শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

গ্রামীণ রূপান্তরের অন্যতম অনুষঙ্গ কৃষি

উন্নয়ন বলতে অনেকে শহরের রূপান্তরকেই বুঝিয়ে থাকেন, কিন্তু উন্নয়ন ধারণাটি এতটা সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহার হয় না। উন্নয়ন শব্দটি গ্রামের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। দুই দশক ধরে আলোচনায় গ্রামের অনুপস্থিতি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। একসময় আমাদের গবেষণার অন্যতম ক্ষেত্র ছিল গ্রাম। এখনো আছে, তবে গুরুত্ব কমেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বর্তমান সময়ে এসে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজ, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে গ্রামের রূপান্তর সম্পর্কে ধারণা লাভ করাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। গ্রামের রূপান্তরকে বাদ রেখে শুধু শহরের রূপান্তর দিয়ে উন্নয়নের আলোচনা পরিপূর্ণ রূপ লাভ করে না।

বর্তমানে একটা বাস্তবতা তৈরি হয়েছে যেটাকে আমি বলছি ‘নিউ রুরাল’ বা ‘নতুন গ্রামীণ’। গ্রাম নিয়ে জনমানসে এক ধরনের জ্ঞানের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। জ্ঞানের ঘাটতি বেশ কয়েকটা জায়গাতেই রয়েছে। যেমন গ্রামের শ্রেণি কাঠামোর বিবর্তন। আগে মাতব্বর, মোড়ল, জোতদার, ভূমিহীন, ক্ষুদ্র কৃষক এদের নিয়েই সাজানো ছিল গ্রাম। গ্রামীণ মধ্যবিত্তেরও একটা ধারণা ছিল। এসব ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। গ্রাম নিয়ে আলোচনায় প্রথমেই এর শ্রেণি কাঠামোর বিবর্তনটা কেমন হয়েছে, তা দেখা প্রয়োজন। কিন্তু এসব বিষয়ে তেমন গবেষণা হয়নি।

গ্রামীণ রূপান্তরের অন্যতম অনুষঙ্গ গ্রামীণ কৃষি। বিষয়টি নিয়ে কিছু গবেষণা হয়েছে বটে তবে তাতে রূপান্তরের সার্বিক চিত্র পাওয়া যায় না। যেমন কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। শস্য, সবজি, ধান, মাছ উৎপাদন নিয়েও গবেষণা আছে। কিন্তু কৃষির রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে শ্রেণি কাঠামোয় কেমন বিবর্তন হলো, তা নিয়ে গবেষণার ঘাটতি রয়েছে। একসময় উৎপাদন ব্যবস্থায় কৃষি এবং গ্রাম সমার্থক ছিল। গ্রাম বললেই চোখের সামনে কৃষির বিষয়টি ভেসে উঠত। এখন নতুন রূপান্তরিত গ্রামের সঙ্গে কৃষি সমার্থক নয়, এটা আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু এর ব্যাখ্যাটা কী? এখানেও জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে।

গ্রামীণ কৃষির পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে উচ্চ ফলনশীল জাতের সম্প্রসারণ। এটি গ্রামীণ পরিবর্তনের একটা অনুষঙ্গ। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, একাধিক ফসল উৎপাদন প্রভৃতি মিলে কৃষির রূপান্তর ঘটেছে। আগে আমন ও তারপর কিছুটা আউশ ধান উৎপাদনই ছিল গ্রামীণ কৃষির মডেল। এখন আমন, আউশ, বোরোর পাশাপাশি কিছু সবজি, ফল আবাদ হচ্ছে। কৃষির পরিবর্তনের শুরু পূর্বাঞ্চল থেকে। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে সেখানে কৃষির বিবর্তন শুরু হয়। চাঁদপুরসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় এ রকম কিছু প্রকল্প ছিল। আশির দশক থেকে কুমিল্লা মডেল কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। এরপর দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি উৎপাদনে পরিবর্তন আসে। সেখানে মূলত গভীর নলকূপ দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির সেচের মাধ্যমে বোরোভিত্তিক চাষাবাদ শুরু হয়। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তরাঞ্চলের কৃষির পরিবর্তনে বড় ধরনের প্রভাব রাখে।

