দুর্নীতি প্রতিরোধে তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে
বর্তমান সময়ে দুর্নীতি যেভাবে আখড়া গেড়ে বসেছে সেটি কোনোভাবেই সুখকর নয়। এর কারণ হলো, যারা দুর্নীতি করেন তাদের কোনো জবাবদিহি নেই। তাদের কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। এখানে যারা দুর্নীতি অথবা অনিয়মের জন্য দায়ী, যাদের কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এদেরই তো দুর্নীতি দমন করার কথা। কিন্তু এরাই মূল হোতা এবং এরাই দুর্নীতিকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে এবং আপাত অর্থে লাভবান হয়।
দেশের প্রধানমন্ত্রীও তার নিজের অবস্থান থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করেন না। কাজেই যাদের এই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ দায়িত্ব, প্রধানমন্ত্রীর কথার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের উচিত হবে, কারো প্রতি ভয় ও করুণা না করে, যারা দুর্নীতি করে, তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা দৃষ্টান্তমূলকভাবে। সেটি সম্ভব হলে আমরা মনে করি যে, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কারণ আমি মনে করি, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ কোনো রকেট সায়েন্স না যে, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বিভিন্ন দেশের দিকে তাকালে আমাদের অভিজ্ঞতা কিন্তু সেটিই বলে।
কোনো অপরাধই সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ হয় না যদি না যারা অপরাধী তারা বিচারহীনতা উপভোগ করে, তারা যদি সুরক্ষা পায়, তাহলে সেই অপরাধ বিস্তার লাভ করবে এটিই কিন্তু স্বাভাবিক। কাজেই দুর্নীতি রোধের মূল চাবিটি হচ্ছে যারা দুর্নীতি করে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে যারা সিন্ডিকেট করে, যারা ক্ষমতাবান, যারা রাজনীতির সঙ্গে, যারা প্রশাসনের সঙ্গে, সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের সব ভয় ও করুণার ঊর্ধ্বে থেকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এটি করতে পারলে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি দমনের যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটি কার্যকর করা সম্ভব হবে।
সেক্ষেত্রে জনসচেতনা বৃদ্ধি করা একান্তভাবে দরকার। সুধী সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ইত্যাদিসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তারা দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করবে। যারা করছেন, ভালোভাবেই করছেন, কোনোপ্রকার পক্ষপাতিত্ব না করে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করবেন। দুর্নীতি প্রতিরোধে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ করেছে, নতুন প্রজন্মের তরুণরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
আমাদের তরুণ প্রজন্ম যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। তাদের সোনার বাংলা বিনির্মাণে স্বপ্ন ছিল। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর নতুন প্রজন্মের সামনে দাঁড়িয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য উৎসাহিত করতে হবে, এমন চিন্তা তাদের ছিল না। এ নিয়ে সবসময় দ্বিধা ও দ্বন্দ্বে থাকি।
সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমাদের প্রজন্ম ব্যর্থ হয়েছে। তারপরেও তাদের কাছে আহ্বান করছি, সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে। কারণ আমরা বিশ্বাস করি তরুণ প্রজন্ম জাতির ভবিষ্যৎ। আমাদের প্রজন্ম তরুণ বয়সে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, প্রজন্ম তরুণ বয়সে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। তরুণ প্রজন্মকে দুর্নীতিবিরোধী কাজে উৎসাহিত ও সম্পৃক্ত করতে টিআইবি নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে দুর্নীতি সম্পর্কিত বিষয় কমিউনিটির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে জানানো হচ্ছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান: নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি।
এসএন