শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

অগ্নিঝরা ৭ মার্চ স্বাধীনতার চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা

বাঙালি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসে এমন কিছু ভিত্তিসূচক তারিখ ও মাস আছে, যা আলোকোজ্জ্বল। মার্চ এমনই এক মাস, যা ইতিহাসের উজ্জ্বল রশ্মি বিকিরণ করে। ঐতিহ্যগতভাবে এ মাসের শুরু থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে দৈনিকগুলোতে লেখা পত্রস্থ হয়। এ শুধু প্রথা নয়, প্রয়োজন। কারণ, ইতিহসের চর্চা জরুরি। তবে এসব রচনা নতুন প্রজন্মের কতজন পড়ে, কতজন হৃদয়ঙ্গম করে, আমার তা জানা নেই। আমি নিজেও লিখি, বহুকাল ধরেই ইতিহাসের ঘটনাবলি লিখি। আমি ঐতিহাসিক নই, স্বাধীনতার জাতীয় ইতিহাসের একটি পর্যায়ের প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশগ্রহণকারী মাত্র। সে কারণে চোখে দেখা সময়ের স্মৃতিচারণা করি এবং সেই সময়ের পূর্বাপর পরিপ্রেক্ষিত জানার চেষ্টা করি।

পাকিস্তান রাষ্ট্রের শুরু থেকেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর চলতে থাকে নতুন মাত্রার শোষণ। অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামরিক ও ধর্মকেন্দ্রিক সেই শাসন-শোষণ পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিকে নতুন চেতনায় জাগরূক করে। বাংলা ভাষার প্রথম আত্মানুসন্ধান ঘটে ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, যখন পাকিস্তান গণপরিষদের বৈঠকে ইংরেজি ও উর্দুকে দেশের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে সংখ্যালঘিষ্ঠ মানুষের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার এই জবরদস্তির বিরুদ্ধে প্রথম সরব প্রতিবাদ করেন বাঙালি গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।

তিনি উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে জোরালো দাবি তোলেন। এই ঘটনা বাঙালি গণমানসে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এরপর পাকিস্তানের রাষ্ট্রপিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার মাটিতে এসে উর্দুকে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করলে বৃহত্তর আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। বাঙালি ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ঘটে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তপাত। এসব প্রতিবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার উন্মেষ ঘটে। সেই উন্মেষ বৃহত্তর গণবিক্ষোভের জন্ম দেয় এবং ক্রমান্বয়ে অপ্রতিরুদ্ধ জাতিসত্তার বিকাশ ঘটায়।

কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রের নিত্য শোষণ-বঞ্চনার পরও বাঙালি তার আত্মসম্মান ও মর্যাদার সংগ্রাম থেকে কখনো পিছপা হয়নি। তারা শুরু করে রাহুমুক্তির আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের আইয়ুববিরোধী শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং সব শেষে ছাত্রসমাজের ঐতিহাসিক ১১ দফা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার ব্যাপক উন্মেষ ঘটে। এই গণ-আন্দোলনের তীব্রতায় পাকিস্তানের ‘লৌহমানব’ বলে চিহ্নিত ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের পতন ঘটে। জাতীয় চেতনা ও মননের সর্বোত্তম প্রতিফলন ঘটে ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ঘোষণায়-‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, যা ছিল কার্যত স্বাধীনতার ঘোষণা। ১৯৭০ সালে যুক্ত পাকিস্তানের প্রথম ও শেষ সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের সার্বিক পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে থাকে। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা গণরায় মেনে নিতে অস্বীকার করেন। ফলে গণমানুষের আন্দোলন দ্রুত সশস্ত্র আন্দোলনের পথে ধাবিত হয়। এরপর রক্তাক্ত নানা পথপরিক্রমায় সামরিক ও ধর্মকেন্দ্রিক শাসন-শোষণের পিঞ্জর ভেঙে স্বাধীনতার পথ উন্মুক্ত হয়।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শুরু থেকেই বিস্ময়করভাবে জেগে ওঠে পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান। ১ মার্চ আকস্মিকভাবে পাকিস্তান জাতীয় সংসদের বৈঠক স্থগিত করেন সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। ফলে গোটা পূর্ব পাকিস্তান বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাভবনের সামনে ছাত্রসমাজ উত্তোলন করে বাংলাদেশের নতুন পতাকা। গোটা বাংলা মিছিলে মিছিলে ভরে ওঠে। ৩ মার্চ ঢাকার পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে পাঠ করা হয় স্বাধীনতার ইশতেহার। এরপর আসে জাতীয় ইতিহাসের অগ্নিঝরা মার্চের ৭ তারিখ, যেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, সেদিনের রমনা রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক এক ভাষণে জাতির সামনে উপস্থাপন করেন স্বাধীনতার চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা। সেই নির্দেশনা শুধু একজন সুদক্ষ রাজনীতিবিদের ছিল না, ছিল দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সর্বাধিনায়ক ও রাষ্ট্রনায়কের। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে বাঙালির অবিসংবাদী নেতা পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে শেষবারের মতো সতর্ক করেন, ঐতিহাসিক এক অসহযোগ আন্দোলনের সূত্রপাত করেন, এমনকি জাতিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দেন। এই মার্চেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালি বিক্ষোভকারীদের ওপর যত্রতত্র গুলি চালাতে থাকে। এরপরও গণতান্ত্রিক নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু দেশের সামরিক প্রেসিডেন্ট ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনা বন্ধ করেননি। মার্চের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়া সেই আলোচনা ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর একটি প্রতারণামূলক কৌশল।

বাঙালি নিধন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আলোচনা অসমাপ্ত রেখে ২৫ মার্চ গোপনে দেশের পশ্চিম অংশে চলে যান ইয়াহিয়া খান। ওই রাতেই ঢাকার বুকে নৃশংস গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। শান্তিপূর্ণ পথে বাঙালির ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সব পথ যখন বন্ধ হয়ে যায়, সামরিক শাসকরা যখন নির্বাচনী রায় সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে রাতের অন্ধকারে বর্বরতম গণহত্যা শুরু করেন, বাঙালির অবিসংবাদী নেতাকে যখন তারা বন্দী করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যান, ঠিক তার আগে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

এই মার্চ মাসেই শুরু হয় ইতিহাসের সর্ববৃহৎ গণদেশত্যাগ। পাকিস্তানি সেনাদের নির্বিচার-নিষ্ঠুরতা থেকে বাঁচতে মানুষ দলে দলে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয়ের মাটিতে পাড়ি দিতে থাকে। সেই গণদেশত্যাগ এমনই সুবিশাল হয় যে সর্বমোট এক কোটি মানুষ-হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-নির্বিশেষে ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্র স্বাধীনতার পাঁচ দশক অতিক্রম করেছে। আমরা যাঁরা সেই ইতিহাসের প্রত্যক্ষদর্শী, একই সঙ্গে একাত্তরের সৈনিক, তারা সবাই বয়োজ্যেষ্ঠ হয়েছি। কিন্তু অগ্নিঝরা মার্চ তার গৌরব নিয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। একের পর এক নতুন প্রজন্ম এসেছে। তারা তাদের জাতির স্বাধীনতা সংরক্ষণে ইতিহাসের দিকে তাকাক, শ্রদ্ধাভরে অগ্নিঝরা মার্চের দিকে তাকাক, তাকাক সেই মার্চের দিকে, যে মার্চ গোটা জাতিকে একত্র করে স্বাধীন-সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল।