এখন কৃষির উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। পদ্মার ওপারে খুলনা থেকে বরিশাল-ভোলা পর্যন্ত কৃষির সম্ভাবনা রয়েছে। পদ্মা সেতু তৈরি হয়েছে, এখন সেখানে কেমন পরিবর্তন হবে, সেটাই দেখার বিষয়। গ্রামের কৃষির পরিবর্তনকালকে সবুজ বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করা হয়। সবুজ বিপ্লবের দুটি ঢেউ এসেছে বাংলাদেশে। একটা পরিবর্তন হয়েছে ভূউপরিস্থ পানিভিত্তিক প্রকল্পের মাধ্যমে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে উত্তরাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির মাধ্যমে। দক্ষিণাঞ্চলে এটি পরিষ্কার না কোন কোন প্রযুক্তির মাধ্যমে সেখানে কৃষির বিবর্তন ঘটবে, কিন্তু এ দুই পর্যায়ে ক্ষুদ্র কৃষক টিকে গেছে। কৃষি থেকে ক্ষুদ্র কৃষক উত্খাত হয়ে যায়নি।

সবুজ বিপ্লবের ভেতর তারা এক ধরনের অবস্থান করেই পুরো প্রক্রিয়ার অংশীদার হয়েছে। এখন ক্ষুদ্র কৃষিতে নতুন যে পরিবর্তন হচ্ছে সেগুলো কি কৃষির রূপান্তরের পরিবর্তন, না এটি গ্রামীণ পরিবর্তন? যেখানে শহর ক্রমে গ্রামে প্রবেশ করছে। অকৃষি খাত গ্রামে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে। গ্রাম আর কৃষির সমার্থক বিষয়টি এখন অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ বাস্তবতায় ক্ষুদ্র কৃষকের ভবিষ্যৎ কী? বাংলাদেশ মূলত ক্ষুদ্র কৃষকের দেশ ছিল বা এখনো আছে। এর ভবিষ্যৎ কী আমরা তা জানি না, এখানেও জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। এটাও চমকপ্রদ ঘটনা যে আমাদের নিরক্ষর কৃষক সমাজ দ্রুতই প্রযুক্তিকে গ্রহণ করে এগিয়েছে। প্রযুক্তি গ্রহণ করে কৃষির রূপান্তর মূলত নিরক্ষর কৃষকই করেছে। সাক্ষরতার হার গ্রামীণ পর্যায়ে খুবই কম। প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার হার গ্রামীণ পর্যায়ে কম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে থাকা কৃষকই কৃষির রূপান্তরে বড় ভূমিকা রেখেছে। তারা প্রযুক্তি গ্রহণ করেছেন, উৎপাদন বাড়িয়েছেন।

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গিয়ে দেখতে পেলাম চাষাবাদের আধুনিক মডেলগুলো এখন গ্রামেও উপস্থিত। যেমন প্লাবনভূমিতে মত্স্য চাষ, যেটা সাময়িক সময়ের জন্য হয়। বর্ষার সময়ে বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। সেখানে সম্মিলিতভাবে মাছ চাষ হচ্ছে। পানি নেমে গেলে সবাই আবার যার যার জমি চাষাবাদ করছে। পানিতে তলিয়ে গেলে কারো ব্যক্তিগত প্লটের সীমানা থাকে না, তখন তারা কীভাবে একত্রিত হয়ে মাছ চাষ করছেন, তাও পর্যালোচনার বিষয়। তারা সমবায় ভিত্তিতে মাছ চাষ করছেন, কিন্তু সেটি পুরোনো মডেল নয়। এটা এক ধরনের কার্যকর সমবায়। এক্ষেত্রে পরিবর্তনের অর্থটা কী? এটি কি শুধুই বাজারের প্রভাব?

