বত্রই দূষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে— বিশেষ করে দিল্লী এবং ঢাকা বায়ু দূষণের শহর হিসেবে এখন পরিচিত। আমরা দেখতে পাই, প্রতিনিয়ত এখানে নির্মাণ কাজ চলছে। প্রায় সব এলাকাতেই নতুন নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে, পুরানো রাস্তা খুঁড়ে বানানো হচ্ছে নতুন অর্থাৎ নানা রকমের নির্মাণ যেখানে ধুলিবালি ও ধোঁয়ায় ঢাকা আচ্ছন্ন হয়ে থাকে।
ঢাকা শহরে আজকাল বাস, প্রাইভেট গাড়ি, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। যার ফলে বায়ু দূষণের অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে এটি। আমরা জানি, চারদিকে অনেক ইটের ভাটা বিশেষ করে শহরের বাইরে গেলেই দেখা যায়, সেগুলো থেকে ধোঁয়া বিচ্ছুরিত হচ্ছে। বিভিন্ন রকম নির্মাণ কাজ বেড়ে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন ঘর-বাড়ি, শিল্প-কারখানা তৈরির কারণে নানাভাবেই বায়ু দূষণ হচ্ছে।
আমার মতে, সার্বিকভাবে আমাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি খুব দুর্বল। কেউ কোনো আইন মানতে চাচ্ছে না। ইটের ভাটা চলছে। গাড়ি ঘোড়া বাড়ছে। দেখা যায় খুবই নিম্নমানের গাড়ি শহরে চলাচল করে যেখান থেকে দূষণ হয়। নির্মাণকাজে কোনোরকম কন্ট্রোল নাই। অন্যদিকে কাজের সন্ধানে শহরে মানুষ বাড়ছে, বাড়িঘর বাড়ছে। সবখানেই নিয়ন্ত্রণের বড় অভাব। যেকারণে ঢাকার বাতাস দূষিত। রাজধানী ঢাকার মতোই ভারতের রাজধানী দিল্লিরও একই অবস্থা। দিল্লিও ঢাকার মতোই বড় শহর ও রাজধানী। রাজধানী সুন্দর রাখতে পরিকল্পিত বিধিগত উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না এবং যে কারণে দিনকে দিন অবস্থা খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
বাংলাদেশ একটি কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একটি ছোট দেশ আয়তনে জনসংখ্যার তুলনায় খুবই ছোট। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১২০০ এর বেশি মানুষ বাস করে। বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম জনবহুল দেশ। বাংলাদেশে আজ ১৭ কোটি মানুষ যেটি ৭১ সালে ছিল মাত্র ৭ কোটি, বঙ্গবন্ধু রেখে গেছেন সাড়ে ৭ কোটি। এখন গ্রামেও মানুষ বেড়েছে। ঘরবাড়ি বেড়ে যাচ্ছে। একইহারে দূষণ বাড়ছে।
বাংলাদেশ কঠিন ভৌগলিক বাস্তবতার দেশ এবং নিয়মকানুন পরিকল্পনা ভীষণ দুর্বল। কেউ কারো কথা শোনেন না। সরকারের যারা কর্তা ব্যক্তিরা দূরে থাকেন, তারা এয়ার কন্ডিশন বাড়িতে থাকেন, গাড়িতে বেড়ান, এরা দেখেও আসলে অনেক কিছু দেখেন না। অনেকের হয়ত সদিচ্ছা আছে তবুও কিছু করতে পারেন না। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩ শতাংশ। প্রতি বছর যদি ১ শতাংশ করেও বাড়ে তাহলেও ১৭ লক্ষ লোক বাড়ছে। বায়ু দূষণের কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা। যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ তখন একটি গরিব দেশ ছিল। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের অনেক সীমাবদ্ধতা আমরা দেখেছি। আজ আমরা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে আখ্যায়িত করে থাকি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে কাজ করছেন।
দেশের উন্নয়ন হচ্ছে এ কথা সত্য। একসময় মাথাপিছু আয় ছিল ৭০ থেকে ৮০ ডলার। এখন সেটি ৩ হাজার ডলার। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নতি আমরা দেখি। সেখানে সরকারের সাফল্য নিশ্চয় আছে। জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের সাফল্য আছে। শিল্পপতিদের সাফল্য আছে। কিন্তু এইসব উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ অবক্ষয় ও দূষণও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
যদি না খুব কঠিনভাবে পরিকল্পনা করা না হয়— আমাদের এতটুকু দেশে এত মানুষ, অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে উঠা কলকারখানা, অত্যধিক যানবাহন সবই সঠিক শৃঙ্খলা ও সমন্বয়ের অভাবে আজ বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, শব্দদূষণসহ সকল দূষণের সৃষ্টি করছে। যা জনসাধারণের জীবনযাপনের উপর ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। একইসঙ্গে খুবই দুঃখজনক সত্যি হলো নগরের এইসব নানারকম দূষণ সাধারণ মানুষের জীবনযাপনকে অতিমাত্রায় দুর্বিষহ করে তুলেছে।
নজরুল ইসলাম: নগরবিদ
আরএ/