এ লেখায় আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি রাষ্ট্রপিতাকে, যিনি তাঁর জীবনের সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের পত্তন করেছিলেন। প্রত্যাশা, নতুন প্রজন্ম তাদের জাতীয় ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আজ ও আগামীর বাংলাদেশকে সব শোষণ-অবিচারের অবসান করবে। ১৯৭৫-পরবর্তী দুর্ভাগ্যজনক সময়ে, বিশেষত সামরিক ও আধাসামরিক রাষ্ট্রযন্ত্রের জাঁতাকলে নতুন প্রজন্মের একটি অংশ বিকৃত ইতিহাস পাঠ করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস নিজেই তার আপন সত্তা খুঁজে নিতে সক্ষম। আমরা যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের মানুষ, তাঁদের জন্য সেই জাগরণ অতীব আনন্দের। নতুনের এই উপলব্ধি ৩০ লাখ শহীদের রক্তরঞ্জিত বাংলাদেশকে স্বমহিমায় এগিয়ে নেবে, তারা বাংলাদেশ রক্ষা করবে-এই আমাদের প্রত্যাশা।

আমরা যখন অগ্নিঝরা মার্চ ও স্বাধীনতার ইতিহাসের কথা বলি, তখন স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় স্বাধীনতার শত্রু-মিত্রের চেহারাগুলো ভেসে ওঠে। বিশেষ করে ভেসে ওঠে সেসব ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী ও ঘৃণ্য মানবতাবিরোধীদের মুখ, যারা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর পক্ষ ধারণ করে সেদিন নির্বিচারে গণহত্যা, নারী নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ করেছিল আপন জনগোষ্ঠীর ওপর। ভাবতে বিস্মিত হতে হয় যে এসব ঘৃণ্য অপরাধ তারা করেছিল আবার পবিত্র ধর্মের নামে, পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার নামে!

আমার বিশ্বাস, বাঙালির নতুন প্রজন্ম আজ যতটা জেগে উঠেছে, তার চেয়েও বেশি জেগে উঠবে আগামী দিনে। তারা স্বাধীনতা ও প্রগতিবিরোধী মহলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। নবতারুণ্যের এই জাগরণ আমাদের আশান্বিত করে। এক সময় এক আরোপিত মনোজাগতিক আধিপত্যের কাছে জাতি আত্মসমর্পণ করেছিল। হয়তো করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু মাঘের কনকনে শীত শেষে গাঝাড়া দিয়ে, মাথা তুলে নবতারুণ্য জাতিকে নববসন্তে রাঙিয়ে দিয়েছে। পিঞ্জর থেকে বেরিয়ে আসার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে নবতারুণ্য তাদের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিয়েছে গোটা বাংলাদেশে। এ তো ইতিহাসেরই ফিরে আসা। নবপ্রজন্মের হাতে বিকশিত হোক সত্য ও সুন্দর। যে বাংলাদেশ প্রবীণরা পাকিস্তানের পিঞ্জর থেকে ছিনিয়ে এনেছিল, সেই বাংলাদেশ আমাদের নবীনদের হাতে নিরাপদ হোক। এর চেয়ে বড় প্রশান্তি আর কী হতে পারে?

হারুন হাবীব, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও কলামিস্ট

Header Ad
Header Ad

রাঙামাটিতে সিএনজি-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫

প্রতীকী ছবি

রাঙামাটির কাউখালীতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার রাবারবাগান এলাকায় একটি পিকআপ ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এফ আই ইসহাক জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। দুর্ঘটনার বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি।

বিস্তারিত আসছে...

Header Ad
Header Ad

রেফারির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে রিয়াল, ফাইনাল ম্যাচ বয়কটের হুমকি

ছবি: সংগৃহীত

কোপা দেল রে ফাইনালের আগে মাঠের লড়াইয়ের আগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে স্প্যানিশ ফুটবল অঙ্গন। হাইভোল্টেজ এই ম্যাচের রেফারিং নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে ম্যাচ-পূর্ব সকল আনুষ্ঠানিকতা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ক্লাবটির ভাষ্য, রেফারিদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে "স্পষ্ট বিদ্বেষ ও অসম্মান" ফুটে উঠেছে, যা তাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে রিয়াল জানায়, তারা ফাইনালের আগে প্রচলিত সকল প্রটোকল—ম্যাচ-পূর্ব প্রেস কনফারেন্স, মিডিয়ায় উন্মুক্ত অনুশীলন, প্রেসিডেন্টদের ডিনার এবং ঐতিহ্যবাহী ফটোসেশন—বর্জন করবে।