গ্রামীণ বিবর্তনের শুরু অকৃষি বা কৃষিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড দিয়ে। ক্ষুদ্রঋণ এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাকের কার্যক্রম এখান থেকেই শুরু হয়েছে। তারা ঋণ দিত বটে, কিন্তু ঋণ নিয়ে গ্রামের মানুষ কী করছে এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার কী পরিবর্তন হয়েছে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায় না। এগুলো কি শুধু অর্থনৈতিক বিষয় না সামাজিক বিষয়ও রয়েছে? গ্রামের রূপান্তরের আরেকটা দিক হলো, গ্রামীণ যানবাহনের বৃদ্ধি। মানুষ ও পণ্য পরিবহনে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। ভ্যানগাড়িতে ইঞ্জিন সংযোজন করে তা ব্যাটারিতে চালানো হচ্ছে। নৌকা এখন ইঞ্জিনচালিত, সেটি আবার দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে। দোকানের সংখ্যা বিপুল আকারে বেড়েছে। চাহিদা বেড়ে ওঠায় শহরের পণ্য এখন গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে।

গ্রামীণ রূপান্তরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিবারের অর্থনৈতিক ভিত্তি। এমন যদি দেখা যায়, একজন কিছুটা কৃষি করছে, কিছুটা অকৃষি খাতে কাজ করছে, আবার তার কিছু সম্পদ শহরে আছে, তাহলে তাদের আমরা কী বলব? সার্বিকভাবে শহর-গ্রাম, কৃষি-অকৃষি ইত্যাদি সম্পর্কগুলো বোঝার ক্ষেত্রে জ্ঞানের ঘাটতি আছে। এটি বাস্তবতা।

এখন প্রশ্ন আসছে নগর ও গ্রামের সম্পর্কটা কী হবে? গ্রাম ও নগর কি সমার্থক হয়ে যাবে? এ কথা স্বীকার করতেই হবে, গ্রামে নগরায়ণের প্রভাব পড়ছে। তবে তার রকমভেদ রয়েছে। রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে জ্ঞানের ঘাটতি আছে। মূলত কারা যায় বিদেশে? গ্রামের লোকজন ও শহরের লোকজন বিদেশ যাচ্ছে। কিন্তু রেমিট্যান্স বেশি আসছে গ্রামেই। রেমিট্যান্সের ফলে গ্রামের রূপান্তর কেমন হলো? এক্ষেত্রেও জ্ঞানের ঘাটতি আছে। রেমিট্যান্সের ফলে গ্রামে এক ধরনের নাগরিক চাহিদা তৈরি হয়েছে। রাস্তাঘাট তৈরি হচ্ছে। গ্রামে এখন কমিউনিটি সেন্টার আছে, ১০০ জন দর্জি বসে ফ্যাশনেবল পোশাক বানাচ্ছে, গ্রামে এখন রেস্টুরেন্ট রয়েছে, আছে বিউটি পার্লার। এগুলোর অর্থনীতি যেমন আছে, তেমনি আছে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিকও। নগরের বিদ্যমান সুবিধার চাহিদা গ্রামেও তৈরি হয়েছে।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: নির্বাহী চেয়ারম্যান, পিপিআরসি ও চেয়ারম্যান, ব্র্যাক

এসএন

 

 

Header Ad
Header Ad

নারীরা কেন বয়সে ছোট পুরুষের সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন?

ছবি: সংগৃহীত

সম্পর্ক তৈরির বেলায় বয়স বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছে বয়স বিশেষ গুরুত্ব বহন করে না। তাই আজকাল নিজের বয়সের চেয়ে কম বয়সের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াচ্ছেন তরুণ–তরুণীরা।

পুরুষের ক্ষেত্রে এমন সম্পর্ক সমাজে স্বাভাবিক হলেও নারীর ক্ষেত্রে নয়। তবে আজকাল অনেক নারীই সঙ্গী বাছাই করার সময় বয়সের ফারাককে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন না। তাই তাঁরা এখন প্রেমিক বা দাম্পত্যসঙ্গী হিসেবে বেছে নিচ্ছেন কম বয়সীদের। ডেটিং অ্যাপের ট্রেন্ড বলছে, নারীরা পছন্দের ক্ষেত্রে সুন্দর মন, ব্যক্তিগত সুরক্ষা, আত্মবিশ্বাসী সঙ্গীকে খুঁজে নিতে চান। যেকোনো সম্পর্কে ভারসাম্য ও গতিশীলতাকে গুরুত্ব দেন।

ডেটিং ট্রেন্ডে নারীরা

মনোবিদেরা মনে করেন, এখনকার নারীরা নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে বেশ সচেতন। যেকোনো বিষয়কে সহজভাবে নিতে পারার মানসিকতা বেড়েছে, বিশেষত অগ্রসর বিশ্বে তাঁরা কোনো বিষয়ে ভীত নন। সম্পর্কে যুক্ত হওয়ার সময় আত্মবিশ্বাস ও আত্মসচেতনতায় গুরুত্ব দেন তাঁরা। ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষকে একচেটিয়াভাবে সফল কিংবা শক্তিশালী হিসেবে মেনে নিতে তাঁরা নারাজ। সঙ্গীর প্রতি আনুগত্যের চেয়ে নারীরা নিজের সুখ ও সামগ্রিক মঙ্গলকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এসব কারণেই অনেক নারী কম বয়সী পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে ডেটিং করছেন। অর্থাৎ ব্যক্তিগত পছন্দকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। কম বয়সী পুরুষ সঙ্গীর কাছ থেকে মানসিক, সামাজিক চাহিদাসহ অন্যান্য প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়েই সম্পর্কে জড়াচ্ছেন।

নানা কারণে সম্পর্কে জড়ানোর সময় নারীরা কম বয়সীদের গুরুত্ব দেন

নিজের চেয়ে কম বয়সী পুরুষ সঙ্গীর সান্নিধ্যে আসায় নারীদের মধ্যে নিজেদের আরও তরুণ ভাবার একধরনের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। কম বয়সী তরুণেরা নিজেদের সম্পর্কে সচেতন, নিজের স্বাস্থ্য ও রুচির বিষয়েও সজাগ। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা কম বয়সীদের পৃথিবীকে নতুন করে জানার সুযোগ দেয়। এসব কারণে সম্পর্কে জড়ানোর সময় নারীরা কম বয়সীদের গুরুত্ব দেন। নারীরা এখন আগের চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতার জন্য ছুটছেন। পারিবারিক বা সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বয়স্ক সঙ্গী খোঁজার প্রথাগত নিয়মে তাঁরা আর বিশ্বাসী নন। ব্যক্তিগত পরিপূর্ণতা, মানসিক সংযোগ ও আকর্ষণকে অগ্রাধিকার দিতেই নিজের পছন্দের সঙ্গীকে বেছে নিচ্ছেন।

বয়স কোনো বিষয় না

বয়সের ব্যবধান সম্পর্কে এখন নারীদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বেশ নমনীয়। তরুণদের তুলনায় নারীরা মধ্যবয়সীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর আগে অনেক চিন্তা করছেন। মধ্যবয়সী বা সমবয়সীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক রীতিনীতি বা লোকদেখানোর আচারকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে মনে করেন নারীরা। সম্পর্ক নিয়ে পুরোনো সামাজিক নিয়মগুলোকে চ্যালেঞ্জ করতে চান তাঁরা।

Header Ad
Header Ad

জুলাই-মার্চ মাসে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

চলতি অর্থবছরের (২৪-২৫) জুলাই-মার্চ মাসে তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মাসের দেশভিত্তিক রফতানি তথ্য থেকে বিষয়টি জানা গেছে।