উত্তেজনার সূত্রপাত ক্লাবটির নিজস্ব চ্যানেল রিয়াল মাদ্রিদ টিভি-তে সম্প্রচারিত এক ভিডিও ঘিরে। সেখানে ফাইনালের রেফারি রিকার্দো দে বুরগোস বেংগোয়েচিয়ার প্রতি তীব্র সমালোচনা করা হয়। পরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আবেগপ্রবণ রেফারি জানান, এসব সমালোচনার প্রভাব তার ব্যক্তিগত জীবনেও পড়েছে। “যখন আপনার সন্তান স্কুলে গিয়ে শুনে—তার বাবা একজন চোর—তখন সেটা সত্যিই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা,” বলেন তিনি, চোখের পানি মুছতে মুছতে।

তবে বিতর্ক এখানেই শেষ হয়নি। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) পাবলো গনসালেস ফুয়ের্তেসের এক মন্তব্যে আরও জ্বালানি পড়ে আগুনে। তিনি বলেন, “রেফারিরা এক হচ্ছেন এবং রিয়াল মাদ্রিদ টিভির চাপ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।” এই বক্তব্যকেও হুমকি হিসেবে দেখছে রিয়াল।

স্প্যানিশ মিডিয়ায় জল্পনা ছিল—রিয়াল হয়তো ফাইনালেই অংশ নেবে না। তবে ক্লাবের পক্ষ থেকে পরে দ্বিতীয় বিবৃতিতে জানানো হয়, ম্যাচ বর্জনের কোনো পরিকল্পনা নেই। “রিয়াল মাদ্রিদ কখনও ফাইনালে না খেলার কথা বিবেচনা করেনি,” জানানো হয় স্পষ্ট ভাষায়।

এদিকে, লা লিগা প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের তেবাস ক্লাবটির এই অবস্থানকে 'ক্ষমতার খেলা' বলে আখ্যায়িত করেছেন। রেফারিরাও ইঙ্গিত দিয়েছেন, রিয়াল মাদ্রিদ টিভির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

উল্লেখ্য, এ ধরনের বর্জন রিয়ালের জন্য নতুন নয়। গত অক্টোবরে ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে যথাযথ সম্মান না জানানোর প্রতিবাদে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান বর্জন করেছিল ক্লাবটি। তাদের ভাষায়, “যেখানে সম্মান নেই, সেখানে রিয়াল মাদ্রিদ যায় না।”

Header Ad
Header Ad

আইন উপদেষ্টাকে জড়িয়ে ভারতের গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রতিবেদন, মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের একটি অনলাইন পোর্টালে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে প্রকাশিত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ ধরনের প্রতিবেদন সাংবাদিকতার নৈতিকতা ও সত্যের পরিপন্থী বলেও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতে ওই বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

এতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) নিউজ অ্যারেনা ইন্ডিয়া অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সম্পর্কে একাধিক মিথ্যা, মানহানিকর ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিযোগ উত্থাপন করেছে। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যাডভাইজার মিটস টপ লস্কর–ই–তাইয়েবার অপারেটিভ পোস্ট জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর অ্যাটাক’।

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, কাশ্মীরের পেহেলগামে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পর লস্কর-ই-তাইয়েবার একজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাক্ষাৎ করেছেন, যা পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং কাল্পনিক।

প্রতিবেদনে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের ভুল পরিচয়ে তুলে ধরা হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে বৈধভাবে পরিচালিত আলেম ও  ইসলামি সংগঠনগুলোর একটি প্ল্যাটফর্ম। প্রতিবেদনে যাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হেফাজতে ইসলামের নেতা, কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে তারা যুক্ত নন। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনামলে হাজার হাজার হেফাজত সদস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা ও সাজানো মামলার শিকার হন। অন্তর্বর্তী সরকারের বিচার ও আইনি সংস্কারের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আসিফ নজরুল তার দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকে হেফাজতের এই ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের আবেদন শুনতে হেফাজতের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন।

হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে আইন উপদেষ্টার বৈঠক যেদিন হয়েছে বলে নিউজ অ্যারেনা ইন্ডিয়া উল্লেখ করেছে, তার অন্তত তিন দিন আগেই ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার বিষয় ছিল শুধু আইনি প্রক্রিয়া ও মামলার তালিকা হস্তান্তর। বৈঠকের শেষে প্রতিনিধিদলের অনুরোধে একটি ছবি তোলা হয়, যা এমন সভায় প্রচলিত ও স্বাভাবিক রীতি।

হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব বাংলাদেশের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক সংলাপে অংশগ্রহণ করে। হেফাজতের নেতারা ঢাকায় পশ্চিমা দেশগুলোর দূতাবাসগুলোর সঙ্গেও নিয়মিত বৈঠক করে থাকেন, যা তাদের রাজনৈতিক বৈধতা ও আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার বিষয়টিকে প্রতিফলিত করে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ স্বাধীন মানবাধিকার সংগঠনগুলো পূর্ববর্তী সরকারের দমনমূলক কর্মকাণ্ড ও হেফাজতসহ বিরোধীদলীয় কর্মীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনাগুলো নথিবদ্ধ করেছে, সমালোচনাও করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সেই প্রতিবেদনগুলো প্রমাণ করে যে হেফাজতের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল, যা বর্তমান সরকারের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।

ভারতীয় গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তার ফেসবুক পেজে ভারতের নেতাদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আসলে বিষয়টি হলো ওই পোস্ট ছিল একজন ভারতীয়র লেখা, যিনি নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি নিয়ে সমালোচনা করেন। সেই পোস্টটি শেয়ার করে পেহেলগামে হামলার নিন্দা জানান আসিফ নজরুল। পরে সম্ভাব্য বিভ্রান্তির আশঙ্কা করে তিনি স্বেচ্ছায় পোস্টটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুছে ফেলেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা সকল গণমাধ্যমকে অনুরোধ করছি, যেন তারা সংবাদ প্রকাশের আগে যথাযথ যাচাই করে এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার নীতি অনুসরণ করে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে, নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। একই সঙ্গে পেহেলগামের হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

রাঙামাটিতে সিএনজি-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫
রেফারির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে রিয়াল, ফাইনাল ম্যাচ বয়কটের হুমকি
আইন উপদেষ্টাকে জড়িয়ে ভারতের গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রতিবেদন, মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি
নিজ দেশেই বিমান হামলা চালালো ভারত, ‘অসাবধানতা’ বলছে বিমান বাহিনী
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আরও ৮৪ ফিলিস্তিনি
আইনি নোটিশ প্রসঙ্গে যা বললেন ডা. তাসনিম জারা
ভারত-পাকিস্তান বিরোধে উত্তেজনা, শান্তির বার্তা নিয়ে এগিয়ে এলো ইরান
তারেক রহমানকে নিয়ে দ্য উইকের কাভার স্টোরি ‘নিয়তির সন্তান’
কুয়েটের ভিসি ও প্রো-ভিসিকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
মেধাসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বেনাপোলে ৬ নারী ছিনতাইকারী গ্রেফতার
‘সংস্কার না নির্বাচন’ এই খেলা বাদ দিয়ে বিচার করুন: সারজিস আলম
যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার মধ্যেই মস্কোয় গাড়িবোমা হামলায় রুশ জেনারেল নিহত
পোপ ফ্রান্সিসকে শেষ বিদায় জানাতে রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'বি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন
পাকিস্তানে বোমা বিস্ফোরণে নিরাপত্তা বাহিনীর ৪ সদস্য নিহত
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
নওগাঁয় পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার ১
শিগগিরই স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করবে সরকার: প্রেস সচিব
টাঙ্গাইলে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মাছ ব্যবসায়ী খুন