জানা গেছে, এই সময়ে ৩০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যা পোশাক খাতের স্থিতিস্থাপকতা এবং সম্ভাবনা তুলে ধরে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

তথ্য থেকে জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মোট রপ্তানির ৪৯ দশমিক ৮২ শতাংশই রফতানি হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে। যার মোট বাজার মূল্য ১৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

এরপরেই রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার। এ বাজারে মোট রফতানি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক। যা মোট রফতানির ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। যেখানে কানাডার মোট বাজার অংশ ছিল ৯৬৩ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলার। যার বাজার অংশ ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের বাজারও গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যার রফতানি মূল্য ৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রফতানির ১১ দশমিক ১০ শতাংশ ।

প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ইইউতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বছরের পর বছর ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখিত সময়ে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং কানাডা ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, যুক্তরাজ্যে তৈরি পোশাক রফতানি ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ এর একটি সামান্য প্রবৃদ্ধির হার প্রদর্শন করেছে।

ইইউর মধ্যে, জার্মানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ৩ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার, স্পেন ২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, ফ্রান্স ১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, ইতালি ১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার, পোল্যান্ড ১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার এবং নেদারল্যান্ডস ১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।

প্রবৃদ্ধির হার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল - জার্মানি (১০ দশমিক ৭২ শতাংশ), ফ্রান্স (১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ), নেদারল্যান্ডস (২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ), পোল্যান্ড (১০ দশমিক ৩২ শতাংশ), ডেনমার্ক (১২ দশমিক ৮০ শতাংশ) এবং সুইডেন (১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ) ।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতেও অপ্রচলিত বাজারে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে মোট রফতানি ৫ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বাংলাদেশের মোট রফতানির ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ দখল করেছে।

এই বাজারগুলোর মধ্যে, জাপান মোট ৯৬০ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার আমদানি করে শীর্ষে রয়েছে, তারপরে অস্ট্রেলিয়া ৬৫৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত ৫৩৫ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার আমদানি করে।

তুরস্ক এবং মেক্সিকোর মতো দেশগুলোতেও উল্লেখযোগ্য রফতানি হয়েছে। তুরস্কে ৩৫৭ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার এবং মেক্সিকোতে ২৫১ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার, যা প্রশংসনীয়। উল্লেখিত সময়ে ভারতে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, জাপান ১০ দশমিক ০৬ শতাংশ, মেক্সিকো ২৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং তুরস্কের ৩২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

রিপোর্টে দেখা গেছে, এই সময়কালে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, তুরস্ক এবং মেক্সিকোতে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকলেও রাশিয়া, কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় রফতানি হ্রাস পেয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া এবং কোরিয়ায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি এই বাজারগুলোতে আরও গুরুত্বসহকারে রফতানি বাজার দেখা দরকার।

নিটওয়্যার খাত মোট ১১ দশমিক ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। ওভেন সেক্টরেও ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে প্রবৃদ্ধি ধীর হলেও অপ্রচলিত বাজারে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পয়েছে।

রফতানির চলমান প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল। যা বাংলাদেশের প্রধান বাজার হিসেবে অব্যাহত রয়েছে। যা এই ক্ষেত্রগুলির মধ্যে আরও সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।

বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘এটি আমাদের মোট রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে প্রধান ঐতিহ্যবাহী বাজারের তাৎপর্য প্রদর্শন করে।’ তিনি আরও বলেন, অপ্রচলিত বাজারে মাঝারি প্রবৃদ্ধি এই বিভাগে আরও গবেষণা এবং মনোযোগের গুরুত্বকে তুলে ধরে, কারণ এর যথেষ্ট প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা ঐতিহ্যবাহী বাজারের ওপর নির্ভরতা ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করবে।

রুবেল বলেন, স্থায়ী বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা ক্রমাগত বৈশ্বিক পরিবেশকে পুনর্গঠন করছে। এমন সুযোগ তৈরি করছে যা বাংলাদেশ সুবিধা নিতে পারে।

Header Ad
Header Ad

মুন্সীগঞ্জে মাইক্রোবাসের সঙ্গে ধাক্কা

সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবুও ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ৬০ যাত্রীকে বাঁচালেন চালক

ছবি: সংগৃহীত

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে মাইক্রোবাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর কাভার্ডভ্যান ও একটি কন্টেইনারের সঙ্গে সংঘর্ষে উড়ে গেছে বরিশাল এক্সপ্রেস নামের যাত্রীবাহী একটি বাসের ছাদ। পরপর তিন দফা দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হন বাসের অন্তত ২০ যাত্রী।

তবু বাস না থামিয়ে ছাদবিহীন গাড়িটি ১০ কিলোমিটার পথ চালিয়ে নিয়ে যান চালক। পরে জনরোষে গাড়ি থামাতে বাধ্য হন।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের শ্রীনগরের সমষপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসটিতে ৬০ যাত্রী ছিলেন।

বাসের যাত্রীরা জানান, ঢাকা থেকে বরিশাল এক্সপ্রেস লিমিটেডের বাসটি দ্রুতগতিতে চালাচ্ছিলেন চালক। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের শ্রীনগরের কামারখোলা এলাকায় পৌঁছেলে একটি কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা লাগে বাসটির। এতে বাসটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় চালক বাসটি না থামিয়ে আরও বেপরোয়া গতিতে চালাতে থাকে। সমষপুর এলাকায় পৌঁছে অপর একটি প্রাইভেটকারকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে বাসটির ছাদ বডি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। যাত্রীরা চালককে থামাতে অনুরোধ করলেও সে তা উপেক্ষা করে।

যাত্রীরা বলেন, চালক দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে হাইওয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখে ছাদবিহীন চলন্ত বাস চালিয়ে ১০ কিলোমিটার দূরের পদ্মা সেতু উত্তর থানার লৌহজংয়ের কুমারভোগ এলাকায় নিয়ে আসে। এ সময় আহত যাত্রীদের ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার শুনে বাসটি আটক করে জনতা।

পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি মো. জাকির হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় থানা, হাইওয়ে পুলিশ ও শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত শাহিন নামের এক যাত্রীকে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

চালক ও হেলপার বাস রেখে পালিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নারীরা কেন বয়সে ছোট পুরুষের সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন?
জুলাই-মার্চ মাসে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ
সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবুও ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ৬০ যাত্রীকে বাঁচালেন চালক
কোলের সন্তান বিক্রি করে অলংকার, মোবাইল কিনলেন মা
চুয়াডাঙ্গায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দু’জন নিহত
ইয়েমেনের তেল বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৩৮
হবিগঞ্জে ট্রাক-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪
সৌদি আরব-মরক্কো থেকে ৪৬৬ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার
গাইবান্ধায় মাদক মামলায় ৩ যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
তোপের মুখে ওয়াক্‌ফ আইন স্থগিত করল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
নিজেকে বরিশাল সিটির মেয়র ঘোষণার দাবিতে মামলা করলেন ফয়জুল করীম
ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিতের আহ্বান বাংলাদেশের
টাঙ্গাইলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কেন্দ্র সচিব ও পরীক্ষার্থীসহ আটক ৬
৭১ এর গণহত‍্যার জন‍্য ক্ষমা ও সম্পদ ফেরত দেয়া নিয়ে আলোচনায় সম্মত পাকিস্তান
এবার স্ত্রী রিয়া মনিকে তালাকের ঘোষণা দিলেন হিরো আলম
সাবেক এমপি বাহারের জমি-বাড়ি জব্দ, ২৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো ধরণের বাণিজ্যযুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত
বিজ্ঞানীদের সফলতা: ইমপ্লান্ট নয়, নতুন করে গজাবে ক্ষয়ে যাওয়া দাঁত!
নওগাঁয় বাসায় ঢুকে তরুণকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা